কালের পুরাণ-বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: জট খুলছে না কেন? by সোহরাব হাসান
দিল্লির রাজদরবারে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার একমাত্র লোক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি—এটি বাংলাদেশের জন্য একই সঙ্গে আনন্দের ও উদ্বেগের সংবাদ। আনন্দের সংবাদ এ কারণে, ভারতের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন। উদ্বেগের বিষয় এ কারণে,
বিশাল ভারতের অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেসের অন্যতম নীতিনির্ধারক হিসেবে তাঁকে সারাক্ষণ এত সব বিষয় নিয়ে ভাবতে হয় যে বাংলাদেশটা প্রায়ই দৃশ্যের বাইরে চলে যায়। তার পরও বলব, প্রণব মুখার্জিই শেষ ভরসা।
৭ মে প্রণব মুখার্জি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় একটা সুসংবাদ শোনা যাবে। সেই সঙ্গে এ-ও স্বীকার করলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়কে যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, তা ঠিকমতো পালিত হয় না।’ মনমোহন সিং কবে ঢাকায় আসবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে।
বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র বরাবর রাজনৈতিক আবহাওয়া দেখে চলে, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করে। কখনো কখনো ঊর্ধ্বতনের কৃপাদৃষ্টি পেতে বেশিও করে থাকে। কিন্তু ভারতের আমলাতন্ত্র অতিশয় চালাক। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সব আদেশ-নির্দেশ অবনত মস্তকে মান্য করাকে তারা ফরজ কাজ মনে করে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনেক সিদ্ধান্ত আমলাতন্ত্র দ্বারা উল্টে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির অশুল্ক বাধাগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে। বাংলাদেশি পণ্যের মান নির্ধারণে বিএসটিআইয়ের মূল্যায়ন ভারত সরকার মেনে চলবে, যেমন ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সে দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে মানছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনো সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়নি। মান যাচাইয়ে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে ভারতীয় আমলাতন্ত্র। গত কয়েক মাসে প্রতিনিধিদল-বিনিময়ও হয়েছে কয়েকবার। একটি ছোট্ট সমস্যা সমাধানে যদি বছর কেটে যায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি হবে কী করে?
ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা হলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা। অশুল্ক বাধার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের দোহাই দেয়, আবার রাজ্য সরকার দোহাই দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের। আর কোনোভাবে কেউ আমদানি পণ্যের ওপর মামলা ঠুকে দিলে তো কথা নেই, সেই জট খুলতে কয়েক বছর লেগে যাবে। রহিমআফরোজের ব্যাটারির ক্ষেত্রে যেমনটি ঘটেছিল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের পণ্যের বিপুল চাহিদা আছে, কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে সব পণ্য রপ্তানি সম্ভব হয় না। অবকাঠামো ও যোগাযোগ-সমস্যা তো আছেই।
সম্প্রতি দিল্লিতে প্রভাবশালী রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই ধারণা হয়েছে, ভারত সরকার তার চিরবৈরী পাকিস্তানকে যতটা গুরুত্ব দেয়, অন্যান্য প্রতিবেশীকে ততটা আমলে নেয় না। একজন সাবেক কূটনীতিক আলাপকালে বলেছেন, সাউথ ব্লক (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মূলত পাঞ্জাবি ও উত্তর প্রদেশের প্রভাববলয়ের অধীন। ফলে সেখানে পাঞ্জাবি লবি অত্যন্ত শক্তিশালী। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বিজেপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা এল কে আদভানি—দুজনই পাকিস্তান ভূখণ্ড থেকে এসেছেন। পাকিস্তান নিয়ে তাঁদের দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়।’ কিন্তু ‘সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু’ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার লোক সাউথ ব্লকে নেই। দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান না হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা প্রকল্প ভিত্তিতে দেখতে উৎসাহী, সামগ্রিক দৃষ্টিতে নয়। দুই দেশের সম্পর্ক এখনো প্রকল্পভিত্তিক। একটি সমস্যা দূর হয় তো আরেকটি সামনে চলে আসে। জট খুলছে না। এ ক্ষেত্রে বাস্তব কিছু সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস। তিন বিঘা করিডর সমস্যার সমাধান কিংবা ১৯৭৪ সালের সীমান্ত-চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় দিল্লি এড়াতে পারে না। আবার বিএনপির আমলে বাংলাদেশে ভারতকে জড়িয়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর ও যৌথ ঘোষণা সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হতে পারত; হয়নি। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ টি করিম এ নিবন্ধকারকে বলেছেন, ‘হতাশ হওয়ার কারণ নেই। অতীতের জঞ্জাল সরাতেই অনেক সময় পার হয়েছে। এখন সামনে এগোনোর পালা।’ কিছু কিছু ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের মনে যে ভীতি বাড়িয়ে দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সীমান্তে দেখামাত্র গুলি না করা বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মতৈক্য হলেও বিএসএফ গুলি করা বন্ধ করেনি, যে কারণে ফেলানীদের জীবন দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় হাইকমিশনার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা যে বাংলাদেশকে ভুলে যাননি, সেটি ইতিবাচক দিক। দিল্লিতে বা ঢাকায় যেকোনো সভা-সেমিনারে তাঁরা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। এই সূত্রে দিল্লিতে সাবেক তিন হাইকমিশনার মুচকুন্দ দুবে, দেব মুখার্জি ও বীণা সিক্রির সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের অন্তরায় ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। তাঁরা তিনজনই একবাক্যে স্বীকার করেন, দুই দেশের জনগণের স্বার্থেই সম্পর্কোন্নয়ন হওয়া উচিত।
কেন হলো না?
এর জবাবে মুচকুন্দ দুবে বললেন, ‘ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া পূরণ করা। তাঁর মতে, যেহেতু বাংলাদেশ ট্রানজিট-সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আরও সহায়তা করা প্রয়োজন। তিনি আরও যোগ করলেন, ভারতকে অন্তত ৫০০ কোটি ডলার সহায়তা দিতে হবে, ১০০ কোটি টাকার ঋণে কিছু হবে না। বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো নেতিবাচক তালিকা রাখাও ঠিক নয়।’ অর্থাৎ যেসব বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা ভারতে আছে, সবই ছেড়ে দিতে হবে। তিস্তাসহ অন্যান্য যৌথ নদীর পানি বণ্টনেও ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই প্রবীণ কূটনীতিক। তাঁর মতে, ভারত সম্পর্কে বিএনপির নেতিবাচক অবস্থান বদলায়নি (যদিও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জানিয়েছেন, তাঁরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী)।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী দেব মুখার্জি বাণিজ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশকে আরও ছাড় দিতে রাজি থাকলেও পানি সমস্যার সমাধান সহজ নয় বলে মন্তব্য করেন। তাঁর যুক্তি, ‘নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেমন বঞ্চিত, তেমন ভারতও বঞ্চিত। বেশির ভাগ নদীর উৎস নেপাল ও তিব্বত। ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন বাঁধ দিয়ে পানি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সুযোগ ও দুর্ভোগ ভাগাভাগি করে নিতে হবে।’ দেব মুখার্জিও স্বীকার করলেন, ‘বিএসএফের প্রতি ভারত সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ আছে, গুলি করা যাবে না। তার পরও গুলির ঘটনা ঘটছে। এটি দুঃখজনক।’
অমর্ত্য সেনের সাম্প্রতিক একটি লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বললেন, ‘আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে; মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ধারা বজায় রাখতে দেশের ভেতরে ও বাইরে বৈরিতার রাজনীতি পরিহার করা প্রয়োজন।’
সাবেক হাইকমিশনার ও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বীণা সিক্রি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে, অর্থাৎ ট্র্যাক-টু যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উদার। তারা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু রাজনীতিক, আমলাতন্ত্র এমনকি ব্যবসায়ীরাও গতানুগতিক বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি দুই দেশের মধ্যে ট্রেনযোগে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কথা জানালেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তুলনামূলক আলোচনা করে বীণা সিক্রি বললেন, ‘নানা নমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নসহ অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। সেনাতন্ত্র হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর দ্বারা। তিনি মনে করেন, ‘তিন বিঘার ওপর ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশের মানুষের চলাচলের অধিকার থাকা উচিত।’
তাঁরা তিনজনই সাবেক কূটনীতিক। তাঁদের সদুপদেশ দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা কতটা আমলে নেবেন, সে ব্যাপারে সংশয় আছে। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বাংলাদেশের মতো ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপি মুখোমুখি অবস্থানে নয়। কেউ কারও বিরুদ্ধে দেশ বিক্রিরও অভিযোগ আনেনি। কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক টম ভেডাক্কন ও বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারাম আলাপকালে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপরই জোর দিলেন। বললেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কটি স্বাভাবিক ও সহজতর। ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়েও অনেক মিল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে সম্পর্ক তৈরির প্রশ্ন নেই।’ ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ ও জামদানি শাড়ির ভালো কদর আছে—সে কথাটি জানাতেও তাঁরা ভুললেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি যান ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। এ সফরের মাধ্যমে ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। রাজনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ভারতের অনুকূলে ট্রানজিট-প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান তিন দাবি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্যবৈষম্য কমানো ও সীমান্ত-বিরোধের নিষ্পত্তিতে দৃশ্যগ্রাহ্য অগ্রগতি হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে বছরে ৮০ লাখের বদলে এক কোটি পিস তৈরি পোশাক নেওয়া ও ১০০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার ঘোষণা ছাড়া গত ১৬ মাসে কিছু পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছে, মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে সুসংবাদ পাওয়া যাবে। সেই সুসংবাদের আগে সীমান্তে নতুন কোনো দুঃসংবাদ শোনা যাবে না, এই নিশ্চয়তা কি দিল্লি দিতে পারবে?
প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটি হতে হবে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে উভয়ের লাভবান হওয়ার ভিত্তিতে। শিল্প-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে সম্পর্কের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে (টাটার প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ার কথা মনে রেখেও কথাটি বলছি)। ভারত বাংলাদেশে শিল্প গড়ে তুললে এখানে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মানুষও এর সুফল পাবে। ট্রানজিটে নগদ লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে যৌথ শিল্পকারখানা গড়ার ওপরই জোর দিতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে ভারত যেমন এগিয়ে যেতে পারবে না, তেমন ভারতবিরোধী রাজনীতিও বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে না। ঢাকা ও দিল্লি—উভয়কে এ সত্য বুঝতে হবে।
শেখ হাসিনা ভারতের উদ্বেগ দূর করেছেন, মনমোহন-প্রণব বাংলাদেশের উদ্বেগ দূর করবেন কবে?
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net৭ মে প্রণব মুখার্জি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় একটা সুসংবাদ শোনা যাবে। সেই সঙ্গে এ-ও স্বীকার করলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়কে যেসব নির্দেশ দিয়েছেন, তা ঠিকমতো পালিত হয় না।’ মনমোহন সিং কবে ঢাকায় আসবেন, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে জুনের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে।
বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র বরাবর রাজনৈতিক আবহাওয়া দেখে চলে, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম করে। কখনো কখনো ঊর্ধ্বতনের কৃপাদৃষ্টি পেতে বেশিও করে থাকে। কিন্তু ভারতের আমলাতন্ত্র অতিশয় চালাক। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সব আদেশ-নির্দেশ অবনত মস্তকে মান্য করাকে তারা ফরজ কাজ মনে করে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনেক সিদ্ধান্ত আমলাতন্ত্র দ্বারা উল্টে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির অশুল্ক বাধাগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে। বাংলাদেশি পণ্যের মান নির্ধারণে বিএসটিআইয়ের মূল্যায়ন ভারত সরকার মেনে চলবে, যেমন ভারতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে সে দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে মানছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনো সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়নি। মান যাচাইয়ে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে ভারতীয় আমলাতন্ত্র। গত কয়েক মাসে প্রতিনিধিদল-বিনিময়ও হয়েছে কয়েকবার। একটি ছোট্ট সমস্যা সমাধানে যদি বছর কেটে যায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি হবে কী করে?
ভারতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আরেকটি বাধা হলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যকার সমন্বয়হীনতা। অশুল্ক বাধার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের দোহাই দেয়, আবার রাজ্য সরকার দোহাই দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের। আর কোনোভাবে কেউ আমদানি পণ্যের ওপর মামলা ঠুকে দিলে তো কথা নেই, সেই জট খুলতে কয়েক বছর লেগে যাবে। রহিমআফরোজের ব্যাটারির ক্ষেত্রে যেমনটি ঘটেছিল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের পণ্যের বিপুল চাহিদা আছে, কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে সব পণ্য রপ্তানি সম্ভব হয় না। অবকাঠামো ও যোগাযোগ-সমস্যা তো আছেই।
সম্প্রতি দিল্লিতে প্রভাবশালী রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই ধারণা হয়েছে, ভারত সরকার তার চিরবৈরী পাকিস্তানকে যতটা গুরুত্ব দেয়, অন্যান্য প্রতিবেশীকে ততটা আমলে নেয় না। একজন সাবেক কূটনীতিক আলাপকালে বলেছেন, সাউথ ব্লক (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) মূলত পাঞ্জাবি ও উত্তর প্রদেশের প্রভাববলয়ের অধীন। ফলে সেখানে পাঞ্জাবি লবি অত্যন্ত শক্তিশালী। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বিজেপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা এল কে আদভানি—দুজনই পাকিস্তান ভূখণ্ড থেকে এসেছেন। পাকিস্তান নিয়ে তাঁদের দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়।’ কিন্তু ‘সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু’ বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার লোক সাউথ ব্লকে নেই। দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধান না হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা প্রকল্প ভিত্তিতে দেখতে উৎসাহী, সামগ্রিক দৃষ্টিতে নয়। দুই দেশের সম্পর্ক এখনো প্রকল্পভিত্তিক। একটি সমস্যা দূর হয় তো আরেকটি সামনে চলে আসে। জট খুলছে না। এ ক্ষেত্রে বাস্তব কিছু সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস। তিন বিঘা করিডর সমস্যার সমাধান কিংবা ১৯৭৪ সালের সীমান্ত-চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় দিল্লি এড়াতে পারে না। আবার বিএনপির আমলে বাংলাদেশে ভারতকে জড়িয়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে, যা পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর ও যৌথ ঘোষণা সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হতে পারত; হয়নি। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এ টি করিম এ নিবন্ধকারকে বলেছেন, ‘হতাশ হওয়ার কারণ নেই। অতীতের জঞ্জাল সরাতেই অনেক সময় পার হয়েছে। এখন সামনে এগোনোর পালা।’ কিছু কিছু ঘটনা বাংলাদেশের মানুষের মনে যে ভীতি বাড়িয়ে দিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সীমান্তে দেখামাত্র গুলি না করা বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মতৈক্য হলেও বিএসএফ গুলি করা বন্ধ করেনি, যে কারণে ফেলানীদের জীবন দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় হাইকমিশনার দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা যে বাংলাদেশকে ভুলে যাননি, সেটি ইতিবাচক দিক। দিল্লিতে বা ঢাকায় যেকোনো সভা-সেমিনারে তাঁরা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেন। এই সূত্রে দিল্লিতে সাবেক তিন হাইকমিশনার মুচকুন্দ দুবে, দেব মুখার্জি ও বীণা সিক্রির সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের অন্তরায় ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। তাঁরা তিনজনই একবাক্যে স্বীকার করেন, দুই দেশের জনগণের স্বার্থেই সম্পর্কোন্নয়ন হওয়া উচিত।
কেন হলো না?
এর জবাবে মুচকুন্দ দুবে বললেন, ‘ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া পূরণ করা। তাঁর মতে, যেহেতু বাংলাদেশ ট্রানজিট-সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আরও সহায়তা করা প্রয়োজন। তিনি আরও যোগ করলেন, ভারতকে অন্তত ৫০০ কোটি ডলার সহায়তা দিতে হবে, ১০০ কোটি টাকার ঋণে কিছু হবে না। বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো নেতিবাচক তালিকা রাখাও ঠিক নয়।’ অর্থাৎ যেসব বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা ভারতে আছে, সবই ছেড়ে দিতে হবে। তিস্তাসহ অন্যান্য যৌথ নদীর পানি বণ্টনেও ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন এই প্রবীণ কূটনীতিক। তাঁর মতে, ভারত সম্পর্কে বিএনপির নেতিবাচক অবস্থান বদলায়নি (যদিও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জানিয়েছেন, তাঁরা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী)।
নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালনকারী দেব মুখার্জি বাণিজ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশকে আরও ছাড় দিতে রাজি থাকলেও পানি সমস্যার সমাধান সহজ নয় বলে মন্তব্য করেন। তাঁর যুক্তি, ‘নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেমন বঞ্চিত, তেমন ভারতও বঞ্চিত। বেশির ভাগ নদীর উৎস নেপাল ও তিব্বত। ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন বাঁধ দিয়ে পানি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সুযোগ ও দুর্ভোগ ভাগাভাগি করে নিতে হবে।’ দেব মুখার্জিও স্বীকার করলেন, ‘বিএসএফের প্রতি ভারত সরকারের স্পষ্ট নির্দেশ আছে, গুলি করা যাবে না। তার পরও গুলির ঘটনা ঘটছে। এটি দুঃখজনক।’
অমর্ত্য সেনের সাম্প্রতিক একটি লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বললেন, ‘আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে; মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ধারা বজায় রাখতে দেশের ভেতরে ও বাইরে বৈরিতার রাজনীতি পরিহার করা প্রয়োজন।’
সাবেক হাইকমিশনার ও জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বীণা সিক্রি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে, অর্থাৎ ট্র্যাক-টু যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত উদার। তারা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু রাজনীতিক, আমলাতন্ত্র এমনকি ব্যবসায়ীরাও গতানুগতিক বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি দুই দেশের মধ্যে ট্রেনযোগে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের কথা জানালেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তুলনামূলক আলোচনা করে বীণা সিক্রি বললেন, ‘নানা নমস্যা সত্ত্বেও বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নসহ অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। সেনাতন্ত্র হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর দ্বারা। তিনি মনে করেন, ‘তিন বিঘার ওপর ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশের মানুষের চলাচলের অধিকার থাকা উচিত।’
তাঁরা তিনজনই সাবেক কূটনীতিক। তাঁদের সদুপদেশ দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা কতটা আমলে নেবেন, সে ব্যাপারে সংশয় আছে। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বাংলাদেশের মতো ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস ও বিরোধী দল বিজেপি মুখোমুখি অবস্থানে নয়। কেউ কারও বিরুদ্ধে দেশ বিক্রিরও অভিযোগ আনেনি। কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক টম ভেডাক্কন ও বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারাম আলাপকালে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপরই জোর দিলেন। বললেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কটি স্বাভাবিক ও সহজতর। ভাষা, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়েও অনেক মিল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে সম্পর্ক তৈরির প্রশ্ন নেই।’ ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ ও জামদানি শাড়ির ভালো কদর আছে—সে কথাটি জানাতেও তাঁরা ভুললেন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি যান ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। এ সফরের মাধ্যমে ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল, তা অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। রাজনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ভারতের অনুকূলে ট্রানজিট-প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান তিন দাবি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, বাণিজ্যবৈষম্য কমানো ও সীমান্ত-বিরোধের নিষ্পত্তিতে দৃশ্যগ্রাহ্য অগ্রগতি হয়নি। ভারতের পক্ষ থেকে বছরে ৮০ লাখের বদলে এক কোটি পিস তৈরি পোশাক নেওয়া ও ১০০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার ঘোষণা ছাড়া গত ১৬ মাসে কিছু পাওয়া যায়নি। বলা হচ্ছে, মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে সুসংবাদ পাওয়া যাবে। সেই সুসংবাদের আগে সীমান্তে নতুন কোনো দুঃসংবাদ শোনা যাবে না, এই নিশ্চয়তা কি দিল্লি দিতে পারবে?
প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটি হতে হবে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে উভয়ের লাভবান হওয়ার ভিত্তিতে। শিল্প-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে সম্পর্কের সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে (টাটার প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাওয়ার কথা মনে রেখেও কথাটি বলছি)। ভারত বাংলাদেশে শিল্প গড়ে তুললে এখানে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে তেমনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মানুষও এর সুফল পাবে। ট্রানজিটে নগদ লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে যৌথ শিল্পকারখানা গড়ার ওপরই জোর দিতে হবে। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশকে উপেক্ষা করে ভারত যেমন এগিয়ে যেতে পারবে না, তেমন ভারতবিরোধী রাজনীতিও বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে না। ঢাকা ও দিল্লি—উভয়কে এ সত্য বুঝতে হবে।
শেখ হাসিনা ভারতের উদ্বেগ দূর করেছেন, মনমোহন-প্রণব বাংলাদেশের উদ্বেগ দূর করবেন কবে?
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
No comments