জরুরি উন্নয়ন প্রকল্প-অর্থ ছাড়ে জটিলতা দূর করুন
একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা, মহাসড়ক ও দূরদূরান্তের বেহাল দশার কারণে বিভিন্ন স্থানে বাস-ট্রাক চালাতে মালিক ও শ্রমিকদের অস্বীকৃতি, সময়মতো সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করায় মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অনেক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ইত্যাদি কারণে সড়কপথ আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। বিষয়টিকে মন্দের ভালো বলা যেতে পারে।
সড়কের পাশাপাশি নৌ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও এ ধরনের আলোচনা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এভাবে ভুল-ত্রুটি কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির দায় যাদের রয়েছে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, পাশাপাশি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ-পরামর্শও বের হয়ে আসে। গত কয়েকদিনের আলোচনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অমনোযোগিতার মাত্রা ছিল যথেষ্ট। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছেন। একদিকে অর্থ বরাদ্দ কম, তার সঙ্গে রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অহেতুক খবরদারি। বৃহস্পতিবার সমকালে 'অর্থ ছাড়ে মন্ত্রণালয় কৃপণ' শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'স্মরণকালের ইতিহাসে গত আড়াই বছরের মতো অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতা আগে কখনও হয়নি।' এ কারণে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প সংখ্যা বাড়লেও কমেছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সংখ্যা। মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কোনো কমিটির মাধ্যমে যদি আপত্তি উত্থাপন করা হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু বাস্তবে যাদের তরফে আপত্তি উত্থাপিত হয় তাদের কাজের পদ্ধতিটাই এমন যে ভালো উদ্দেশ্যও অনেক সময় ক্ষতি ডেকে আনে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করলেই যে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্প বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান থাকবে, এমন নয়। শুধু যোগাযোগ নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে অতি মাত্রায় খবরদারির অভিযোগ ওঠে থাকে। এ কারণে অনেক জরুরি ও জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়ে। কেবল অর্থ মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় এ মানসিকতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আমাদের প্রশাসনে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ অনেক পুরনো। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় যে লাল ফিতার চারপাশে লাল ফিতার আরেক গণ্ডি। এটা অবশ্যই ছিন্ন করতে হবে। তবে যোগাযোগসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে কাজের স্বচ্ছতার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা চাই। এটা ওপেন সিক্রেট যে সড়কপথের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে দুর্নীতির মাত্রা ব্যাপক। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গঠিত ট্রুথ কমিশনের কাছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনেক পদস্থ ব্যক্তিও তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছিলেন। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে, এমন ইঙ্গিত কিন্তু মেলে না। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় একদিকে তাদের প্রত্যাশার তুলনায় সীমিত মাত্রায় বরাদ্দ পাচ্ছে, তারপর এ বরাদ্দে যদি অনেক ছোবল পড়ে তাহলে আসল কাজের সামান্যই সম্পাদন করা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অবশ্যই নিশ্চিত করা চাই। কাজের গুণগত মান বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেছেন অর্থনীতিবিদ ও যোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়ন করবে, এটাই প্রত্যাশা। যোগ্য কর্মীদের তত্ত্বাবধান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি-অনিয়ম না হলে স্বল্প বরাদ্দ দিয়েও যথেষ্ট পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে, এটাই অভিজ্ঞতা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কি এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে পারবে?
No comments