দালালদের নিয়ন্ত্রণে আইন করুন, প্রতিকারে ব্যবস্থা নিন-জনশক্তি রপ্তানির প্রতারক চক্র

গরিব দেশে টাকা করার উপায়গুলো বরং সহজ। প্রবাসে কাজ দেওয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ তেমনই এক উপায়। গরিব ভাগ্যসন্ধানীরা প্রবাসে কাজের জন্য সামান্য সম্বল বেচে আদম বেপারির হাতে ভাগ্য সঁপে দেন। তাঁদের এই টাকায় প্রতারকেরা দিন দিন ধনী হয়ে ওঠে।


এসব ঘটনায় যথারীতি সরকারের জনশক্তি রপ্তানি তদারকি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা ‘প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে হম্বিতম্বি করেন। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জোট বায়রাও যথারীতি জানিয়ে দেয়, ‘প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কোনো রিক্রুটিং এজেন্সির দায় বায়রা নেবে না।’ লাভের ভাগ সবাই নেবেন কিন্তু প্রতারকদের দায় কেউ নেবেন না, তা হয় না। এ অবস্থায় জনশক্তি রপ্তানি খাতে ‘দালাল সম্প্রদায়ের’ রাশ টানার জন্য কার্যকর উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। এবং বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা সরকারকেই বাঁধতে হবে।
বিদেশে কর্মসংস্থানের নামে প্রতারণা নতুন নয়। সাধারণত গ্রামীণ তরুণেরাই প্রবাসে কর্মসংস্থানের হাতছানিতে বেশি সাড়া দেন। হাতের কাছে তাঁরা সরকারকে পান না, রিক্রুটিং এজেন্সিকে পান না, পান রিক্রুটিং এজেন্সির দালালদের অথবা প্রবাসী দালালদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের। এ ধরনের দালালি পেশা যখন নথিবদ্ধ নয় এবং লাইসেন্সের বালাই যেখানে নেই, সেখানে প্রতারকের টিকির নাগাল পাওয়াও কঠিন হয়। সঠিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতির এই সুযোগ রিক্রুটিং এজেন্সিও নিয়ে থাকে। দালালদের মাধ্যমে তাদের অনেকেই মুনাফাধন্য হলেও তাদের প্রতারণার দায় তারা নেয় না।
খেয়াল করার বিষয় হলো, ১৯৮২ সালের অভিবাসন অধ্যাদেশে দালালদের কোনো উল্লেখই ছিল না। শ্রমিকদের শোষণ করা বা ঠকানোর ধরনও বদলে গেছে। তবে নতুন যে খসড়া ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট-২০১১ করা হয়েছে, তাতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইনে সাব-এজেন্ট বা দালালদের আইডি নম্বর দেওয়ার প্রস্তাবও করা হয়েছে। ফলে কে কোথায় কার মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন, সেটা সরাসরি ধরা যাবে, রিক্রুটিং এজেন্সিও তখন আর পার পাবে না। আগের আইনে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ, প্রত্যাবাসিত ব্যক্তিদের সেবাদান, দুর্যোগকালে জরুরি প্রত্যাহার—এসব বিষয়ও ছিল না। আগে বিচার চাইতে হলে বিএমইটিতে (শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরো) যেতে হতো। কিন্তু বিএমইটি তো শুধু ঢাকায়, এর বাইরে দেশের চারটি শ্রম আদালত আছে। গ্রামের দরিদ্র মানুষের পক্ষে কি খুঁজে খুঁজে সেখানে যাওয়া সম্ভব?
দালালদের নিয়ন্ত্রণে তাঁদের নিবন্ধিত করার পাশাপাশি জেলায় জেলায় সরকারিভাবে রিক্রুটিং সহায়তা কর্মকর্তার পদও থাকা দরকার। তাঁরা অভিবাসনকামী ব্যক্তিদের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দেবেন। সবকিছুর পরও বড় কথা হলো, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি মন্ত্রণালয়, সংস্থা এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সর্বোচ্চ সদিচ্ছা দেখাতে হবে।
প্রতারণা ও বঞ্চনার এই ঢল আর চলতে পারে না। মিঠা মিঠা সহানুভূতি ও দায় এড়ানো নয়, জনগণ প্রতারক আদম বেপারিদের বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.