শেকড়ের ডাক-কালো টাকা ও বাংলাদেশের রাজনীতি by ফরহাদ মাহমুদ
বাংলাদেশের রাজনীতি কি সুস্থ আছে? অধিকাংশ মানুষই বলবেন, না, সুস্থ নেই। বাংলাদেশে এখন অসুস্থ রাজনীতিরই চর্চা চলছে। গণমাধ্যমে জনমতের যেটুকু প্রতিফলন দেখা যায়, তাতেও এই জবাবটাই স্পষ্ট হয়। এই অসুস্থতার লক্ষণগুলো কী কী? কালো টাকা এখন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে।
পেশিশক্তি এখন রাজনীতির অথবা বলা যায় ক্ষমতায় আরোহণের অমোঘ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। হত্যা, গুম-খুন, হাত-পা ভেঙে দেওয়া, রগ কাটা- উপসর্গের যেন কোনো অভাব নেই। সভ্যতা-ভব্যতা অনেক আগেই রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছে। তার জায়গায় এসেছে চরম অসহিষ্ণুতা, চূড়ান্ত ধরনের বাক-অসংযম, এমনকি খিস্তিখেউড় পর্যন্ত, যার প্রকাশ আমরা কিছু দিন আগে জাতীয় সংসদেও দেখতে পেয়েছি। রাজনীতির উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অসৎ অর্থ উপার্জন। এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা এমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে একটা থাকলে আরেকটা আসবেই। ফলে রাজনীতি থেকে ভদ্রজনরা বিদায় নিচ্ছেন। স্বার্থান্বেষীরা চলে আসছে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায়। ক্রমেই রাজনীতি কালো টাকা আর পেশিশক্তির কাছে বন্দি হয়ে যাচ্ছে।
পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি আছে। ইতিমধ্যেই দেশে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কোন দল অথবা সঠিক অর্থে বলা যায়, কে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসবে, মূলত তা নিয়েই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। কোন ধরনের সরকার পদ্ধতির অধীনে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে দেশ এখন উত্তাল। দাবি আদায়ের জন্য হরতাল, অবরোধ দিয়ে দেশ অচল করে দেওয়া হচ্ছে। শত শত গাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। সশস্ত্র সংঘাতে নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। কিন্তু যে সরকার পদ্ধতিতেই হোক, সেই নির্বাচন কি আমাদের অসুস্থ রাজনীতিকে সুস্থ করতে পারবে? স্বৈরাচার এরশাদকে হটানোর পর ২২ বছর পার করেছি আমরা। অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। কিন্তু রাজনীতি কি সুস্থ হয়েছে? না, হয়নি। বরং অসুস্থতার মাত্রা ও পরিমাণ বেড়েছে। নৈতিকতার মান বিচারে সংসদ সদস্যদের কি হাল হয়েছে?
রাজনীতির এই অসুস্থতা কেন বাড়ছে? এর জন্য কি কেবল রাজনীতিবিদরাই দায়ী? নাকি আমাদের তথা নাগরিকদেরও দায় আছে? আমাদের প্রত্যেককেই আজ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে। কারণ, এই রাজনীতির ওপরই নির্ভর করছে একটি দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। রাজনীতি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষে সুস্থ জীবনযাপন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। আর তাই রাজনীতির নামে যে দুর্বৃত্তপনা চলছে, রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থে তার অবসান ঘটাতে হবে এবং নাগরিক সমাজকেই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই কাজটি করার জন্যই আমাদের পূর্বোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে। সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, রাজনীতির এই অসুস্থতার জন্য প্রধানত আজকের রাজনীতিবিদরাই দায়ী। দলগুলো মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে চোরাকারবারি, দুষ্কৃতকারী, লুটেরা তথা কালো টাকার মালিকদের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করে। নির্বাচনে জেতার জন্য এদের পক্ষে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ করা কোনো ব্যাপারই নয়। কারণ, তারা জানে নির্বাচনে জিততে পারলে এর চেয়ে কয়েক গুণ টাকা তারা উপার্জন করে নিতে পারবে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে। তা ছাড়া টাকায় কেনা পেশিশক্তিও থাকে তাদের পক্ষে। নির্বাচনে জিতে এরা এমপি হয় এবং ক্ষমতায় বসে। টাকায় যেমন টাকা আনে, তেমনি কালো টাকায় কালো টাকাই আনে। অর্থাৎ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়তেই থাকে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি আরো বেগবান হয়। এখানে আমাদের তথা নাগরিক সমাজেরও কিছু দায় এসে যায় না কি? কেন আমরা জেনেশুনে এমন একজন কালো টাকার মালিককে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করি? এরা যেখানে ঘৃণা পাওয়ার যোগ্য, সেখানে কেন তাদের আমরা সম্মান দেখাই? আমরা কেন অপেক্ষাকৃত সৎ ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারি না? কেন আমরা বড় দুটি দলের প্রতীকের কাছে নিজেদের শর্তহীনভাবে সমর্পণ করি?
দেশে ও দেশের বাইরে কালো টাকা নিয়ে যেসব গবেষণা ও জরিপ হয় সেগুলোতে দেখা যায়, বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। তার পরও প্রতিবছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা থাকে। কারণ, ক্ষমতায় থাকা কালো টাকার মালিকদের চাপ এত বেশি থাকে যে রাষ্ট্রের বাজেট সেই চাপকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে যেখানে অনুমিত কালোটাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির পাঁচ থেকে সাত শতাংশ, সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অনুমিত হিসাবেই বলা হয়েছে, দেশে এখন কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ৪৬ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বৈধ ও অবৈধ মুদ্রার গতিশীলতার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ অনুমিত সম্পর্ক অনুযায়ী এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি ২০১০ সালেও এই হার ছিল সর্বনিম্ন ৩৭ শতাংশের মতো। বাংলাদেশে হঠাৎ করে কালো টাকার হার এ রকম আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? এর প্রধান কারণটি হলো, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ক্রমেই কালো টাকার হাতে বন্দি হয়ে যাওয়া। কালো টাকার আরেকটি অত্যন্ত ক্ষতিকর দিকও ইতিমধ্যে আলোচনায় চলে এসেছে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, মানিলন্ডারিং ও অন্যান্য উপায়ে এ টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী কিছু বিদেশি ব্যাংকের প্রতিও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। অপরদিকে কালো টাকা দেশে মজুদদারিসহ অন্যান্য অনৈতিক ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে, যার ফলে আমাদের পণ্য-বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত লাখ লাখ বাঙালির কষ্টার্জিত উপার্জনের মাধ্যমে দেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তার একটি বড় অংশই পাচার হয়ে যায়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশের মুদ্রাপাচারের পরিমাণ ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। আর বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪তম। এই অবস্থা কি চলতেই থাকবে? না, এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। আর এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই সবচেয়ে বেশি সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে হবে। জনগণকেও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। চোর, বাটপার, কালোবাজারিকে ঘৃণা করতে হবে। নির্বাচনে যত অর্থই খরচ করুক, যে দলেরই হোক, কোনো লুটেরা চরিত্র যেন নির্বাচিত হতে না পারে সে ব্যাপারে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে, স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করতে হলে আমাদের রাজনীতিকে কালো টাকার প্রভাব থেকে মুক্ত করতেই হবে। আর তা করা না গেলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট চলতেই থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক অধিকারও আমরা হারিয়ে ফেলব।
লেখক : সাংবাদিক
পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি আছে। ইতিমধ্যেই দেশে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কোন দল অথবা সঠিক অর্থে বলা যায়, কে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসবে, মূলত তা নিয়েই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। কোন ধরনের সরকার পদ্ধতির অধীনে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে দেশ এখন উত্তাল। দাবি আদায়ের জন্য হরতাল, অবরোধ দিয়ে দেশ অচল করে দেওয়া হচ্ছে। শত শত গাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। সশস্ত্র সংঘাতে নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। কিন্তু যে সরকার পদ্ধতিতেই হোক, সেই নির্বাচন কি আমাদের অসুস্থ রাজনীতিকে সুস্থ করতে পারবে? স্বৈরাচার এরশাদকে হটানোর পর ২২ বছর পার করেছি আমরা। অনেকগুলো নির্বাচন করেছি। কিন্তু রাজনীতি কি সুস্থ হয়েছে? না, হয়নি। বরং অসুস্থতার মাত্রা ও পরিমাণ বেড়েছে। নৈতিকতার মান বিচারে সংসদ সদস্যদের কি হাল হয়েছে?
রাজনীতির এই অসুস্থতা কেন বাড়ছে? এর জন্য কি কেবল রাজনীতিবিদরাই দায়ী? নাকি আমাদের তথা নাগরিকদেরও দায় আছে? আমাদের প্রত্যেককেই আজ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে। কারণ, এই রাজনীতির ওপরই নির্ভর করছে একটি দেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। রাজনীতি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই দেশে নাগরিক সমাজের পক্ষে সুস্থ জীবনযাপন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। আর তাই রাজনীতির নামে যে দুর্বৃত্তপনা চলছে, রাষ্ট্র ও সমাজের স্বার্থে তার অবসান ঘটাতে হবে এবং নাগরিক সমাজকেই এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই কাজটি করার জন্যই আমাদের পূর্বোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে। সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি, রাজনীতির এই অসুস্থতার জন্য প্রধানত আজকের রাজনীতিবিদরাই দায়ী। দলগুলো মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে চোরাকারবারি, দুষ্কৃতকারী, লুটেরা তথা কালো টাকার মালিকদের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করে। নির্বাচনে জেতার জন্য এদের পক্ষে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ করা কোনো ব্যাপারই নয়। কারণ, তারা জানে নির্বাচনে জিততে পারলে এর চেয়ে কয়েক গুণ টাকা তারা উপার্জন করে নিতে পারবে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে। তা ছাড়া টাকায় কেনা পেশিশক্তিও থাকে তাদের পক্ষে। নির্বাচনে জিতে এরা এমপি হয় এবং ক্ষমতায় বসে। টাকায় যেমন টাকা আনে, তেমনি কালো টাকায় কালো টাকাই আনে। অর্থাৎ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়তেই থাকে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি আরো বেগবান হয়। এখানে আমাদের তথা নাগরিক সমাজেরও কিছু দায় এসে যায় না কি? কেন আমরা জেনেশুনে এমন একজন কালো টাকার মালিককে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করি? এরা যেখানে ঘৃণা পাওয়ার যোগ্য, সেখানে কেন তাদের আমরা সম্মান দেখাই? আমরা কেন অপেক্ষাকৃত সৎ ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারি না? কেন আমরা বড় দুটি দলের প্রতীকের কাছে নিজেদের শর্তহীনভাবে সমর্পণ করি?
দেশে ও দেশের বাইরে কালো টাকা নিয়ে যেসব গবেষণা ও জরিপ হয় সেগুলোতে দেখা যায়, বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। তার পরও প্রতিবছর বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা থাকে। কারণ, ক্ষমতায় থাকা কালো টাকার মালিকদের চাপ এত বেশি থাকে যে রাষ্ট্রের বাজেট সেই চাপকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে যেখানে অনুমিত কালোটাকার পরিমাণ ছিল জিডিপির পাঁচ থেকে সাত শতাংশ, সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অনুমিত হিসাবেই বলা হয়েছে, দেশে এখন কালো টাকার পরিমাণ জিডিপির ৪৬ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। বৈধ ও অবৈধ মুদ্রার গতিশীলতার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ অনুমিত সম্পর্ক অনুযায়ী এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি ২০১০ সালেও এই হার ছিল সর্বনিম্ন ৩৭ শতাংশের মতো। বাংলাদেশে হঠাৎ করে কালো টাকার হার এ রকম আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? এর প্রধান কারণটি হলো, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা ক্রমেই কালো টাকার হাতে বন্দি হয়ে যাওয়া। কালো টাকার আরেকটি অত্যন্ত ক্ষতিকর দিকও ইতিমধ্যে আলোচনায় চলে এসেছে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, মানিলন্ডারিং ও অন্যান্য উপায়ে এ টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী কিছু বিদেশি ব্যাংকের প্রতিও অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। অপরদিকে কালো টাকা দেশে মজুদদারিসহ অন্যান্য অনৈতিক ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে, যার ফলে আমাদের পণ্য-বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে কর্মরত লাখ লাখ বাঙালির কষ্টার্জিত উপার্জনের মাধ্যমে দেশ যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তার একটি বড় অংশই পাচার হয়ে যায়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ সালে বাংলাদেশের মুদ্রাপাচারের পরিমাণ ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। আর বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪তম। এই অবস্থা কি চলতেই থাকবে? না, এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। আর এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই সবচেয়ে বেশি সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে হবে। জনগণকেও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। চোর, বাটপার, কালোবাজারিকে ঘৃণা করতে হবে। নির্বাচনে যত অর্থই খরচ করুক, যে দলেরই হোক, কোনো লুটেরা চরিত্র যেন নির্বাচিত হতে না পারে সে ব্যাপারে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হলে, স্বাধীনতার সুফল নিশ্চিত করতে হলে আমাদের রাজনীতিকে কালো টাকার প্রভাব থেকে মুক্ত করতেই হবে। আর তা করা না গেলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুটপাট চলতেই থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক অধিকারও আমরা হারিয়ে ফেলব।
লেখক : সাংবাদিক
No comments