তাঁর নামে আগে কোনো মামলা ছিল না-‘গুলিবিনিময়ে’ নিহত যুবক পরিবহনকর্মী

রাজধানীর মিরপুরের রাইনখোলায় গত রোববার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘গুলিবিনিময়ে’ নিহত যুবক মো. মাসুদ পরিবহনকর্মী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে আগের কোনো মামলার হদিস পায়নি পুলিশ।পরিবারের অভিযোগ, মাসুদের বড় ভাইয়ের ব্যবসায়িক শত্রুরা পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে বা টাকা দিয়ে তাঁকে হত্যা করিয়েছে।


তবে পুলিশ দাবি করেছে, রোববার পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত যুবক সন্ত্রাসী বিকাশ গ্রুপের সদস্য এবং তাঁর বড় ভাই হত্যা মামলার আসামি।
পুলিশের ‘গুলিবিনিময়ের’ এই দাবি নাকচ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরাও। তাঁরা বলেছেন, চিড়িয়াখানা সড়কের রাইনখোলা ঢালে মাইক্রোবাস থেকে নামিয়ে ওই যুবককে ইটের স্তূপের সামনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়।
গতকাল দুপুরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে মো. মাসুদের লাশ শনাক্ত করেন তাঁর মা আছিয়া আক্তার। তিনি দাবি করেন, মাসুদ মিরপুর-গুলিস্তান পথে চলাচল করা মিনিবাস ইটিসি পরিবহনের কন্ডাক্টর ছিলেন, তিনি অপরাধীদের সঙ্গে মিশতেন না। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না।
মাসুদের ছোট ভাই মো. হবি বলেন, তাঁদের বড় ভাই আসাদ ঝুট ব্যবসা করতেন। হত্যা ও অস্ত্র মামলায় তিনি বর্তমানে কারাগারে। তাঁর কিছু ব্যবসায়িক শত্রু শত্রুতার বদলা নিতে পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে অথবা টাকা দিয়ে মাসুদকে হত্যা করিয়েছে।
হবি আরও বলেন, রোববার বিকেলে একটা ফোন পেয়ে মাসুদ পশ্চিম মণিপুরের বাসা থেকে বের হন। পথে পরিচিত যুবক এমিলের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। মাসুদের অনুরোধে এমিল তাঁকে মোটরসাইকেলে কমার্স কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসেন। সেখান থেকে পুলিশ মাসুদকে ধরে।
মণিপুর এলাকার কয়েকজন জানান, বাসে কাজ করার পাশাপাশি মাসুদ ঝুট ব্যবসাও করতেন। তিনি মিরপুর ২ নম্বরের একটি পোশাক কারখানা থেকে ঝুট সংগ্রহ করতেন। তিনি সন্ত্রাসী নন। ওই পোশাক কারখানার কয়েকজন কর্মীও মাসুদ সন্ত্রাসী নন বলে জানান।
গতকাল বেলা দুইটার দিকে শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রোববার রাতের গোলাগুলির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি ও অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেছে। নিহত যুবকের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বলেন, নিহত মাসুদ ইটিসি পরিবহনের কর্মী ছিলেন বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছে। তবে পুলিশ জেনেছে, সে আসলে সন্ত্রাসী বিকাশ গ্রুপের সদস্য।
মাসুদের নামে কোনো মামলা আছে কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, এখনো মামলার খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে জিডি রয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, মাসুদের বড় ভাই সন্ত্রাসী, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তিনি কারাগারে রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলেছেন: কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গতকাল বলেন, রোববার সন্ধ্যার দিকে একটি নোয়া মাইক্রোবাসে আসা সাদা পোশাকে পুলিশের চারজন সদস্য রাইনখোলা ঢালের মাথায় মাসুদকে নিয়ে নামেন। একটু হাঁটিয়ে তাঁকে ইটের স্তূপের সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে কাছ থেকে গুলি করেন। আশপাশে থাকা সবাই তা দেখেছে। গুলির আগে ওই রাস্তায় লোকজন, যানবাহন ছিল, পাশের চায়ের দোকান ও রিকশার গ্যারেজে লোকজন ছিল। গুলির শব্দে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে কিছু লোক ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা গুলিবিদ্ধ দেহটি সেখানে পড়ে ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের এই বিবরণ ও অভিযোগ পুলিশ অস্বীকার করেছে। শাহ আলী থানার ওসি বলেন, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চিড়িয়াখানা সড়কে একটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক যাওয়ার সময় পুলিশ তাঁদের থামায়। এ সময় তাঁরা পুলিশের দিকে গুলি ছুড়লে উপপরিদর্শক (এসআই) মোয়াজ্জেম হোসেন ও মশিউর রহমান আহত হন। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে মাসুদের গায়ে গুলি লাগে।

No comments

Powered by Blogger.