দুর্নীতি দমন-অনেক প্রতিশ্রুতিই অপূর্ণ by ইফতেখারুজ্জামান
জনগণই চাইবে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক; জনগণই চাইবে দুর্নীতি যারা করেন তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক; জনগণই চাইবে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক কারও প্রতি ভয় বা করুণা না করে; জনগণই চাইবে নেতা-নেত্রীদের আচরণে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন ঘটুক,
দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হোক ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊধর্ে্ব
বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে অর্জন কম নয়। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে গড়ে প্রতিবছর ৫-৬ শতাংশ হারে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মানব উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রণীত জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের বহুমুখী দারিদ্র্য বিমোচন সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশের চেয়ে উত্তম। একইভাবে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি অর্জনেও বাংলাদেশ উলিল্গখিত দেশগুলোসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এগিয়ে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুহার কমানোর মতো সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছে।
অর্জনের এই তালিকা দীর্ঘ হতে পারত যদি গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিককরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ঘাটতি স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে অন্যতম প্রতিবন্ধক না হতো, যদি দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান ব্যাপকতাকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
দুর্নীতি বিশ্বজনীন সমস্যা। এমন দেশ নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না, যদিও এর বিস্তৃতি, গভীরতা ও প্রভাবে তারতম্য রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) যার মাধ্যমে দুর্নীতির ধারণার মাপকাঠিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক অবস্থান নিরূপণ করা হয়, তাতে উন্নত বিশ্বের যেসব দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও প্রভাব সবচেয়ে কম বলে চিহ্নিত হয়ে থাকে, তারাও এখনও পর্যন্ত সূচকের ০-১০-এর স্কেলে সর্বোচ্চ ৯.৪-এর ঊধর্ে্বর্ স্কোর করেনি। অর্থাৎ দুর্নীতি কেবল উন্নয়নশীল দেশগুলোর একচেটিয়া সমস্যা নয়, যদিও একথা সঠিক যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতির প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুর্নীতি উন্নয়ন, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিককরণ ও সমাজ পরিবর্তনের পথে শুধু অন্তরায় নয়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসনের পথে প্রতিবন্ধকগুলোর অন্যতম এই দুর্নীতি। ২০১১ সালের সিপিআইর ০-১০-এর স্কেলে ২.৭ পেয়ে বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থান পেয়েছে, যা তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী ত্রয়োদশ স্থান। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত এই সূচকে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন স্কোর করে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করেছিল। ২০০৬-এ পেয়েছিল তৃতীয় স্থান, ২০০৭-এ সপ্তম, ২০০৮-এ দশম, ২০০৯-এ ত্রয়োদশ এবং ২০১০-এ দ্বাদশ। আন্তর্জাতিক অবস্থান বিবেচনায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ এখনও তালিকার এমন দেশগুলোর পাশে অবস্থান করছে যেখানে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক (স্কোর ৩-এর চেয়ে কম)। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ শিগগিরই ৫-এর ঊধর্ে্ব স্কোর পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে, যখন এই সূচক অনুযায়ী বলা যাবে যে দুর্নীতিকে মোটামুটি মধ্যম পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে সে পথ এখনও অনেক দূর।
ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আর যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় ব্যক্ত হয়। কমপক্ষে ডজনখানেক সুস্পষ্ট নীতিমালার উলেল্গখ পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে, যার বাস্তবায়ন বাংলাদেশে দুর্নীতিকে কার্যকর ও স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য।
সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করতে জাতীয় সংসদকে কার্যকর করার যে নির্বাচনী অঙ্গীকার সরকার ও বিরোধী উভয় দলেরই ছিল তার বাস্তবায়নে অগ্রগতি নগণ্য। নবম সংসদের শুরুটা প্রতিশ্রুতিময় হলেও শিগগিরই একদিকে বিরোধী দলের শুধু আসন রক্ষার প্রয়োজনে অপরিহার্য উপস্থিতির বাইরে ধারাবাহিকভাবে সংসদ বর্জন, অন্যদিকে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি দলের একচ্ছত্র ভুবন হিসেবে পরিণত করায় এবং সংসদীয় কমিটিগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে গণতন্ত্রকামী এ দেশের মানুষের সংসদের প্রতি প্রত্যাশা পূরণ সুদূরপরাহতই রয়েছে। প্রশাসনকে জনমুখী ও দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার অঙ্গীকার বক্তৃতায়ই সীমাবদ্ধ থাকল। একই অবস্থা পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার প্রতিশ্রুতির।
সরকার অনুপার্জিত আয় ও কালো টাকা অর্জনকে পুরস্কৃত করা অব্যাহত রেখেছে। ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরে এসে কর ন্যায়পাল পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার' নিষ্পত্তিকরণ ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এরূপ বিতর্কিত পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকার তথ্য অধিকার আইনের মতো দুর্নীতি প্রতিরোধে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টিকারী আইন এবং এর সঙ্গে সম্পূরক অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি নতুন আইন_ তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন পাস করে প্রশংসার দাবিদার হয়েছে। সরকার সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সনদ কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে সরকার কৌশলপত্র অনুমোদন করেছে, যা আশার উদ্রেক করে, যদিও এর কার্যকর বাস্তবায়নে বাস্তব পদক্ষেপ এখনও পর্যাপ্ত নয়।
আইনের প্রয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যাপক ঘাটতি জনগণকে আশাহত করেছে। অন্যদিকে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি বা অন্যভাবে প্রভাবশালী ও তাদের সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তিরা যেভাবে স্থানীয় পর্যায়ে টেন্ডারবাজি, নদী-বনাঞ্চল-ভূমি দখল ও টোলবাজিসহ আইনের শাসন পরিপন্থী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে অপরিহার্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও তাদের পরিবার-পরিজনসহ ক্ষমতাবানদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়নি। দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করে যেভাবে সংসদ সদস্যদের হাতে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে তা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুর্নীতি, তা যেই পর্যায়েই ঘটুক না কেন, কারও প্রতি কোনো ধরনের ভয় বা করুণা না করে, সব ধরনের দলীয় বা রাজনৈতিক বিবেচনার ঊধর্ে্ব থেকে তার বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে আইন প্রয়োগে আদালতকে কোনো অবস্থাতেই প্রভাবিত না করা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে তখনই সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে যখন বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তখনই সুফল আনবে যখন এই বিভাগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের ঊধর্ে্ব থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা, পেশাগত উৎকর্ষতা এবং সততার সঙ্গে কার্যপরিচালনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষভাবে উলেল্গখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে জনপ্রশাসন তথা সরকারি কর্মকর্তারা। পৃথিবীর যেসব দেশে সাফল্যের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে সেসব দেশে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশাসনকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করা অপরিহার্য।
দুর্নীতি প্রতিরোধে বেসরকারি খাতের ভূমিকাও অপরিসীম। বাংলাদেশ জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই সনদে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সরকারি খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ কখনোই সম্ভব হবে না যদি বেসরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব না হয়। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি ও বহুজাতিকসহ বেসরকারি খাতে কর্মরত সব প্রতিষ্ঠানেই সততা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করা অপরিহার্য।
দুর্নীতিবিরোধী একজন কর্মী হিসেবে আমি প্রায়শই নিজেকে ব্যর্থ মনে করি। আমাদের আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বিষয়ক সচেতনতা ও চাহিদা অনেক বেড়েছে। দুর্নীতি এখন মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেয়েছে; গণমাধ্যমে এক বিরাট জায়গা করে নিয়েছে দুর্নীতি বিষয়ক সংবাদ, আলোচনা, মন্তব্য। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এখন দুর্নীতি প্রতিরোধ। যদিও বাস্তব প্রয়োগ একান্তই হতাশাব্যঞ্জক। অন্যদিকে আমাদের কার্যক্রমের প্রতি কোনো কোনো প্রভাবশালী মহলের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও আমাদেরই উদ্যোগে বেশ কিছু আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি ও তার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন গঠন এবং পরে কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে অব্যাহত ক্যাম্পেইন, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি, তথ্য অধিকার আইন, তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন ইত্যাদির মতো অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, যাতে রয়েছে টিআইবির প্রত্যক্ষ ভূমিকা। এসবের মূল লক্ষ্য দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধক প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করা, যার ফলে দুর্নীতি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবস্থান বা পরিচয় নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আমাদের গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, দেশের জনগণও জানে দুর্নীতির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। শিক্ষা ও কৃষির মতো গুটিকয়েক খাত যেখানে নেতৃত্বের দৃঢ়তার পাশাপাশি অকৃত্রিম প্রচেষ্টা রয়েছে, সেখানে কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়। তবে সার্বিকভাবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা যে আশঙ্কাজনক তা দলমত নির্বিশেষে সকলেরই জানা।
এ অবস্থার উত্তরণে জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। জনগণই চাইবে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক; জনগণই চাইবে দুর্নীতি যারা করেন তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক; জনগণই চাইবে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক কারও প্রতি ভয় বা করুণা না করে; জনগণই চাইবে নেতা-নেত্রীদের আচরণে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন ঘটুক, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হোক ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊধর্ে্ব। জনগণের এই চাওয়া, এই দাবি যত বেশি জোরালো হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ ততটাই ত্বরান্বিত হবে।
ইফতেখারুজ্জামান :নির্বাহী পরিচালক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের গৌরবময় স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে অর্জন কম নয়। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে গড়ে প্রতিবছর ৫-৬ শতাংশ হারে জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। মানব উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন প্রণীত জাতিসংঘ উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রমের বহুমুখী দারিদ্র্য বিমোচন সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশের চেয়ে উত্তম। একইভাবে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি অর্জনেও বাংলাদেশ উলিল্গখিত দেশগুলোসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এগিয়ে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুহার কমানোর মতো সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছে।
অর্জনের এই তালিকা দীর্ঘ হতে পারত যদি গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিককরণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ঘাটতি স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে অন্যতম প্রতিবন্ধক না হতো, যদি দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান ব্যাপকতাকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
দুর্নীতি বিশ্বজনীন সমস্যা। এমন দেশ নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না, যদিও এর বিস্তৃতি, গভীরতা ও প্রভাবে তারতম্য রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) যার মাধ্যমে দুর্নীতির ধারণার মাপকাঠিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক অবস্থান নিরূপণ করা হয়, তাতে উন্নত বিশ্বের যেসব দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও প্রভাব সবচেয়ে কম বলে চিহ্নিত হয়ে থাকে, তারাও এখনও পর্যন্ত সূচকের ০-১০-এর স্কেলে সর্বোচ্চ ৯.৪-এর ঊধর্ে্বর্ স্কোর করেনি। অর্থাৎ দুর্নীতি কেবল উন্নয়নশীল দেশগুলোর একচেটিয়া সমস্যা নয়, যদিও একথা সঠিক যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতির প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুর্নীতি উন্নয়ন, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিককরণ ও সমাজ পরিবর্তনের পথে শুধু অন্তরায় নয়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আইনের শাসনের পথে প্রতিবন্ধকগুলোর অন্যতম এই দুর্নীতি। ২০১১ সালের সিপিআইর ০-১০-এর স্কেলে ২.৭ পেয়ে বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থান পেয়েছে, যা তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী ত্রয়োদশ স্থান। স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত এই সূচকে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন স্কোর করে তালিকার সর্বনিম্নে অবস্থান করেছিল। ২০০৬-এ পেয়েছিল তৃতীয় স্থান, ২০০৭-এ সপ্তম, ২০০৮-এ দশম, ২০০৯-এ ত্রয়োদশ এবং ২০১০-এ দ্বাদশ। আন্তর্জাতিক অবস্থান বিবেচনায় কিছুটা অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ এখনও তালিকার এমন দেশগুলোর পাশে অবস্থান করছে যেখানে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা উদ্বেগজনক (স্কোর ৩-এর চেয়ে কম)। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ শিগগিরই ৫-এর ঊধর্ে্ব স্কোর পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে, যখন এই সূচক অনুযায়ী বলা যাবে যে দুর্নীতিকে মোটামুটি মধ্যম পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে সে পথ এখনও অনেক দূর।
ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোর মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আর যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় ব্যক্ত হয়। কমপক্ষে ডজনখানেক সুস্পষ্ট নীতিমালার উলেল্গখ পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে, যার বাস্তবায়ন বাংলাদেশে দুর্নীতিকে কার্যকর ও স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য।
সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ করতে জাতীয় সংসদকে কার্যকর করার যে নির্বাচনী অঙ্গীকার সরকার ও বিরোধী উভয় দলেরই ছিল তার বাস্তবায়নে অগ্রগতি নগণ্য। নবম সংসদের শুরুটা প্রতিশ্রুতিময় হলেও শিগগিরই একদিকে বিরোধী দলের শুধু আসন রক্ষার প্রয়োজনে অপরিহার্য উপস্থিতির বাইরে ধারাবাহিকভাবে সংসদ বর্জন, অন্যদিকে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি দলের একচ্ছত্র ভুবন হিসেবে পরিণত করায় এবং সংসদীয় কমিটিগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে গণতন্ত্রকামী এ দেশের মানুষের সংসদের প্রতি প্রত্যাশা পূরণ সুদূরপরাহতই রয়েছে। প্রশাসনকে জনমুখী ও দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার অঙ্গীকার বক্তৃতায়ই সীমাবদ্ধ থাকল। একই অবস্থা পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার প্রতিশ্রুতির।
সরকার অনুপার্জিত আয় ও কালো টাকা অর্জনকে পুরস্কৃত করা অব্যাহত রেখেছে। ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার থেকে সরে এসে কর ন্যায়পাল পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার' নিষ্পত্তিকরণ ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এরূপ বিতর্কিত পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকার তথ্য অধিকার আইনের মতো দুর্নীতি প্রতিরোধে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টিকারী আইন এবং এর সঙ্গে সম্পূরক অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি নতুন আইন_ তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন পাস করে প্রশংসার দাবিদার হয়েছে। সরকার সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সনদ কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন অনুযায়ী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নে সরকার কৌশলপত্র অনুমোদন করেছে, যা আশার উদ্রেক করে, যদিও এর কার্যকর বাস্তবায়নে বাস্তব পদক্ষেপ এখনও পর্যাপ্ত নয়।
আইনের প্রয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যাপক ঘাটতি জনগণকে আশাহত করেছে। অন্যদিকে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জনপ্রতিনিধি বা অন্যভাবে প্রভাবশালী ও তাদের সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তিরা যেভাবে স্থানীয় পর্যায়ে টেন্ডারবাজি, নদী-বনাঞ্চল-ভূমি দখল ও টোলবাজিসহ আইনের শাসন পরিপন্থী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে অপরিহার্য প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ক্রমান্বয়ে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও তাদের পরিবার-পরিজনসহ ক্ষমতাবানদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হয়নি। দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করে যেভাবে সংসদ সদস্যদের হাতে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে তা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুর্নীতি, তা যেই পর্যায়েই ঘটুক না কেন, কারও প্রতি কোনো ধরনের ভয় বা করুণা না করে, সব ধরনের দলীয় বা রাজনৈতিক বিবেচনার ঊধর্ে্ব থেকে তার বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে আইন প্রয়োগে আদালতকে কোনো অবস্থাতেই প্রভাবিত না করা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে তখনই সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে যখন বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তখনই সুফল আনবে যখন এই বিভাগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের ঊধর্ে্ব থেকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা, পেশাগত উৎকর্ষতা এবং সততার সঙ্গে কার্যপরিচালনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষভাবে উলেল্গখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে জনপ্রশাসন তথা সরকারি কর্মকর্তারা। পৃথিবীর যেসব দেশে সাফল্যের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে সেসব দেশে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশাসনকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করা অপরিহার্য।
দুর্নীতি প্রতিরোধে বেসরকারি খাতের ভূমিকাও অপরিসীম। বাংলাদেশ জাতিসংঘ দুর্নীতিবিরোধী সনদে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই সনদে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। সরকারি খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ কখনোই সম্ভব হবে না যদি বেসরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব না হয়। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি ও বহুজাতিকসহ বেসরকারি খাতে কর্মরত সব প্রতিষ্ঠানেই সততা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করা অপরিহার্য।
দুর্নীতিবিরোধী একজন কর্মী হিসেবে আমি প্রায়শই নিজেকে ব্যর্থ মনে করি। আমাদের আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বিষয়ক সচেতনতা ও চাহিদা অনেক বেড়েছে। দুর্নীতি এখন মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেয়েছে; গণমাধ্যমে এক বিরাট জায়গা করে নিয়েছে দুর্নীতি বিষয়ক সংবাদ, আলোচনা, মন্তব্য। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এখন দুর্নীতি প্রতিরোধ। যদিও বাস্তব প্রয়োগ একান্তই হতাশাব্যঞ্জক। অন্যদিকে আমাদের কার্যক্রমের প্রতি কোনো কোনো প্রভাবশালী মহলের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও আমাদেরই উদ্যোগে বেশ কিছু আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি ও তার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন গঠন এবং পরে কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে অব্যাহত ক্যাম্পেইন, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি, তথ্য অধিকার আইন, তথ্য প্রকাশকারীর সুরক্ষা আইন ইত্যাদির মতো অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে, যাতে রয়েছে টিআইবির প্রত্যক্ষ ভূমিকা। এসবের মূল লক্ষ্য দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধক প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বৃদ্ধি করা, যার ফলে দুর্নীতি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং অবস্থান বা পরিচয় নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে।
কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আমাদের গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, দেশের জনগণও জানে দুর্নীতির প্রকোপ বেড়েই চলেছে। শিক্ষা ও কৃষির মতো গুটিকয়েক খাত যেখানে নেতৃত্বের দৃঢ়তার পাশাপাশি অকৃত্রিম প্রচেষ্টা রয়েছে, সেখানে কিছুটা হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়। তবে সার্বিকভাবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা যে আশঙ্কাজনক তা দলমত নির্বিশেষে সকলেরই জানা।
এ অবস্থার উত্তরণে জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। জনগণই চাইবে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক; জনগণই চাইবে দুর্নীতি যারা করেন তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক; জনগণই চাইবে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক কারও প্রতি ভয় বা করুণা না করে; জনগণই চাইবে নেতা-নেত্রীদের আচরণে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন ঘটুক, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হোক ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊধর্ে্ব। জনগণের এই চাওয়া, এই দাবি যত বেশি জোরালো হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ ততটাই ত্বরান্বিত হবে।
ইফতেখারুজ্জামান :নির্বাহী পরিচালক
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
No comments