কেমন চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় by ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান
১
জুলাই অনেক ধুমধাম করে পালিত হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিন ছাত্রছাত্রীদের কলরবে ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। ভাবতে
ভালোই লাগছিল, আর মাত্র সাত বছর পর আমরা আমাদের গৌরব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করব। তবে সব আনন্দের মাঝেও একফোঁটা কালিমা
মেখে দেয় সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত কিছু তথ্য। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন বসছে না- সংবাদপত্রে ফলাও করে ছাপা হয়েছে
এমন খবর। মুক্তচিন্তার পাদপীঠ, গণতন্ত্রের সূতিকাগার, আমাদের ভাষা আন্দোলন
আর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তারুণ্যের আধার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ কোথায়
এসে দাঁড়িয়েছে!
বছর দেড়-দুয়েক আগে এই যুগান্তরেই লিখেছিলাম ‘অনির্বাচিত উপাচার্যদের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাঁচান’। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছিলেন অনির্বাচিত। এর মধ্যেই বেশক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা নির্বাচিত হয়ে এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এখন পর্যন্ত অনির্বাচিতই রয়ে গেছেন। গণতন্ত্রের সূতিকাগারে চলছে অগণতন্ত্রের চর্চা!
বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, উপাচার্যের আদেশক্রমে প্রথমবারের মতো এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট না বসিয়ে বিগত ৯২ বছরের ঐতিহ্যকে ভেঙে দেয়া হল। প্রথাগতভাবে সাধারণত প্রতিবছর জুন মাসের শেষে সিনেট অধিবেশন বসে। সিনেট সদস্যরা নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজনকে নির্বাচিত করে একটি প্যানেল করেন। সেখান থেকেই মাননীয় চ্যান্সেলর একজনকে চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া সিনেটের প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রণীত আইনগুলোকে স্ট্যাটিউট হিসেবে বৈধতা প্রদানই নয়, বরং সাংবাৎসরিক সব কর্মকাণ্ড নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোথায় সর্বজনীনতা রক্ষা করা হয়নি, ভবিষ্যতে কী করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে সিনেটের সদস্যরা দিকনির্দেশনা দেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং বার্ষিক বাজেটও পাস করা হয় সিনেটে। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটকে দেশের ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ বলা হয়। সিনেটের এত বড় মর্যাদাকে, এতদিনের ঐতিহ্যকে ধুলায় লুটিয়ে দেয়ার জন্য বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি-না, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। আর না হলে অন্তত এ কারণে তার নিজে থেকে পদত্যাগ করে কালিমার বোঝা মাথায় নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
ভাবতেও অবাক লাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের ১০৫টি পদের ৯৬টিই খালি পড়ে রয়েছে। সব পদই যে একই সঙ্গে খালি হয়েছে তা নয়। খালি পদগুলো অবিলম্বে পূরণ না করে গত চারটি বছর উপাচার্য কিভাবে নিশ্চিন্তে ছিলেন, জানি না। অথচ এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর শূন্যপদ পূরণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের এতটুকু গাফিলতি দেখা যায়নি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পদ সৃষ্টি করে এনে তা পূরণ করা হয়েছে দলীয় প্রার্থীদের দিয়ে। ফলে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের পরিমাণ টাকার অংকে নাকি ৩১৫ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, এ বিপুল পরিমাণ অর্থের মাত্র দুই থেকে আড়াই ভাগ অর্থাৎ ৬-৭ কোটি টাকা খরচ হবে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির কাজের জন্য। আর সম্ভবত (সম্ভবত বলছি এ কারণে যে, বাজেট দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি) বেতনভাতা খাতেই খরচ হবে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এদিক থেকে আমাদের উপাচার্য তার দলের পক্ষে কাজটা ভালোই করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি দলীয় লোকদের পুনর্বাসনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মানুষ বাইরে থেকে দেখে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভালোই চলছে। গত সাড়ে চার বছরে মেধার তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় সাড়ে তিনশ’রও বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা লালনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে করা হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। একইভাবে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় শত শত যুবককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অফিসার কিংবা কর্মচারী হিসেবে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাতি বিষয়েও উপাচার্যের হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ, আবাসন বরাদ্দ, সাসপেনশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩-এ বর্ণিত নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামাফিক বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগ, এমবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক নিয়োগ, অফিস প্রধানদের ক্ষমতা হরণ, তোষামোদকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ক্ষমতায় বসানো, বিরোধী পক্ষের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর কারণে-অকারণে ত্রাসের স্টিমরোলার চালানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধী শিক্ষকদের কাউকে কাউকে তোষণ করে বিরোধী পক্ষকে নিষ্ক্রিয় করে রাখাসহ হেন কোনো অনৈতিক কাজ নেই যা এই প্রশাসন করেনি। সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার এবং তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন সাবেক সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের পদ থেকে বিদায় করা হয়েছিল অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে। যদিও তারা পরবর্তী সময়ে উচ্চতর পদে আসীন হয়ে প্রমাণ করেছেন সত্য ও সুন্দরের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আমার জানা মতে অত্যন্ত ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি। আমার এখনও মনে পড়ে ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকের একটি ঘটনার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমি এবং তিনি দু’জনে দু’দল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। যেদিন ভোট হয়, সেদিন আমরা দু’জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ঐতিহাসিক কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, যে গাছটি কিছুদিন আগে কেটে ফেলা হয়েছে। আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করলেও আমাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তখনকার শিক্ষক রাজনীতি ছিল এমনটাই। এখনকার মতো জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলোর নগ্ন লেজুরবৃত্তি ছিল না। যাই হোক, আমাদের গল্প করা দেখে বেশ ক’জন সিনিয়র শিক্ষক এসে আমাদের বলেছিলেন, তোমরা দু’জনেই খুব ভালো মানুষ, দু’জনেই খুবই জনপ্রিয়। আমরা চাই না, তোমাদের কেউ হারুক। তাহলে কী করতে হবে? তারা বলেছিলেন, এক বছরের টার্মটা তোমরা দু’জনে ছয় মাস ছয় মাস করে ভাগ করে নাও। কিন্তু শিক্ষক সমিতির নীতিমালা তা অনুমোদন করে না। সেই নির্বাচনে আমি তার কাছে পরাজিত হয়েছিলাম স্বল্প ভোটের ব্যবধানে। আজ এত বছর পর সেই ভদ্র সজ্জন আরেফিন সিদ্দিকের স্বেচ্ছাচারিতা দেখে এবং সে কারণে তার জনপ্রিয়তার ধস দেখে আমি ব্যথিত হই। প্রশ্ন জাগে, মানুষের কি এতটাই পরিবর্তন হতে পারে?
কেন এ পরিবর্তন? এর উত্তর আমার জানা নেই। এটা কি শুধু ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য? নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টায় বর্তমান উপাচার্য যে ন্যায়-অন্যায় বিচার না করে যা মনে করছেন তা-ই করে যাচ্ছেন, সেটা সহজেই দৃশ্যমান। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি না মেনে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে পদদলিত করে চার চারটি বছর নির্বাচন না দিয়ে দায়িত্বে বসে থাকবেন, সেটা বোধহয় মোটেই শোভনীয় নয়, কাম্যও নয়। কারণ আগেই বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক অনির্বাচিত থেকে স্বৈরাচারী কায়দায় এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন, তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। ক্ষমতায় আরোহণের প্রথম বছরেই সিনেটের সব পদের নির্বাচন দিয়ে সিনেটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসাটা কি তার জন্য খুব কষ্টকর ছিল? মোটেই না। কারণ এখন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে দলীয় রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত। এ অবস্থায় সিনেটের কম্পোজিশন পূর্ণাঙ্গ করে নির্বাচন দিলে বর্তমান উপাচার্য তো তিনজনের প্যানেলেই থাকতেন। ধরে নিলাম, আন্তঃদলীয় কোন্দলের কারণে তিনি সর্বনিম্ন অর্থাৎ তিন নম্বরে অবস্থান করতেন। তাতে কী? মাননীয় চ্যান্সেলর তো তিনজনের মধ্যে তাকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে পারতেন। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষেত্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ফরেইন বডি’ হিসেবে সেখানে গিয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও অনেক সাহস করে সিনেটের নির্বাচন দিয়ে জিতে এসে বৈধ উপাচার্য হয়েছেন, সেজন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিক ধারার প্রতি তার এ সম্মান প্রদর্শন দেখে ‘মাই হ্যাট’স অফ টু হিম’।
আরেফিন সিদ্দিক কি এমনটি করতে পারতেন না? তিনি গণতন্ত্রের পথে না হেঁটে গেলেন স্বৈরতন্ত্রের পথে। দলীয় শিক্ষক ও অন্যান্য সুহৃদ যারা ছিলেন, তাদের মাঝে তিনি অবিশ্বাসের মেঘ দেখতে পেলেন। ফলে আস্তে আস্তে তার দলের মানুষই সরে গেল তার কাছ থেকে। তার স্বেচ্ছাচারিতা তার দলের অনেকেই গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে তিনি অনেকটাই একা হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি দুটি কাজ করলেন- এক, দলের অনেক যোগ্য সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের কাছে টেনে নিয়ে তাদের বিশেষ সুবিধা দিলেন। এমনকি কাউকে কাউকে বয়সের তুলনায় এত গুরুদায়িত্ব দিলেন, যাতে তারা কেউ কখনোই উপাচার্যের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস না পান। দুই, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরোধী পক্ষের দলকে যেভাবেই হোক হাতের মুঠোয় রেখে তার চার বছরের সময়টা যেন ভালোয় ভালোয় পার হয়ে যায় সেই ব্যবস্থা করলেন। বলা যায়, এ বিষয়ে তিনি শতভাগ সফলতা লাভ করেছেন। বিরোধী সাদা দলের শিক্ষকরা এ বিষয়ে অনেক কথাই বলেন, যেগুলো প্রকাশ করা যায় না। তবে সাদা দলের মুখথুবড়ে পড়া দলীয় কার্যক্রমে সিংহভাগ শিক্ষকই যে চরম অসন্তোষে ভুগছেন, সেটা আলাপ করলেই বোঝা যায়। তাদের ভাষায়, বিগত ছয়-সাত বছর ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত একই ব্যক্তি এই দলের আহ্বায়ক হিসেবে দল পরিচালনা করে দলটিকে অনেকটাই অকার্যকর করে রেখেছেন, কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কথায় বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত তো সারাদেশ শান্ত, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত তো সারাদেশও অশান্ত। একটু খোলাসা করে বললে, সারাদেশ অশান্ত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত থাকলে দেশে কোনো আন্দোলন জমে ওঠে না, আবার সারাদেশ শান্ত থাকলেও এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হলে দেশেও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের ঢেউ। জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী সাদা দল আন্দোলনের অনেক সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক সহজেই চার চারটি বছর পার করে এখন পঞ্চম বছরে পড়তে চলেছেন।
এত কথা বলার কারণ, আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমাদের অতি ভদ্র উপাচার্য কখনোই গণতন্ত্রের বিপক্ষে ছিলেন না। বরং গণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নির্বাচনে তিনি জিততে জিততে আজ এ পর্যায়ে এসেছেন। তবে উপাচার্য হওয়ার শেষ নির্বাচনটা তিনি করলেন না কেন- এটা আমাদের কাছে এক বিরাট প্রশ্ন। হয়তো তিনিই ভালো করে জানেন কেন করা গেল না এ নির্বাচন। তবে চার চারটি বছর তো পার হয়ে গেল অনির্বাচিতভাবেই, আর কতদিন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আয়না। সারাদেশের চেহারা প্রতিফলিত হয় এ প্রতিষ্ঠানে। উল্টোভাবে বললে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অবস্থা বলে দেয়, আগামীতে দেশে কী হতে যাচ্ছে। অনির্বাচিত আরেফিন সিদ্দিকের অবস্থান কী বলে দেয়? যারা রাজনীতি করেন, তাদের জন্য অনেক ইঙ্গিতই বহন করে বর্তমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
বছর দেড়-দুয়েক আগে এই যুগান্তরেই লিখেছিলাম ‘অনির্বাচিত উপাচার্যদের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাঁচান’। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছিলেন অনির্বাচিত। এর মধ্যেই বেশক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা নির্বাচিত হয়ে এলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এখন পর্যন্ত অনির্বাচিতই রয়ে গেছেন। গণতন্ত্রের সূতিকাগারে চলছে অগণতন্ত্রের চর্চা!
বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, উপাচার্যের আদেশক্রমে প্রথমবারের মতো এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট না বসিয়ে বিগত ৯২ বছরের ঐতিহ্যকে ভেঙে দেয়া হল। প্রথাগতভাবে সাধারণত প্রতিবছর জুন মাসের শেষে সিনেট অধিবেশন বসে। সিনেট সদস্যরা নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজনকে নির্বাচিত করে একটি প্যানেল করেন। সেখান থেকেই মাননীয় চ্যান্সেলর একজনকে চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়া সিনেটের প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রণীত আইনগুলোকে স্ট্যাটিউট হিসেবে বৈধতা প্রদানই নয়, বরং সাংবাৎসরিক সব কর্মকাণ্ড নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোথায় সর্বজনীনতা রক্ষা করা হয়নি, ভবিষ্যতে কী করা উচিত ইত্যাদি বিষয়ে সিনেটের সদস্যরা দিকনির্দেশনা দেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং বার্ষিক বাজেটও পাস করা হয় সিনেটে। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটকে দেশের ‘দ্বিতীয় পার্লামেন্ট’ বলা হয়। সিনেটের এত বড় মর্যাদাকে, এতদিনের ঐতিহ্যকে ধুলায় লুটিয়ে দেয়ার জন্য বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি-না, তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। আর না হলে অন্তত এ কারণে তার নিজে থেকে পদত্যাগ করে কালিমার বোঝা মাথায় নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।
ভাবতেও অবাক লাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের ১০৫টি পদের ৯৬টিই খালি পড়ে রয়েছে। সব পদই যে একই সঙ্গে খালি হয়েছে তা নয়। খালি পদগুলো অবিলম্বে পূরণ না করে গত চারটি বছর উপাচার্য কিভাবে নিশ্চিন্তে ছিলেন, জানি না। অথচ এর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর শূন্যপদ পূরণের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের এতটুকু গাফিলতি দেখা যায়নি। বরং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পদ সৃষ্টি করে এনে তা পূরণ করা হয়েছে দলীয় প্রার্থীদের দিয়ে। ফলে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের পরিমাণ টাকার অংকে নাকি ৩১৫ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আমি হলফ করে বলতে পারি, এ বিপুল পরিমাণ অর্থের মাত্র দুই থেকে আড়াই ভাগ অর্থাৎ ৬-৭ কোটি টাকা খরচ হবে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির কাজের জন্য। আর সম্ভবত (সম্ভবত বলছি এ কারণে যে, বাজেট দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি) বেতনভাতা খাতেই খরচ হবে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এদিক থেকে আমাদের উপাচার্য তার দলের পক্ষে কাজটা ভালোই করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি দলীয় লোকদের পুনর্বাসনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মানুষ বাইরে থেকে দেখে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভালোই চলছে। গত সাড়ে চার বছরে মেধার তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় সাড়ে তিনশ’রও বেশি শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা লালনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে করা হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। একইভাবে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় শত শত যুবককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অফিসার কিংবা কর্মচারী হিসেবে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাতি বিষয়েও উপাচার্যের হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা গেছে। নিয়োগ, অর্থ বরাদ্দ, আবাসন বরাদ্দ, সাসপেনশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩-এ বর্ণিত নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইচ্ছামাফিক বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগ, এমবিএ প্রোগ্রামের পরিচালক নিয়োগ, অফিস প্রধানদের ক্ষমতা হরণ, তোষামোদকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন ক্ষমতায় বসানো, বিরোধী পক্ষের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর কারণে-অকারণে ত্রাসের স্টিমরোলার চালানো এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিরোধী শিক্ষকদের কাউকে কাউকে তোষণ করে বিরোধী পক্ষকে নিষ্ক্রিয় করে রাখাসহ হেন কোনো অনৈতিক কাজ নেই যা এই প্রশাসন করেনি। সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার এবং তাদের অধিকার হরণের প্রতিবাদে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলেন সাবেক সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাদের পদ থেকে বিদায় করা হয়েছিল অত্যন্ত অসম্মানজনকভাবে। যদিও তারা পরবর্তী সময়ে উচ্চতর পদে আসীন হয়ে প্রমাণ করেছেন সত্য ও সুন্দরের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আমার জানা মতে অত্যন্ত ভদ্র ও সজ্জন ব্যক্তি। আমার এখনও মনে পড়ে ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকের একটি ঘটনার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমি এবং তিনি দু’জনে দু’দল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। যেদিন ভোট হয়, সেদিন আমরা দু’জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ঐতিহাসিক কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম, যে গাছটি কিছুদিন আগে কেটে ফেলা হয়েছে। আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করলেও আমাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তখনকার শিক্ষক রাজনীতি ছিল এমনটাই। এখনকার মতো জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দলগুলোর নগ্ন লেজুরবৃত্তি ছিল না। যাই হোক, আমাদের গল্প করা দেখে বেশ ক’জন সিনিয়র শিক্ষক এসে আমাদের বলেছিলেন, তোমরা দু’জনেই খুব ভালো মানুষ, দু’জনেই খুবই জনপ্রিয়। আমরা চাই না, তোমাদের কেউ হারুক। তাহলে কী করতে হবে? তারা বলেছিলেন, এক বছরের টার্মটা তোমরা দু’জনে ছয় মাস ছয় মাস করে ভাগ করে নাও। কিন্তু শিক্ষক সমিতির নীতিমালা তা অনুমোদন করে না। সেই নির্বাচনে আমি তার কাছে পরাজিত হয়েছিলাম স্বল্প ভোটের ব্যবধানে। আজ এত বছর পর সেই ভদ্র সজ্জন আরেফিন সিদ্দিকের স্বেচ্ছাচারিতা দেখে এবং সে কারণে তার জনপ্রিয়তার ধস দেখে আমি ব্যথিত হই। প্রশ্ন জাগে, মানুষের কি এতটাই পরিবর্তন হতে পারে?
কেন এ পরিবর্তন? এর উত্তর আমার জানা নেই। এটা কি শুধু ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্য? নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চেষ্টায় বর্তমান উপাচার্য যে ন্যায়-অন্যায় বিচার না করে যা মনে করছেন তা-ই করে যাচ্ছেন, সেটা সহজেই দৃশ্যমান। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি না মেনে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে পদদলিত করে চার চারটি বছর নির্বাচন না দিয়ে দায়িত্বে বসে থাকবেন, সেটা বোধহয় মোটেই শোভনীয় নয়, কাম্যও নয়। কারণ আগেই বলেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক অনির্বাচিত থেকে স্বৈরাচারী কায়দায় এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন, তা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। ক্ষমতায় আরোহণের প্রথম বছরেই সিনেটের সব পদের নির্বাচন দিয়ে সিনেটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসাটা কি তার জন্য খুব কষ্টকর ছিল? মোটেই না। কারণ এখন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে দলীয় রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত। এ অবস্থায় সিনেটের কম্পোজিশন পূর্ণাঙ্গ করে নির্বাচন দিলে বর্তমান উপাচার্য তো তিনজনের প্যানেলেই থাকতেন। ধরে নিলাম, আন্তঃদলীয় কোন্দলের কারণে তিনি সর্বনিম্ন অর্থাৎ তিন নম্বরে অবস্থান করতেন। তাতে কী? মাননীয় চ্যান্সেলর তো তিনজনের মধ্যে তাকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিতে পারতেন। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ক্ষেত্রে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ফরেইন বডি’ হিসেবে সেখানে গিয়ে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেও অনেক সাহস করে সিনেটের নির্বাচন দিয়ে জিতে এসে বৈধ উপাচার্য হয়েছেন, সেজন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। শুধু তাই নয়, গণতান্ত্রিক ধারার প্রতি তার এ সম্মান প্রদর্শন দেখে ‘মাই হ্যাট’স অফ টু হিম’।
আরেফিন সিদ্দিক কি এমনটি করতে পারতেন না? তিনি গণতন্ত্রের পথে না হেঁটে গেলেন স্বৈরতন্ত্রের পথে। দলীয় শিক্ষক ও অন্যান্য সুহৃদ যারা ছিলেন, তাদের মাঝে তিনি অবিশ্বাসের মেঘ দেখতে পেলেন। ফলে আস্তে আস্তে তার দলের মানুষই সরে গেল তার কাছ থেকে। তার স্বেচ্ছাচারিতা তার দলের অনেকেই গ্রহণ করতে পারেননি। ফলে তিনি অনেকটাই একা হয়ে পড়লেন। এ অবস্থায় নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তিনি দুটি কাজ করলেন- এক, দলের অনেক যোগ্য সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষকদের কাছে টেনে নিয়ে তাদের বিশেষ সুবিধা দিলেন। এমনকি কাউকে কাউকে বয়সের তুলনায় এত গুরুদায়িত্ব দিলেন, যাতে তারা কেউ কখনোই উপাচার্যের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস না পান। দুই, বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিরোধী পক্ষের দলকে যেভাবেই হোক হাতের মুঠোয় রেখে তার চার বছরের সময়টা যেন ভালোয় ভালোয় পার হয়ে যায় সেই ব্যবস্থা করলেন। বলা যায়, এ বিষয়ে তিনি শতভাগ সফলতা লাভ করেছেন। বিরোধী সাদা দলের শিক্ষকরা এ বিষয়ে অনেক কথাই বলেন, যেগুলো প্রকাশ করা যায় না। তবে সাদা দলের মুখথুবড়ে পড়া দলীয় কার্যক্রমে সিংহভাগ শিক্ষকই যে চরম অসন্তোষে ভুগছেন, সেটা আলাপ করলেই বোঝা যায়। তাদের ভাষায়, বিগত ছয়-সাত বছর ধরে দায়িত্বপ্রাপ্ত একই ব্যক্তি এই দলের আহ্বায়ক হিসেবে দল পরিচালনা করে দলটিকে অনেকটাই অকার্যকর করে রেখেছেন, কিংবা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কথায় বলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত তো সারাদেশ শান্ত, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত তো সারাদেশও অশান্ত। একটু খোলাসা করে বললে, সারাদেশ অশান্ত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত থাকলে দেশে কোনো আন্দোলন জমে ওঠে না, আবার সারাদেশ শান্ত থাকলেও এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হলে দেশেও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের ঢেউ। জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী সাদা দল আন্দোলনের অনেক সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও রহস্যজনক কারণে তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক সহজেই চার চারটি বছর পার করে এখন পঞ্চম বছরে পড়তে চলেছেন।
এত কথা বলার কারণ, আমি এখনও বিশ্বাস করি, আমাদের অতি ভদ্র উপাচার্য কখনোই গণতন্ত্রের বিপক্ষে ছিলেন না। বরং গণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক নির্বাচনে তিনি জিততে জিততে আজ এ পর্যায়ে এসেছেন। তবে উপাচার্য হওয়ার শেষ নির্বাচনটা তিনি করলেন না কেন- এটা আমাদের কাছে এক বিরাট প্রশ্ন। হয়তো তিনিই ভালো করে জানেন কেন করা গেল না এ নির্বাচন। তবে চার চারটি বছর তো পার হয়ে গেল অনির্বাচিতভাবেই, আর কতদিন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আয়না। সারাদেশের চেহারা প্রতিফলিত হয় এ প্রতিষ্ঠানে। উল্টোভাবে বললে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক অবস্থা বলে দেয়, আগামীতে দেশে কী হতে যাচ্ছে। অনির্বাচিত আরেফিন সিদ্দিকের অবস্থান কী বলে দেয়? যারা রাজনীতি করেন, তাদের জন্য অনেক ইঙ্গিতই বহন করে বর্তমানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
No comments