চলে গেলেন বিপুল ভট্টাচার্য-তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়
স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠশিল্পী বিপুল ভট্টাচার্য আর নেই।
রাজধানীর আহমেদ মেডিক্যাল সেন্টারে তিনি শুক্রবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করেন। মানুষ মরণশীল। সবাইকে একদিন চলে যেতে হয়।
কিন্তু সব মৃত্যু সমানভাবে
দেখার সুযোগ নেই। গতকাল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করার
কথা। প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ দেশের মানুষের
শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানানো অব্যাহত রয়েছে। মরণোত্তর কোনো আনুষ্ঠানিকতার
ঘাটতি হয়তো থাকবে না। এর পরও বিপুল ভট্টাচার্যের মতো দেশ ও স্বাধীনতার জন্য
আত্মনিবেদিত একজন শিল্পীকে কি যথাযথ সম্মান জানানো হলো? বিপুল ভট্টাচার্য
মারা গেছেন সুচিকিৎসার অভাবে। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা, কণ্ঠযোদ্ধা।
যুদ্ধকালীন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতাকে যাঁরা গানে গানে
সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ক্লান্তিহীন, মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্নকে
সংগীতের মাধ্যমে জোরদার করেছেন- বিপুল ছিলেন তাঁদেরই একজন। কিশোর বয়স থেকে
সংগীত দিয়ে দেশকে, দেশের নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করাই ছিল তাঁর ক্যানভাস।
বিপুল ভট্টাচার্যের গাওয়া জনপ্রিয় গান, যেমন- 'ও রে বিষম দরিয়ার ঢেউ', 'নাও
ছাড়িয়া দে, পাল উড়াইয়া দে' প্রভৃতি মানুষ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। এই
স্বাধীনতাযুদ্ধের শিল্পী ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসা ভারতে পূর্ণ করতে
পারেননি অর্থাভাবে। মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন। সুচিকিৎসা হলে
হয়তো দীর্ঘকাল বাঁচতেন। গানের শিক্ষকতা করেই তিনি সংসার চালাতেন,
ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ চালাতেন। রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এসব মানুষের
জীবনের পাশে দাঁড়ানো। তা না হলে দেশপ্রেমী মানুষ তৈরি হবে না। দেশপ্রেমিক
জাতি গড়ে তুলতে হলে দেশপ্রেমের মূল্যায়ন করতে হবে। স্বীকৃতি জানাতে হবে।
স্বাধীন বাংলা বেতারের কয়জন কণ্ঠযোদ্ধা, দেশের কয়জন মুক্তিযোদ্ধা যথার্থ
রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেয়েছেন?
No comments