অর্থনীতিতে মাছের অবদান বাড়াতে হবে by মোঃ মাছুদুর রহমান
মাছে-ভাতে বাঙালি- এ ঐতিহ্য আমাদের অনেক
পুরনো। উপমহাদেশের ভাটির দেশখ্যাত বাংলাদেশ ২ জুলাই থেকে মাছে মাছে ভরব
দেশ, গড়ব সোনার বাংলাদেশ- এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে দেশব্যাপী মৎস্য সপ্তাহ
উদযাপন করছে। মাছে-ভাতের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং ১৬ কোটি মানুষের বিশুদ্ধ
আমিষের চাহিদা পূরণে মানুষকে সচেতন করতে মৎস্য অধিদফতর এ আয়োজন করেছে।
খাদ্যগুণ বিচারে মাছ হল সবচেয়ে উত্তম খাদ্য। যারা এই মাছ উৎপাদন ও আহরণের জন্য রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, জলদস্যু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে তুচ্ছ করে জীবন বাজি রেখে আমাদের প্রাণিজ প্রোটিনের শতকরা ৬০ ভাগ পূরণ করছেন- আমরা তাদের কথা বলতে, লিখতে কিংবা শুনতে অতটা পছন্দ করি না, যতটা পছন্দ করি মাছের স্বাদ নিতে। আমাদের ৪৭.০৪ লাখ হেক্টর অভ্যন্তরীণ এবং বিশাল সামুদ্রিক জলাশয়ে যারা দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ খাদ্য নিরাপত্তায় অভাবনীয় ভূমিকা রেখে আসছেন, তাদের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা জরুরি। আমরা অল্প সময়ের ব্যবধানে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি, তা অর্জনে মেধা, পরিশ্রম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে আমাদের অব্যবহৃত সম্পদের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে। অনেক দেশ মাছ উৎপাদন করে তাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। আমাদেরও সেই সুযোগ আছে। শুধু প্রয়োজন এই ঐতিহ্যকে লালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করা।
মাছের ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ, ৪৭০ প্রজাতির সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মাছ, ২৪ ধরনের স্বাদু পানির এবং ৩৬ ধরনের লোনা পানির চিংড়ির কথা বলতে হয়। বলতে হয় মাছের সঙ্গে আমাদের কবিতা, গল্প আর উপন্যাসে ব্যবহৃত শ্লোক ও সাহিত্যের সম্পৃক্ততার কথা। মাছ শিকার নিয়ে হাজারো কল্পকাহিনী আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। আমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজ ব্যবস্থা আর ভোগ-বিলাসের নোংরা জলে সেই ঐতিহ্য মলিন হতে চলেছে। কারণ বিশুদ্ধ প্রোটিনের উৎস এবং তার চাষযোগ্য জলাভূমিকে আমরা নষ্ট করে ফেলছি।
বাজারে ফরমালিন বিহীন মাছ পাওয়া এখন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন মাছকে টাটকা দেখাতে এতে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহার করছে। এছাড়াও মাছ ও চিংড়িতে নিষিদ্ধ নাইট্রোফিউরান, ক্লোরামফেনিকল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবস্ট্যান্স, অ্যানথালমিনটিক্স, মাইকোটক্সিন, অর্গানোক্লোরাইড পেস্টিসাইড এবং বিষাক্ত ভারি ধাতুসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। মাছকে আমরা বিশুদ্ধ প্রোটিনের নিরাপদ উৎস ও সহজপাচ্য হিসেবে জানি, অথচ উল্লিখিত বিষাক্ত উপাদানের কারণে মানুষ লিউকেমিয়া, ব্রেন ক্যান্সার, কিডনি জটিলতা, গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকির মুখে পড়ছে। নারীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত, মিসকারেজ, প্রসব জটিলতা ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে।
মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে একসময় দেশে সাত শতাধিক নদ-নদী ও অসংখ্য খাল-বিল ছিল। এসব জলাশয়ে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছ অবাধে বিচরণ করত আর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করত। বর্ষা মৌসুম এলে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে মাছ প্রাপ্যতার এক মহাউৎসবের ধুম পড়ে যেত। অথচ বর্তমানে ২৩০টি নদ-নদীর যে তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পাওয়া যায়, তার মধ্যে একশর কাছাকাছি সংখ্যক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে জানা যায় । নদ-নদীর অস্তিত্ব সংকটের সঙ্গে সঙ্গে মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। একশর কাছাকাছি মাছের প্রজাতির সংকটাপন্ন অবস্থা, প্রকৃতিবিমুখ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জলবায়ুর পরিবর্তন, গ্রিনহাউজ অ্যাফেক্ট, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে আমরা মাছের দেশে মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছি।
বিশুদ্ধতম প্রোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস হল মাছ। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন এমনকি ভারতও মাছ উৎপাদনে আমাদের দেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি এগিয়ে গেছে। নরওয়ে স্যামন মাছ চাষে যে বিল্পব ঘটিয়েছে, তা যুগান্তকারী। অথচ একই গোত্রীয় আমাদের ইলিশ মাছের চাষে তেমন উল্লেখযোগ্য সফলতা নেই।
বাংলাদেশ একসময় পাটজাত পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। কিন্তু সেই ঐতিহ্যকে আমরা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। মাছ চাষকে আমরা এখনও বড় ধরনের শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের মধ্যে চিংড়ির অবস্থান দ্বিতীয়। ভাইরাসঘটিত রোগের কারণে এর উৎপাদন যে হারে বাড়ার কথা, সে হারে বাড়ছে না। চিংড়ি মূলত উন্নত দেশের মানুষ চড়া দামে আমাদের দেশ থেকে কিনে থাকে। চিংড়ি চাষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে প্রোসেস হয়ে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে। চিংড়ি চাষে গুড অ্যাকুয়াকালচার প্র্যাকটিসে অনীহা এবং প্রসেসিং ইন্ডাট্রিজে হ্যাসাপ নীতির ত্র“টির কারণে রফতানিকৃত চিংড়িতে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদানসহ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস স্পোর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী ক্রেতারা এই মাছ কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিদেশী ক্রেতারা এখন চিংড়ি ক্রয়ের জন্য ট্রেস্যাবিলিটি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। তারা চিংড়ির সার্টিফিকেশন চাচ্ছে। এ বিষয়গুলো পুরোপুরিভাবে মানতে পারলে সহজেই এ শিল্পকে বৃহৎ শিল্পে পরিণত করা সম্ভব। চিংড়ি চাষেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে হেক্টরপ্রতি চিংড়ির গড় উৎপাদন ৪০০-৬৫০ কেজি। বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জলাশয়ে চিংড়ির চাষ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাষ পদ্ধতির উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে চিংড়ির উৎপাদন সহজেই দ্বিগুণ করা সম্ভব।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষকে জনপ্রিয় করার জন্য আমাদের বিশেষ ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমানে দেশের পুকুরে মাছের গড় উৎপাদন ৯.৬ কেজি/শতাংশ। এ উৎপাদনকে আমরা সহজেই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণে নিয়ে যেতে পারি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় এদেশের মানুষ সেমি-ইনটেন্সিভ পদ্ধতিতে শতাংশে ৩০-৪০ কেজি মাছ উৎপাদন করছে। এ পদ্ধতির আওতায় শুধু উৎপাদন এলাকা বাড়িয়ে দিলেই বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
মানুষকে সচেতন করার এখনই সময়। গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীরা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন, মাছ চাষ পদ্ধতির প্রচার ও প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াবেন, বড় বড় উদ্যোক্তারা মাছ চাষকে শিল্প হিসেবে অগ্রাধিকার দেবেন- মৎস্য সপ্তাহে এসবই আমাদের প্রত্যাশা।
মোঃ মাছুদুর রহমান : মৎস্য উন্নয়ন কর্মী
খাদ্যগুণ বিচারে মাছ হল সবচেয়ে উত্তম খাদ্য। যারা এই মাছ উৎপাদন ও আহরণের জন্য রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, জলদস্যু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে তুচ্ছ করে জীবন বাজি রেখে আমাদের প্রাণিজ প্রোটিনের শতকরা ৬০ ভাগ পূরণ করছেন- আমরা তাদের কথা বলতে, লিখতে কিংবা শুনতে অতটা পছন্দ করি না, যতটা পছন্দ করি মাছের স্বাদ নিতে। আমাদের ৪৭.০৪ লাখ হেক্টর অভ্যন্তরীণ এবং বিশাল সামুদ্রিক জলাশয়ে যারা দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ খাদ্য নিরাপত্তায় অভাবনীয় ভূমিকা রেখে আসছেন, তাদের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা জরুরি। আমরা অল্প সময়ের ব্যবধানে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি, তা অর্জনে মেধা, পরিশ্রম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে আমাদের অব্যবহৃত সম্পদের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে। অনেক দেশ মাছ উৎপাদন করে তাদের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। আমাদেরও সেই সুযোগ আছে। শুধু প্রয়োজন এই ঐতিহ্যকে লালন ও পৃষ্ঠপোষকতা করা।
মাছের ঐতিহ্যের কথা বলতে গেলে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ, ৪৭০ প্রজাতির সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মাছ, ২৪ ধরনের স্বাদু পানির এবং ৩৬ ধরনের লোনা পানির চিংড়ির কথা বলতে হয়। বলতে হয় মাছের সঙ্গে আমাদের কবিতা, গল্প আর উপন্যাসে ব্যবহৃত শ্লোক ও সাহিত্যের সম্পৃক্ততার কথা। মাছ শিকার নিয়ে হাজারো কল্পকাহিনী আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। আমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজ ব্যবস্থা আর ভোগ-বিলাসের নোংরা জলে সেই ঐতিহ্য মলিন হতে চলেছে। কারণ বিশুদ্ধ প্রোটিনের উৎস এবং তার চাষযোগ্য জলাভূমিকে আমরা নষ্ট করে ফেলছি।
বাজারে ফরমালিন বিহীন মাছ পাওয়া এখন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন মাছকে টাটকা দেখাতে এতে ক্ষতিকর ও বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহার করছে। এছাড়াও মাছ ও চিংড়িতে নিষিদ্ধ নাইট্রোফিউরান, ক্লোরামফেনিকল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবস্ট্যান্স, অ্যানথালমিনটিক্স, মাইকোটক্সিন, অর্গানোক্লোরাইড পেস্টিসাইড এবং বিষাক্ত ভারি ধাতুসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। মাছকে আমরা বিশুদ্ধ প্রোটিনের নিরাপদ উৎস ও সহজপাচ্য হিসেবে জানি, অথচ উল্লিখিত বিষাক্ত উপাদানের কারণে মানুষ লিউকেমিয়া, ব্রেন ক্যান্সার, কিডনি জটিলতা, গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকির মুখে পড়ছে। নারীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত, মিসকারেজ, প্রসব জটিলতা ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে।
মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে একসময় দেশে সাত শতাধিক নদ-নদী ও অসংখ্য খাল-বিল ছিল। এসব জলাশয়ে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছ অবাধে বিচরণ করত আর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করত। বর্ষা মৌসুম এলে গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে মাছ প্রাপ্যতার এক মহাউৎসবের ধুম পড়ে যেত। অথচ বর্তমানে ২৩০টি নদ-নদীর যে তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পাওয়া যায়, তার মধ্যে একশর কাছাকাছি সংখ্যক নদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে জানা যায় । নদ-নদীর অস্তিত্ব সংকটের সঙ্গে সঙ্গে মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। একশর কাছাকাছি মাছের প্রজাতির সংকটাপন্ন অবস্থা, প্রকৃতিবিমুখ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জলবায়ুর পরিবর্তন, গ্রিনহাউজ অ্যাফেক্ট, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে আমরা মাছের দেশে মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছি।
বিশুদ্ধতম প্রোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস হল মাছ। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চীন এমনকি ভারতও মাছ উৎপাদনে আমাদের দেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি এগিয়ে গেছে। নরওয়ে স্যামন মাছ চাষে যে বিল্পব ঘটিয়েছে, তা যুগান্তকারী। অথচ একই গোত্রীয় আমাদের ইলিশ মাছের চাষে তেমন উল্লেখযোগ্য সফলতা নেই।
বাংলাদেশ একসময় পাটজাত পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত। কিন্তু সেই ঐতিহ্যকে আমরা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি। মাছ চাষকে আমরা এখনও বড় ধরনের শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের মধ্যে চিংড়ির অবস্থান দ্বিতীয়। ভাইরাসঘটিত রোগের কারণে এর উৎপাদন যে হারে বাড়ার কথা, সে হারে বাড়ছে না। চিংড়ি মূলত উন্নত দেশের মানুষ চড়া দামে আমাদের দেশ থেকে কিনে থাকে। চিংড়ি চাষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে প্রোসেস হয়ে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে। চিংড়ি চাষে গুড অ্যাকুয়াকালচার প্র্যাকটিসে অনীহা এবং প্রসেসিং ইন্ডাট্রিজে হ্যাসাপ নীতির ত্র“টির কারণে রফতানিকৃত চিংড়িতে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদানসহ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস স্পোর পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী ক্রেতারা এই মাছ কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিদেশী ক্রেতারা এখন চিংড়ি ক্রয়ের জন্য ট্রেস্যাবিলিটি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। তারা চিংড়ির সার্টিফিকেশন চাচ্ছে। এ বিষয়গুলো পুরোপুরিভাবে মানতে পারলে সহজেই এ শিল্পকে বৃহৎ শিল্পে পরিণত করা সম্ভব। চিংড়ি চাষেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে হেক্টরপ্রতি চিংড়ির গড় উৎপাদন ৪০০-৬৫০ কেজি। বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জলাশয়ে চিংড়ির চাষ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাষ পদ্ধতির উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে চিংড়ির উৎপাদন সহজেই দ্বিগুণ করা সম্ভব।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষকে জনপ্রিয় করার জন্য আমাদের বিশেষ ধরনের ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমানে দেশের পুকুরে মাছের গড় উৎপাদন ৯.৬ কেজি/শতাংশ। এ উৎপাদনকে আমরা সহজেই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণে নিয়ে যেতে পারি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় এদেশের মানুষ সেমি-ইনটেন্সিভ পদ্ধতিতে শতাংশে ৩০-৪০ কেজি মাছ উৎপাদন করছে। এ পদ্ধতির আওতায় শুধু উৎপাদন এলাকা বাড়িয়ে দিলেই বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
মানুষকে সচেতন করার এখনই সময়। গণমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবীরা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন, মাছ চাষ পদ্ধতির প্রচার ও প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াবেন, বড় বড় উদ্যোক্তারা মাছ চাষকে শিল্প হিসেবে অগ্রাধিকার দেবেন- মৎস্য সপ্তাহে এসবই আমাদের প্রত্যাশা।
মোঃ মাছুদুর রহমান : মৎস্য উন্নয়ন কর্মী
No comments