জাহাঙ্গীর নাটক রহস্যে ঘেরা
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী
লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে রহস্য দানা বেঁধে উঠছে।
নির্বাচন থেকে তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন, না তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে,
তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা
গেছে, ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গত মঙ্গলবার বিকেলে টঙ্গী
গিয়ে রাতে জাহাঙ্গীরকে গাড়িতে তুলে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এ সময় জাহাঙ্গীর
সেখানে নির্বাচনী প্রচারকাজ চালাচ্ছিলেন। তাঁকে বারবার মোবাইলে ফোন দিয়ে
টঙ্গীর স্টেশন রোডের আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আসতে বলা হয়। একপর্যায়ে
জাহাঙ্গীর প্রচারকাজ বন্ধ রেখেই সেখানে যান। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে
কথা বলার একপর্যায়ে তাঁকে গাড়িতে উঠে ঢাকার দিকে যেতে দেখা যায়।
পরে ওই রাতেই খবর রটে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থক ও ভোটাররা। ওই রাতের প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হয় তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছে, নয়তো সরে দাঁড়ানোর কথা রটানো হচ্ছে। কারণ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের নেতাকে তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অটল থাকতে দেখেছে। সরে দাঁড়ানোর কোনো প্রসঙ্গই কখনো আসেনি।
এ ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর আলমের কোনো খোঁজ মিলছে না। সরাসরি তাঁর বক্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার দিনভর বিভিন্ন মাধ্যমে সন্ধানের পর রাতে একটি সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর ঢাকার মিরপুরে তাঁর শ্বশুরালয়ে রয়েছেন। রাতে সেখানে যাওয়া সম্ভব না হলেও জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিরপুরের শ্বশুরালয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর আজ (গতকাল) সকালে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ, কর্মী বাহিনীর চাপ- সব মিলিয়ে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। তাই ফোন বন্ধ করে রেখেছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অনেক চড়াই-উতরাই পার করে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে আনারস প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে প্রচারণায় নামেন জাহাঙ্গীর। গাজীপুর বাজার থেকে কেনা শত শত আনারস হাতে নিয়েই দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়াম থেকে শুরু করেন প্রচারণা। এক পর্যায়ে বিকেলে টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হল এলাকার মাজার রোডে নির্বাচনী প্রচারণায় যান। সেখানে প্রচারণা চালানোর এক পর্যায়ে টঙ্গী নতুনবাজার এলাকার আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের আট থেকে দশ জন সাবেক নেতা বারবার ফোন করে তাঁকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যেতে বলেন। প্রচারণা বন্ধ করেই স্টেশন রোডের কার্যালয়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারসহ সাবেক সহসভাপতি শাহাজাদা মহিউদ্দিন ও রফিক কোতোয়াল জাহাঙ্গীরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরকে গাড়িতে তুলেই তাঁরা নিয়ে যান ঢাকায়।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রফিক কোতোয়াল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা জাহাঙ্গীরকে জোর করে আনিনি। তাকে বুঝিয়ে টঙ্গী থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর আলম সমন্বয় করে কাজ শুরু করবে।'
কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি ও গাজীপুর শহরের বাড়িতে গিয়ে জাহাঙ্গীর বা তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। কানাইয়া এলাকায় জাহাঙ্গীরের প্রতিবেশী আলিম উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীরের মা-বাবা দীর্ঘদিন ধরে শহরের দিঘীরচালা এলাকার বাসায় বসবাস করেন। বাবা মিজানুর রহমান মাঝে মাঝে এসে দেখে যান। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশনে শুনেছি জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এটা গ্রামের মানুষ কেউ বিশ্বাস করে না।
প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম বলেন, এভাবে জোর করে কাউকে ভোট থেকে বসিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক করেনি সরকার। জাহাঙ্গীর এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। তিনি নির্বাচন করলে বিপুল ভোটে গাজীপুরবাসী জয়ী করত। একইভাবে শহরের দিঘীরচালায় জাহাঙ্গীরের আরেক বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে শতাধিক লোকের ভিড়। সবাই দেখা করতে আসছে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও দেখা পায়নি তারা। কেউ বাসায় নেই। জাহাঙ্গীরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও পায়নি তাঁকে।
বাড়ির সামনে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব আহমত আলী বলেন, 'টিভিতে শুনছি জাহাঙ্গীর সরে দাড়াইছে, এখন তাঁর মুখেই শুনতে আইছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর দেখা পাই নাই।'
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন যুবক উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই বিজয়ী হবেন। জাহাঙ্গীর ভাইকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে দল ঠিক করেনি। একজন জনপ্রিয় নেতাকে এভাবে সরিয়ে দেওয়ায় আমরা হতাশ।'
জাহাঙ্গীর এখন কোথায় আছেন জানতে চাইলে তাঁর বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আবু সিদ্দিক বলেন, 'কোথায় আছেন জানি না, তবে গত রাতেই উনার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্য বাসায় কেউ নাই। তবে সকাল থেকে শত শত কর্মী-সমর্থকরা উনার খোঁজ করতে বাড়িতে আসছে। কেউ কেউ চোখের পানি ফেলছে।'
মোবাইলে কথা হয় জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মো. আল আমীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই, মোবাইল ফোনও বন্ধ পাচ্ছি। তিনি কোথায় আছেন সেটাও আমরা বলতে পারছি না। মানুষের কাছ থেকে শুনেছি, কে বা কারা আমার ভাইকে ঢাকায় নিয়ে গেছে। পরে টেলিভিশনের খবরে জানতে পারি, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ভাইকে না পাওয়ার কারণে আমার মা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাঁকে ঢাকায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বুধবার বিকেলে বাসায় নিয়ে আসা হয়। ভাইকে নিয়ে পরিবারের সবাই এখন চিন্তিত।'
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যের ইঙ্গিতে জাহাঙ্গীরকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছেন, ভবিষ্যতে তোমাকে অন্য জায়গায় স্থান দেওয়া হবে। এখন ঐক্যবদ্ধভাবে আজমতের পক্ষে কাজ করো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বৈঠকে উপস্থিতদের একজন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গতকাল (আজ বুধবার) জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। তাঁকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় আছে তাও জানি না।'
কী কারণে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো মন খারাপ, তাই কারো সঙ্গে কথা বলবেন না সিদ্ধান্ত নিয়ে ফোন বন্ধ রেখেছেন।
জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন- স্থানীয়ভাবে নিজে এমন কোনো ঘোষণা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না এখন পর্যন্ত সেটা করেননি। তবে জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে গেছেন, এই মর্মে একটি লিখিত দিয়েছেন, যা আমাদের কাছে রয়েছে।'
সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াবে না- এমন সিদ্ধান্তে অটল থাকলে রাতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই মূলত জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়া হয়। গত সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় আওয়ামী লীগের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দলের দুই প্রার্থী নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এ আশঙ্কায় সরে দাঁড়াতে জাহাঙ্গীরকে বাধ্য করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার মোবারক হোসেন জানান, অনেক কর্মী-সমর্থকের সামনেই তাঁকে তুলে নিয়ে যান সরকারদলীয় নেতারা। রাতেই খবর রটে তিনি নাকি সরকারদলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। এ রটনায় কেউ বিশ্বাস করেনি। নেতা-কর্মীরা মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমের কোনো হদিস না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ রয়েছে। তবে গাজীপুর মহানগরের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী আলিমউদ্দিন জানায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হওয়ার ঘোঘণা দেওয়ার পর থেকে নানামুখী চাপে ছিলেন। মূলত নির্বাচন থেকে সরাতেই এসব চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। টঙ্গীর মাছিমপুর এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমীন জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হল এলাকার মাজার রোডে প্রচারণাকালে তাঁর মোবাইলে বহুবার ফোন আসে। এক পর্যায়ে তিনি ফোন পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান।
এদিকে আজমত উল্লাহ খানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাহাঙ্গীর এই নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে দলীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। জাহাঙ্গীর আমার ছোট ভাই। আমাদের মধ্যে আর কোনো বিভেদ বা কোন্দল নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ।'
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আলোচনায় ছিলেন তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী। মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ, জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এ এম মান্নান ও আওয়মী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিন প্রার্থীই দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালান। কে জিতবে, তা নিয়ে চলে হিসাব-নিকাশ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীরকে নিয়ে চলে আলোচনার ঝড়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন জাহাঙ্গীর। ওই অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়ে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের সমর্থকসহ দলের শীর্ষ মহল। মহাজোটের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ফুরফুরে অবস্থায় ছিল জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এ এম মান্নান।
জাহাঙ্গীরের বাড়ির কেন্দে এক হাজার ৮৪০ ভোটের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন তাঁর সমর্থক। ভোটারদের কেউ কেউ ধারণা করছেন, এখন তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারণে হিতে বিপরীতও হতে পারে ভোটের চিত্র। ওই কেন্দে র সত্তোরোর্ধ্ব ভোটার ফাতেমা আখতার বলেন, জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ক্ষোভে ভোট দিতে অনেকে কেন্দে যাবেন না। আর গেলেও অধিকাংশ ভোটার জাহাঙ্গীর আলমের আনারস প্রতীকেই ভোট দেবেন। সে নির্বাচনে থাকুক বা না থাকুক। তবে কানাইয়া এলাকার ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন বলেন, এখন ক্ষোভের কারণে এসব কথা বলা হলেও নির্বাচনে ১৪ দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তাঁরা। মহাজোটের ভোট অন্য বাক্সে যাবে না বলে তিনি দাবি করেন। গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ইলিয়াস কালের কণ্ঠকে জানান, জাহাঙ্গীর আলম সরে দাঁড়ানোতে ১৪ দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত হয়ে গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত হননি জাহাঙ্গীর : মহাজোট প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও গাজীপুর-২-এর সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে জাহাঙ্গীরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি। তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর অনুপস্থিতিতেই বৈঠক শেষ করতে হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি এমপি আ ক ম মোজাম্মেল হক, এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রমুখ।
পরে ওই রাতেই খবর রটে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
কিন্তু এ কথা মানতে নারাজ জাহাঙ্গীরের কর্মী-সমর্থক ও ভোটাররা। ওই রাতের প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হয় তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছে, নয়তো সরে দাঁড়ানোর কথা রটানো হচ্ছে। কারণ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের নেতাকে তারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অটল থাকতে দেখেছে। সরে দাঁড়ানোর কোনো প্রসঙ্গই কখনো আসেনি।
এ ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীর আলমের কোনো খোঁজ মিলছে না। সরাসরি তাঁর বক্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল বুধবার দিনভর বিভিন্ন মাধ্যমে সন্ধানের পর রাতে একটি সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর ঢাকার মিরপুরে তাঁর শ্বশুরালয়ে রয়েছেন। রাতে সেখানে যাওয়া সম্ভব না হলেও জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিরপুরের শ্বশুরালয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর আজ (গতকাল) সকালে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর চাপ, কর্মী বাহিনীর চাপ- সব মিলিয়ে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত। তাই ফোন বন্ধ করে রেখেছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অনেক চড়াই-উতরাই পার করে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে আনারস প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে প্রচারণায় নামেন জাহাঙ্গীর। গাজীপুর বাজার থেকে কেনা শত শত আনারস হাতে নিয়েই দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়াম থেকে শুরু করেন প্রচারণা। এক পর্যায়ে বিকেলে টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হল এলাকার মাজার রোডে নির্বাচনী প্রচারণায় যান। সেখানে প্রচারণা চালানোর এক পর্যায়ে টঙ্গী নতুনবাজার এলাকার আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের আট থেকে দশ জন সাবেক নেতা বারবার ফোন করে তাঁকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যেতে বলেন। প্রচারণা বন্ধ করেই স্টেশন রোডের কার্যালয়ে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারসহ সাবেক সহসভাপতি শাহাজাদা মহিউদ্দিন ও রফিক কোতোয়াল জাহাঙ্গীরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলার এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরকে গাড়িতে তুলেই তাঁরা নিয়ে যান ঢাকায়।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রফিক কোতোয়াল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা জাহাঙ্গীরকে জোর করে আনিনি। তাকে বুঝিয়ে টঙ্গী থেকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর আলম সমন্বয় করে কাজ শুরু করবে।'
কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি ও গাজীপুর শহরের বাড়িতে গিয়ে জাহাঙ্গীর বা তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। কানাইয়া এলাকায় জাহাঙ্গীরের প্রতিবেশী আলিম উদ্দিন বলেন, জাহাঙ্গীরের মা-বাবা দীর্ঘদিন ধরে শহরের দিঘীরচালা এলাকার বাসায় বসবাস করেন। বাবা মিজানুর রহমান মাঝে মাঝে এসে দেখে যান। তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশনে শুনেছি জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এটা গ্রামের মানুষ কেউ বিশ্বাস করে না।
প্রতিবেশী ফাতেমা বেগম বলেন, এভাবে জোর করে কাউকে ভোট থেকে বসিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক করেনি সরকার। জাহাঙ্গীর এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। তিনি নির্বাচন করলে বিপুল ভোটে গাজীপুরবাসী জয়ী করত। একইভাবে শহরের দিঘীরচালায় জাহাঙ্গীরের আরেক বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে শতাধিক লোকের ভিড়। সবাই দেখা করতে আসছে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। কিন্তু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও দেখা পায়নি তারা। কেউ বাসায় নেই। জাহাঙ্গীরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও পায়নি তাঁকে।
বাড়ির সামনে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব আহমত আলী বলেন, 'টিভিতে শুনছি জাহাঙ্গীর সরে দাড়াইছে, এখন তাঁর মুখেই শুনতে আইছিলাম। কিন্তু সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর দেখা পাই নাই।'
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন যুবক উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই বিজয়ী হবেন। জাহাঙ্গীর ভাইকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে দল ঠিক করেনি। একজন জনপ্রিয় নেতাকে এভাবে সরিয়ে দেওয়ায় আমরা হতাশ।'
জাহাঙ্গীর এখন কোথায় আছেন জানতে চাইলে তাঁর বাড়ির কেয়ারটেকার মো. আবু সিদ্দিক বলেন, 'কোথায় আছেন জানি না, তবে গত রাতেই উনার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ জন্য বাসায় কেউ নাই। তবে সকাল থেকে শত শত কর্মী-সমর্থকরা উনার খোঁজ করতে বাড়িতে আসছে। কেউ কেউ চোখের পানি ফেলছে।'
মোবাইলে কথা হয় জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মো. আল আমীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই, মোবাইল ফোনও বন্ধ পাচ্ছি। তিনি কোথায় আছেন সেটাও আমরা বলতে পারছি না। মানুষের কাছ থেকে শুনেছি, কে বা কারা আমার ভাইকে ঢাকায় নিয়ে গেছে। পরে টেলিভিশনের খবরে জানতে পারি, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ভাইকে না পাওয়ার কারণে আমার মা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাঁকে ঢাকায় নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বুধবার বিকেলে বাসায় নিয়ে আসা হয়। ভাইকে নিয়ে পরিবারের সবাই এখন চিন্তিত।'
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যের ইঙ্গিতে জাহাঙ্গীরকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাঁকে চাপ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছেন, ভবিষ্যতে তোমাকে অন্য জায়গায় স্থান দেওয়া হবে। এখন ঐক্যবদ্ধভাবে আজমতের পক্ষে কাজ করো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই বৈঠকে উপস্থিতদের একজন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গতকাল (আজ বুধবার) জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। তাঁকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় আছে তাও জানি না।'
কী কারণে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো মন খারাপ, তাই কারো সঙ্গে কথা বলবেন না সিদ্ধান্ত নিয়ে ফোন বন্ধ রেখেছেন।
জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন- স্থানীয়ভাবে নিজে এমন কোনো ঘোষণা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না এখন পর্যন্ত সেটা করেননি। তবে জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে গেছেন, এই মর্মে একটি লিখিত দিয়েছেন, যা আমাদের কাছে রয়েছে।'
সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা গাজীপুরে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াবে না- এমন সিদ্ধান্তে অটল থাকলে রাতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেই মূলত জাহাঙ্গীরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়া হয়। গত সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় আওয়ামী লীগের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দলের দুই প্রার্থী নির্বাচনে ভরাডুবির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এ আশঙ্কায় সরে দাঁড়াতে জাহাঙ্গীরকে বাধ্য করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার মোবারক হোসেন জানান, অনেক কর্মী-সমর্থকের সামনেই তাঁকে তুলে নিয়ে যান সরকারদলীয় নেতারা। রাতেই খবর রটে তিনি নাকি সরকারদলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। এ রটনায় কেউ বিশ্বাস করেনি। নেতা-কর্মীরা মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমের কোনো হদিস না পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ রয়েছে। তবে গাজীপুর মহানগরের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী আলিমউদ্দিন জানায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হওয়ার ঘোঘণা দেওয়ার পর থেকে নানামুখী চাপে ছিলেন। মূলত নির্বাচন থেকে সরাতেই এসব চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। টঙ্গীর মাছিমপুর এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী রুহুল আমীন জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টঙ্গীর আনারকলি সিনেমা হল এলাকার মাজার রোডে প্রচারণাকালে তাঁর মোবাইলে বহুবার ফোন আসে। এক পর্যায়ে তিনি ফোন পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যান।
এদিকে আজমত উল্লাহ খানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাহাঙ্গীর এই নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে দলীয় স্বার্থে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। জাহাঙ্গীর আমার ছোট ভাই। আমাদের মধ্যে আর কোনো বিভেদ বা কোন্দল নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ।'
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আলোচনায় ছিলেন তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী। মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ, জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এ এম মান্নান ও আওয়মী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিন প্রার্থীই দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালান। কে জিতবে, তা নিয়ে চলে হিসাব-নিকাশ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীরকে নিয়ে চলে আলোচনার ঝড়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন জাহাঙ্গীর। ওই অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়ে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের সমর্থকসহ দলের শীর্ষ মহল। মহাজোটের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ফুরফুরে অবস্থায় ছিল জোট সমর্থিত প্রার্থী অধ্যাপক এ এম মান্নান।
জাহাঙ্গীরের বাড়ির কেন্দে এক হাজার ৮৪০ ভোটের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন তাঁর সমর্থক। ভোটারদের কেউ কেউ ধারণা করছেন, এখন তিনি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারণে হিতে বিপরীতও হতে পারে ভোটের চিত্র। ওই কেন্দে র সত্তোরোর্ধ্ব ভোটার ফাতেমা আখতার বলেন, জাহাঙ্গীর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ক্ষোভে ভোট দিতে অনেকে কেন্দে যাবেন না। আর গেলেও অধিকাংশ ভোটার জাহাঙ্গীর আলমের আনারস প্রতীকেই ভোট দেবেন। সে নির্বাচনে থাকুক বা না থাকুক। তবে কানাইয়া এলাকার ব্যবসায়ী আলা উদ্দিন বলেন, এখন ক্ষোভের কারণে এসব কথা বলা হলেও নির্বাচনে ১৪ দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তাঁরা। মহাজোটের ভোট অন্য বাক্সে যাবে না বলে তিনি দাবি করেন। গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ইলিয়াস কালের কণ্ঠকে জানান, জাহাঙ্গীর আলম সরে দাঁড়ানোতে ১৪ দলীয় প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত হয়ে গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত হননি জাহাঙ্গীর : মহাজোট প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও গাজীপুর-২-এর সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল বুধবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে জাহাঙ্গীরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি। তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তাঁর অনুপস্থিতিতেই বৈঠক শেষ করতে হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি এমপি আ ক ম মোজাম্মেল হক, এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রমুখ।
No comments