ব্যাচেলরে আপত্তি বাড়িওয়ালাদের! by আব্দুর রশিদ
‘বাড়িওয়ালাকে টার্গেট করেছিলাম পাক্কা দুই
বছর আগে। মামা-চাচা-খালু-আংকেল কী-ই না ডেকেছি। উদ্দেশ্য একটাই—ওনার বাড়ির
চিলেকোঠাটা। একগাদা শর্ত মেনে অবশেষে পেলাম। ছয় মাস পর পর ভাড়া বাড়ায়,
পানি কিন্তু দেয় না।
গোসলের আগে চিত্কার করে পানি চাইতে
হয়। আর মালিকের তো আমার হাঁটা-চলা-ওঠা-বসা সবকিছুতেই আপত্তি! যা বলেই ডাকি,
এখন আর ব্যাটার মুখ দেখতে ইচ্ছে হয় না...।’
এ তো গেল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাচেলরের (অবিবাহিত) কথা। রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়ার পর্বতা এলাকায় থাকেন তিনি। পড়েন তেজগাঁও কলেজে, ফিন্যান্স বিভাগে। বাড়িওয়ালাদেরও ব্যাচেলরদের ব্যাপারে ঘোর আপত্তি। শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ভবনের মালিক শাহনাজ ইউসুফ বলেন, ‘ব্যাচেলররা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। কীভাবে বাসা ভাড়া দেব ওদের।’ কেউ কেউ বলেছেন, ব্যাচেলররা বাড়িভাড়া নেওয়ার সময় বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেন। তাই তাঁদের বিশ্বাস করা যায় না। ব্যাচেলরদের দাবি, তাঁরা যতই বোঝান দেশে আইন-কানুন আছে, সবাই এক রকম নয়, তবু বাড়িওয়ালার মন গলে না।
ব্যাচেলর আর বাড়িওয়ালাদের এই বিরোধ চলে আসছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু মুক্তির যেন উপায় নেই। ঢাকার অন্যতম বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক মো. আক্তারুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বাড়ির মালিক কাকে ভাড়া দেবেন আর কাকে দেবেন না, সে বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো আইনগত সুযোগ নেই। ভাড়াটের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন আসবে তখনই, যখন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে একটা চুক্তিতে পৌঁছাবেন।
বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আখতার বলেন, প্রত্যেক মানুষকে কোনো না কোনো সময় ব্যাচেলর হিসেবে বসবাস করতে হয়। বিশ্বের কোনো দেশে ব্যাচেলররা এই সমস্যায় পড়েন না। বাসা পাওয়া তাঁদের অধিকার। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাচেলরদেরও বিশ্বাসযোগ্যতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন।
ব্যাচেলর কারা, সংখ্যা কত, থাকেন কোথায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, সাধারণত ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে যাঁরা বিয়ে করেননি, তাঁদের ব্যাচেলর বলা হয়। কিন্তু ঢাকায় এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বিয়ে করেছেন, অথচ পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। অনেকে সদ্য পরিবার ছেড়ে নানা কাজে ঢাকা শহরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তাঁদেরও ব্যাচেলর হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বাইরে আছেন বিপুলসংখ্যক অবিবাহিত শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১০টি সরকারি কলেজ আছে এই মহানগরে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দেওয়া তথ্য মতে, এ ১১টি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বেসরকারি ৩৮টি মেডিকেল কলেজের ৩২টি আর বেসরকারি ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টির অবস্থান ঢাকায়। এগুলোর কোনোটিরই পর্যাপ্ত আবাসন-সুবিধা নেই। আছে এইচএসসির পর মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রায় এক লাখ ছাত্রের চাপ। এর একটি বড় অংশকে বাড়ি খুঁজতে গিয়ে নাকাল হতে হয় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে।
বাড়িওয়ালাদের শতভাগ যে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেন না, তা নয়। কেউ কেউ দেন। রাজধানীর কমলাপুর, ফার্মগেট, শান্তিনগর, মগবাজার, মালিবাগ, আজিমপুর, লক্ষ্মীবাজার, ওয়ারী, মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, তেজগাঁও, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডির ভূতের গলি, শাহবাগের আজিজ মার্কেট, কল্যাণপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, খিলগাঁও এলাকায় এমন বাড়ি পাওয়া যাবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাচেলরদের জন্য বরাদ্দ ভবনের সবচেয়ে ওপরের তলায়, নয়তো বাড়ির একেবারে নিচের তলায়। মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতায় তিন ব্যাচেলর থাকেন চিলেকোঠায়। সরাসরি রোদ পড়ে বলে এ বাড়িতে রাত ১২টার আগে ঢোকা যায় না। আর আজিমপুরের ছাপরা মসজিদ এলাকার চারতলা ভবনের নিচতলায় থাকেন বিভিন্ন বয়সী ১২ জন ব্যাচেলর। চারদিকে বহুতল ভবন থাকায় নিচতলায় দিনের বেলায়ও থাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেঝে থাকে সারাক্ষণ স্যাঁতসেঁতে।
মেসে থাকেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থাকার অবস্থা সুবিধার নয় বলে তাঁরা প্রায়ই নানা রোগে ভোগেন। রান্নাবান্নার জন্য ঠিকে ঝি-ও পাওয়া যায় না সব সময়। সেই সঙ্গে আছে ছয় মাস পর পর বাড়িওয়ালার ভাড়া বাড়ানোর অত্যাচার। বাড়ির মালিকের সাফ কথা, ‘পোষালে থাকো, না হলে কেটে পড়ো।’
তবে হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় মোটামুটি ভালোভাবে থাকার সুযোগ পেয়ে থাকেন ব্যাচেলররা। সাধারণত আত্মীয়তার সূত্র ধরে পাওয়া যায় এমন বাড়ি। কোথাও কোথাও ব্যাচেলরদের আচরণে খুশি হয়ে দিনের পর দিন থাকতে দিয়েছেন ভবনমালিক। বাসাবোর আহমদবাগের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক তাহমিনা হক বলেন, ‘আমার বাড়িতে বেশ কটা ছেলে থাকে। বেশ ভালো ওরা। চার বছর ধরে এখানে থাকছে। তবে বেশ কয় বছর আগে এ বাড়িতেই অন্য কয়েকজন ছিল। পরে জানতে পারি, ওরা মাদকসেবী। পুলিশ এসেও ঝামেলা করেছে কয়েকবার।’
এ তো গেল নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাচেলরের (অবিবাহিত) কথা। রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়ার পর্বতা এলাকায় থাকেন তিনি। পড়েন তেজগাঁও কলেজে, ফিন্যান্স বিভাগে। বাড়িওয়ালাদেরও ব্যাচেলরদের ব্যাপারে ঘোর আপত্তি। শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ভবনের মালিক শাহনাজ ইউসুফ বলেন, ‘ব্যাচেলররা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। কীভাবে বাসা ভাড়া দেব ওদের।’ কেউ কেউ বলেছেন, ব্যাচেলররা বাড়িভাড়া নেওয়ার সময় বানিয়ে বানিয়ে কথা বলেন। তাই তাঁদের বিশ্বাস করা যায় না। ব্যাচেলরদের দাবি, তাঁরা যতই বোঝান দেশে আইন-কানুন আছে, সবাই এক রকম নয়, তবু বাড়িওয়ালার মন গলে না।
ব্যাচেলর আর বাড়িওয়ালাদের এই বিরোধ চলে আসছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু মুক্তির যেন উপায় নেই। ঢাকার অন্যতম বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক মো. আক্তারুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বাড়ির মালিক কাকে ভাড়া দেবেন আর কাকে দেবেন না, সে বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো আইনগত সুযোগ নেই। ভাড়াটের অধিকার রক্ষার প্রশ্ন আসবে তখনই, যখন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে একটা চুক্তিতে পৌঁছাবেন।
বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আখতার বলেন, প্রত্যেক মানুষকে কোনো না কোনো সময় ব্যাচেলর হিসেবে বসবাস করতে হয়। বিশ্বের কোনো দেশে ব্যাচেলররা এই সমস্যায় পড়েন না। বাসা পাওয়া তাঁদের অধিকার। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাচেলরদেরও বিশ্বাসযোগ্যতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন।
ব্যাচেলর কারা, সংখ্যা কত, থাকেন কোথায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, সাধারণত ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের মধ্যে যাঁরা বিয়ে করেননি, তাঁদের ব্যাচেলর বলা হয়। কিন্তু ঢাকায় এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বিয়ে করেছেন, অথচ পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। অনেকে সদ্য পরিবার ছেড়ে নানা কাজে ঢাকা শহরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তাঁদেরও ব্যাচেলর হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বাইরে আছেন বিপুলসংখ্যক অবিবাহিত শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১০টি সরকারি কলেজ আছে এই মহানগরে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দেওয়া তথ্য মতে, এ ১১টি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত আছেন প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বেসরকারি ৩৮টি মেডিকেল কলেজের ৩২টি আর বেসরকারি ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫২টির অবস্থান ঢাকায়। এগুলোর কোনোটিরই পর্যাপ্ত আবাসন-সুবিধা নেই। আছে এইচএসসির পর মেডিকেল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রায় এক লাখ ছাত্রের চাপ। এর একটি বড় অংশকে বাড়ি খুঁজতে গিয়ে নাকাল হতে হয় প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে।
বাড়িওয়ালাদের শতভাগ যে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেন না, তা নয়। কেউ কেউ দেন। রাজধানীর কমলাপুর, ফার্মগেট, শান্তিনগর, মগবাজার, মালিবাগ, আজিমপুর, লক্ষ্মীবাজার, ওয়ারী, মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, তেজগাঁও, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডির ভূতের গলি, শাহবাগের আজিজ মার্কেট, কল্যাণপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, বাসাবো, খিলগাঁও এলাকায় এমন বাড়ি পাওয়া যাবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাচেলরদের জন্য বরাদ্দ ভবনের সবচেয়ে ওপরের তলায়, নয়তো বাড়ির একেবারে নিচের তলায়। মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতায় তিন ব্যাচেলর থাকেন চিলেকোঠায়। সরাসরি রোদ পড়ে বলে এ বাড়িতে রাত ১২টার আগে ঢোকা যায় না। আর আজিমপুরের ছাপরা মসজিদ এলাকার চারতলা ভবনের নিচতলায় থাকেন বিভিন্ন বয়সী ১২ জন ব্যাচেলর। চারদিকে বহুতল ভবন থাকায় নিচতলায় দিনের বেলায়ও থাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেঝে থাকে সারাক্ষণ স্যাঁতসেঁতে।
মেসে থাকেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থাকার অবস্থা সুবিধার নয় বলে তাঁরা প্রায়ই নানা রোগে ভোগেন। রান্নাবান্নার জন্য ঠিকে ঝি-ও পাওয়া যায় না সব সময়। সেই সঙ্গে আছে ছয় মাস পর পর বাড়িওয়ালার ভাড়া বাড়ানোর অত্যাচার। বাড়ির মালিকের সাফ কথা, ‘পোষালে থাকো, না হলে কেটে পড়ো।’
তবে হাতেগোনা কয়েকটি জায়গায় মোটামুটি ভালোভাবে থাকার সুযোগ পেয়ে থাকেন ব্যাচেলররা। সাধারণত আত্মীয়তার সূত্র ধরে পাওয়া যায় এমন বাড়ি। কোথাও কোথাও ব্যাচেলরদের আচরণে খুশি হয়ে দিনের পর দিন থাকতে দিয়েছেন ভবনমালিক। বাসাবোর আহমদবাগের একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক তাহমিনা হক বলেন, ‘আমার বাড়িতে বেশ কটা ছেলে থাকে। বেশ ভালো ওরা। চার বছর ধরে এখানে থাকছে। তবে বেশ কয় বছর আগে এ বাড়িতেই অন্য কয়েকজন ছিল। পরে জানতে পারি, ওরা মাদকসেবী। পুলিশ এসেও ঝামেলা করেছে কয়েকবার।’
No comments