ভালবাসলে কখনোই দুঃখিত বলতে নেই by কামরম্নল হাসান
অসাধারণ এই বাক্যের জন্ম জগৎজুড়ে আলোড়িত, প্রশংসিত ও আলোচিত। ভালবাসার একটি গল্প কাহিনী "লাভ স্টোরি" থেকে। লাভ স্টোরি সম্ভবত বিশ্বজুড়ে আলোচিত এমন একটি গল্প যার তীব্র আবেগ ছুঁয়ে যায় পাঠকের হৃদয়ে এবং এর ব্যাপ্তি ঘটে প্রত্যকের ব্যক্তিগত জীবনে।
এই ধরনের একটি গল্প সম্পর্কে বলতে যাওয়া সত্যিই মুশকিল। সত্তর দশকের আলোচিত এই গল্প মূলত একটি ছবির চিত্রনাট্য থেকে উঠে আসে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো গল্পের নায়কের কাহিনী তৈরি করা হয় লেখকের বিশ্ববিদ্যালয় রম্নমমেট টমি লি জোনকে কেন্দ্র করে।গল্পের মূল চরিত্র অলিভার, সে গল্পে আমাদের জানায় তার জীবনের অভিজ্ঞতা। কিভাবে অলিভার জীবনের প্রিয় সেই মানুষটির সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয়, কিভাবে তাদের মাঝে ভালবাসার জন্ম এবং অবশেষে জেনিফারের মৃতু্য।
গল্পের সাফল্যের পর জনপ্রিয় এই কাহিনী পরবতর্ীতে কিছুটা কাটসাট করে চিত্রনাট্যে রূপ নেয়। ছবিতে অভিনয় করে এলি ম্যাকগ্রে এবং রিয়ান নীল। এই ছবি পরবতর্ীতে ৭টি বিভাগে অস্কার মনোয়নসহ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য এবং ছবি হিসেবে অস্কার জিতে নেয়। গল্পের শুরম্নটা অসাধারণ। এখন একটি চমৎকার শুরম্ন সত্যিই চমকপ্রদ।
"একজন পঁচিশ বছরের তরম্নণীর মৃতু্য আপনার মনে কি রেখাপাত করে? যখন আপনি জানবেন সে সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। পাশাপাশি সে মোর্জাট এবং বিটলস শুনতেও খুব ভালবাসে এবং ভালবাসে আমাকে..."
ধ্রূপদী এই সূচনা গল্পের কাহিনীকে আজীবন অমস্নান করে রাখবে পাঠকের হৃদয়ে। কিছুটা অবাক হতে হয় যখন দেখা যায় গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অলিভার খুব দ্রম্নত এবং সহজে প্রেমে পড়ে পাশর্্ববতর্ী আরেকটি কলেজের সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী জেনিফারের। অলিভার বেরেট পড়েন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পাশাপাশি সে বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্টেও অংশগ্রহণ করে। গল্পের অন্য চরিত্র জেনিফার প্রথম দিকে কিছুটা সঙ্কোচবোধ করলেও পরবতর্ীতে দেখা যায় তাদের ভালবাসা সঠিক পথে এগোয়। প্রথম দিকে অলিভার ভাবে জেনিফার হয়ত তার ওপর কিছুটা বিরক্ত কিনত্মু পরবতর্ীতে অলিভার জেনিফার সম্পর্কে সবকিছুই জানতে পারে। অলিভার তার পড়ালেখা নিয়েও কিছুটা হতাশাগসত্ম ছিল। প্রথম দিকে জেনিফারের সঙ্গে প্রথম যখন তার দেখা হয় তখন সে কিছুটা কৌতুকছলে এই কথাটি জানায়।
অন্যদিকে জেনিফার ছিল প্রাণবনত্ম এবং নিজের প্রতি আসত্মাশীল। পুরো গল্পজুড়ে তাদের দু'জনের মাঝে যে বাক্যবিনিময় হয় তা সত্যিই চমৎকার। অলিভার যতই জেনিফারকে বোঝানোর চেষ্টা করত তত দ্রম্নতই জেনিফার সে ব্যাপারে তার মতামত ব্যক্ত করত। তাদের এই ভার্বাল ডুয়েল বা তর্কযুদ্ধ তাদের বিয়ের পরও চলতে থাকে। গল্পের সবচেয়ে চমৎকার অংশটি হলো অলিভার যখন জেনিকে বিয়ের প্রনত্মাব দেয়। আর অন্যদিকে এই প্রসত্মাবে জেনিফার সব শানত্ম মেজাজে নিজের ইচ্ছার কথা জানায়। জেনিফারের চরিত্রটি সত্যিই পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, যখন সে অলিভার এবং তার পিতার মধ্যে যে দূরত্ব তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করে। গল্পের অলিভারের হকি গেমসেরও কিছু ছবি পাওয়া যায়, যেখানে জেনিফার অলিভারের প্রতিটি গেমসে তাকে প্রেরণার পাশাপাশি সাহস দেয়। অলিভারের চরিত্রটিও চমৎকার এবং মজার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই ছাত্র যখন জেনিফারকে তাদের সম্ভাব্য সনত্মানের নাম ঠিক করার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করে। অলিভারের রম্নমমেটদের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক তাও পাঠকদের খুব মজা দেয়। সবচেয়ে মজার কিংবা হাসির ব্যাপার হলো তাদের সনত্মানদের যখন নাম ঠিক করা হয়।
অলিভার চায় তাদের পুরম্নষ সনত্মানের নাম হবে বোজো। এবং জেনিফারকে কনভিন্স করতে অলিভার অনেক হাস্য-কৌতুকের জন্ম দেয়।
যদিও গল্পের শুরম্নতেই পাঠক জানতে পারে কেন্দ্রীয় চরিত্র জেনিফারের মৃতু্য তবুও গল্পের যে ধারাবাহিকতা সে ধারায় যখন পাঠক এগোতে থাকে তখন সে নিজেই সম্পৃক্ত হতে চায় এই কাহিনীতে। পাঠক জানতে পারে জেনিফার খুব দ্রম্নত মৃতু্যমুখে পতিত। জেনিফারের শেষ সংলাপ ছিল "ধন্যবাদ অলি"। এই সংলাপের পরবতর্ী সংলাপের মাধ্যমেই জন্ম শতাব্দীর প্রেম সংলাপ "ভালবাসলে কখনোই দুঃখিত বলতে নেই" এই ছিল অলিভারের উত্তর।
গল্পের শেষ দিক ছিল খুবই সহজ কিনত্মু বেদনাদায়ক। প্রতিটি পাঠক গল্পের শেষ দিকগুলো বার বার উল্টিয়ে পড়ে ফিরে পেতে চায় সেই জেনিফারকে। অনেক মানুষ এই অনবদ্য গল্পের শেষ দিকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গল্পের বেদনাদায়ক পটভূমির কারণে। একদম শেষ দিকে দেখা যায় অলিভার তার পিতার কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
খুব সংপ্তি এই গল্প খুব দ্রম্নত শেষ করা গেলেও এর আবেগ পাঠক হৃদয়ে চির অমস্নান থাকে সারাটা জীবন। এর পূর্বে এত সংপ্তি কিনত্মু জনপ্রিয় ভালবাসার গল্প সৃষ্টি হয়নি। এই গল্পের আকর্ষণীয় দিকটি হলো গল্প-উপন্যাসের তথাকথিত সংলাপকে বাদ দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে বানত্মবজীবনের কথোপকথন। ট্রেজিক এই অনবদ্য ভালবাসার গল্প সবার মনকে ছুঁয়ে যায়।
একটি সময় মনে করা হতো সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট আল গোরের জীবনের কাহিনীকে ঘিরে এই গল্পের পটভূমি। কিনত্মু পরবতর্ীতে লেখক নিজেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যাপারটির সুরাহা করেন। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে এরিক সেগাল জানান, গল্পের কাহিনী আল-গোরকে ঘিরে নয় বরং লেখকের বিশ্ববিদ্যালয় সময়কালীন সহপাঠী টমি লি জোনসের জীবনের সত্যিকারের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই গল্প।
লাভ স্টোরি গল্পের সাফল্যের পর ইরিক সেগাল পরবতর্ীতে অলিভারের জীবনের গল্প নিয়ে আরেকটি লেখা প্রকাশ করে। খুবই সংপ্তি এই গল্পের শুরম্ন জেনিফারের মৃতু্য দুই বছরের পর। এই গল্পের নাম "অলিভার'স স্টোরি"।
No comments