ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস by শেখ সাবীর আলী
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী কয়লা খনিবিরোধী আন্দোলনের একটি স্মরণীয় দিন, যা ফুলবাড়ীবাসী 'ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস' হিসেবে দিনটিকে পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট নিজেদের অস্তিত্ব ও জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে ফুলবাড়ীর কয়েকটি তাজা প্রাণের বিনিময় যে গণবিজয় অর্জিত হয়েছিল তা শুধু ফুলবাড়ীবাসীর নয়,
এ বিজয় সারা দেশবাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। ফুলবাড়ীর মানুষ বিদেশি লুটেরা চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন করে আমিন, সালেকিন ও তরিকুলের প্রাণের বিনিময়ে এবং দুই শতাধিক গুলিবিদ্ধ ও প্রায় সহস্রাধিক বিভিন্নভাবে আহত মানুষের কষ্টের বিনিময়ে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করেছিলেন। এখনও প্রতি শুক্রবার ও শনিবার ফুলবাড়ী শহরে কয়লা খনিবিরোধী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল অব্যাহত রয়েছে।
কয়লা একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। জ্বালানিনির্ভর আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় কয়লার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ফুলবাড়ী কয়লা খনি আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে এ এলাকার মানুষের উৎসাহিতসহ এক বুক আশা সঞ্চার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খনি এলাকাসহ আশপাশের মানুষ উৎসাহিত না হয়ে বরৎ বিভিন্ন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে এবং এখনও রয়েছে। ফুলবাড়ী কয়লা খনিটিতে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার উপযোগী হিসেবে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানে বড় বড় গর্ত করে কয়লার উপরিস্থিত মাটি, বালি, পাথরসহ অন্যান্য খনিজসম্পদ সরিয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ কয়লা উত্তোলন নিশ্চিত করা হতো। এতে আমাদের দেশের লাভের থেকে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই বেশি লাভবান হতো। তাই ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে ক্ষতিকর দিক এবং বাংলাদেশের লাভের পরিমাণ স্পষ্টভাবে উঠলে এর বিরোধিতা শুরু করে। যার সফলতা আসে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট কয়েকটি তাজা প্রাণের বিনিময়ে। এসব বিবেচনায় শহীদের রক্তে নির্মিত ফুলবাড়ী দিবসের প্রাক্কালে দেশ ও জনগণের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে রক্ষা ও বিকশিত করার জন্য ফুলবাড়ীর মানুষ সরকারের কাছে আবারও নিচের দাবিগুলো উপস্থাপন করছেন_ এশিয়া এনার্জিকে বহিষ্কার ও সারাদেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ করাসহ জনগণের সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। বেআইনি ও প্রতারণামূলকভাবে বাংলাদেশের কয়লা দেখিয়ে এশিয়া এনার্জি বা জিসিএম লন্ডনের শেয়ার মার্কেটে যে পুঁজি সঞ্চয় করেছে তা বাংলাদেশেরই প্রাপ্য। এই অর্থ ক্ষতিপূরণসহ আদায় করে এদের বহিষ্কার করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী এদের দেশীয় দালাল ও লবিস্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যারা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে দুষ্টগ্রহের মতো বিদেশি কোম্পানির দালাল হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট তৈরি করছে এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কয়লা খাত বিদেশিদের হাতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, অবিলম্বে তাদের অপসারণ ও বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। জাতীয় সম্পদের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটাতে হবে। এ জন্য বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, জিওলজিক্যাল সার্ভে ও ব্যুরো অব মিনারেল ডেভেলপমেন্টের যথাযথ উন্নয়ন এবং অবিলম্বে প্রস্তাবিত খনি বাংলা প্রতিষ্ঠা করে তাকে কার্যকর করতে হবে। খনিজসম্পদ উন্নয়ন ও তার সর্বোত্তম ব্যবহারে জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরও বিভাগ এবং জাতীয়ভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। এ কাজে প্রবাসী বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে। জাতীয় সম্পদ ও জনস্বার্থ রক্ষার জন্য মানুষ লড়াই ও জীবনদানের মধ্য দিয়ে ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নতুন দিশা দিয়েছে। জনগণের সম্পদের ওপর জনগণের কর্তৃত্বের এই লড়াই বাংলাদেশের মানুষের নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণে দিন দিন আরও বেশ শক্তি ও সাহস জোগাবে।
sabiralibd@gmail.comকয়লা একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। জ্বালানিনির্ভর আজকের বিশ্ব ব্যবস্থায় কয়লার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ফুলবাড়ী কয়লা খনি আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে এ এলাকার মানুষের উৎসাহিতসহ এক বুক আশা সঞ্চার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খনি এলাকাসহ আশপাশের মানুষ উৎসাহিত না হয়ে বরৎ বিভিন্ন উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে এবং এখনও রয়েছে। ফুলবাড়ী কয়লা খনিটিতে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার উপযোগী হিসেবে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানে বড় বড় গর্ত করে কয়লার উপরিস্থিত মাটি, বালি, পাথরসহ অন্যান্য খনিজসম্পদ সরিয়ে সর্বোচ্চ পরিমাণ কয়লা উত্তোলন নিশ্চিত করা হতো। এতে আমাদের দেশের লাভের থেকে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই বেশি লাভবান হতো। তাই ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে ক্ষতিকর দিক এবং বাংলাদেশের লাভের পরিমাণ স্পষ্টভাবে উঠলে এর বিরোধিতা শুরু করে। যার সফলতা আসে ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট কয়েকটি তাজা প্রাণের বিনিময়ে। এসব বিবেচনায় শহীদের রক্তে নির্মিত ফুলবাড়ী দিবসের প্রাক্কালে দেশ ও জনগণের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে রক্ষা ও বিকশিত করার জন্য ফুলবাড়ীর মানুষ সরকারের কাছে আবারও নিচের দাবিগুলো উপস্থাপন করছেন_ এশিয়া এনার্জিকে বহিষ্কার ও সারাদেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ করাসহ জনগণের সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। বেআইনি ও প্রতারণামূলকভাবে বাংলাদেশের কয়লা দেখিয়ে এশিয়া এনার্জি বা জিসিএম লন্ডনের শেয়ার মার্কেটে যে পুঁজি সঞ্চয় করেছে তা বাংলাদেশেরই প্রাপ্য। এই অর্থ ক্ষতিপূরণসহ আদায় করে এদের বহিষ্কার করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী এদের দেশীয় দালাল ও লবিস্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যারা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে দুষ্টগ্রহের মতো বিদেশি কোম্পানির দালাল হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট তৈরি করছে এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কয়লা খাত বিদেশিদের হাতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, অবিলম্বে তাদের অপসারণ ও বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। জাতীয় সম্পদের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় সক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটাতে হবে। এ জন্য বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, জিওলজিক্যাল সার্ভে ও ব্যুরো অব মিনারেল ডেভেলপমেন্টের যথাযথ উন্নয়ন এবং অবিলম্বে প্রস্তাবিত খনি বাংলা প্রতিষ্ঠা করে তাকে কার্যকর করতে হবে। খনিজসম্পদ উন্নয়ন ও তার সর্বোত্তম ব্যবহারে জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আরও বিভাগ এবং জাতীয়ভাবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। এ কাজে প্রবাসী বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে। জাতীয় সম্পদ ও জনস্বার্থ রক্ষার জন্য মানুষ লড়াই ও জীবনদানের মধ্য দিয়ে ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশকে নতুন দিশা দিয়েছে। জনগণের সম্পদের ওপর জনগণের কর্তৃত্বের এই লড়াই বাংলাদেশের মানুষের নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণে দিন দিন আরও বেশ শক্তি ও সাহস জোগাবে।
No comments