গাজীপুর সিটি নির্বাচন-গণতন্ত্র জয়যুক্ত হোক
নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন
আজ। শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বা জোটের প্রার্থীই
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ২৪ ঘণ্টা আগে শেষ হয়েছে সব
ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। ভোটগ্রহণ শেষে ফলের অপেক্ষা।
সিটি
করপোরেশনের নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব এখন
আর অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশেষ করে কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত চার সিটি
করপোরেশন নির্বাচনের পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যথার্থই জাতীয়
নির্বাচনের রূপ নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় নির্বাচনের চাপ গাজীপুর সিটি
নির্বাচনের ওপর পড়বে। কারণ চার সিটি করপোরেশনে বিজয়ী হওয়ার পর এই সিটিতে
সেই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারা বিরোধী দলের জন্য বড় একটি কৃতিত্বের
কাজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি দলের জন্য রীতিমতো মর্যাদার
লড়াই। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর জয়ের ধারায় ফিরে আসতে হলে
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হবে।
অন্যদিকে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বচ্ছতা বজায় রেখে যে দক্ষতার সঙ্গে
নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করেছে, সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার এবং
এটাকেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকছে কমিশনের
সামনে। গত কয়েক দিনের প্রচার-প্রচারণায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন
জাতীয় নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সাল হিসেবেই যেন পরিচিতি পেয়ে গেছে। একদিকে
বর্তমান নির্বাচন কমিশন এই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে চারটি বড় ধরনের নির্বাচন
পরিচালনা করে নিরপেক্ষতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা এই নির্বাচনেও
ধরে রাখতে হবে। অন্যদিকে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রমাণেরও বড় পরীক্ষা গাজীপুর
সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আর বিরোধী দলের জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে
জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আরেকটি সুযোগ এই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কাজেই
স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এই নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত
করবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সরকারি ও বিরোধী দল সমান
গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করেছে। প্রধান দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের
অংশগ্রহণ থেকেই সেটা স্পষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ প্রধান দুই দল সমান গুরুত্বের
সঙ্গেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিবেচনা করছে। দলীয় সমর্থনও ছিল
প্রকাশ্য। এর পাশাপাশি বাইরের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়েরও সব চেষ্টা করা
হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক মিত্র খোঁজার চেষ্টাও হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন
হলেও চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে
জাতীয় নির্বাচনের উত্তাপ পাওয়া গেছে। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি।
স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধরে নিতে পারি, নির্বাচনের দিনটিও নির্বিঘ্ন হবে।
মানুষ নিরাপদে ভোট দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন অবাধ,
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে মানুষের
আস্থার প্রতি সম্মান দেখাবে। চার সিটি করপোরেশনেও দল নয়, গণতন্ত্রই বিজয়ী
হবে বলে মনে করি আমরা।
No comments