আনন্দ-বেদনার ঈদ by রশীদ জামী
'ঈদ সকলের' এ কথা বলার সুযোগ নেই। কথা ও কাজে তাহলে মিল হবে না। আমার পাশের বাড়ির যে মানুষটি না খেয়ে আছে, যে লোকটি তার ছোট বাচ্চাগুলোকে রমজানের একটি মাস, পুরোটা মাস এক বেলাও তৃপ্তিভরে খাওয়াতে পারেনি! তাকিয়েছি কি একবার তার দিকে?
অথচ বলে বেড়াই_ ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ সর্বজনীন উৎসব! বৈষম্যের পসরা সাজিয়ে সাম্যের কোরাস তুলি! বিভাজনের দেয়াল খাড়া করে বলি_ চলো, হাতে হাত রাখি। দূরে ঠেলে দিয়ে বলি, কাছে থাকো। আজ কোনো বিভেদ নেই। আজ ঈদ! বিবেক আমাদের কত আলোকবর্ষ দূরে সরে গেছে, কে জানে!
আমরা একটা জাতি! আমাদের একটি জাতীয়তা রয়েছে। স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধ রয়েছে। সামান্য মুনাফার আশায় সেগুলোকে যদি জলাঞ্জলি দিই, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, যেভাবে থাকছে, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ভাবলেই বুক শুকিয়ে যায়। কখনোই কি ভাবতে চাইব না আমরা কথাগুলো!
খুব দরাজ গলায় আমরা বলতে ভালোবাসি, ঈদ আমাদের জাতীয় উৎসব। যাদের ঘরে খাবার নেই। পরনে কাপড় নেই। ঈদের দিনেও যাদের বেরোতে হয় ভিক্ষার থালা নিয়ে। এতটুকু খাবারের আশায় হাজিরা দিতে হয় মানুষের দরজায়। ঘুরতে হয় মানুষের বাড়ি বাড়ি। নিজের না হোক, বাচ্চাকাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে। ক্ষুধার অত্যাচার থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য হলেও তাদের বেরোতে হয় মানুষের এক টুকরো করুণার আশায়। তাদের কথা কি ভাবার সময় আছে আমাদের?
এ দেশের হাজারো মানুষ এমন আছে, যাদের ছোট্ট বাচ্চাগুলো তাদেরই পাড়ার অন্য বাচ্চাদের যখন ঈদের দিনে নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দ করতে দেখে, তখন ফ্যালফ্যাল করে তাকায় শুধু! তারা তাদের বাবার কাছে আসে। বলে_ বাবা, আজ না ঈদ! সবাই নতুন জামা পরেছে। আমাদের কি নতুন জামা হবে না! বাবা লোকটি তখন মাথা নিচু করে ফেলে। অবুঝ ওই শিশুরা তখন চলে যায় মায়ের কাছে। আচ্ছা মা, সবার ঘরে আজ পোলাও রান্না হয়েছে। মা, আমাদের পোলাও খেতে ইচ্ছা করছে। অসহায় মা তখন চোখ তুলে তাকান স্বামীর দিকে। স্বামী নামের আসামিটি তখন চোখ নামিয়ে ফেলেন। বাচ্চাগুলো তখন বলে_ বুঝেছি মা, আমরা গরিব, গরিবের পোলাও খেতে হয় না। ঠিক আছে মা, একটু সেমাই রান্না করো। আমরা না হয় একটু সেমাই খাই।
কয়েক স্থানে তালি দেওয়া পরনের কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে থাকে মেয়েটি। ঘরে চিনি নেই। সে সেমাই রান্না করবে কীভাবে! এ অবস্থায় ওই অসহায় বাবা লোকটির চোখ থেকে ঝরঝর করে বেরোতে থাকে অসহায়ত্বের পানি। ব্যর্থতার গল্গানি। নিজেকে একজন ব্যর্থ পিতা হিসেবে ধিক্কার দিতে থাকে সে। বাচ্চারা তখন যা বোঝার বুঝে ফেলে। সরে যায় সামনে থেকে এই ভেবে, ঈদ হলো বড়লোকের। আমরা গরিব। গরিবের ঈদ নেই। কেন? ঈদ না সর্বজনীন! এই বুঝি সর্বজনীনত্বের নমুনা!
আবার ভয়াবহ পরিমাণ সম্পদের অধিকারী অনেক মানুষও আছে এ দেশে; যাদের অনেকের পক্ষে তাদের টোটাল সম্পদের হিসাব মেলানো সম্ভব হয়নি। তারা নিজেরাই জানেন না তাদের কত টাকা আছে। যারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খরচ করেন বিলাসিতায়, তাদের ঈদ তো বিশাল ব্যাপার। তারা আছেন বলেই তো ৪০-৫০ হাজার টাকা মূল্যের জুতাগুলো বিক্রি করার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে। তারা না থাকলে লাখ টাকা মূল্যের জামাগুলো কে কিনত! ব্যবসায়ীদের অবস্থা কী হতো?
সেই সম্পদশালীদের বলি, বিশ্বাস করুন, খোদার কসম, এই যে বিশাল অর্থভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন আপনি, চোখ বন্ধ করুন এবং দেখতে চেষ্টা করুন, দেখবেন কিছুই আপনার নয়। আপনি পৃথিবীতে থাকতেই উইল জাতীয় কাগজপত্র করিয়ে নিতে না পারলে আপনি মারা যাওয়ার পর, কবরে আপনার লাশটি বাসি হওয়ার আগেই আপনার সম্পদ ভাগবাটোয়ারা হয়ে যাবে। আপনি না যুক্তিবাদী মানুষ! আপনি না বাস্তববাদী! তাহলে এই ব্যাপারটি বোঝেন না কেন? ঈদের দিনটিতেও কেউ শরীর ঢাকার কাপড় পাবে না। দু'মুঠো ভাত জোগাড় করতে পারবে না আর আপনারা মত্ত থাকবেন বিলাসিতায়_ এটা কেমন কথা?
নিজের জন্য কিছু করুন। স্রেফ নিজের জন্য। আর এটা হতে পারে গরিব ও অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে। এক টুকরো কাপড় কিনে দেওয়ার মাধ্যমে। গরিবকে ঈদের আনন্দে একটু শেয়ার করুন। আত্মার প্রশান্তি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। অন্যকে খাবার দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখুন। এরপর বুকে হাত রেখে বলুন, খেয়ে আরাম না খাইয়ে? একবার কাজটি করেই দেখুন না! আপনি বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করবেন, এমন আনন্দ এর আগে কখনও আর পাননি।
rashidjamil78@yahoo.com
আমরা একটা জাতি! আমাদের একটি জাতীয়তা রয়েছে। স্বতন্ত্র জাতীয়তাবোধ রয়েছে। সামান্য মুনাফার আশায় সেগুলোকে যদি জলাঞ্জলি দিই, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, যেভাবে থাকছে, তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ভাবলেই বুক শুকিয়ে যায়। কখনোই কি ভাবতে চাইব না আমরা কথাগুলো!
খুব দরাজ গলায় আমরা বলতে ভালোবাসি, ঈদ আমাদের জাতীয় উৎসব। যাদের ঘরে খাবার নেই। পরনে কাপড় নেই। ঈদের দিনেও যাদের বেরোতে হয় ভিক্ষার থালা নিয়ে। এতটুকু খাবারের আশায় হাজিরা দিতে হয় মানুষের দরজায়। ঘুরতে হয় মানুষের বাড়ি বাড়ি। নিজের না হোক, বাচ্চাকাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে। ক্ষুধার অত্যাচার থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য হলেও তাদের বেরোতে হয় মানুষের এক টুকরো করুণার আশায়। তাদের কথা কি ভাবার সময় আছে আমাদের?
এ দেশের হাজারো মানুষ এমন আছে, যাদের ছোট্ট বাচ্চাগুলো তাদেরই পাড়ার অন্য বাচ্চাদের যখন ঈদের দিনে নতুন জামাকাপড় পরে আনন্দ করতে দেখে, তখন ফ্যালফ্যাল করে তাকায় শুধু! তারা তাদের বাবার কাছে আসে। বলে_ বাবা, আজ না ঈদ! সবাই নতুন জামা পরেছে। আমাদের কি নতুন জামা হবে না! বাবা লোকটি তখন মাথা নিচু করে ফেলে। অবুঝ ওই শিশুরা তখন চলে যায় মায়ের কাছে। আচ্ছা মা, সবার ঘরে আজ পোলাও রান্না হয়েছে। মা, আমাদের পোলাও খেতে ইচ্ছা করছে। অসহায় মা তখন চোখ তুলে তাকান স্বামীর দিকে। স্বামী নামের আসামিটি তখন চোখ নামিয়ে ফেলেন। বাচ্চাগুলো তখন বলে_ বুঝেছি মা, আমরা গরিব, গরিবের পোলাও খেতে হয় না। ঠিক আছে মা, একটু সেমাই রান্না করো। আমরা না হয় একটু সেমাই খাই।
কয়েক স্থানে তালি দেওয়া পরনের কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে থাকে মেয়েটি। ঘরে চিনি নেই। সে সেমাই রান্না করবে কীভাবে! এ অবস্থায় ওই অসহায় বাবা লোকটির চোখ থেকে ঝরঝর করে বেরোতে থাকে অসহায়ত্বের পানি। ব্যর্থতার গল্গানি। নিজেকে একজন ব্যর্থ পিতা হিসেবে ধিক্কার দিতে থাকে সে। বাচ্চারা তখন যা বোঝার বুঝে ফেলে। সরে যায় সামনে থেকে এই ভেবে, ঈদ হলো বড়লোকের। আমরা গরিব। গরিবের ঈদ নেই। কেন? ঈদ না সর্বজনীন! এই বুঝি সর্বজনীনত্বের নমুনা!
আবার ভয়াবহ পরিমাণ সম্পদের অধিকারী অনেক মানুষও আছে এ দেশে; যাদের অনেকের পক্ষে তাদের টোটাল সম্পদের হিসাব মেলানো সম্ভব হয়নি। তারা নিজেরাই জানেন না তাদের কত টাকা আছে। যারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খরচ করেন বিলাসিতায়, তাদের ঈদ তো বিশাল ব্যাপার। তারা আছেন বলেই তো ৪০-৫০ হাজার টাকা মূল্যের জুতাগুলো বিক্রি করার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে। তারা না থাকলে লাখ টাকা মূল্যের জামাগুলো কে কিনত! ব্যবসায়ীদের অবস্থা কী হতো?
সেই সম্পদশালীদের বলি, বিশ্বাস করুন, খোদার কসম, এই যে বিশাল অর্থভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন আপনি, চোখ বন্ধ করুন এবং দেখতে চেষ্টা করুন, দেখবেন কিছুই আপনার নয়। আপনি পৃথিবীতে থাকতেই উইল জাতীয় কাগজপত্র করিয়ে নিতে না পারলে আপনি মারা যাওয়ার পর, কবরে আপনার লাশটি বাসি হওয়ার আগেই আপনার সম্পদ ভাগবাটোয়ারা হয়ে যাবে। আপনি না যুক্তিবাদী মানুষ! আপনি না বাস্তববাদী! তাহলে এই ব্যাপারটি বোঝেন না কেন? ঈদের দিনটিতেও কেউ শরীর ঢাকার কাপড় পাবে না। দু'মুঠো ভাত জোগাড় করতে পারবে না আর আপনারা মত্ত থাকবেন বিলাসিতায়_ এটা কেমন কথা?
নিজের জন্য কিছু করুন। স্রেফ নিজের জন্য। আর এটা হতে পারে গরিব ও অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে। এক টুকরো কাপড় কিনে দেওয়ার মাধ্যমে। গরিবকে ঈদের আনন্দে একটু শেয়ার করুন। আত্মার প্রশান্তি আপনাকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। অন্যকে খাবার দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দেখুন। এরপর বুকে হাত রেখে বলুন, খেয়ে আরাম না খাইয়ে? একবার কাজটি করেই দেখুন না! আপনি বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করবেন, এমন আনন্দ এর আগে কখনও আর পাননি।
rashidjamil78@yahoo.com
No comments