ঈশ্বরদীতে সংঘর্ষ-শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা

পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) রোববার ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা প্রমাণ করেছে, রফতানিমুখী পণ্যে উৎপাদন নির্বিঘ্ন ও সুশৃঙ্খল রাখার জন্য কেবল বিশেষ ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। সাধারণ শিল্প এলাকায় হাঙ্গামাজনিত কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার দীর্ঘ ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে


ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল, সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ ওই সব বিশেষায়িত এলাকা থেকে উৎপাদন ও রফতানি প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন থাকবে। বাস্তবে ঈশ্বরদীর আগেও অন্যান্য ইপিজেডে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ এবং তার জের ধরে উৎপাদন ব্যাহত হতে দেখেছি আমরা। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে যে এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি এড়ানো যায়, ঈশ্বরদীর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সেটাও আরেকবার স্পষ্ট হয়েছে। বস্তুত কয়েকশ' মানুষের আহত হওয়া, ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলার দায় পুলিশ, কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক_ সবারই। বিশেষ করে পুলিশের বাড়াবাড়ি অঘটনটিকে জটিল ও বিস্তৃত করেছে বলে আমরা মনে করি। সংবাদমাধ্যমসূত্রে জানা যাচ্ছে, শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলাকালে কর্তৃপক্ষের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং বিচ্ছিন্নভাবে এক নারী শ্রমিকের ওপর চড়াও হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, পুলিশের কর্তব্য হচ্ছে সেই চেষ্টাই করা। ঈশ্বরদীর ঘটনায় পুলিশই বরং বিশৃঙ্খলা উস্কে দিয়েছে। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেবে। শ্রমিকদের কর্মবিরতির জবাবে পুলিশ ডেকে পাঠানো সংশ্লিষ্ট কারখানা দুটির কর্তৃপক্ষের হঠকারিতা হিসেবে বিবেচিত হবে। তাদের উচিত ছিল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থা নিরসন করা। শ্রমিকদেরও একেবারে কর্মবিরতিতে যাওয়া উচিত হয়নি। উৎপাদন ব্যাহত না করেও দাবি আদায়ের অন্যান্য উপায় তারা বেছে নিতে পারত। মনে রাখা উচিত, কারখানায় তালা ঝুললে কারও মঙ্গল হয় না। যেমন মঙ্গল হবে না সংঘর্ষের ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হলে। আমরা আশা করি, সব পক্ষই শান্তি ও শৃঙ্খলার পক্ষে অবস্থান নেবে। ওই ঘটনার পর বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে আটক এবং আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রুজুও সমাধান দেবে না। খেটে খাওয়া মানুষ যাতে হেনস্তার শিকার না হয়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সবার আন্তরিকতাই পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ছায়া সরিয়ে সহযোগিতার বাতাবরণ তৈরি করতে।

No comments

Powered by Blogger.