ওরা আছে সবখানে by সুভাষ সাহা
যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো যে কতটা কঠিন সেটা কম্বোডিয়ার খেমাররুজদের যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের ওপর ভিত্তি করে সর্বশেষ ছবি তৈরি করতে গিয়ে পুরস্কারজয়ী নির্মাতা, কম্বোডিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক থেট সামবাথ ভালোভাবেই টের পেয়েছেন।
ছবিটি বানাতে গিয়ে তিনি কয়েকবার জমদুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। সুতরাং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যারা সাক্ষী দেবেন, তাদের অনেকেই এখন ভয়ে-আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াবেন এটাই তো স্বাভাবিক! তবে সম্প্রতি সমকালে এ ধরনের একটি বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ পাওয়ার পর অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সরকার এখন ক্ষমতায়। তারাই ঘটা করে স্বাধীনতার চার দশকের মাথায় একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতাকারী, মানুষ হত্যাকারী, ধর্ষণকারী, বাড়িঘর লুণ্ঠনকারী ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করার ঝুঁকিপূর্ণ ও দুরূহ কাজটি সম্পাদন করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। এতে জনমানুষের ব্যাপক সমর্থনও লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বিচারপর্ব শুরু হওয়ার পর দুর্বল প্রসিকিউশনের অভিযোগ ওঠে। ব্যাপক প্রস্তুতির পর এ ধরনের অভিযোগ কি কাম্য হতে পারে? তবে কি শর্ষের ভেতরেই ভূত আস্তানা গেড়েছে! আসলে যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্তরা এবং তাদের পরিবার-পরিজন সমাজের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে এতদিনে সুবিধাজনক অবস্থানে পেঁৗছে গেছে। সরকারের বিভিন্ন শাখায় এবং বিদেশে তাদের সমর্থকের অভাব নেই। এমনকি অর্থ দিয়ে সাহায্য করার মতো সংস্থা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও অভাব নেই। সর্বশেষ চারদলীয় জোট সরকার আমলে এই অপশক্তি রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তিকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার মওকা পেয়ে যায়। সে কারণে সরকার ওপর থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিলেও তা হুবহু অনুসৃত হয় না। তথ্য লোপাট করে দেওয়া, সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে সাক্ষ্যদান থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করা, মোটা অঙ্কের অর্থ বিলিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরগুলো দুর্বল করে দেওয়া ইত্যাদি নানা কৌশল তারা গ্রহণ করছে। অথচ যারা অপরাধীদের কঠিন শাস্তি প্রত্যাশা করেন তাদের অনেকে এ জন্য সরকারকেই দায়ী করছেন এবং এটা করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা অনেকেই বিস্মৃত হই যে, এসব অপরাধী দীর্ঘদিনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই সমাজেরই অংশে পরিণত হয়েছে। এই অপরাধীরাও এখন বিরাট সামাজিক ও অর্থনৈতিক শক্তি। তারা বিএনপির ছাতা ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবেও অস্পৃশ্যতার হাত থেকে রেহাই পেয়ে উচ্চস্বরে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে সমাজের সর্বস্তর ও পর্যায়ের মানুষকে এককাতারে এসে দাঁড়ালেই শুধু চলবে না, অতন্দ্র প্রহরীর মতো তাদের সবাইকে চক্রান্তের জটাজাল ছিন্ন করতে হবে। এটাকে আরেক মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করাটা অতিশয়োক্তি হবে না। কারণ, এই অপশক্তি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হবে কি-না তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ কি পাকিস্তানের মতো একটি জঙ্গিবাদী বা মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে? এখানে কি একনায়কত্ববাদী শাসন পুনরায় প্রতিষ্ঠা পাবে? তরুণ শক্তি কি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেই সার করবে, নাকি তারা ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার অন্ধগলির বদ্ধ দুয়ারে নিজেদের ভবিষ্যৎকে সঁপে দেবে_ এসবই নির্ভর করছে এবারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লড়াইয়ে চূড়ান্তভাবে কারা বিজয়ী হবে তার ওপর। পুরনো প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির শিকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত সেটা
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক থেট সামবাথ সম্যক উপলব্ধি করে থাকবেন। বধ্যভূমির ওপর ছবিটি বানাতে গিয়ে তাকে নানা স্থানে নাজেহাল হতে হয়েছে। কার ও মোটরসাইকেলযোগে পথিমধ্যে তাকে ধাওয়া করা হয়েছে। এমনকি মেরে ফেলার চেষ্টাও হয়েছে।
সুতরাং আমাদের এখানেও যারা সত্যিকারভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন বা নিচ্ছেন, তাদেরও নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও গুণ্ডাবাজির মোকাবেলা করতে হতে পারে। সবকিছু সরকার ওপর থেকে নির্দেশ দিয়ে করিয়ে দেবে বলে যারা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন তাদের ঘুম ভাঙানো দরকার। কারণ এ লড়াইটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যতাড়িত। এখানে পা পিছলে গেলে রক্ষা নেই।
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গবেষক থেট সামবাথ সম্যক উপলব্ধি করে থাকবেন। বধ্যভূমির ওপর ছবিটি বানাতে গিয়ে তাকে নানা স্থানে নাজেহাল হতে হয়েছে। কার ও মোটরসাইকেলযোগে পথিমধ্যে তাকে ধাওয়া করা হয়েছে। এমনকি মেরে ফেলার চেষ্টাও হয়েছে।
সুতরাং আমাদের এখানেও যারা সত্যিকারভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন বা নিচ্ছেন, তাদেরও নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও গুণ্ডাবাজির মোকাবেলা করতে হতে পারে। সবকিছু সরকার ওপর থেকে নির্দেশ দিয়ে করিয়ে দেবে বলে যারা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছেন তাদের ঘুম ভাঙানো দরকার। কারণ এ লড়াইটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যতাড়িত। এখানে পা পিছলে গেলে রক্ষা নেই।
No comments