সরকারি কলেজ-শিক্ষক সংকট দূর করুন
এক সময় জেলা শহরগুলোর সরকারি কলেজ ছিল মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে। তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে মিলত ভর্তির ছাড়পত্র। শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল না। অনেক শিক্ষক ছিলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গুরুদায়িত্ব পালনের মতোই উপযুক্ত ছিলেন।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জেলা সদরের গণ্ডি ছাড়িয়ে অনেক উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে সরকারি কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন আড়াইশ'র বেশি। এক সময় রাজধানী ঢাকায় সরকারি কলেজ স্থাপন নিরুৎসাহিত করা হতো শিক্ষা-সংকোচনের শঙ্কায়। কিন্তু এখন এখানেই পড়াশোনা করছে দেড় লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী। প্রায় সব সরকারি কলেজে এখন চালু হয়েছে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ প্রচণ্ড এবং এ কারণে ভর্তি-বাণিজ্য চিত্র জমজমাট। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারি কলেজ ও শিক্ষার্থী সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তার সঙ্গে নেই শিক্ষক সংখ্যার সামঞ্জস্য। সোমবার সমকালে 'সরকারি কলেজের এ কী হাল : সমস্যা সংকটে কমছে শিক্ষার মান' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে চার হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য। রাজধানীর ঢাকা গুরুত্বপূর্ণ কলেজেই কেবল ৪৮টি পদ পূরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে অনেক কলেজ রয়েছে যেখানে একটি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পাঠদানের জন্য রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। শিক্ষকদের শূন্যপদের পাশাপাশি আরেকটি সমস্যাও প্রকট_ খোদ শিক্ষামন্ত্রীর ভাষায় : 'শিক্ষকেরা কেউই ঢাকার বাইরে থাকতে চান না। উপজেলা সদরের কলেজে কেউ যেতে চান না। সবাই বড় বড় জেলা বা বিভাগীয় শহরে পদায়ন চান।' তিনি কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। এখন প্রয়োজন হচ্ছে এর সমাধানের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকার ৭১টি সরকারি কলেজে শ্রেণীকক্ষ, হোস্টেল, পাঠাগার ও বিজ্ঞানাগার স্থাপনের জন্য একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি হয়ে পড়েছে শিক্ষকদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি এবং শূন্য যেসব পদ রয়েছে অবিলম্বে সেগুলো পূরণ করা। 'মফস্বলের অনেক কলেজে অনেক বিষয়ে একজন শিক্ষকও নেই'_ এমন অবস্থায় অবকাঠামো সুবিধা নির্মাণ নিতান্তই পরিহাস মনে হবে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই নিজেদের উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে তুলবে, এটা অভাবনীয়। এ অবস্থায় শিক্ষার নূ্যনতম মানও বজায় রাখা সম্ভব নয়। এটা ঠিক যে, রাতারাতি সব পদ পূরণ করা যাবে না। শিক্ষা খাতে আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এ যুক্তিতে সমস্যাকে আরও পুঞ্জীভূত হতে দেওয়াও চলবে না। মন্ত্রণালয়কে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি কলেজের যাবতীয় ব্যয় সরকার বহন করে থাকে। যেভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে তাতে আর্থিক সঙ্গতি না বাড়ালে অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে পারে এবং ইতিমধ্যে তার লক্ষণ স্পষ্ট। সেরা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষকতা পেশায় আনার জন্যও চাই বাড়তি বিনিয়োগ। এখন সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা তীব্র। মেধাবী মুখগুলো তখনই শিক্ষকতা পেশায় আসবে, যখন তাদের জন্য উপযুক্ত সম্মানের পাশাপাশি নিশ্চিত হবে আর্থিক নিরাপত্তা। এ কাজে জরুরি ভিত্তিতে হাত দিতেই হবে।
No comments