মাদ্রিদে তিন বাঙাল by মুনতাসীর মামুন
হাশেম ভাই আর আমাকে সকালে জাগাননি। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়াই। সূর্যের আলো মেঝেতে। ব্যালকনিতে দাঁড়াই। নরম রোদ। রাসত্মায় ব্যসত্মতা শুরম্ন হয়েছে। খানিক পর কিচেনে ঢুকতেই দেখি হাশেম ভাই ছুরি নিয়ে ব্যসত্ম।
টেবিলে কয়েকরকম ফল, সবজি। ছুরি দিয়ে তিনি তখন পেঁয়াজ কাটার চেষ্টা করছেন। ব্যাপারটা কী, জিজ্ঞেস করি তাঁকে? বললেন, 'নাসত্মা তৈরি করছি।' এই বিচিত্র নাসত্মার উপাদান হলো বিভিন্ন ফল ও সবজির মিশ্রণ। আমাকে জানালেন, এর চেয় উপাদেয় আর কিছু হতে পারে না। আমাকেও একটু চাখার পরামর্শ দিলেন। বিনীতভাবে তাঁর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে কফির পানি বসাই। মাখন জেলি কফিই আমার জন্য উত্তম। খেতে খেতে হাশেম ভাই জানালেন, অনেক রাত পর্যনত্ম তাঁরা গল্প করেছেন। আমরা যতোটা পারি নিঃশব্দে কাজ সারি। আমি ঢুকি স্নান করতে। বহুদিনের অভ্যাস, হাশেম ভাইয়ের অবশ্য মত, দু'-তিনদিন স্নান না করলে কিছু আসে যায় না। মনে করিয়ে দিই, মাসুম আসবে, ফোন করতে পারে। ফোনের কাছাকাছি যেন থাকেন। এত সকালে বেচারা মনির ভাইয়ের ঘুম ভাঙ্গানোর কোন মানে হয় না।স্নান সেরে বেরিয়ে দেখি শর্টস আর গেঞ্জি পরে চুলোর সামনে মনির ভাই দাঁড়িয়ে। বলি, 'এ কি মনির ভাই, আপনার যাতে ঘুম না ভাঙ্গে সে জন্য পা টিপে টিপে ঘুরছি। ঘুমিয়েছেন অনেক রাতে।'
'কী যে কন' একগাল হেসে বলেন মনির ভাই, 'হাশেম ভাই শুইতে যাওয়ার পর টিভিতে খবর দেখছি। ঘুমাইতে যাওয়ার আগে বিবিসি সিএনএন আর আলজাজিরার খবর না দেখলে ঘুম আসে না।'
কথা বলতে বলতে তিনি কাপতস্তুরি সাজাতে থাকেন। আমি ঝটপট রেডি হয়ে নিই। মনির ভাই ডাক দেন, 'আসেন আরেক কাপ কফি হোক।' হাশেম ভাইকে বলি, 'আপনি রেডি হয়ে আসেন।' কফি নিয়ে বসি। মনির ভাই জিজ্ঞেস করেন, 'আজকের প্রোগ্রাম কী'?
'দেখি, মাসুম আসবে। রাসত্মায় রাসত্মায় ঘুরে বেড়াতে চাই, জাদুঘর টাদুঘর দেখার শখ নাই।'
'সেইটাই ভাল। কত আর দেখবেন। দেখার কি আর শেষ আছে।' দার্শনিক এই মনত্মব্য করে কফির কাপে চুমুক দেন।
'বাঙালির সংখ্যা কত হবে?' জিজ্ঞেস করি আমি। 'খুব বেশি না, তবে বাড়তাছে,' বললেন মনির ভাই, 'আগে কম ছিল, যোগাযোগ ছিল। এখন তেমন একটা নাই। তবে একেবারে যে নাই তাও নয়।'
কফি শেষ করে ওঠেন, বাথরম্নমে ঢুকবেন। বললেন, 'মাসুম আইলে বইলেন।'
ঘড়ির কাঁটা নটা পেরিয়েছে। হাশেম ভাই কিছুৰণ হাঁটেন। তারপর বসে স্কেচ খাতা খোলেন। আমি রম্নমে শুয়ে একটা বই খুলি। মনির ভাই সকালের কাজ শুরম্ন করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ঘড়ির কাঁটা প্রায় দশটার ঘরে। হাশেম ভাই বললেন, 'আরে ভুলে গেল না কি ছেলেটা!'
'আরও কিছুণ দেখি,' বলি আমি, 'তারপর পেরিয়ে পড়ব। না হলে রোদ চড়ে যাবে।'
সোয়া দশটার দিকে ফোন বেজে ওঠে। আমিই ধরি। কুণ্ঠিত কণ্ঠে অপর প্রানত্ম থেকে মাসুম জানায়, রাতে ডিউটি ছিল। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। কিছুৰণের মধ্যেই আসছে। আমরা অপেৰা করতে থাকি। পৌনে এগারটার দিকে, দরজায় কলিং বেলের শব্দ। মনির ভাই-ই দরজা খুলে দেন। দরাজ গলায় আহ্বান জানান, 'আসো আসো।'
মাসুম তার এক বন্ধুকে নিয়ে কুণ্ঠিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। মনির ভাই বলেন, 'চা খাও চা খাও।' তারা আরও কুণ্ঠিত হয়ে পড়ে। বুঝতে পারি, মনির ভাই তাদের কাছে দূরের মানুষ। হয়ত আমরাও। এদিকে সে সময় দিয়ে সময় রাখতে পারেনি। তাছাড়া নিশ্চয় ভেবেছিল, এতো বড় মাপের লোক, কেমন 'ব্যাভার' করে কে জানে। মাসুম বলে, 'না না, চায়ের দরকার নাই।'
'কী কও মিয়া, দূর থেইকা আইছ, পোলাপান মানুষ। চা-ই তো খাইবা এককাপ।' মনির ভাইয়ের খাঁটি চাঁদপুরে ব্যবহারে তারা অভিভূত। আমিই বলি, 'মনির ভাই, চা খেলে সাড়ে এগারটার আগে বেরম্নতে পারব না। আমরা বেরোই।'
মাসুম ও তার বন্ধু স্বসত্মি পায়। আমরা একে একে বেরম্নই। মনির ভাই তাদের জানান, 'সময় পাইলে আইস।' আর তারা আসে!
রোদে ভরা অ্যাভিনিউতে এসে দাঁড়াই আমরা চারজন।
'স্যার। যাবেন কোথায়?' জিজ্ঞেস করে মাসুম।
'কোথায় যাব ঠিক নেই, তুমি যেখানে নিয়ে যাও। তবে, পুরনো এলাকায় যেতে চাই, হেঁটে হেঁটে।'
হাশেম ভাইও সায় দেন। বললাম, 'চলো বাংকো সেন্ট্রাল পর্যনত্ম হেঁটে যাই।' এই পথটা সোজা গ্রান ভিয়ায় মিলেছে। গ্রান ভিয়া যেখান থেকে শুরম্ন সে মোড় থেকে কয়েকটি রাসত্মা আছে। সেখানে গিয়ে ঠিক করব।
মনির ভাইয়ের বাসা থেকে ঐটুকু পথ এক কিলোমিটার হবে কি না সন্দেহ। কিন্তু এ এক কিলোমিটারের মধ্যেই দ্রষ্টব্য আছে কয়েকটি।
যে রাসত্মা ধরে হাঁটছি কাইয়ে আলকালা পুরনো পথ। এখন এ জায়গাটুকু খুব আধুনিক মনে হলেও ষোড়শ শতকে এখানে ঘন জলপাই বাগানের মাঝ দিয়ে রাসত্মাটি চলে গিয়েছিল। এ রাসত্মার পাশেই মাদ্রিদের প্রথম খৃস্টান স্থাপনাগুলি গড়ে উঠেছিল। সেই থেকে এর নাম কাইয়ে দ্য আলকালা। এ রাসত্মার পাশেই অষ্টাদশ শতকে রাজ্যের গুরম্নত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলি গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে আছে পালাসিও দ্য লা আদুয়ানা বা শুল্ক ভবন, কালাট্রাভাস আর সান হোসে গির্জা, রিয়াল অ্যাকাডেমিয়া দ্য বেলস্নাস আর্তেস দ্য সান ফার্নান্দো বা চারম্নকলা শিৰা কেন্দ্র। ব্যাংক আছে একগাদা। ব্যাংকগুলির দফতর মনে হয় ছোটখাটো প্রাসাদ, যেমন বাংকো দ্য বিলবাও, বাংকো এসপানোল দ্য ক্রেডিটো, বাংকো দ্য ভিজকায়া, বাংকো পপুলার এসপানোল ইত্যাদি। তবে এ পথে বিশেষ দ্রষ্টব্য পুয়ের্তা দেল সোল এবং সিবিলি। আমরা ঠিক করি একটু এদিক সেদিক হলেও এগুলির পাশ দিয়ে মোড়ে পেঁৗছাবো।
পুয়ের্তা দেল সোলকে কী বলব! চত্বর, চৌরাসত্মা, স্কোয়ার? যাই বলি না কেন এখানে এসে মিলে ছড়িয়ে গেছে মাদ্রিদের তিনটি বিখ্যাত রাসত্মা_ আরেনাল, মেয়র ও আলকালা। ষোড়শ শতকে এখানে একটি ফটক ছিল। পূর্ব দিকের ফটক। খুব সম্ভব শহরে প্রবেশের আগে শুল্কের জন্য তা নির্মাণ করা হয়েছিল। তারপর সেই ফটক ভাংচুরের পর কোথায় গেছে কেউ জানে না। তবে, নামটা রয়ে গেছে। পুয়ের্তা দেল সোলকে কি মাদ্রিদের কেন্দ্র বলব? বলা যেতে পারে। ৫০ বা ১০০ বছর আগের বিবরণেও দেখেছি, পর্যটকরা পুয়ের্তা দেল সোলের কথাই বিশেষভাবে উলেস্নখ করেছেন।
আগে পুয়ের্তার যে আকার ছিল পরবতর্ীকালে তা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পায়। পুরো চত্বরটা নিয়ে এক জ্যামিতিক নকশা করেন জুয়ান বাউতিসত্মা পেয়েরনেট। সে অনুযায়ী পৌরসভা কাজ করতে যেয়ে অনেক পুরনো ইমারত ভেঙ্গে ফেলে। আগে এর পরিমাপ ছিল ৫০৬৯ বর্গমিটার, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২,৩২০ বর্গমিটার। পৌরসভার তত্ত্বাবধানে চত্বর ঘিরে রাসত্মা ও একই রীতির ইমারত সব গড়ে তোলা হয়েছে। এখন পুয়ের্তা ব্যসত্ম এক বাণিজ্য কেন্দ্র।
পুয়ের্তার কাছে এসে মাসুমের বন্ধু বিদায় নিল। তার কাজ আছে। মাসুম একা আসার ভরসা পাইনি দেখে বোধ হয় তাকে নিয়ে এসেছিল। আমরা পস্নাজা দ্য সিবেলেসের কাছে এসে দাঁড়ায়।
মাদ্রিদবাসীর সবচেয়ে প্রিয় চত্বর বা পস্নাজা সিবেলেস। চত্বরে মাঝে একটি পাথুরে ঝর্ণা। দেবী সিবিলির, তার নামেই চত্বরের নামকরণ। হোসে হারমসিলা এবং ভেনচুরা রডরিগুয়েজ এই চত্বর ও ভাস্কর্যের পরিকল্পনা করেন। প্যাসিও দ্য প্রাদোও তারা করেছিলেন। গ্রীক দেবতা জিউস, তার মা ক্রনসের স্ত্রী সিবিলির ভাস্কর্যটি ঘিরে চত্বর। সিবিলি রথে বসে এবং তা টেনে নিচ্ছে কাসত্মিলীয় কয়েকটি সিংহ। সিবিলি উর্বরতার দেবী। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল রথের মুখ থাকবে প্রাদোর দিকে, পরে পুয়ের্তার দিকে। চারটি বড় ইমরাত ঘিরে আছে চত্বরটিকে। একটি হলো নতুন ধ্রম্নপদী রীতিতে নির্মিত বাংকো দ্য এসপেনা। স্থপতি ছিলেন এদোয়ার্দো আদারো এবং সেভিরিয়ানো সেইঞ্জ দ্য লা লাসত্রা। অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে আলবার ডিউক নির্মাণ করিয়েছিলেন পালাসিয়ো দ্য বুয়েনাভিসত্মা। স্থপতি জুয়ান পেদ্রো আরনান। লিনারেসের মাকর্ুইসের প্রাসাদ আর সদর ডাকঘর। সদর ডাকঘরটির স্থপতি পালাসিও ও ওতামেন্দি। নব্য বারোক রীতিতে তা নির্মিত।
হাশেম ভাই তাঁর প্রিয় ক্যামেরায় ছবি তোলার চেষ্টা করলেন। সফল হলেন না। চার্জ ফুরিয়ে গেছে। বিরক্তির সুরে বললেন, 'রোমে না মাত্র ব্যাটারি বদলালাম!'
'ইতালিকে অনেকে ঠাট্টা করে ইউরোপের বাংলাদেশ বলেন' বলি আমি, 'দু-নম্বরী সেখানেও প্রবল।'
সোল পেরিয়ে একটু এগুলেই হাতের বাঁদিকে পড়ে রিয়াল অ্যাকাডেমিয়া দ্য বেলস্নাস আর্তেস দ্য সান ফার্নান্দো। এর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল দুশো বছর আগে। এর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন পঞ্চম ফিলিপ। পরে রাজা ফার্দিনান্দো ১৭৫১ সালে রাজকীয় আদেশে তা স্থাপন করেন। ঐ সময় অ্যাকাডেমিয়া এখানে ছিল না। তৃতীয় চার্লস এই বাড়িটি এক ধনাঢ্য ব্যক্তি থেকে নিয়ে নতুনভাবে সাজিয়ে অ্যাকাডেমিয়াকে এখানে নিয়ে আসেন। এখানেও দুষ্প্রাপ্য কিছু চিত্রকলা আছে যার মধ্যে বিখ্যাত গোইয়ার 'বুরিয়াল অব দি সার্ডিন।'
অ্যাকাডেমিয়া পেরম্নবার পর মাসুম বলে, 'কোন দিকে যাব?'
'সামনেই তো আসল তিঞ্জি শহর,' বলি আমি, 'সেটা পেরম্নই, তারপর না হয় প্রাসাদে যাওয়া যাবে।'
মাসুম হাঁটার বদলে ট্যাক্সি ধরার চেষ্টা করে। যতই মানা করি ততই সে জেদ ধরে। তার বোধহয় ধারণা, 'মাননীয় অতিথি'দের আর হাঁটানো বাঞ্ছনীয় নয়। আমি আর হাশেম ভাই দু'জনই হাঁটতে ভালবাসি। মাসুম একটি ট্যাক্সি থামাতে পারল। অনিচ্ছুক ট্যাক্সিঅলাকে বলে কয়ে রাজি করালো। ঝটপট ঢুকে পড়লাম ট্যাক্সিতে। ট্যাক্সি দাঁড় করানো এখানে নিষেধ।
এলাকাটি খাঁটি পুরনো শহরই মনে হলো। অনেকটা আমাদের পাটুয়াটুলির মতো। ছোট ছোট দোকানপাট, সরম্নর রাসত্মা, লোকজনের ভিড়। কয়েক ফার্লং যাওয়ার পরই যানজটে আটকে গেল ট্যাক্সি। খানিকটা এগোয়, আবার আটকে যায়। মিনিট পনের গেল। ট্যাক্সির মিটার ১০ ইউরো পেরিয়ে গেছে। আমি বলি, 'মাসুম, এখানেই নেমে পড়ি, খানিকটা না হয় হাঁটলামই। এতো হাঁটারই শামিল।'
'না, না, আর একটু,' বলে মাসুম। মিটার ১৫ ইউরোর কাছাকাছি। আমার কাছে এই ট্যাক্সিভাড়া স্রেফ জলাঞ্জলি মনে হয়। এই তরম্নণের ২০ ইউরো রোজগার করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিনা কারণে সেটি চলে যাওয়াতে মায়া লাগে। কিন্তু মাসুম 'অতিথি'দের সম্মান রাখবেই। কী আর করা! খানিকপর হঠাৎ জটলাটা মিলিয়ে যায়। ট্যাক্সি নিমিষেই এক চওড়া অ্যাভিনিউতে এসে পড়ে। তারপর থেমে যায় মাসুমের নির্দেশে। আমরা পালাসিওতে চলে এসেছি। ট্যাক্সি থেকে নেমে আমরা ভাড়া দেয়ার চেষ্টা করি। কে শোনে কার কথা। মাসুম ইউরোর একটি বড় নোট বের করে দেয়। ট্যাক্সিঅলা কয়েক পকেট হাতড়ে, গাড়ি গেস্নাব কম্পার্টমেন্ট হাতড়ে বাকি টাকা ফেরত দেয়।
বিশাল পাথুরে অ্যাভিনিউ, বাঁ পাশে বড় একটি ক্যাথিড্রাল তারপর বিশাল এক প্রাসাদ। অ্যাভিনিউর ডান ফুটপাতের পাশে খানিকটা ঘাসের সবুজ, তারপর বাগান। রাসত্মাটির নাম ক্যালে দ্য বেইলেন।
আমরা নেমেছি ক্যাথিড্রাল লা আলমুদেনার সামনে। অন্যান্য কাথিড্রালের মতোই পাথুরে। দর্শনাথর্ীরা চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। অনেকে ভেতরে ঢুকছে। আমরা বাইরে থেকেই ঘুরে ঘুরে দেখি তারপর আবার ফুটপাতে নেমে আসি। খানিকপরই শুরম্ন পালাসিও রিয়েলের সীমানা। এক পাশে উঁচু উঁচু চওড়া পাথুরে সিঁড়ি। একদম উপরের ধাপে উঠে একপাশে তাকালে উঁচুমতো টিলা চোখে পড়ে, বৃৰশূন্য। সিঁড়ির সামনে বিশাল চত্বর। সামনে তাকালে প্রাসাদ, চত্বর পেরিয়ে যেতে হয়, লোহার উঁচু শিক দিয়ে ঘেরা, ফটক বন্ধ। আমরা সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে চারদিকটা দেখি। ভিনদেশী পর্যটক, তরম্নণ-তরম্নণীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। আজ বোধহয় প্রাসাদটি বন্ধ বা সংস্কার চলছে। না হলে দর্শনাথর্ীদের ঢুকতে দেয়া হয়। অবশ্য খোলা থাকলেও ঢুকতাম কী না সন্দেহ। জাদুঘর দর্শন আর ভাল লাগে না।
পালাসিও এখন যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে ছিল স্পেনের পুরনো রাজন্যদের প্রাসাদ, সেই বিখ্যাত আলকাজার। মাদ্রিদে ১৭৩৪ সালে এক ভয়ানক অগি্নকা- হয়, আলকাজার সেই আগুনে ছাই হয়ে যায়। ছাই হওয়া প্রাসাদের ওপর এখন দাঁড়িয়ে নতুন প্রাসাদ।
অনেকে বলেন, আলকাজার থাকলেও রাজা পঞ্চম ফিলিপ নতুন প্রাসাদ গড়ে তুলতেন। ফিলিপ ছিলেন ফ্রান্সের বিখ্যাত সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার ওপর ন্যসত্ম হয় স্পেনের রাজমুকুট। বুঁরবো বংশের রাজা হ্যাপসবুর্গ বংশের রাজাদের প্রাসাদ নিশ্চয় পছন্দ করতেন না। হ্যাপসবুর্গের রাজারা প্রায় ১৫০ বছর আলকাজারে বসবাস করেছেন। পারমার রাজকুমারী এলিজাবেথ ফারনেস ছিলেন ফিলিপের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্ররোচনায় ১৭৩৫ সালে ফিলিপ নির্মাণ শুরম্ন করেন পালাসিও। স্থপতি ছিলেন ইতালীয় ফিলিপ্পো জুভারা। তবে, জুভারার মূল নকশা অটুট থাকলেও পরবতর্ীকালে আরও অনেক স্থপতি কাজ করেছেন প্রাসাদ ও তার সংলগ্ন এলাকা নিয়ে।
(চলবে)
No comments