শ্রেণীকক্ষে শিক্ষিকা খুন-এ কেমন নিস্পৃহতা
পাবনার আতাইকুলা উপজেলার এক সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শ্রেণীকক্ষে ঢুকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনেই পাঠদানরত শিক্ষিকাকে ছুরি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যেসব শিশুর সামনে এ বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তাদের মনোজগতে এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে সুদূরপ্রসারী।
কারও কারও ক্ষেত্রে আতঙ্ক সারা জীবনের জন্য বাসা বাঁধতে পারে, কেউ কেউ এর প্রভাবে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসকেই আলিঙ্গন করতে পারে। বিস্ময়ের ঘটনা হলো, স্কুল চলাকালে ১৫ মিনিট ধরে এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য মঞ্চায়নের সময় একমাত্র হত্যাকারীকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা কেউ করেনি। হত্যাকারী পালিয়ে যাওয়ার সময় কেউ তাকে ধাওয়াও করেনি। আমাদের সমাজে অন্যায়কে সহ্য করার এক ধরনের মানসিকতার জন্ম নিয়েছে_ এটা তারই প্রমাণ। অথচ এই সামাজিক মানুষদের অনেকেই এক সময় স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার লড়াই পর্যন্ত অনেক সংগ্রামেই নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন। যে কোনো ধরনের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও এ দেশের মানুষ ভয়কে জয় করে লড়ে গেছে এবং একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আর এখন তারা এবং নতুন প্রজন্ম সবকিছু দেখেশুনে যেন বোবা-কালা বনে গেছেন। সমাজকে অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস ইত্যাদি বিষয়ে সজাগ-সচেতন ও সোচ্চার হতেই হবে। সমাজের মধ্যে সুবিবেচনাপ্রসূত মানসিকতা যত শক্তিশালী হবে ততই সমাজের মধ্যে অন্যায় প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়বে। পাবনার শ্রেণীকক্ষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে তাদের শিক্ষিকাকে হত্যার ঘটনা সত্যিই ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎকেই নির্দেশ করছে। হত্যাকারী শিশুদের মাধ্যমে গোটা দেশকেই আতঙ্কিত করে মানুষের সুচিন্তাকে সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি করতে চেয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আমাদের জাতীয় মানসিকতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই বিষয়টিকে হালকা ভেবে নেওয়ার উপায় নেই। এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতেই হবে। চোখের সামনে একজন শিক্ষয়িত্রীকে হত্যা করতে দেখেও কেউ এগিয়ে আসবে না, এটা ভাবা যায় না। এ মানসিকতায় পরিবর্তন আনতেই হবে। ছাত্রছাত্রীদেরও এভাবেই গড়ে তুলতে হবে। সমাজকেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়তে হবে। শিক্ষিকা হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশিত।
No comments