পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ-সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও বঞ্চিত দেশি প্রতিষ্ঠান
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের
(এনসিটিবি) বিদেশপ্রীতির কারণে সক্ষমতা সত্ত্বেও পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে দেশীয় মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠান। সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া
সত্ত্বেও প্রচুর পরিমাণ মুদ্রণকাজ দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে সক্ষমতার
অজুহাত দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে দুটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে।
অনৈতিকভাবে
এই সুবিধা দেওয়ার কারণে সরকারের অতিরিক্ত গচ্চা যাবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ
ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রকাশকরা এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে তদন্ত
করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এবারও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪১টি প্রতিষ্ঠান ৫৯৪টি দরপত্র জমা দেয়। এসবের মধ্যে ছিল ভারত, সিঙ্গাপুর, দুবাই, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের ১২টি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের ২৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৯৯টি লটে প্রায় ১১ কোটি কপি পাঠ্য বই ছাপা হওয়ার কথা।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মাত্র তিনটি লটের কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ৯৬টি লটের কাজ দেশীয় প্রতিষ্ঠান পায়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের বিকে উদ্যোগ দুটি ও কৃষ্ণা ট্রেডার্স একটি লটের কাজ পায়। কিন্তু এনসিটিবির একটি চক্র সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে সর্বনিম্ন দরদাতা দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার প্রশ্ন তুলে তাদের পাওয়া ১৯টি লটের কাজ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ভারতীয় দুটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাদের এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ১৯টি লটে প্রায় আড়াই কোটি কপি পাঠ্য বই মুদ্রণ হবে। গত বুধবার অত্যন্ত গোপনে বিকে উদ্যোগকে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ কপি এবং কৃষ্ণা ট্রেডার্সকে এক কোটি ১৫ লাখ কপি বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মুদ্রণশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশকরা অভিযোগ করেছেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্যই তাঁদের পাওয়া ১৯টি লটের কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ছিল না। তাই ওই কাজের ক্ষেত্রে এনসিটিবি সক্ষমতার কোনো প্রশ্ন তোলেনি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের লট কেটে নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে অনিয়ম প্রসঙ্গে মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম শাহ আলম বলেন, 'এনসিটিবি সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওয়া ১৯টি লটের কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) নিয়ম অনুসারে, আন্তর্জাতিক টেন্ডারে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ বেশি দর দিলেও তাকে সর্বনিম্ন হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া সরকার দেশীয় মুদ্রণশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার জন্য পাঠ্যপুস্তক আমদানির ওপর ১২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। কিন্তু এই কাজের ক্ষেত্রে এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান যেমন কাজ থেকে বঞ্চিত হলো, তেমনি এনসিটিবিও অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্মুখীন হলো।' তাঁদের হিসাবে এই খাতে এনসিটিবির অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ কোটি টাকার বেশি হবে।
আ ফ ম শাহ আলম জানান, ১৯৭৩ সালের মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন অনুযায়ী প্রিন্টিং প্রেস ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ছাপার কাজ করতে পারে না। কিন্তু এনসিটিবি এই আইনও মানেনি। তারা ভারতীয় যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে সেগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার মান নির্ণয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রকাশকরা। একটি ওয়েব মেশিন ১৬ ঘণ্টায় ৮০০ রিম কাগজ ছাপতে পারবে- এই হিসাবে সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে টানা ২২ ঘণ্টাও কাজ করা হয় ছাপাখানায়।
বসুন্ধরা একাই অর্ধেক পাঠ্যপুস্তক ছাপতে সক্ষম : বিদেশিদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ বিষয়ে প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করে বিদেশি কম্পানিকে কাজ দেওয়াটা দুঃখজনক। মুদ্রণশিল্পের সর্বাধুনিক সুবিধা এখন দেশেই বিদ্যমান। বসুন্ধরার মতো প্রতিষ্ঠান একাই অর্ধেক পাঠ্যপুস্তক ছাপতে সক্ষম। এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এবার টেন্ডারে অংশই নেয়নি। তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া এনসিটিবির কোনো কাজে দেশীয় প্রতিষ্ঠান এখনো ব্যর্থ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবদুল মজিদ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব কাজ পেয়েছে এর সব করার সক্ষমতা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের না থাকার কারণেই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিদেশি কম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। শুল্ক দিয়ে বই আমদানির কারণে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান শুল্ক দিলে সরকারেরই তো আরেকটি প্রতিষ্ঠান পাবে, তাতে তো অসুবিধার কিছু নেই।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এবারও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪১টি প্রতিষ্ঠান ৫৯৪টি দরপত্র জমা দেয়। এসবের মধ্যে ছিল ভারত, সিঙ্গাপুর, দুবাই, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের ১২টি প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের ২৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৯৯টি লটে প্রায় ১১ কোটি কপি পাঠ্য বই ছাপা হওয়ার কথা।
সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মাত্র তিনটি লটের কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ৯৬টি লটের কাজ দেশীয় প্রতিষ্ঠান পায়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের বিকে উদ্যোগ দুটি ও কৃষ্ণা ট্রেডার্স একটি লটের কাজ পায়। কিন্তু এনসিটিবির একটি চক্র সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে সর্বনিম্ন দরদাতা দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার প্রশ্ন তুলে তাদের পাওয়া ১৯টি লটের কাজ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ভারতীয় দুটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাদের এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ১৯টি লটে প্রায় আড়াই কোটি কপি পাঠ্য বই মুদ্রণ হবে। গত বুধবার অত্যন্ত গোপনে বিকে উদ্যোগকে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ কপি এবং কৃষ্ণা ট্রেডার্সকে এক কোটি ১৫ লাখ কপি বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মুদ্রণশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশকরা অভিযোগ করেছেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্যই তাঁদের পাওয়া ১৯টি লটের কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ছিল না। তাই ওই কাজের ক্ষেত্রে এনসিটিবি সক্ষমতার কোনো প্রশ্ন তোলেনি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের লট কেটে নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে অনিয়ম প্রসঙ্গে মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম শাহ আলম বলেন, 'এনসিটিবি সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওয়া ১৯টি লটের কাজ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) নিয়ম অনুসারে, আন্তর্জাতিক টেন্ডারে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ বেশি দর দিলেও তাকে সর্বনিম্ন হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া সরকার দেশীয় মুদ্রণশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার জন্য পাঠ্যপুস্তক আমদানির ওপর ১২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। কিন্তু এই কাজের ক্ষেত্রে এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান যেমন কাজ থেকে বঞ্চিত হলো, তেমনি এনসিটিবিও অতিরিক্ত ব্যয়ের সম্মুখীন হলো।' তাঁদের হিসাবে এই খাতে এনসিটিবির অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ কোটি টাকার বেশি হবে।
আ ফ ম শাহ আলম জানান, ১৯৭৩ সালের মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন অনুযায়ী প্রিন্টিং প্রেস ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান ছাপার কাজ করতে পারে না। কিন্তু এনসিটিবি এই আইনও মানেনি। তারা ভারতীয় যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে সেগুলো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
মুদ্রণশিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার মান নির্ণয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রকাশকরা। একটি ওয়েব মেশিন ১৬ ঘণ্টায় ৮০০ রিম কাগজ ছাপতে পারবে- এই হিসাবে সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে টানা ২২ ঘণ্টাও কাজ করা হয় ছাপাখানায়।
বসুন্ধরা একাই অর্ধেক পাঠ্যপুস্তক ছাপতে সক্ষম : বিদেশিদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ বিষয়ে প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বঞ্চিত করে বিদেশি কম্পানিকে কাজ দেওয়াটা দুঃখজনক। মুদ্রণশিল্পের সর্বাধুনিক সুবিধা এখন দেশেই বিদ্যমান। বসুন্ধরার মতো প্রতিষ্ঠান একাই অর্ধেক পাঠ্যপুস্তক ছাপতে সক্ষম। এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এবার টেন্ডারে অংশই নেয়নি। তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া এনসিটিবির কোনো কাজে দেশীয় প্রতিষ্ঠান এখনো ব্যর্থ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবদুল মজিদ দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব কাজ পেয়েছে এর সব করার সক্ষমতা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের না থাকার কারণেই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিদেশি কম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। শুল্ক দিয়ে বই আমদানির কারণে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান শুল্ক দিলে সরকারেরই তো আরেকটি প্রতিষ্ঠান পাবে, তাতে তো অসুবিধার কিছু নেই।
No comments