নদীর পানি সর্বরোগের দাওয়াই! by কাজী আবদুল্লাহ
ক্যানসারে আক্রান্ত বিউটি বেগম (৩৫) নিজে
কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। অথচ মানুষকে নদীর ঘোলা পানি পান করে সর্বরোগ থেকে
মুক্তির পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তিনি এমন পরামর্শ দিচ্ছেন বলে
জানা গেছে।
তাঁর কথায় বিশ্বাস করে প্রতিদিন নদীর ঘাটে কয়েক শ মানুষ ভিড় করছে।
সাধারণ মানুষের এই ভিড়কে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় লোকজন রমরমা ব্যবসা করছে। আড়াই মাস ধরে কাজিবাচা নদীর খুলনার বটিয়াঘাটার বুজবুনিয়া ঘাটে এমন কর্মকাণ্ড চলছে। চিকিৎসকদের মতে, এটি অন্ধবিশ্বাস ও অপপ্রচার মাত্র। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
এলাকার কয়েকজন, বিউটি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় বটিয়াঘাটা উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের পাটকল শ্রমিক আকরাম শেখের স্ত্রী বিউটির জরায়ুতে ক্যানসার ধরা পড়ে। হাসপাতালের চিকিৎসক মৃণালকান্তি সরকারের অধীনে তাঁকে পর পর দুটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর কোনো এক রাতে বিউটি স্বপ্নে দেখেন, এক বৃদ্ধা এসে তাঁকে বলছেন, ‘তুই আর কান্দিসনে। বাড়ি ফিরে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বুজবুনিয়া গ্রামের পাশে কাজিবাচা নদীর চরে কবরের পাশ থেকে তিন কোষ পানি খাগে, ভালো হয়ে যাবি।’ কিছুদিন পর বিউটি তৃতীয় কেমো নিয়ে বাড়ি ফেরার পর আবারও একই স্বপ্ন দেখেন। তখন তিনি বুজবুনিয়া ঘাটে গিয়ে নদী থেকে তিন আঁচলা পানি পান করেন। এর পর থেকে তিনি সুস্থবোধ করতে থাকেন। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে আশপাশের বিপুলসংখ্যক মানুষ বিউটিকে দেখতে ও তাঁর স্বপ্নের কথা শুনতে আসে। এর পর থেকেই নদীর পানি পান শুরু।
খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ হুজুগের ব্যাপার। বিজ্ঞানের এই যুগে এসব চলে না। অবিলম্বে এটা বন্ধ করা জরুরি।’
৩ জুলাই সরেজমিনে দেখা যায়, বুজবুনিয়া গ্রামসংলগ্ন কাজিবাচা নদীর পূর্ব পাশে বাঁধের ওপর অসংখ্য নারী, শিশু ও পুরুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে নদীতে নামছে এবং হাত দিয়ে নদী থেকে তিনবার পানি তুলে মুখে দিচ্ছে। ওই সময় বেশ কয়েকটি ট্রলার ও নৌকা থেকে মানুষ নেমে সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ট্রলার ওই স্থানে এসে থামে। দেড় ঘণ্টায় ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষকে নদীর পানি পান করতে দেখা গেল।
ওই সময় মাথায় লাল কাপড় বাঁধা বেশ কয়েকজন সেবককে দেখা গেল। তাঁরা আগত মানুষদের তদারকি করছেন। আগতরা খালি পায়ে নদীতে নামছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের আসা-যাওয়ার কারণে সেখানে বেশ কিছু খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। ঝোলানো হয়েছে ৩০টিরও বেশি দানবাক্স। আর স্বঘোষিত স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যবস্থাপনা খরচের নামে ওই ঘাটে আসা ট্রলারপ্রতি ৫০ টাকা ও দোকানপ্রতি ২০ টাকা হারে চাঁদা তুলতে দেখা গেল। তবে বিউটির নামে কোনো টাকা তুলতে কাউকে দেখা যায়নি। স্বেচ্ছাসেবক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘স্বপ্নে পাওয়া পানি খেয়ে বিউটি বেগমের ক্যানসার ভালো হওয়ার কথা শুনে আড়াই মাস ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে পানি খাতি আসতিছে। আমরা এখানে বাঁশ পুঁতে দিয়ে, মাইক লাগায়ে শৃঙ্খলা রক্ষা কত্তিছি। তা না হলি তো এত ভিড় সামলানে যাবে নানে। তবে আমরা পানি খাতি কারও কাছেত্তে কোনো টাকা-পয়সা নিচ্ছিনে। মানুষ স্বেচ্ছায় দান কত্তেছে।’
ঢাকা থেকে পানি খেতে আসা আসাবুর রহমান (৫০) বলেন, ‘আমার বুকের মধ্যে মেলা দিনের জ্বালাপোড়া। কোনো চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় এখানে আসছি।’ যশোরের ট্রাকচালক অলিয়ার রহমান (৪০) বলেন, ‘আগে ট্রাক চালানোর সময় কিছু সময় পর পর চোখে ঝাপসা দেখতাম। এই পানির খবর শুনে আসে খাওয়ার পরেত্তে সুস্থবোধ কত্তিছি।’
আকরাম শেখ বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক দিন ক্যানসারে ভোগার পরে স্বপ্নে এই পানি পায়ে খায়ে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে।’ পানি খাওয়ার পরও স্ত্রীকে দুবার কেমোথেরাপি কেন দেওয়ালেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানি খাওয়ার পরেত্তে তো আমার স্ত্রীর টিউমার কুমতি থাকে। ডাক্তার পরীক্ষা করে কলে, আর দুডো কেমো নিলি সে সম্পূর্ণ সুস্থ হবে। তাই কেমো নিছি।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মৃণালকান্তি সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ যখন সাঈদীকে চাঁদে দেখার ঘটনা বিশ্বাস করে, তখন এমন প্রচার কেন বিশ্বাস করবে না?’ বিউটি বেগমের পানি খেয়ে সুস্থ হওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীর পানি খেলে যদি ক্যানসার সারে, তাহলে উনি আবার কেমো নিচ্ছেন কেন?’
সাধারণ মানুষের এই ভিড়কে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় লোকজন রমরমা ব্যবসা করছে। আড়াই মাস ধরে কাজিবাচা নদীর খুলনার বটিয়াঘাটার বুজবুনিয়া ঘাটে এমন কর্মকাণ্ড চলছে। চিকিৎসকদের মতে, এটি অন্ধবিশ্বাস ও অপপ্রচার মাত্র। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে।
এলাকার কয়েকজন, বিউটি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সময় বটিয়াঘাটা উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের পাটকল শ্রমিক আকরাম শেখের স্ত্রী বিউটির জরায়ুতে ক্যানসার ধরা পড়ে। হাসপাতালের চিকিৎসক মৃণালকান্তি সরকারের অধীনে তাঁকে পর পর দুটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর কোনো এক রাতে বিউটি স্বপ্নে দেখেন, এক বৃদ্ধা এসে তাঁকে বলছেন, ‘তুই আর কান্দিসনে। বাড়ি ফিরে বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বুজবুনিয়া গ্রামের পাশে কাজিবাচা নদীর চরে কবরের পাশ থেকে তিন কোষ পানি খাগে, ভালো হয়ে যাবি।’ কিছুদিন পর বিউটি তৃতীয় কেমো নিয়ে বাড়ি ফেরার পর আবারও একই স্বপ্ন দেখেন। তখন তিনি বুজবুনিয়া ঘাটে গিয়ে নদী থেকে তিন আঁচলা পানি পান করেন। এর পর থেকে তিনি সুস্থবোধ করতে থাকেন। এ খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে আশপাশের বিপুলসংখ্যক মানুষ বিউটিকে দেখতে ও তাঁর স্বপ্নের কথা শুনতে আসে। এর পর থেকেই নদীর পানি পান শুরু।
খুলনার আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ হুজুগের ব্যাপার। বিজ্ঞানের এই যুগে এসব চলে না। অবিলম্বে এটা বন্ধ করা জরুরি।’
৩ জুলাই সরেজমিনে দেখা যায়, বুজবুনিয়া গ্রামসংলগ্ন কাজিবাচা নদীর পূর্ব পাশে বাঁধের ওপর অসংখ্য নারী, শিশু ও পুরুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে নদীতে নামছে এবং হাত দিয়ে নদী থেকে তিনবার পানি তুলে মুখে দিচ্ছে। ওই সময় বেশ কয়েকটি ট্রলার ও নৌকা থেকে মানুষ নেমে সেখানে লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ট্রলার ওই স্থানে এসে থামে। দেড় ঘণ্টায় ৭০০ থেকে ৮০০ মানুষকে নদীর পানি পান করতে দেখা গেল।
ওই সময় মাথায় লাল কাপড় বাঁধা বেশ কয়েকজন সেবককে দেখা গেল। তাঁরা আগত মানুষদের তদারকি করছেন। আগতরা খালি পায়ে নদীতে নামছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের আসা-যাওয়ার কারণে সেখানে বেশ কিছু খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। ঝোলানো হয়েছে ৩০টিরও বেশি দানবাক্স। আর স্বঘোষিত স্বেচ্ছাসেবকদের ব্যবস্থাপনা খরচের নামে ওই ঘাটে আসা ট্রলারপ্রতি ৫০ টাকা ও দোকানপ্রতি ২০ টাকা হারে চাঁদা তুলতে দেখা গেল। তবে বিউটির নামে কোনো টাকা তুলতে কাউকে দেখা যায়নি। স্বেচ্ছাসেবক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘স্বপ্নে পাওয়া পানি খেয়ে বিউটি বেগমের ক্যানসার ভালো হওয়ার কথা শুনে আড়াই মাস ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে পানি খাতি আসতিছে। আমরা এখানে বাঁশ পুঁতে দিয়ে, মাইক লাগায়ে শৃঙ্খলা রক্ষা কত্তিছি। তা না হলি তো এত ভিড় সামলানে যাবে নানে। তবে আমরা পানি খাতি কারও কাছেত্তে কোনো টাকা-পয়সা নিচ্ছিনে। মানুষ স্বেচ্ছায় দান কত্তেছে।’
ঢাকা থেকে পানি খেতে আসা আসাবুর রহমান (৫০) বলেন, ‘আমার বুকের মধ্যে মেলা দিনের জ্বালাপোড়া। কোনো চিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় এখানে আসছি।’ যশোরের ট্রাকচালক অলিয়ার রহমান (৪০) বলেন, ‘আগে ট্রাক চালানোর সময় কিছু সময় পর পর চোখে ঝাপসা দেখতাম। এই পানির খবর শুনে আসে খাওয়ার পরেত্তে সুস্থবোধ কত্তিছি।’
আকরাম শেখ বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক দিন ক্যানসারে ভোগার পরে স্বপ্নে এই পানি পায়ে খায়ে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে।’ পানি খাওয়ার পরও স্ত্রীকে দুবার কেমোথেরাপি কেন দেওয়ালেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পানি খাওয়ার পরেত্তে তো আমার স্ত্রীর টিউমার কুমতি থাকে। ডাক্তার পরীক্ষা করে কলে, আর দুডো কেমো নিলি সে সম্পূর্ণ সুস্থ হবে। তাই কেমো নিছি।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মৃণালকান্তি সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ যখন সাঈদীকে চাঁদে দেখার ঘটনা বিশ্বাস করে, তখন এমন প্রচার কেন বিশ্বাস করবে না?’ বিউটি বেগমের পানি খেয়ে সুস্থ হওয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘নদীর পানি খেলে যদি ক্যানসার সারে, তাহলে উনি আবার কেমো নিচ্ছেন কেন?’
No comments