চারদিক-ভালোবাসার জাদু by শর্মিলা সিনড্রেলা
‘হিং টিং ছট’ বলার সঙ্গে সঙ্গেই হাতে রাখা লাঠিটি হয়ে গেছে ফুল। আবার ‘গিলি গিলি হোকাস ফোকাস’ বলতেই ফাঁকা বাক্সটির মধ্য থেকে বেরোতেই থাকে একটার পর একটা জিনিস। চোখের পলকেই হাতে রাখা বলটি উধাও, আবার অন্য হাতের মধ্য থেকেই বের হয় সেই বলটি। কী যে অদ্ভুত সব খেলা! এসব খেলা দেখানোই এখন তাঁর নেশা।
জাদু যখন তিনি দেখান তখন অনেক জোড়া চোখ তাঁর দিকে অবাক দৃষ্টি রাখে। শিশুরা এত মজা পায় যে শান্ত চোখে তাকিয়েই থাকে জাদুকরটির দিকে। এসব শিশুর আনন্দ দেওয়ার বিনিময়ে তিনি কিছু সম্মানীও পান বটে। কিন্তু ভালোবাসার এ ম্যাজিক দিয়ে শুধু নিজের উদর পূর্তি করার মানুষ তিনি নন। ভাবেন, ‘কী করা যায়? কোনোভাবে কি দেশের একটা অংশের অন্তত উপকার করতে পারি আমার এই কাজ দিয়ে?’ তখন মাথায় আসে, দেশে যাদের টাকা-পয়সা আছে, তারা তো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পায়। আবার এ ম্যাজিকও তারা বিভিন্ন সময় উপভোগ করে কিছু টাকার বিনিময়ে। কিন্তু যাদের টাকা নেই তারা তো এসব বিনোদন থেকে অনেক দূরে। তাদের জাদু দেখানোর কাজটি নিজে করার দায়িত্ব নেন জাদুশিল্পী উলফাৎ কবীর। পাশাপাশি তিনি আর একটি দায়িত্ব নিয়েছেন, সেটা হলো, এই জাদুর মধ্য দিয়ে শিশুদের কিছু শেখানোর।
গ্রামের শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে এসব রোগশোক দূরে পালাবে। সেগুলো হলো খাওয়ার আগে হাত ধোয়া। টয়লেট থেকে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং টয়লেটে অবশ্যই স্যান্ডেল পরে যাওয়া। জাদু দেখানোর সময় হঠাৎ করেই একটা স্যান্ডেল তৈরি করেন তিনি, কখনো বা একটি সাবান, তারপর এই কথাগুলোই জানিয়ে দেন মজা করে। আবার হয়তো তাঁর কাছে চারটি কার্ড আছে, যার তিনটিই সাদা। একটি কার্ডে কোনো একটা সংখ্যা লেখা আছে। ধীরে ধীরে সবগুলো কার্ডই সংখ্যা-লেখা দেখা গেল। আবার আর একটাতে হয়তো আর একটু বেশি বড় সংখ্যা লেখা আছে, কার্ডগুলোও ধীরে ধীরে বেশি সংখ্যার হয়ে গেল। এই ম্যাজিকের মাধ্যমে তিনি জানান, ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।’ উলফাৎ কবীর বলেন, ‘আমি টাকার বিনিময়ে যখন ম্যাজিক দেখাই, তখন যত না মজা পাই তার চেয়ে বেশি মজা পাই তখন, যখন এসব সুবিধাবঞ্চিতকে ম্যাজিক দেখাই। আমি চাই, এ দেশের সবাই সুস্থভাবে বড় হোক। ম্যাজিক দেখে ওদের বিস্মিত দৃষ্টি খুব ভালো লাগে।’
জাদু দেখাতেও কিছু টাকার প্রয়োজন। যেহেতু দর্শনি নেওয়া হয় না, তাই এ কাজের জন্য তিনি সহায়তা করার কথা বলেন বন্ধু শাকিলকে। তিনি এতে সহায়তা করে চলেছেন সর্বাত্মকভাবে। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম থেকে উলফাৎ কবীরের কাছে প্রস্তাব আসে যে তারা যেসব স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পুষ্টিকর বিস্কুট দেয়, সেসব স্কুলে তিনি জাদু দেখাতে পারেন। উলফাৎ কবীর রাজি হন কিন্তু সেখানে ডব্লিউএফপি টাকা দিতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের ঘর বেঁধে দিতে চেয়ে আমি যদি আপনাদের টাকা নিই, তবে তো সেই ঘর বাঁধাটা ঠিক বেঁধে দেওয়া হলো না।’
উলফাৎ কবীরের এই নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ঢাকার সদর দপ্তর থেকে উলফাৎ কবীরকে এক ধন্যবাদপত্র দেওয়া হয়। এটি তাঁর হাতে তুলে দেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টা র্যাডার।
উলফাৎ কবীর আরও বলেন, ‘আমি আমার এই কাজটাকে একটা যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছি। আমাকে এতে জিততেই হবে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কুসংস্কারাচ্ছন্ন। আমি চাই, ওরা কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসুক। এ জন্য আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারছি না। অনেকে মনে করে, জাদু মন্ত্রতন্ত্রের ফলে হয়। আসলে এগুলো কিছুই নয়। কেবল কলাকৌশল।’
গত বছরে (২০১০) ১০০টি স্কুলে এমন মজাদার জাদু প্রদর্শন করেছেন উলফাৎ কবীর। এ বছরও করবেন একইভাবে। তবে এবার তিনি যোগ করেছেন একটা নতুন মাত্রা। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, ‘এবার ১০০টি সোলার লাইট এনেছি। ভাবছি, যেসব স্কুলে যাব সেখানে মেধাবী একজন বা দুজনকে এই লাইট দেব।’
‘ম্যাজিক আংকেল’ নামেই ছোটদের কাছে বেশি পরিচিত উলফাৎ কবীর। শিশুদের নিয়ে ম্যাজিক আংকেলের ভাবনার শেষ নেই। শিশুরা পড়তে পড়তে নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে পড়ে, তাই তখন তাদের একটু সতেজ করে তোলার জন্য একবার ২০টি স্কুলের শিক্ষককে একত্র করে ম্যাজিক শিখিয়েছিলেন। জাদুকরদের ট্যাক্সিডো কোট পরে তিনি যখন মঞ্চে এসে দাঁড়ান, তখন সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। এটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। তাঁর ভাষায়, ‘আমি তো অন্যদের জাদু দেখিয়ে টাকা নিই। এসব দরিদ্র শিশুদের শুধু একটু সুস্থ ও হাসিখুশি দেখতে চাই। আর চাই অন্য কেউ যেন আমার এ কাজ দেখে নিজেরা এদের জন্য কিছু করার চিন্তা করেন।’
গ্রামের শিশুরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে এসব রোগশোক দূরে পালাবে। সেগুলো হলো খাওয়ার আগে হাত ধোয়া। টয়লেট থেকে ফিরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং টয়লেটে অবশ্যই স্যান্ডেল পরে যাওয়া। জাদু দেখানোর সময় হঠাৎ করেই একটা স্যান্ডেল তৈরি করেন তিনি, কখনো বা একটি সাবান, তারপর এই কথাগুলোই জানিয়ে দেন মজা করে। আবার হয়তো তাঁর কাছে চারটি কার্ড আছে, যার তিনটিই সাদা। একটি কার্ডে কোনো একটা সংখ্যা লেখা আছে। ধীরে ধীরে সবগুলো কার্ডই সংখ্যা-লেখা দেখা গেল। আবার আর একটাতে হয়তো আর একটু বেশি বড় সংখ্যা লেখা আছে, কার্ডগুলোও ধীরে ধীরে বেশি সংখ্যার হয়ে গেল। এই ম্যাজিকের মাধ্যমে তিনি জানান, ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ।’ উলফাৎ কবীর বলেন, ‘আমি টাকার বিনিময়ে যখন ম্যাজিক দেখাই, তখন যত না মজা পাই তার চেয়ে বেশি মজা পাই তখন, যখন এসব সুবিধাবঞ্চিতকে ম্যাজিক দেখাই। আমি চাই, এ দেশের সবাই সুস্থভাবে বড় হোক। ম্যাজিক দেখে ওদের বিস্মিত দৃষ্টি খুব ভালো লাগে।’
জাদু দেখাতেও কিছু টাকার প্রয়োজন। যেহেতু দর্শনি নেওয়া হয় না, তাই এ কাজের জন্য তিনি সহায়তা করার কথা বলেন বন্ধু শাকিলকে। তিনি এতে সহায়তা করে চলেছেন সর্বাত্মকভাবে। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম থেকে উলফাৎ কবীরের কাছে প্রস্তাব আসে যে তারা যেসব স্কুলে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পুষ্টিকর বিস্কুট দেয়, সেসব স্কুলে তিনি জাদু দেখাতে পারেন। উলফাৎ কবীর রাজি হন কিন্তু সেখানে ডব্লিউএফপি টাকা দিতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের ঘর বেঁধে দিতে চেয়ে আমি যদি আপনাদের টাকা নিই, তবে তো সেই ঘর বাঁধাটা ঠিক বেঁধে দেওয়া হলো না।’
উলফাৎ কবীরের এই নিঃস্বার্থ অবদানের জন্য জাতিসংঘের ঢাকার সদর দপ্তর থেকে উলফাৎ কবীরকে এক ধন্যবাদপত্র দেওয়া হয়। এটি তাঁর হাতে তুলে দেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টা র্যাডার।
উলফাৎ কবীর আরও বলেন, ‘আমি আমার এই কাজটাকে একটা যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছি। আমাকে এতে জিততেই হবে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই কুসংস্কারাচ্ছন্ন। আমি চাই, ওরা কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসুক। এ জন্য আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারছি না। অনেকে মনে করে, জাদু মন্ত্রতন্ত্রের ফলে হয়। আসলে এগুলো কিছুই নয়। কেবল কলাকৌশল।’
গত বছরে (২০১০) ১০০টি স্কুলে এমন মজাদার জাদু প্রদর্শন করেছেন উলফাৎ কবীর। এ বছরও করবেন একইভাবে। তবে এবার তিনি যোগ করেছেন একটা নতুন মাত্রা। এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, ‘এবার ১০০টি সোলার লাইট এনেছি। ভাবছি, যেসব স্কুলে যাব সেখানে মেধাবী একজন বা দুজনকে এই লাইট দেব।’
‘ম্যাজিক আংকেল’ নামেই ছোটদের কাছে বেশি পরিচিত উলফাৎ কবীর। শিশুদের নিয়ে ম্যাজিক আংকেলের ভাবনার শেষ নেই। শিশুরা পড়তে পড়তে নিশ্চয়ই বিরক্ত হয়ে পড়ে, তাই তখন তাদের একটু সতেজ করে তোলার জন্য একবার ২০টি স্কুলের শিক্ষককে একত্র করে ম্যাজিক শিখিয়েছিলেন। জাদুকরদের ট্যাক্সিডো কোট পরে তিনি যখন মঞ্চে এসে দাঁড়ান, তখন সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। এটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। তাঁর ভাষায়, ‘আমি তো অন্যদের জাদু দেখিয়ে টাকা নিই। এসব দরিদ্র শিশুদের শুধু একটু সুস্থ ও হাসিখুশি দেখতে চাই। আর চাই অন্য কেউ যেন আমার এ কাজ দেখে নিজেরা এদের জন্য কিছু করার চিন্তা করেন।’
No comments