বিশেষ সাক্ষাত্কার-মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পেছনে আছে দুর্নীতি by সুলতানা কামাল
সুলতানা কামালের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫০ সালে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৭৮ সালে। ১৯৮১ সালে হল্যান্ডে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনার পর কিছু সময় শিক্ষকতা ও জাতিসংঘের
শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনে আইনি পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। তারপর তিনি স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার-কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে এক মাসের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগ করেন। তিনি বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো আপনি মূলত একজন মানবাধিকারকর্মী। সম্প্রতি আপনি দুর্নীতি দমন বিষয়ে গবেষণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দুর্নীতি ও দমন বিষয়ে আপনার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
সুলতানা কামাল আমাকে মাঝেমধ্যেই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়; সেটা এ রকম যে আমি একজন মানবাধিকারকর্মী, আবার দুর্নীতি দমন বিষয়েও আগ্রহী; তিন বছর ধরে আমি টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তো মানবাধিকার ও দুর্নীতি—এই দুটি বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি কীভাবে সমন্বয় করি। বা এ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না। খুব সংক্ষেপে বলি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলোর পেছনে দুর্নীতির অনেক কারণ থাকে। দুর্নীতির কারণে সম্পদ অল্প কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়; দুর্নীতির সুযোগে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি অবস্থানগত ক্ষমতা ব্যবহার করে কিছুসংখ্যক মানুষ অন্যের অধিকার খর্ব করে। এভাবে দুর্নীতির সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে বাস করি। এখন সম্পদের বণ্টনের দিকেই যদি আমরা প্রথমে তাকাই, তাহলে দেখব, অত্যন্ত নির্মম অসমতা রয়েছে। এখানে অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ ব্যাপক ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন, আর ব্যাপকসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। যে নীতি দিয়ে মানুষের অধিকারগুলো রক্ষা করা যেত, মানুষের প্রাপ্য মর্যাদা সংরক্ষণ করা যেত, সেই নীতির মধ্যে গলদ রয়ে গেছে। অর্থাত্ সেখানে দুর্নীতি রয়েছে এবং এই দুর্নীতির কারণেই বৈষম্য ঘটছে। আমার মতে, মানুষের অধিকারহীনতা, মানুষের লাঞ্ছনা, মানুষের ওপরে যে নিপীড়ন-নিষ্পেষণ চলে তার একটা কারণ হচ্ছে দুর্নীতি।
প্রথম আলো প্রায়োগিক দিক থেকে যদি বলি, প্রচলিত আইন-কানুনের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির চর্চা বন্ধ করার দাবি বহু দিনের। বর্তমান নির্বাচিত সরকারের প্রায় আড়াই বছর হতে চলল, এখন দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি কেমন? উন্নতি বা অবনতি হয়েছে, নাকি একই রকমভাবে চলছে?
সুলতানা কামাল সাধারণভাবে মানুষ অর্থনৈতিক দুর্নীতিটাই বোঝে, দুর্নীতির অন্য রূপগুলো বোঝার বা বিশ্লেষণ করার সুযোগ তাদের হয় না। অর্থনৈতিক দুর্নীতির কথাই বলা যাক। প্রথমত বলতে হয়, এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। মানুষ দুর্নীতির প্রতিবাদ করারও চেষ্টা করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিষ্ঠা মানুষকে অনেকখানি সাহস জুগিয়েছে, তাদের মধ্যে এমন আস্থা সৃষ্টি করেছে যে দুর্নীতি দমন সম্ভব। দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কথা বলে যাচ্ছে। তাদের ক্ষমতা খর্ব করার যত রকম প্রচেষ্টাই থাকুক না কেন, তারা কিন্তু কাজ করার প্রয়াস দেখিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, টিআইবির মাধ্যমে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, নতুন প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতনতা এসেছে। তাদের স্লোগান হচ্ছে: দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি মানব না।
প্রথম আলো দুদক গঠিত হয়েছে ২০০৪ সালে। তারপর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। টিআইবিও এ দেশে কাজ করছে অনেক বছর ধরে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের অভাব নেই। কিন্তু এসবের ফল কী? দুর্নীতি কি কমেছে? বা দুর্নীতিবাজদের কি শাস্তি হচ্ছে?
সুলতানা কামাল একটা কথা বোধহয় বলা যায় যে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বাড়ার ফলে মানুষ এখন খুব খোলাখুলিভাবে দুর্নীতি করতে একটু সংকোচ বোধ করে। কিছুদিন আগেও আমরা দেখেছি দুর্নীতি করাটা যে একটা দূষণীয় ব্যাপার, লজ্জার ব্যাপার, এই বোধের ঘাটতি ছিল। এখন দুর্নীতির হার কমেছে কি না সেটা গবেষণার বিষয়, কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা যায়, দুর্নীতি করার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে একটা সংকোচ বা ভীতি এসেছে। এই দিক থেকে বোধহয় বলা যায়, দুর্নীতি পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়েছে।
প্রথম আলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম বড় অঙ্গীকার ছিল যে তারা ক্ষমতায় যেতে পারলে দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেবে, দুদককে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেবে। তারা ক্ষমতায় এসেছে। তারা কি তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে?
সুলতানা কামাল যদি আমরা দুদকের প্রতি তাদের আচরণ দিয়ে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে তো দেখা যাচ্ছে তারা দুদককে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তার ক্ষমতা খর্ব করার যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছিল। দুদক আইন সংশোধনে সরকারের প্রস্তাব অবশ্য এখনো পাস হয়নি, আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু যে শর্তগুলো তারা দুদকের ওপর আরোপ করতে চেয়েছিল, তাতে তো দুদককে আরও শক্তিশালী করার বা দুদককে সচল রাখার, স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার মনোভাব পরিলক্ষিত হয় না। তারপর আরও একটি বিষয় আছে: অন্য কেউ দুর্নীতি করলে আমরা সেটাকে দুর্নীতি হিসেবে দেখি, আমরা নিজেরা, নিজেদের লোকজন তা করলে দুর্নীতি মনে করি না। এই মানসিকতারও তেমন পরিবর্তন ঘটেনি।
প্রথম আলো মন্ত্রী ও সাংসদদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা ছিল...
সুলতানা কামাল হ্যাঁ, আমি সে কথাতেই আসছি। তাঁদের একটা অঙ্গীকার ছিল যে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা তাঁদের সম্পদের হিসাব দেবেন। দু-একজন দিচ্ছেন, এটা নিয়ে কথা উঠছে, আবার তাঁরাই নিজেদের মধ্য থেকে বলছেন যে হিসাব প্রকাশ করা হবে না। এ বিষয়ে এ পর্যন্ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি যে সম্পদের হিসাব নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। এসব বিষয় লক্ষ করে আমরা অবশ্যই প্রশ্ন তুলতে পারি যে তাঁরা যে কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো তাঁরা বিশ্বাস করে বলেছিলেন, আন্তরিকভাবে বলেছিলেন, নাকি স্রেফ কথার কথা হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে বলেছিলেন।
প্রথম আলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার স্বচ্ছভাবে, দুর্নীতিমুক্তভাবে চলছে কি না তা দেখার, এ বিষয়ে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব সংসদ ও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু নাগরিক পর্যায়ে, বেসরকারি নানা সংস্থা ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যত কথা শুনি, জাতীয় সংসদ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ততটা শোনা যায় না। শুধু সরকার পরিবর্তন হলে আমরা দেখি, আগের সরকারের মন্ত্রী বা সাংসদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়।
সুলতানা কামাল আমরা দেখে আসছি, যাঁরাই যখন বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরা শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনসংক্রান্ত কিছু কিছু বিষয়ে কথাবার্তা বলেন, আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। জনগণের স্বার্থে খুব যে কথা বলেছেন বা আন্দোলনে নেমেছেন, এমনটি দেখা যায়নি। কোনো বিরোধী দলকেই আমরা সেভাবে পাই না। এই অবস্থা এখনো চলছে, এই ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখন যাঁরা বিরোধী দলে আছেন, তাঁদের তো অবশ্যই উচিত সংসদে গিয়ে এসব বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সরকারকে জবাবদিহি করতে তাঁরাই তো সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন, কারণ জনগণ তাঁদের সেই ম্যান্ডেট দিয়েছে। দুদক আইন সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করার সুপারিশের সবচেয়ে প্রবল প্রতিবাদ হতে পারত সংসদেই, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। কারণ সরকারের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা করে এ বিষয়ে একটা সমাধানে পৌঁছার জন্য সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থান তাঁদেরই রয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে তাঁদের একটা নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি বিরোধী দল সেভাবে তা পালন করছে না।
প্রথম আলো সে কারণেই নাগরিক সমাজ বা টিআইবির মতো সংস্থা-সংগঠনগুলোকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়?
সুলতানা কামাল হ্যাঁ, কিন্তু নাগরিক সমাজ বা বিভিন্ন সংস্থার অবস্থানগত এখতিয়ার তো সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নয়। সে কারণে তারা যে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর কার্যকর প্রভাব রাখতে পারে, বা সরকারের কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে—এমনটি সব সময় ঘটে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, তাঁরা যে জনগণেরই প্রতিনিধি এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করাই যে তাঁদের মূল দায়িত্ব, এই উপলব্ধির অভাব রয়েছে তাঁদের মধ্যে। সে কারণে জনগণের মধ্য থেকে যখন কেউ সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের রোষ নেমে আসে। যখন তিনি বিপদে পড়েন, তখন তাঁর পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি থাকে না। টিআইবি যখনই দুর্নীতি-সম্পর্কিত কোনো সমীক্ষা-জরিপ বা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখনই প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে। টিআইবি যেখানেই দুর্নীতির বিষয়গুলো চিহ্নিত করে, সেখান থেকেই প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসে। এমনকি সংসদেও টিআইবির বিরুদ্ধে নেতিবাচকভাবে আলোচনা করা হয়। রাজনীতিকেরা ভুলে যান যে দেশের মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তাঁরা কাজ করছেন, দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। দেশের যেকোনো সম্পদের অপচয়, যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাঁদের যে রকম রয়েছে, জনগণের তার থেকে মোটেও কম নেই।
প্রথম আলো টিআইবি দুই ধরনের কাজ করে। একটা হচ্ছে গবেষণা সমীক্ষা-জরিপ ইত্যাদি। আরেকটা হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি, মানববন্ধন, স্বাক্ষর সংগ্রহ ইত্যাদি। এভাবে টিআইবির মতো সংস্থার পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করা সম্ভব হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
সুলতানা কামাল গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি দুর্নীতির প্রকোপ কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি, কী কী প্রক্রিয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে, সেগুলোর সম্ভাব্য সমাধানগুলো কী হতে পারে ইত্যাদি। আর অ্যাডভোকেসি বা জনসচেতনতা সৃষ্টিমূলক কাজের ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশিসংখ্যক মানুষকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। সচেতন নাগরিক যাঁরা আছেন তাঁদের, যুবসমাজকে, বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের। নারী সমাজের ওপর একটা বড় ফোকাস আছে, কারণ দুর্নীতির কারণে নারীরা কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টিআইবি একটি সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করে, কিন্তু সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, স্তরের মানুষকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সমবেত করার চেষ্টা আমরা করি। টিআইবি মনে করে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পাওয়া জনগণের অধিকার। এখানে জনগণেরও যথেষ্ট দায়দায়িত্ব রয়েছে। বিরাট দায়িত্ব রয়েছে সংবাদমাধ্যমের। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে, দুর্নীতিবাজদের দমন করতে ও শাস্তি দিতে সরকার যেন সব সময় চাপের মধ্যে থাকে, রাষ্ট্রের সম্পদ ও অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছ ও জবাবদিহির তাগিদ সরকার সব সময় অনুভব করতে বাধ্য হয়, সেটা আমাদের লক্ষ্য। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিচারে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। সরকার যদি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে আন্তরিক না হয়, বা নিজেদের দলের লোকদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ ঘটতে না দেয়, মামলা প্রত্যাহার করে, বা মামলা দায়ের করতেই না দেয়, বিচার বিভাগের ওপর কোনো প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে—তাহলে কিন্তু দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুলতানা কামাল ধন্যবাদ।
সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো আপনি মূলত একজন মানবাধিকারকর্মী। সম্প্রতি আপনি দুর্নীতি দমন বিষয়ে গবেষণা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে এমন একটি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দুর্নীতি ও দমন বিষয়ে আপনার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
সুলতানা কামাল আমাকে মাঝেমধ্যেই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়; সেটা এ রকম যে আমি একজন মানবাধিকারকর্মী, আবার দুর্নীতি দমন বিষয়েও আগ্রহী; তিন বছর ধরে আমি টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তো মানবাধিকার ও দুর্নীতি—এই দুটি বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি কীভাবে সমন্বয় করি। বা এ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না। খুব সংক্ষেপে বলি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলোর পেছনে দুর্নীতির অনেক কারণ থাকে। দুর্নীতির কারণে সম্পদ অল্প কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যায়; দুর্নীতির সুযোগে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি অবস্থানগত ক্ষমতা ব্যবহার করে কিছুসংখ্যক মানুষ অন্যের অধিকার খর্ব করে। এভাবে দুর্নীতির সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে আমরা সীমিত সম্পদ নিয়ে বাস করি। এখন সম্পদের বণ্টনের দিকেই যদি আমরা প্রথমে তাকাই, তাহলে দেখব, অত্যন্ত নির্মম অসমতা রয়েছে। এখানে অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ ব্যাপক ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন, আর ব্যাপকসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। যে নীতি দিয়ে মানুষের অধিকারগুলো রক্ষা করা যেত, মানুষের প্রাপ্য মর্যাদা সংরক্ষণ করা যেত, সেই নীতির মধ্যে গলদ রয়ে গেছে। অর্থাত্ সেখানে দুর্নীতি রয়েছে এবং এই দুর্নীতির কারণেই বৈষম্য ঘটছে। আমার মতে, মানুষের অধিকারহীনতা, মানুষের লাঞ্ছনা, মানুষের ওপরে যে নিপীড়ন-নিষ্পেষণ চলে তার একটা কারণ হচ্ছে দুর্নীতি।
প্রথম আলো প্রায়োগিক দিক থেকে যদি বলি, প্রচলিত আইন-কানুনের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতির চর্চা বন্ধ করার দাবি বহু দিনের। বর্তমান নির্বাচিত সরকারের প্রায় আড়াই বছর হতে চলল, এখন দেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি কেমন? উন্নতি বা অবনতি হয়েছে, নাকি একই রকমভাবে চলছে?
সুলতানা কামাল সাধারণভাবে মানুষ অর্থনৈতিক দুর্নীতিটাই বোঝে, দুর্নীতির অন্য রূপগুলো বোঝার বা বিশ্লেষণ করার সুযোগ তাদের হয় না। অর্থনৈতিক দুর্নীতির কথাই বলা যাক। প্রথমত বলতে হয়, এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতা অনেক বেড়েছে। মানুষ দুর্নীতির প্রতিবাদ করারও চেষ্টা করে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিষ্ঠা মানুষকে অনেকখানি সাহস জুগিয়েছে, তাদের মধ্যে এমন আস্থা সৃষ্টি করেছে যে দুর্নীতি দমন সম্ভব। দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কথা বলে যাচ্ছে। তাদের ক্ষমতা খর্ব করার যত রকম প্রচেষ্টাই থাকুক না কেন, তারা কিন্তু কাজ করার প্রয়াস দেখিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, টিআইবির মাধ্যমে সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, নতুন প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতনতা এসেছে। তাদের স্লোগান হচ্ছে: দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি মানব না।
প্রথম আলো দুদক গঠিত হয়েছে ২০০৪ সালে। তারপর ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। টিআইবিও এ দেশে কাজ করছে অনেক বছর ধরে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের অভাব নেই। কিন্তু এসবের ফল কী? দুর্নীতি কি কমেছে? বা দুর্নীতিবাজদের কি শাস্তি হচ্ছে?
সুলতানা কামাল একটা কথা বোধহয় বলা যায় যে দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বাড়ার ফলে মানুষ এখন খুব খোলাখুলিভাবে দুর্নীতি করতে একটু সংকোচ বোধ করে। কিছুদিন আগেও আমরা দেখেছি দুর্নীতি করাটা যে একটা দূষণীয় ব্যাপার, লজ্জার ব্যাপার, এই বোধের ঘাটতি ছিল। এখন দুর্নীতির হার কমেছে কি না সেটা গবেষণার বিষয়, কিন্তু সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা যায়, দুর্নীতি করার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে একটা সংকোচ বা ভীতি এসেছে। এই দিক থেকে বোধহয় বলা যায়, দুর্নীতি পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়েছে।
প্রথম আলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম বড় অঙ্গীকার ছিল যে তারা ক্ষমতায় যেতে পারলে দুর্নীতি দমনকে অগ্রাধিকার দেবে, দুদককে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেবে। তারা ক্ষমতায় এসেছে। তারা কি তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছে?
সুলতানা কামাল যদি আমরা দুদকের প্রতি তাদের আচরণ দিয়ে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে তো দেখা যাচ্ছে তারা দুদককে শক্তিশালী করার পরিবর্তে তার ক্ষমতা খর্ব করার যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছিল। দুদক আইন সংশোধনে সরকারের প্রস্তাব অবশ্য এখনো পাস হয়নি, আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু যে শর্তগুলো তারা দুদকের ওপর আরোপ করতে চেয়েছিল, তাতে তো দুদককে আরও শক্তিশালী করার বা দুদককে সচল রাখার, স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার মনোভাব পরিলক্ষিত হয় না। তারপর আরও একটি বিষয় আছে: অন্য কেউ দুর্নীতি করলে আমরা সেটাকে দুর্নীতি হিসেবে দেখি, আমরা নিজেরা, নিজেদের লোকজন তা করলে দুর্নীতি মনে করি না। এই মানসিকতারও তেমন পরিবর্তন ঘটেনি।
প্রথম আলো মন্ত্রী ও সাংসদদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার কথা ছিল...
সুলতানা কামাল হ্যাঁ, আমি সে কথাতেই আসছি। তাঁদের একটা অঙ্গীকার ছিল যে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা তাঁদের সম্পদের হিসাব দেবেন। দু-একজন দিচ্ছেন, এটা নিয়ে কথা উঠছে, আবার তাঁরাই নিজেদের মধ্য থেকে বলছেন যে হিসাব প্রকাশ করা হবে না। এ বিষয়ে এ পর্যন্ত কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি যে সম্পদের হিসাব নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে হবে। এসব বিষয় লক্ষ করে আমরা অবশ্যই প্রশ্ন তুলতে পারি যে তাঁরা যে কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো তাঁরা বিশ্বাস করে বলেছিলেন, আন্তরিকভাবে বলেছিলেন, নাকি স্রেফ কথার কথা হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে বলেছিলেন।
প্রথম আলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার স্বচ্ছভাবে, দুর্নীতিমুক্তভাবে চলছে কি না তা দেখার, এ বিষয়ে সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব সংসদ ও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু নাগরিক পর্যায়ে, বেসরকারি নানা সংস্থা ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যত কথা শুনি, জাতীয় সংসদ বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ততটা শোনা যায় না। শুধু সরকার পরিবর্তন হলে আমরা দেখি, আগের সরকারের মন্ত্রী বা সাংসদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়।
সুলতানা কামাল আমরা দেখে আসছি, যাঁরাই যখন বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরা শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনসংক্রান্ত কিছু কিছু বিষয়ে কথাবার্তা বলেন, আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। জনগণের স্বার্থে খুব যে কথা বলেছেন বা আন্দোলনে নেমেছেন, এমনটি দেখা যায়নি। কোনো বিরোধী দলকেই আমরা সেভাবে পাই না। এই অবস্থা এখনো চলছে, এই ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এখন যাঁরা বিরোধী দলে আছেন, তাঁদের তো অবশ্যই উচিত সংসদে গিয়ে এসব বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সরকারকে জবাবদিহি করতে তাঁরাই তো সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন, কারণ জনগণ তাঁদের সেই ম্যান্ডেট দিয়েছে। দুদক আইন সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করার সুপারিশের সবচেয়ে প্রবল প্রতিবাদ হতে পারত সংসদেই, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা। কারণ সরকারের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা করে এ বিষয়ে একটা সমাধানে পৌঁছার জন্য সবচেয়ে দৃঢ় অবস্থান তাঁদেরই রয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে তাঁদের একটা নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি বিরোধী দল সেভাবে তা পালন করছে না।
প্রথম আলো সে কারণেই নাগরিক সমাজ বা টিআইবির মতো সংস্থা-সংগঠনগুলোকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়?
সুলতানা কামাল হ্যাঁ, কিন্তু নাগরিক সমাজ বা বিভিন্ন সংস্থার অবস্থানগত এখতিয়ার তো সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো নয়। সে কারণে তারা যে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর কার্যকর প্রভাব রাখতে পারে, বা সরকারের কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারে—এমনটি সব সময় ঘটে না। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, তাঁরা যে জনগণেরই প্রতিনিধি এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করাই যে তাঁদের মূল দায়িত্ব, এই উপলব্ধির অভাব রয়েছে তাঁদের মধ্যে। সে কারণে জনগণের মধ্য থেকে যখন কেউ সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান, তখন তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের রোষ নেমে আসে। যখন তিনি বিপদে পড়েন, তখন তাঁর পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি থাকে না। টিআইবি যখনই দুর্নীতি-সম্পর্কিত কোনো সমীক্ষা-জরিপ বা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখনই প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে। টিআইবি যেখানেই দুর্নীতির বিষয়গুলো চিহ্নিত করে, সেখান থেকেই প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসে। এমনকি সংসদেও টিআইবির বিরুদ্ধে নেতিবাচকভাবে আলোচনা করা হয়। রাজনীতিকেরা ভুলে যান যে দেশের মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তাঁরা কাজ করছেন, দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ। দেশের যেকোনো সম্পদের অপচয়, যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাঁদের যে রকম রয়েছে, জনগণের তার থেকে মোটেও কম নেই।
প্রথম আলো টিআইবি দুই ধরনের কাজ করে। একটা হচ্ছে গবেষণা সমীক্ষা-জরিপ ইত্যাদি। আরেকটা হচ্ছে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি, মানববন্ধন, স্বাক্ষর সংগ্রহ ইত্যাদি। এভাবে টিআইবির মতো সংস্থার পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করা সম্ভব হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়?
সুলতানা কামাল গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি দুর্নীতির প্রকোপ কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি, কী কী প্রক্রিয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হচ্ছে, সেগুলোর সম্ভাব্য সমাধানগুলো কী হতে পারে ইত্যাদি। আর অ্যাডভোকেসি বা জনসচেতনতা সৃষ্টিমূলক কাজের ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যত বেশিসংখ্যক মানুষকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। সচেতন নাগরিক যাঁরা আছেন তাঁদের, যুবসমাজকে, বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের। নারী সমাজের ওপর একটা বড় ফোকাস আছে, কারণ দুর্নীতির কারণে নারীরা কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টিআইবি একটি সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করে, কিন্তু সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী, পেশা, স্তরের মানুষকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সমবেত করার চেষ্টা আমরা করি। টিআইবি মনে করে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পাওয়া জনগণের অধিকার। এখানে জনগণেরও যথেষ্ট দায়দায়িত্ব রয়েছে। বিরাট দায়িত্ব রয়েছে সংবাদমাধ্যমের। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে, দুর্নীতিবাজদের দমন করতে ও শাস্তি দিতে সরকার যেন সব সময় চাপের মধ্যে থাকে, রাষ্ট্রের সম্পদ ও অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে যেন স্বচ্ছ ও জবাবদিহির তাগিদ সরকার সব সময় অনুভব করতে বাধ্য হয়, সেটা আমাদের লক্ষ্য। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিচারে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। সরকার যদি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে আন্তরিক না হয়, বা নিজেদের দলের লোকদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ ঘটতে না দেয়, মামলা প্রত্যাহার করে, বা মামলা দায়ের করতেই না দেয়, বিচার বিভাগের ওপর কোনো প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে—তাহলে কিন্তু দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সুলতানা কামাল ধন্যবাদ।
No comments