ইটিপি-আরও খানিকটা পথ যেতে হবে by খবির উদ্দীন
অধিকাংশ সময়ই ট্যানারি থেকে যে বর্জ্য বের হয়, টেক্সটাইল থেকে তার চেয়ে ভিন্ন রকম তরল বর্জ্য বের হয়। ট্যানারি থেকে অধিকাংশ সময় যে ইফ্লুয়েন্ট বা তরল বর্জ্য বের হয় তা অম্লীয়। অন্যদিকে টেক্সটাইল থেকে ক্ষারীয় বর্জ্য বের হয়। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম ইটিপি স্থাপন করতে পারে
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। বিশ্বের মানচিত্রে ১৯৭১ সালে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম। দীর্ঘ চলি্লশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা আমাদের অর্থনীতির বুনিয়াদ গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বিশ্বায়নের এই যুগে আমাদের দেশেও শিল্প-কারখানার বিস্তার ঘটেছে অনেক। বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক কল-কারখানাই গড়ে উঠেছে, যার অনেকেরই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে হলে এসব শিল্প-কারখানার বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়। আবার পরিবেশের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই দরকার অর্থনৈতিক উন্নতি আর পরিবেশের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান।
ঢাকাকে ঘিরে রয়েছে মূলত চারটি নদী_ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। আমরা এ চারটি নদীর পানির গুণগত মান নির্ণয়ে কাজ করছি এপ্রিল ২০১১ সাল থেকে ইউজিসি (টএঈ) ও ঔধঢ়ধহ ঝড়পরবঃু ভড়ৎ ঃযব চৎড়সড়ঃরড়হ ড়ভ ঝপরবহপব (ঔঝচঝ)-এর সহায়তায়। এটি আমাদের দুই বছরমেয়াদি একটি প্রকল্প। আমাদের গবেষণালব্ধ ফল খুবই ভয়াবহ। এ চারটি নদীর পানি কোনো প্রকার ব্যবহারেরই উপযোগী নয়। আমরা কমবেশি সবাই আহসান মঞ্জিলের কথা জানি। আহসান মঞ্জিল নির্মিত হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এক সময় নদীর শীতল বাতাস ওই মঞ্জিলের সবাইকে বিমোহিত করত। আর বর্তমানে ওই বাতাসে যে দুর্গন্ধ তা কোনো অবস্থায়ই সহ্য করা যায় না। এ মঞ্জিল হতে পারত সুন্দর মনোমুগ্ধকর ট্যুরিস্ট পেল্গস, যা থেকে আয় হতো প্রচুর অর্থ। চারটি নদীকে আমরা বাঁচাতে পারি সহজলব্ধ ইটিপি স্থাপনা ও পরিচালনার মাধ্যমে। বুড়িগঙ্গা আজ মৃতপ্রায়। মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের অযোগ্য এ পানিতে কোনো প্রাণীর আবাস নেই। নেই তার ঐতিহ্য। বুড়িগঙ্গা তার নিজস্ব সৌন্দর্য আর ঐতিহ্য হারিয়ে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, ট্যানারি আর গৃহস্থালি বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে তা আজ 'বর্জ্য গহ্বর'। নদী থেকে বর্জ্য গহ্বরে পরিণত হওয়া কোনো একদিনের আকস্মিক ফল নয়। আমরা নিজেরাই ব্যক্তিস্বার্থের জন্য বলি দিচ্ছি আশপাশের জলাভূমিগুলোকে। টঙ্গীতে তুরাগের পাশেই গড়ে উঠেছে অনেক টেক্সটাইল আর ডাইং কারখানা, যা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই নদীকে। প্রতিদিন হাজার হাজার টন তরল বর্জ্য ঢাকার আশপাশের নদী অথবা খাল-বিল-জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে, যা নদী এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদী এবং জলাশয়গুলোকে এই বিষাক্ত তরল বর্জ্যের দূষণ থেকে বাঁচানোর অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট পল্গান্ট অর্থাৎ ইটিপি। বিভিন্ন কারখানা থেকে যে তরল বর্জ্য বের হচ্ছে তাই ইফ্লুয়েন্ট। পরিবেশ অধিদফতর থেকে প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানেই ইটিপি নেই। আবার থাকলেও অধিক মুনাফার জন্য তারা তা সব সময় ব্যবহার করছে না। ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিকর বর্জ্য নিঃসৃত হয় এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তরল বর্জ্য কোন অবস্থায় খালে বা নদ-নদীতে ফেলা যাবে_ তার একটি মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আইন ভঙ্গকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ কোনো কর্তৃপক্ষই এ পর্যন্ত নেয়নি। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছেই। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম ইটিপি স্থাপন করে। মূলত কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, কী উৎপাদিত হচ্ছে আর কোন ধরনের পদার্থ ইটিপিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর ইটিপির কার্যকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। তাই এ বিষয়গুলোয় ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
বর্তমান সরকার অবশ্য ইটিপি স্থাপনের ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানকেই ইটিপি ব্যবহার না করার জন্য জরিমানা করেছে। তাছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যেগুলো খুব বেশি বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপিতে ব্যবহার করা হয় সেগুলোর ওপর কর হ্রাস করেছে। যেখানে লাইম পাউডারের বিদ্যমান শুল্কহার ১২% ছিল, সেটাকে কমিয়ে প্রস্তাবিত শুল্কহার ৩%-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। তেমনি ফেরাস সালফেট ১২% থেকে ৩%, ট্যাব-ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট ৫% থেকে ৩%, অ্যাক্রোলিক পলিমার ৫ দশমিক ১২% থেকে ৩%-এ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির ওপর প্রায় ৩% কর হ্রাস করা হয়েছে। ইটিপি ব্যবহারে শিল্প মালিকদের উৎসাহিত করতে সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদের থেকে যোগ্য। শিল্প-কারখানার মালিকরা অবশ্য সরকারের কাছে এই শুল্ক পরিহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা একটি সুন্দর, সবুজ পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য এ দাবি জানিয়েছেন।
যেহেতু একেক কারখানায় একেক রকম পণ্য উৎপাদিত হয় আর ভিন্ন ভিন্ন বর্জ্য পদার্থ বের হয়, তাই বিভিন্ন কারখানায় ইটিপির ধরনেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ সময়ই ট্যানারি থেকে যে বর্জ্য বের হয়, টেক্সটাইল থেকে তার চেয়ে ভিন্ন রকম তরল বর্জ্য বের হয়। ট্যানারি থেকে অধিকাংশ সময় যে ইফ্লুয়েন্ট বা তরল বর্জ্য বের হয় তা অম্লীয়। অন্যদিকে টেক্সটাইল থেকে ক্ষারীয় বর্জ্য বের হয়। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম ইটিপি স্থাপন করতে পারে। একই রকম বর্জ্য বের হচ্ছে এমন সব কারখানা নিয়ে একটি কমন ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করা সম্ভব। আবার বড় বড় প্রতিষ্ঠানে তাদের নিজস্ব ইটিপি রয়েছে। ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা অর্থাৎ ডিইপিজেডে সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ কোম্পানি যৌথভাবে একটি কেন্দ্রীয় ইটিপি স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১৬ হাজার বর্গমিটারের এই কেন্দ্রীয় ইটিপি চুক্তিটি ২০০৯ সালের ৫ মার্চ ডিইপিজেড ও বেপজা কমপ্লেক্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে টেক্সটাইল ইফ্লুয়েন্টের ওপর কাজ করছি, যা শিল্প মালিকদের সহায়তা করবে সহজলব্ধ ইটিপি স্থাপনে। আমি ও আমার গবেষক দল ব্যাপকভাবে ইটিপির ওপর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি ঐঊছঊচ-এর প্রকল্প প্রাপ্তির মাধ্যমে। অচিরেই এ প্রকল্পের সমাপ্তিতে সব রকম শিল্প মালিক উপহার হিসেবে পাবেন স্বল্প খরচ এবং পরিবেশবান্ধব ইটিপি।
সরকারের এসব পদক্ষেপ কারখানা মালিকদের অনেক উৎসাহিত করবে। প্রকৃতপক্ষে একজন সচেতন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সবারই উচিত পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করা। নদ-নদী, জলাভূমি আমাদেরই সম্পদ। কিছু ব্যক্তির স্বার্থ আর অধিক মুনাফার আশায় কলকারখানার বর্জ্য দ্বারা এসব দূষিত করা অবশ্যই কাম্য নয়। তাই সরকারের এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি কারখানার মালিকদেরও সচেতন করা উচিত। এতে বর্জ্য পরিশোধন করে জলাভূমিতে ফেলে পরিবেশটা নির্মল রাখা যায়।
অধ্যাপক ড. খবির উদ্দীন :পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, জাবি ও সভাপতি. বাংলাদেশ পরিবেশবিজ্ঞানী সমিতি
ঢাকাকে ঘিরে রয়েছে মূলত চারটি নদী_ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। আমরা এ চারটি নদীর পানির গুণগত মান নির্ণয়ে কাজ করছি এপ্রিল ২০১১ সাল থেকে ইউজিসি (টএঈ) ও ঔধঢ়ধহ ঝড়পরবঃু ভড়ৎ ঃযব চৎড়সড়ঃরড়হ ড়ভ ঝপরবহপব (ঔঝচঝ)-এর সহায়তায়। এটি আমাদের দুই বছরমেয়াদি একটি প্রকল্প। আমাদের গবেষণালব্ধ ফল খুবই ভয়াবহ। এ চারটি নদীর পানি কোনো প্রকার ব্যবহারেরই উপযোগী নয়। আমরা কমবেশি সবাই আহসান মঞ্জিলের কথা জানি। আহসান মঞ্জিল নির্মিত হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। এক সময় নদীর শীতল বাতাস ওই মঞ্জিলের সবাইকে বিমোহিত করত। আর বর্তমানে ওই বাতাসে যে দুর্গন্ধ তা কোনো অবস্থায়ই সহ্য করা যায় না। এ মঞ্জিল হতে পারত সুন্দর মনোমুগ্ধকর ট্যুরিস্ট পেল্গস, যা থেকে আয় হতো প্রচুর অর্থ। চারটি নদীকে আমরা বাঁচাতে পারি সহজলব্ধ ইটিপি স্থাপনা ও পরিচালনার মাধ্যমে। বুড়িগঙ্গা আজ মৃতপ্রায়। মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের অযোগ্য এ পানিতে কোনো প্রাণীর আবাস নেই। নেই তার ঐতিহ্য। বুড়িগঙ্গা তার নিজস্ব সৌন্দর্য আর ঐতিহ্য হারিয়ে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা, ট্যানারি আর গৃহস্থালি বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে তা আজ 'বর্জ্য গহ্বর'। নদী থেকে বর্জ্য গহ্বরে পরিণত হওয়া কোনো একদিনের আকস্মিক ফল নয়। আমরা নিজেরাই ব্যক্তিস্বার্থের জন্য বলি দিচ্ছি আশপাশের জলাভূমিগুলোকে। টঙ্গীতে তুরাগের পাশেই গড়ে উঠেছে অনেক টেক্সটাইল আর ডাইং কারখানা, যা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই নদীকে। প্রতিদিন হাজার হাজার টন তরল বর্জ্য ঢাকার আশপাশের নদী অথবা খাল-বিল-জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই ফেলা হচ্ছে, যা নদী এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নদী এবং জলাশয়গুলোকে এই বিষাক্ত তরল বর্জ্যের দূষণ থেকে বাঁচানোর অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট পল্গান্ট অর্থাৎ ইটিপি। বিভিন্ন কারখানা থেকে যে তরল বর্জ্য বের হচ্ছে তাই ইফ্লুয়েন্ট। পরিবেশ অধিদফতর থেকে প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানেই ইটিপি নেই। আবার থাকলেও অধিক মুনাফার জন্য তারা তা সব সময় ব্যবহার করছে না। ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ক্ষতিকর বর্জ্য নিঃসৃত হয় এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তরল বর্জ্য কোন অবস্থায় খালে বা নদ-নদীতে ফেলা যাবে_ তার একটি মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। আইন ভঙ্গকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ কোনো কর্তৃপক্ষই এ পর্যন্ত নেয়নি। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছেই। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম ইটিপি স্থাপন করে। মূলত কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, কী উৎপাদিত হচ্ছে আর কোন ধরনের পদার্থ ইটিপিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর ইটিপির কার্যকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। তাই এ বিষয়গুলোয় ভালোভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
বর্তমান সরকার অবশ্য ইটিপি স্থাপনের ওপর বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতর ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানকেই ইটিপি ব্যবহার না করার জন্য জরিমানা করেছে। তাছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যেগুলো খুব বেশি বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ইটিপিতে ব্যবহার করা হয় সেগুলোর ওপর কর হ্রাস করেছে। যেখানে লাইম পাউডারের বিদ্যমান শুল্কহার ১২% ছিল, সেটাকে কমিয়ে প্রস্তাবিত শুল্কহার ৩%-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। তেমনি ফেরাস সালফেট ১২% থেকে ৩%, ট্যাব-ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট ৫% থেকে ৩%, অ্যাক্রোলিক পলিমার ৫ দশমিক ১২% থেকে ৩%-এ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির ওপর প্রায় ৩% কর হ্রাস করা হয়েছে। ইটিপি ব্যবহারে শিল্প মালিকদের উৎসাহিত করতে সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সাধুবাদের থেকে যোগ্য। শিল্প-কারখানার মালিকরা অবশ্য সরকারের কাছে এই শুল্ক পরিহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা একটি সুন্দর, সবুজ পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য এ দাবি জানিয়েছেন।
যেহেতু একেক কারখানায় একেক রকম পণ্য উৎপাদিত হয় আর ভিন্ন ভিন্ন বর্জ্য পদার্থ বের হয়, তাই বিভিন্ন কারখানায় ইটিপির ধরনেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ সময়ই ট্যানারি থেকে যে বর্জ্য বের হয়, টেক্সটাইল থেকে তার চেয়ে ভিন্ন রকম তরল বর্জ্য বের হয়। ট্যানারি থেকে অধিকাংশ সময় যে ইফ্লুয়েন্ট বা তরল বর্জ্য বের হয় তা অম্লীয়। অন্যদিকে টেক্সটাইল থেকে ক্ষারীয় বর্জ্য বের হয়। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম ইটিপি স্থাপন করতে পারে। একই রকম বর্জ্য বের হচ্ছে এমন সব কারখানা নিয়ে একটি কমন ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করা সম্ভব। আবার বড় বড় প্রতিষ্ঠানে তাদের নিজস্ব ইটিপি রয়েছে। ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা অর্থাৎ ডিইপিজেডে সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ কোম্পানি যৌথভাবে একটি কেন্দ্রীয় ইটিপি স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ১৬ হাজার বর্গমিটারের এই কেন্দ্রীয় ইটিপি চুক্তিটি ২০০৯ সালের ৫ মার্চ ডিইপিজেড ও বেপজা কমপ্লেক্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে টেক্সটাইল ইফ্লুয়েন্টের ওপর কাজ করছি, যা শিল্প মালিকদের সহায়তা করবে সহজলব্ধ ইটিপি স্থাপনে। আমি ও আমার গবেষক দল ব্যাপকভাবে ইটিপির ওপর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি ঐঊছঊচ-এর প্রকল্প প্রাপ্তির মাধ্যমে। অচিরেই এ প্রকল্পের সমাপ্তিতে সব রকম শিল্প মালিক উপহার হিসেবে পাবেন স্বল্প খরচ এবং পরিবেশবান্ধব ইটিপি।
সরকারের এসব পদক্ষেপ কারখানা মালিকদের অনেক উৎসাহিত করবে। প্রকৃতপক্ষে একজন সচেতন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সবারই উচিত পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করা। নদ-নদী, জলাভূমি আমাদেরই সম্পদ। কিছু ব্যক্তির স্বার্থ আর অধিক মুনাফার আশায় কলকারখানার বর্জ্য দ্বারা এসব দূষিত করা অবশ্যই কাম্য নয়। তাই সরকারের এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি কারখানার মালিকদেরও সচেতন করা উচিত। এতে বর্জ্য পরিশোধন করে জলাভূমিতে ফেলে পরিবেশটা নির্মল রাখা যায়।
অধ্যাপক ড. খবির উদ্দীন :পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ, জাবি ও সভাপতি. বাংলাদেশ পরিবেশবিজ্ঞানী সমিতি
No comments