ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সব কিছু করা হবে
শেয়ারবাজারে দরপতন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা দরকার করা হবে। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে বাজারসংশ্লিষ্ট শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে গতকাল বুধবার রাতে গণভবনে দীর্ঘ বৈঠকে তিনি ওই নির্দেশনা দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার পদক্ষেপ নেবে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ওই বার্তা দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি সবার কথা শুনেছেন। বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে আগামী রোববার সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কিছু স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির মালিকরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মেটানো ও সুদের হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে তা
কোনো পক্ষ থেকেই প্রশ্ন করা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, 'অল গুড নিউজ'।
এসইসির সদস্য আরিফ খান সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। ইতিমধ্যে ব্রোকারেজ কমিশন কমানো, কর রেয়াতসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আরও নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। সিএসই সভাপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ, ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী, সিএসই সভাপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমেদ, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন,আইসিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েকুজ্জামান প্রমুখ। বৈঠক শুরু হয় রাত পৌনে ৮টায়, শেষ হয় সাড়ে ১১টায়।
টানা ৯ দিন ঈদের ছুটির পর গত রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলে বড় ধরনের দরপতন দিয়ে বাজার শেষ হয়। পরপর তিনদিন বড় দরপতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক কমে যায় ৫০০ পয়েন্টের বেশি। ডিএসই সাধারণ সূচক নেমে আসে ৫ হাজার পয়েন্টের অনেক নিচে। বাজার পরিস্থিতি গত ডিসেম্বর-জানুয়ারির ধসের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে যায়। পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের ক'দিন ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভ ও আর্তনাদ তীব্র রূপ নেয়। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী সব পক্ষকে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বরের পর অব্যাহত দরপতনের ধারা থেকে পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার। এতে এক মাস চাঙ্গাভাব থাকলেও জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে বাজার আবার নিম্নমুখী হয়। এরপর গত মাসে সরকার একগুচ্ছ প্রণোদনা ঘোষণা করে। প্রণোদনার মধ্যে ছিল_ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আয়কর রেয়াত, শেয়ার লেনদেনে উৎসে কর কমানো ইত্যাদি। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নতুন করে বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব ঘোষণায় অক্টোবরে ক'দিন সূচক বাড়ে। তবে ব্যাংকগুলো তেমন বড় আকারের বিনিয়োগ না করায় এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশি অস্থিরতা ও আস্থাহীনতায় বাজার আবার পতনের ধারায় যায়।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এসইসি চেয়ারম্যানের বৈঠক : দেশের অস্থিতিশীল শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আগে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন এসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে সেসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে এসইসি ব্যর্থ কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ছয় মাসে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গত ১০ বছরেও তা নেওয়া হয়নি। আমরা এসব উদ্যোগ না নিলে বাজার কোথায় যেত কে জানে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্বের সব দেশের শেয়ারবাজারেও ধারাবাহিক পতন ঘটে। আমাদের সময় শুধু বাজার পড়েনি, বেড়েছেও। এক পর্যায়ে ডিএসই সাধারণ সূচক ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টে গিয়ে ঠেকেছিল। এর আগে এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ ও অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিজের সভাপতি সালমান এফ রহমান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে তাদের মধ্যে আলোচনার বিষয় জানা যায়নি।
ব্যাংকগুলোর সাধ্যমতো বিনিয়োগের আশ্বাস : দরপতনের মুখে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিষয়ে গতকাল এসইসির সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির বৈঠক হয়। বৈঠকে এসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনসহ সদস্যরা এবং ২৫টি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এবিবি সভাপতি ও দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে মাহমুদ সাত্তার জানান, দরপতন ঠেকাতে ব্যাংকগুলো নিয়মিতভাবে শেয়ার কিনছে। তবে ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারছে না স্বীকার করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। বাজারের বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকগুলো সাধ্যমতো বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ফেরাতে কর অবকাশসহ কিছু প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেছি। আমরা এসইসিকে অনুরোধ জানিয়েছি, আমাদের দাবিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়। ব্যাংকাররা বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ মার্ক-টু-মার্কেট (বাজারদরে) হিসাব করা হয় বলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সমস্যা হচ্ছে। কর রেয়াত সুবিধাসহ কিছু সুযোগ বাড়ানো হলে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য কাজ করবেন বলে জানান তারা।
যৌথ ইন্সপেকশন দল গঠন : শেয়ারবাজারে সম্ভাব্য অনিয়ম রোধে সরকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) 'সার্বক্ষণিক যৌথ ইন্সপেকশন দল' গঠন করেছে। এসইসির তত্ত্বাবধানে এ কমিটি শেয়ারবাজারের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে এসইসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সার্বক্ষণিক যৌথ ইন্সপেকশন দলে এসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসসি) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে। গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তদন্ত পরবর্তী ধারাবাহিক কাজ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইন্সপেকশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে_ কোনো প্রতিষ্ঠান, কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবিশেষ, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনোভাবে বাজারকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রভাবিত করার কাজে লিপ্ত কি-না তা মনিটর করা। কমিটি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য রিপোর্ট ফরম্যাট তৈরি করবে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে পরিপালনের জন্য পাঠাবে।
বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজার নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি সবার কথা শুনেছেন। বৈঠকে অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে আগামী রোববার সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কিছু স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে বেসরকারি ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির মালিকরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট মেটানো ও সুদের হার কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে তা
কোনো পক্ষ থেকেই প্রশ্ন করা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ব্যাংকের মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, 'অল গুড নিউজ'।
এসইসির সদস্য আরিফ খান সাংবাদিকদের বলেন, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয় তার সবই করা হবে। ইতিমধ্যে ব্রোকারেজ কমিশন কমানো, কর রেয়াতসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আরও নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে। সিএসই সভাপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন, এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ, ডিএসই সভাপতি শাকিল রিজভী, সিএসই সভাপতি ফখরউদ্দিন আলী আহমেদ, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন,আইসিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েকুজ্জামান প্রমুখ। বৈঠক শুরু হয় রাত পৌনে ৮টায়, শেষ হয় সাড়ে ১১টায়।
টানা ৯ দিন ঈদের ছুটির পর গত রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হলে বড় ধরনের দরপতন দিয়ে বাজার শেষ হয়। পরপর তিনদিন বড় দরপতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক কমে যায় ৫০০ পয়েন্টের বেশি। ডিএসই সাধারণ সূচক নেমে আসে ৫ হাজার পয়েন্টের অনেক নিচে। বাজার পরিস্থিতি গত ডিসেম্বর-জানুয়ারির ধসের চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে যায়। পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের ক'দিন ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভ ও আর্তনাদ তীব্র রূপ নেয়। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। প্রধানমন্ত্রী সব পক্ষকে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বরের পর অব্যাহত দরপতনের ধারা থেকে পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বাজেটে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার। এতে এক মাস চাঙ্গাভাব থাকলেও জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে বাজার আবার নিম্নমুখী হয়। এরপর গত মাসে সরকার একগুচ্ছ প্রণোদনা ঘোষণা করে। প্রণোদনার মধ্যে ছিল_ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আয়কর রেয়াত, শেয়ার লেনদেনে উৎসে কর কমানো ইত্যাদি। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে নতুন করে বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব ঘোষণায় অক্টোবরে ক'দিন সূচক বাড়ে। তবে ব্যাংকগুলো তেমন বড় আকারের বিনিয়োগ না করায় এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশি অস্থিরতা ও আস্থাহীনতায় বাজার আবার পতনের ধারায় যায়।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এসইসি চেয়ারম্যানের বৈঠক : দেশের অস্থিতিশীল শেয়ারবাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের আগে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন এসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে সেসব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। শেয়ারবাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে এসইসি ব্যর্থ কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ছয় মাসে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গত ১০ বছরেও তা নেওয়া হয়নি। আমরা এসব উদ্যোগ না নিলে বাজার কোথায় যেত কে জানে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্বের সব দেশের শেয়ারবাজারেও ধারাবাহিক পতন ঘটে। আমাদের সময় শুধু বাজার পড়েনি, বেড়েছেও। এক পর্যায়ে ডিএসই সাধারণ সূচক ৬ হাজার ৫০০ পয়েন্টে গিয়ে ঠেকেছিল। এর আগে এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ ও অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিজের সভাপতি সালমান এফ রহমান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে তাদের মধ্যে আলোচনার বিষয় জানা যায়নি।
ব্যাংকগুলোর সাধ্যমতো বিনিয়োগের আশ্বাস : দরপতনের মুখে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিষয়ে গতকাল এসইসির সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির বৈঠক হয়। বৈঠকে এসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনসহ সদস্যরা এবং ২৫টি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এবিবি সভাপতি ও দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে মাহমুদ সাত্তার জানান, দরপতন ঠেকাতে ব্যাংকগুলো নিয়মিতভাবে শেয়ার কিনছে। তবে ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারছে না স্বীকার করে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। বাজারের বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকগুলো সাধ্যমতো বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে ফেরাতে কর অবকাশসহ কিছু প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেছি। আমরা এসইসিকে অনুরোধ জানিয়েছি, আমাদের দাবিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সঙ্গে যেন আলোচনা করা হয়। ব্যাংকাররা বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ মার্ক-টু-মার্কেট (বাজারদরে) হিসাব করা হয় বলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে সমস্যা হচ্ছে। কর রেয়াত সুবিধাসহ কিছু সুযোগ বাড়ানো হলে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আনার জন্য কাজ করবেন বলে জানান তারা।
যৌথ ইন্সপেকশন দল গঠন : শেয়ারবাজারে সম্ভাব্য অনিয়ম রোধে সরকার সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) 'সার্বক্ষণিক যৌথ ইন্সপেকশন দল' গঠন করেছে। এসইসির তত্ত্বাবধানে এ কমিটি শেয়ারবাজারের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে এসইসি চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সার্বক্ষণিক যৌথ ইন্সপেকশন দলে এসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসসি) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে। গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
পুঁজিবাজার তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তদন্ত পরবর্তী ধারাবাহিক কাজ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইন্সপেকশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিকল্পনার মধ্যে থাকবে_ কোনো প্রতিষ্ঠান, কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবিশেষ, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনোভাবে বাজারকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রভাবিত করার কাজে লিপ্ত কি-না তা মনিটর করা। কমিটি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য রিপোর্ট ফরম্যাট তৈরি করবে এবং ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে পরিপালনের জন্য পাঠাবে।
No comments