২৮- পুরো সিস্টেম ভেঙে নতুন নির্মাণ ছাড়া বিচার বিভাগের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সুযোগ নেই

চায়ের দাওয়াতের অভিনব পদ্ধতিতে ফায়দা হয়নি
... রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটি কোন পন্থায় পুনর্নির্মাণ করা হবে—এ প্রশ্নের উত্তর আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সমাজের সব স্তরের চিন্তাশীল নাগরিককে ভাবতে হবে। মইন-ফখরুদ্দীনের জরুরি জামানায় তাদের অপছন্দের বিচারকদের উচ্চ আদালত থেকে তাড়ানোর লক্ষ্যে বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াতের একটি অভিনব পদ্ধতি চালু হলেও তাতে বিশেষ কোনো ফায়দা হয়নি। যতদূর মনে পড়ছে, হাইকোর্টের মাত্র একজন বিচারক ইঙ্গিত বুঝতে পেরে আগেই পদত্যাগ করে চায়ের দাওয়াতের অবমাননা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। ...

প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবশেষে টিআইবি’র প্রতিবেদনকে স্ক্যান্ডাল নামে অভিহিত করে দুর্নীতির দায়ভার নিজ স্কন্ধে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই চরম রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট প্রধান বিচারপতির এতদিন থিওরি ছিল, জনগণের অধিক সংখ্যায় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন হওয়াটাই বিচার বিভাগের প্রতি তাদের আস্থা প্রমাণ করে। আমার বিরুদ্ধে মামলা চলাকালীন আপিল বিভাগের লর্ডশিপরা বার বার বলতে চাচ্ছিলেন, আমার মতো দুই-একজন সমাজের আপদ (সুশীল দৈনিক প্রথম আলো’র বর্ণনা অনুসারে) সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতার পরাকাষ্ঠা বিচার বিভাগের ওপর নাহক কালিমা লেপনের অপচেষ্টা করছে এবং এই Path finder-কে আচ্ছামত সাজা দিলেই অন্যরা ম্যানেজ হয়ে যাবে। Path finder-রূপী আমার কারাবাসের আট মাস চলছে। এ সময়ের মধ্যে এদেশে উচ্চ আদালত ও বিচারকদের ভাবমূর্তি এমন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে, সেখান থেকে তাদের উদ্ধার প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের সর্বনিকৃষ্ট দুর্নীতিবাজের সিলমোহর ললাটে অঙ্কিত হওয়ার পর পুরো সিস্টেম ভেঙে ফেলে নতুন করে নির্মাণ ছাড়া বাংলাদেশে বিচার বিভাগের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের আর কোনো সুযোগ নেই।
আমার বিবেচনায় রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি কোন পন্থায় পুনর্নির্মাণ করা হবে—এই প্রশ্নের উত্তর আইন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সমাজের সব স্তরের চিন্তাশীল নাগরিককে ভাবতে হবে। মইন-ফখরুদ্দীনের জরুরি জামানায় তাদের অপছন্দের বিচারকদের উচ্চ আদালত থেকে তাড়ানোর লক্ষ্যে বঙ্গভবনে চায়ের দাওয়াতের একটি অভিনব পদ্ধতি চালু হলেও তাতে বিশেষ কোনো ফায়দা হয়নি। যতদূর মনে পড়ছে, হাইকোর্টের মাত্র একজন বিচারক ইঙ্গিত বুঝতে পেরে আগেই পদত্যাগ করে চায়ের দাওয়াতের অবমাননা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী বিদেশি দূতাবাসের শরণাপন্ন হওয়ায় তাদের চাকরি রক্ষা পেয়েছিল। অনেকেই তত্কালীন ছদ্মবেশী সামরিক শাসকদের তালে তাল মিলিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদা ‘সমুন্নত’ রেখেছেন। শরীরের সর্বত্র ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে তখন একটি-দু’টি অঙ্গ শল্য চিকিত্সার মাধ্যমে কেটে ফেললেও রোগের আর উপশম হয় না, অবধারিত মৃত্যুই নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। বিচার বিভাগের রোগমুক্তি হোক—এদেশের একজন অনুগত নাগরিক হিসেবে এই কামনাই করি। এবিএম খায়রুল হক একদিক দিয়ে মহা ভাগ্যবান ব্যক্তি। তিনি যে কেবল দু’জন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতির আসনটি করায়ত্ত করেছেন তা-ই নয়, ভারত-মার্কিন লবির মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দি ডেইলি স্টার তার জনসংযোগের মহান দায়িত্বও গ্রহণ করেছে। পত্রিকাটির ভক্ত পাঠককুলের কাছে তিনি এতদিনে সম্ভবত মনুষ্যরূপী অবতার হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। বাংলাদেশের কোনো প্রধান বিচারপতির একটি জাতীয় দৈনিকের এমন আনুকূল্য লাভের কথা স্মরণে আসছে না।
কারাগারের ডাক্তার আহসান হাবিব আজ আমার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন। না, আমি কোনো খবর-টবর দিইনি। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করতেই আমার সেলে পাড়া দিয়েছিলেন। কক্সবাজারের দীর্ঘপথ আসা-যাওয়ার ধকল সামলাতে কষ্ট হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে আমি আল্লাহর অপার করুণার কথা পুনর্ব্যক্ত করলাম। আমাকে কাবু করার জন্য অনেকরকম পদ্ধতি এখন পর্যন্ত সরকার পরখ করে দেখলেও আস্তিনের মধ্যে লুকানো নিশ্চয়ই আরও অনেক কৌশল রয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে নখ উপড়ে ফেলা, স্পর্শকাতর স্থানে ইলেকট্রিক শক দেয়া, চেয়ারে ঘোরানো—এগুলো এখনও বাকি আছে। মোট কথা, শয্যাশায়ী হওয়ার মতো অবস্থায় আমি এখনও পৌঁছাইনি। বড় বড় রাজনীতিবিদরা কেন জানি না কারাগারে এলেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, আবার মুক্তি পেলে দেখি সবাই পূর্ববত্ সুস্থ।
কাশিমপুর জেলের কয়েদিদের কাছ থেকে শুনেছি, এক-এগারোর সময় আওয়ামী আমলের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে, টয়লেটে শৌচকর্মেও তার নাকি সাহায্যকারী লাগত। একদিন টয়লেট অন্তে দীর্ঘক্ষণ কমোডের পাশে নিশ্চল পড়েও ছিলেন। এখন তাকে দেখলে এই গল্প বিশ্বাস করা কঠিন। সে সময় জেলে বিএনপির অনেক লড়াকু নেতা চিত্কার করে কান্নাকাটি করতেন। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাবজেলে বিষ খাওয়ানোর গল্পের রেকর্ড তো দিনের পর দিন সংসদেই বাজানো হয়েছে। তার কান এবং চোখের ব্যামোও তো দেখতে পাচ্ছি বেশ সেরে গেছে। পেশায় আমি রাজনীতিবিদ নই বিধায় এই দীর্ঘ কারাবাসে একবারের জন্যও সরকারি লোকজনের ঘাড়ে সওয়ার হওয়ার মতো অসুস্থ হইনি। কেবল ক্যান্টনমেন্ট থানায় নির্যাতন শেষে অজ্ঞান অবস্থায় একবার চ্যাংদোলা করে গারদ থেকে ডিউটি অফিসারের কক্ষে সিপাই-সান্ত্রীরা নিয়ে গিয়েছিল।
প্রতি নামাজে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি যাতে অসুস্থ হয়ে এই ফ্যাসিস্ট, অসভ্য সরকারের মুখাপেক্ষী হতে না হয়। নববর্ষের দেখায় পারভীন জানিয়ে গিয়েছিল এবার অনেক চ্যানেলেই নাকি আমার দেশ বন্ধ এবং আমার গ্রেফতার প্রসঙ্গ বছরের দশ আলোচিত ঘটনার মধ্যে স্থান পেয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব শেখ হাসিনার শাসনকালে চারদিকে গণতন্ত্রের উন্মেষ দেখতে পাচ্ছে। আমার দেশ-এর কণ্ঠরোধের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা তাদের কাছে তুচ্ছ এবং অনুল্লেখ্য বিষয়। তাছাড়া আমাদের সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতির কারণে বিশ্ব মোড়লরাও আমার দেশ বন্ধে সরকারকে পেছন থেকে সমর্থন জানিয়েছে বলেই আমার ধারণা। এত বৈরী পরিবেশে বসবাস করেও বাকস্বাধীনতার জন্য আমাদের অসম লড়াই দেশবাসী যে আজও স্মরণ করে, এটাই আমার কাছে অনেক পাওয়া। কারাগারে একসময় আমার দেশ সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল। এই সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মতো জেলখানাগুলোতেও আমার দেশ নিষিদ্ধ। অনেক বন্দিই আমার কাছে জানতে চেয়েছে এখানে আমার দেশ পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি-না। আমি রসিকতা করে সরকার পরিবর্তন পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে বলেছি। সন্ধ্যায় লক-আপের খানিক আগে শুনলাম, চেম্বার জজ আদালতে ‘স্টে’ কিছুদিন কমে যাওয়ার পর আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। গতকাল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিকিত্সা দেয়ার নির্দেশ প্রদানের পর আজ চেম্বার জজ আদালত সেই নির্দেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন। একজন ব্যক্তির চিকিত্সার প্রয়োজন হলে সেই চিকিত্সা প্রদান কেমন করে ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে পারে, এ বিষয়টি মাথায় ঢুকলো না। আমি নিশ্চিত, আদালতের এই আদেশের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো বিষয় পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতরা দেখতে পাবেন না। মানবাধিকারের বিষয়টি এসব রাষ্ট্রের কাছে যত না নৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। সে কারণেই একই প্রকৃতির ঘটনায় তারা সময়-সুযোগমত ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকেন।
কাশিমপুরে ক্রমেই জাঁকিয়ে শীত পড়ছে। সকালে লক-আপ খুলে দিলে সোয়েটার আর চাদরে সর্বাঙ্গ যথাসম্ভব আবৃত করে বারান্দায় বসে বসে কুয়াশা দেখি। সেখানেও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তবে সেলের মতো জমাটবাঁধা নয়। এই শীতে দেখছি পাখিরাও চুপচাপ, কুঁকড়ে বসে থাকে। দশটার দিকে কুয়াশার চাদর একটু একটু করে সরতে থাকলে ওদেরও ওড়াউড়ি শুরু হয়। এতদিন ন’টার মধ্যেই গোসলের পাট সাঙ্গ করলেও এখন শীতের ঠেলায় এগারোটার আগে পেরে উঠি না। ততক্ষণে সূর্য উঁকিঝুঁকি দেয়ার চেষ্টা করে। তড়িঘড়ি গোসল শেষ করেই নরম রোদে চেয়ার পেতে গাঁয়ের তিনমাথা বুড়োর মতো হাঁটু মুড়ে বসে থাকি। শীতের প্রকোপে পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ সময়ে টান ধরেছে। মধ্যাহ্নের আহার শেষে ডিভিশন ওয়ার্ডের মাঠে বন্দিদের ফুটবল খেলা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। খেলোয়াড় সবাই সাত নম্বর ওয়ার্ডের বন্দি, ফুটবলটাও আমারই জোগাড় করে দেয়া। সে নিয়েও কত বাধা। খেলতে গিয়ে কারও পা ভাঙলে কে দায়িত্ব নেবে, ওপরঅলার কাছে কী বলব—এসব ওজর।
প্রশাসনের লোকজনকে ডেকে বললাম, গাঁজা সেবন, মাদক ব্যবহার, নিজেদের মধ্যে কারণে-অকারণে মারামারির চেয়ে তো ফুটবল খেলা শতগুণে শ্রেয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রশাসন আমার কথায় রাজি হওয়ায় ছেলেগুলো এখন খেলতে পারছে। আমারও মাঝে মাঝে ওদের সঙ্গে নেমে পড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু প্রটোকল, আমার নিরাপত্তা, কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি, নানান বাধা দূর করে আর খেলা হয় না। আমি বারান্দায় বসে একমনে ওদের খেলা দেখি, ওরা খুব খুশি হয়। খেলার ফাঁকে মাঝে-মধ্যে মাথা উঠিয়ে আমাকে দেখতে পেলে লাজুক হাসিতে মুখ ভরিয়ে ফেলে, বড় আনন্দবোধ করি। খেয়াল করছি ফুটবল খেলার দর্শক, খেলোয়াড়—দু’টিই সংখ্যায় আস্তে আস্তে বাড়ছে। অন্য সেল থেকেও বন্দিরা ইদানীং খেলতে আসছে। খেলা চলে আসরের আজান পর্যন্ত। আজান দিলে খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে সেলে ঢোকে। আমিও নামাজ পড়তে ঘরে ফিরি। নামাজ শেষ হতেই মানিক গল্প করতে আসে। পাঁচটার মধ্যে মানিককেও লক-আপের জন্য উঠতে হয়। আমি চেয়ার নিয়ে নিঃসঙ্গ সেলে ঢুকি সকালের প্রত্যাশায়।
এ-ই আমার জীবন। বরেণ্য সাংবাদিক এবং সহকর্মী আতাউস সামাদ বলেছিলেন, কোনো এক বন্দি নাকি গাছের বেড়ে ওঠা দেখে জেলে সময় কাটাতেন। অতটা প্রকৃতিপ্রেমিক এখনও হতে না পারলেও ঢাকা জেলে রোজ একটু একটু করে গোলাপ কুঁড়ির বড় হওয়া দেখতে ভালোই লাগত। এখানে গোলাপ বাগান নেই। তবে এই শীতে সূর্যের আলো আর কুয়াশার লুকোচুরি, শালিক, ঘুঘু আর বুলবুলির ঘরকন্না মুগ্ধ হয়ে দেখি। জেলে না এলে প্রকৃতির এই রূপ দেখার ফুরসত হয়তো কোনোদিনই পেতাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে ধন্যবাদ।
বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি দিবসে আদালত ঘুরে এলাম। ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণে শীত ঠেকানোর জন্য গ্লাভস, মাফলার ইত্যাদি কেনা থাকলেও ব্যবহারের তেমন একটা সুযোগ হয়নি। পারভীন কী ভেবে জেলখানায় ওগুলো পাঠিয়েছিল জানি না, তবে আজ বড় উপকার হলো। ওগুলো ব্যবহার করে প্রিজন ভ্যানের ভেতরের কনকনে ঠাণ্ডা সামলাতে পেরেছি। আদালতে চেহারা দেখিয়ে ফিরতে তিনটা বেজে যাওয়ায় ভাত খেতে আর ইচ্ছে করলো না। চা-বিস্কুট এবং গুলশানে আমার প্রতিবেশী বিমানের পাইলট রেজওয়ানের পাঠানো সৌদি আরবের খেজুর দিয়ে আহার সমাপ্ত করেই সোজা লেখার টেবিলে চলে এসেছি।
আজ বিটিআরসির মানহানির মামলায় আমার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের দিন ছিল। আসামিদের মধ্যে আমি ছাড়াও হাসমত আলী, সৈয়দ আবদাল আহমদ এবং অলিউল্লাহ নোমান রয়েছে। হাসমত আলী সিঙ্গাপুরে চিকিত্সাধীন অসুস্থ মায়ের সঙ্গে থাকায় তার আইনজীবী সময় প্রার্থনা করলে নতুন তারিখ পড়েছে মার্চের ২৯। ভারতীয়দের চাকরি দিয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপরাধে আসামির কাঠগড়ায় বিটিআরসি কর্মকর্তাদের দাঁড়ানোর কথা থাকলেও বিচিত্র এই দেশে সত্য সংবাদ প্রকাশের ‘অপরাধে’ সেই কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে। বিটিআরসির মামলা শেষ করেই আবদালকে অন্য এক ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে দৌড়াতে হলো। প্রেস ক্লাব নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত সরকারপন্থীরা নির্বাচন বাতিলের আবেদন করে সেখানে মামলা করেছে। নিম্ন আদালতে রায় কী হতে পারে, সেটা আন্দাজ করা কঠিন নয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তো বলেই দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বর্তমানে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আবদালকে বললাম খুব একটা আশাবাদী না হতে। পৃথিবীতে কোথাও দীর্ঘ সংগ্রাম ছাড়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হয়নি। প্রেস ক্লাব নির্বাচন আমাদের সেই লড়াইয়ের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এদেশের জনগণকে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। অনেক ত্যাগ, অনেক রক্ত দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেই কেবল লুণ্ঠিত সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, নচেত্ পরাধীনতাই বিধিলিপি।

No comments

Powered by Blogger.