২৯- বর্তমান সরকারের আমলে দেশে রীতিমত হরির লুট চলছে
লগি বৈঠার নৃশংসতা থেকে এক-এগারোর অসভ্যতার জন্ম
...লগি বৈঠার আন্দোলনের নৃশংসতা জন্ম দিয়েছে এক-এগারোর অসভ্যতা, এক-এগারো জন্ম দিল আওয়ামী জাহিলিয়াতের। এরপর বাংলাদেশের গন্তব্য কোথায়? বন্দি অবস্থায় যতটুকু উপলব্ধি করতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে গোটা সমাজ আজ ভীত, সন্ত্রস্ত। সবাই আপন পরিবার ও সম্পদ কোনোক্রমে রক্ষা করাকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভীরুতা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষা হয় না। দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক।...
...লগি বৈঠার আন্দোলনের নৃশংসতা জন্ম দিয়েছে এক-এগারোর অসভ্যতা, এক-এগারো জন্ম দিল আওয়ামী জাহিলিয়াতের। এরপর বাংলাদেশের গন্তব্য কোথায়? বন্দি অবস্থায় যতটুকু উপলব্ধি করতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে গোটা সমাজ আজ ভীত, সন্ত্রস্ত। সবাই আপন পরিবার ও সম্পদ কোনোক্রমে রক্ষা করাকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভীরুতা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষা হয় না। দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক।...
রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সমাজ জীবন থেকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এত দ্রুত চলে যাচ্ছে দেখে বড় কষ্ট হয়। অভব্যতার যে সর্বনাশা বীজ মইন-মাসুদ-মশহুদ আমাদের দেশে এক-এগারোতে বপন করে গিয়েছিল, এই আমলে সেখান থেকে বিষবৃক্ষ জন্ম নিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদের উস্কানিতে ক্ষমতা হাতে নিয়ে জেনারেল মইন তার জুনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিকদের অপমান করার যে লাইসেন্স দিয়েছিল, তার নজির পাকিস্তান আমলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেসব দুর্ব্যবহারের অডিও-ভিডিও টেপ পর্যন্ত বিশেষ সংস্থা কর্তৃক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য সরবরাহ করা হয়েছিল।
আমার এক ডাক্তার বন্ধু তার জেলা শহরে কয়েকবার নির্বাচিত একজন প্রবীণ সংসদ সদস্যকে রাজপথে পুত্রসম তরুণ সামরিক কর্মকর্তার হাতে চড়-থাপ্পড়-লাথি খেতে দেখে শিউরে উঠেছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপত্তিকরভাবে ধাক্কাধাক্কি করে নিম্ন আদালতে নেয়ার দৃশ্য তো দেশবাসী টেলিভিশনের পর্দাতেই দেখতে পেয়েছে। এক-এগারোর পটভূমি যে লগি-বৈঠার আন্দোলনে রচিত হয়েছিল, তার কুশীলবদের স্ব-স্ব রুচি অনুযায়ী যথেষ্ট উত্সাহ সহকারে সে সময় যাবতীয় অসভ্যতা চর্চা করতে দেখেছি।
সহিংস আন্দোলন চলাকালে নেড়ি কুকুরের গলায় বিচারপতি ‘এমএ আজিজ’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে গেছে রাজনৈতিক কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তরা। পাঁচ-ছয় বছরের শিশুর বুকে ওই একই নাম লিখে তার গলায় জুতোর মালা ঝুলিয়ে রঙ-তামাশা করা হয়েছে। কোথাকার এক দোকানদার টেলিভিশনের টক শো’তে এসে পরিবারসুদ্ধ তত্কালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে না খাইয়ে মারার হুমকি দিয়েছে। কলহপ্রিয় এক মহিলা আইনজীবী বিচারপতি আজিজের বাসার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। আর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেয়ার সেই হুমকি তো রীতিমত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অবশ্য এক-এগারোর প্রশাসন দ্বারা নিজেই নিগৃহীত হওয়ার পর থেকে দেশবাসী তার আচার-আচরণে যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন। আশা করি, হঠাত্ করে মন্ত্রিত্ব পেয়ে গেলেও বর্তমানের সৌজন্যবোধ তিনি ধরে রাখবেন।
জেনারেল মইন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যখন নিত্যনতুন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন চালাচ্ছিল, তখন এদেশের সুশীল (?) মিডিয়া গোষ্ঠী পর্দার পাশ থেকে সোত্সাহে হাততালি সহকারে তাকে যথাসম্ভব উস্কানি দিয়েছে। পরজীবী সুশীল (?) সমাজ হয় সামরিক সরকারে পদ বাগানোর ফন্দি-ফিকির করেছে, নয়তো মৌনতার মাধ্যমে যাবতীয় অপকর্মে সম্মতি জানিয়েছে। সবার চোখের সামনে বাংলাদেশ ক্রমেই রসাতলে গেছে। ফল হয়েছে আজ সমাজ থেকে সৌজন্যবোধ পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছে, কেউ কাউকে সম্মান দিতে নারাজ। ফ্যাসিবাদের পুলিশ প্রভুর ইশারা পাওয়ামাত্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর স্যাডিস্টের (Sadist) মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীন দুদক, সব কথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান পরাধীনেরও অধম।
পিতার সামনে কন্যা লাঞ্ছিত হচ্ছে, পুত্রের সামনে পিতা। কবি আবদুল হাই শিকদার তার কবিতায় বর্তমান সময়কে আওয়ামী জাহিলিয়াত হিসেবে বর্ণনা করে একজন কবির সমাজ সচেতনতার স্বাক্ষর রেখেছেন। লগি-বৈঠার আন্দোলনের নৃশংসতা জন্ম দিয়েছে এক-এগারোর অসভ্যতা, এক-এগারো জন্ম দিল আওয়ামী জাহিলিয়াতের। এরপর বাংলাদেশের গন্তব্য কোথায়? বন্দি অবস্থায় যতটুকু উপলব্ধি করতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে গোটা সমাজ আজ ভীত, সন্ত্রস্ত। সবাই আপন পরিবার ও সম্পদ কোনোক্রমে রক্ষা করাকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভীরুতা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষা হয় না। দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক।
দুইশ’ বছর আগে তিতুমীর এক বাঁশের কেল্লা গড়ে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী দখলদার শক্তির তত্কালীন গভর্নর জেনারেল কিংবা অসম যুদ্ধে বিজয়ী ইংরেজ সেনাপতির নাম ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র ছাড়া কেউ মনে রাখেনি। অথচ এদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা মহান দেশপ্রেমিক শহীদ তিতুমীরের নাম আজও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। মহাকাল এভাবেই বীরদের সম্মান দিয়ে থাকে। একবিংশ শতাব্দীতে এমন একজন তিতুমীরের সামান্য সৈনিক হয়ে দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে প্রাণ দিতে পারলে জীবনটাকে ধন্য মনে হতো।
মহাজোট সরকার ক্রমেই গোয়েন্দানির্ভর হয়ে বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পঞ্চান্ন বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দরপতনের পর প্রধানমন্ত্রী তার কারণ উদঘাটনের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিয়েছেন! মন্ত্রিসভার একই বৈঠকে ভরা আমন মৌসুমে চালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির রহস্যভেদের হেতু বের করার জন্য সেই গোয়েন্দা সংস্থাকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে সরকারপ্রধান ষড়যন্ত্রতত্ত্ব শুনতেই অধিক আগ্রহী। স্বাধীনতার পর থেকে এক-এগারো পর্যন্ত এই তিন যুগ ধরে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল (?) গোষ্ঠী বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে গেছেন। এদেশে সেনাবাহিনী রাখারই কোনো যৌক্তিকতা নেই এমন রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণাও এদেশে চলেছে। সেনাবাহিনী রাখার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুশীলরা (?) সেমিনারের আয়োজন করেছেন, যেখানে চিহ্নিত গোষ্ঠীকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে। বিএনপিকে ক্যান্টনমেন্টে সৃষ্ট দল অভিধায় ভূষিত করে নিন্দা-মন্দ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে।
এক-এগারোতে হঠাত্ সব পাল্টে গেল। সেনাবিদ্বেষী সুশীল (?) মুখপত্রদ্বয় হয়ে পড়লো জেনারেল মইন জান্তার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। তত্কালীন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাবশালী কর্মকর্তারা বিদেশিদের যোগসাজশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জেনারেল মইনের লেনদেন সার্থকভাবে সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিই পাল্টে গেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল ফললাভে মহাজোটকে সেই গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতার কাহিনী সম্পর্কে দেশের মানুষ এখন মোটামুটি অবহিত। বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় চার দশকের ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উত্খাত-পরবর্তী নোংরা, অশালীন প্রচারণায় আইএসপিআরের ভূমিকা এক-এগারো পরবর্তী আওয়ামী লীগ-সেনাবাহিনী বন্ধুত্বের বিশেষ প্রমাণ দিয়েছে। এদেশের যে কোনো স্বাধীনতাকামী নাগরিকের আওয়ামী-সেনাবাহিনী বন্ধুত্বে আন্তরিকভাবে সন্তোষবোধ করা উচিত ছিল।
দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধান দুই দলের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আন্তরিক বোঝাপড়া আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু সরকারের পিলখানা হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী কার্যকলাপ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। সীমান্তে অসহায়, দরিদ্র বাংলাদেশীদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে আমাদের সেনাবাহিনীর দুর্বল অবস্থান জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে না। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে দু’জন বাংলাদেশীকে হত্যার পর সেখানকার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের কমান্ডিং অফিসারকে বিএসএফ নাকি আশ্বস্ত করে বলেছে, এসব হত্যাকাণ্ডে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা শুধু সীমান্ত অঞ্চলের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত খারাপ লোকগুলোকে কুকুর-বিড়ালের মতো মারছে! বিজিবি কমান্ডার নিশ্চয়ই অতীব সন্তুষ্ট চিত্তে পতাকা বৈঠক শেষ করে ওপরওয়ালাদের কাছে যথারীতি রিপোর্ট করেছেন। রৌমারী, পদুয়ার বীর সেনানীরা নিরাপত্তা বাহিনী থেকে কোথায় হারিয়ে গেলেন, জেলে বসে তা-ই ভাবছি। সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থার জন্য বর্তমান এবং অতীত শাসকশ্রেণীও তাদের দায় এড়াতে পারেন না। রৌমারী যুদ্ধের সময়কার বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমানকে তত্কালীন শেখ হাসিনা সরকার ভারতের চাপে কমান্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, পরবর্তী বিএনপি সরকার এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেমের মূল্যায়ন করে তাকে যথাযোগ্য দায়িত্ব অর্পণ করবে। কিন্তু বিএনপি আমলে তাকে বিস্ময়করভাবে আওয়ামীপন্থী লেবেল লাগিয়ে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে যেসব সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমানের বিষয়ে বিভ্রান্ত করেছিলেন, তারাই পরবর্তীকালে এক-এগারো আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশে সেই নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমল থেকেই বিশ্বাসঘাতকরা এভাবে শাসকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রৌমারীর বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ থেকে আজ পর্যন্ত দেশপ্রেমের প্রতিটি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল ফজলুর রহমান উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম। সেনাবাহিনীতে দেশপ্রেম, সততা, দক্ষতা বিবেচনার পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে কে কোন পন্থী, সেটি খুঁজে পদোন্নতি দেয়ার অশুভ, আত্মবিনাশী নীতি চর্চার ফলেই দেশের স্বাধীনতা আজ হুমকিতে পড়েছে।
শেয়ারবাজার নিয়ে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করে গোয়েন্দা সংস্থা রোমহর্ষক কাহিনী ফাঁদার আগেই মূল্যপতনের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। আগেরদিনের ৬০০ পয়েন্ট পতনকে অতিক্রম করে আজ মাত্র ৫০ মিনিটে ৬৩৫ পয়েন্ট খুইয়েছে ডিএসই। অবস্থা সঙ্গীন দেখে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে দিনের লেনদেন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই অবশ্য বিভিন্ন জেলাশহরে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ, নিঃস্ব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে এখন নাকি ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে কেনাবেচা করে থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন জানি না এই লাখ লাখ মানুষ উন্মত্তের মতো শেয়ার নামক সোনার হরিণের পেছনে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে। সামনের অতল খাদ তাদের দৃষ্টিতেই পড়ে না। পুরনো বাংলা প্রবাদ—ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়, আর যার ক্ষেত্রেই খাটুক, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে ঝাঁপিয়ে পড়া বাংলাদেশী শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে খাটে না। এটা অনেকটা জুয়া খেলার নেশার মতো।
জানুয়ারির নয় এবং দশ—মাত্র এই দু’দিনে বাজার মূলধন থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। কোথায় গেল বাংলাদেশের এক বছরের উন্নয়ন বাজেটের সমপরিমাণ এই বিপুল অর্থ? বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন আমেরিকা, কানাডা এবং লন্ডন আপাতত এই টাকার ঠিকানা। সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে কৃত্রিম উপায়ে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট খুলে দেয়ার আয়োজন করেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ঋণ বাড়ানো হবে, আগের ঋণের টাকা কোথায় গেছে তার হিসাব নেয়া হবে না, টাকা সাদা না কালো এই প্রশ্ন কস্মিনকালেও করা হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে জনগণের আরও বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচার হবে, ব্যাংক দেউলিয়া হবে, কলমানি রেট আরও বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়ে নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁবে। তাতে সরকারের কী-ই বা এলো গেলো? একবার সামনের বিশ্বকাপ পর্যন্ত জনরোষ সামলে-সুমলে রাখতে পারলে তারপর দেখা যাবে কত ধানে কত চাল। র্যাব-পুলিশের বন্দুকের সামনে বিক্ষোভ করার মজা এসব বিক্ষুব্ধ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী তখন বুঝবে।
শেয়ারবাজারের আসল প্লেয়াররা কে কত কামাচ্ছেন তার একটা হিসাব আশা করি, হাইকমান্ড নিজের কাছে রাখছেন। সামনের নির্বাচনের খরচ মেটাতে হবে না! বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের অর্থ নিয়ে এই সরকারের আমলে রীতিমত হরির লুট চলছে। আগে হতো চুরি, এখন হচ্ছে ডাকাতি। গত দুই বছরে প্রতি ইউনিট চৌদ্দ টাকা দরে বিদ্যুত্ কেনার অর্ধশত চুক্তি করা হয়েছে কোনোরকম টেন্ডার অথবা স্বচ্ছতা ছাড়াই। সাদা চোখে চৌদ্দ হলেও অন্যান্য খরচা যোগ করে বিদ্যুতের প্রকৃত মূল্য পড়বে ১৮ টাকা ইউনিট প্রতি! আমার ধারণা, এই সরকারের আমলে এক বিদ্যুত্ খাতেই ভর্তুকি বছরে কমপক্ষে বিশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সেই টাকা ভাগাভাগি হবে বাছাই করা কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে। অথচ এই বিশ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রতি বছর দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা যেত।
চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছরে বিশ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় পাচারের বায়বীয় গল্প বলতে বলতে আজকের প্রধানমন্ত্রী মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন। আর এই আমলে প্রতি বছর বিশ হাজার কোটি টাকা শুধু বিদ্যুত্ কেনার নামে লুটে নেয়া হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, গ্যাসক্ষেত্রগুলোও নাকি এবার একইভাবে টেন্ডার ছাড়া ভাগ করে দেয়া হবে। পৈতৃক জমিদারি চালানোর মতো করে এখন বাংলাদেশ চলছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সুশাসন, দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফের খবরদারির অন্ত ছিল না। তারা সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু না হতেই প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেলো। বিশ্বব্যাংকও নাকি এক কথায় তহবিল বাড়াতে রাজি। এই দুই বছরে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের মাথার ওপর রেকর্ড পরিমাণ ঋণের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। ঋণ করে কেনা ঘি নিজেরা খেতে পারলে হয়তো জনগণের তেমন একটা আফসোস থাকতো না। কিন্তু এখন তো দেখছি ঋণ করছে জনগণ, আর ঘি খাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিশেষ কয়েকটি পরিবার।
আমার এক ডাক্তার বন্ধু তার জেলা শহরে কয়েকবার নির্বাচিত একজন প্রবীণ সংসদ সদস্যকে রাজপথে পুত্রসম তরুণ সামরিক কর্মকর্তার হাতে চড়-থাপ্পড়-লাথি খেতে দেখে শিউরে উঠেছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপত্তিকরভাবে ধাক্কাধাক্কি করে নিম্ন আদালতে নেয়ার দৃশ্য তো দেশবাসী টেলিভিশনের পর্দাতেই দেখতে পেয়েছে। এক-এগারোর পটভূমি যে লগি-বৈঠার আন্দোলনে রচিত হয়েছিল, তার কুশীলবদের স্ব-স্ব রুচি অনুযায়ী যথেষ্ট উত্সাহ সহকারে সে সময় যাবতীয় অসভ্যতা চর্চা করতে দেখেছি।
সহিংস আন্দোলন চলাকালে নেড়ি কুকুরের গলায় বিচারপতি ‘এমএ আজিজ’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে গেছে রাজনৈতিক কর্মী নামধারী দুর্বৃত্তরা। পাঁচ-ছয় বছরের শিশুর বুকে ওই একই নাম লিখে তার গলায় জুতোর মালা ঝুলিয়ে রঙ-তামাশা করা হয়েছে। কোথাকার এক দোকানদার টেলিভিশনের টক শো’তে এসে পরিবারসুদ্ধ তত্কালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে না খাইয়ে মারার হুমকি দিয়েছে। কলহপ্রিয় এক মহিলা আইনজীবী বিচারপতি আজিজের বাসার পানি, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। আর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের বঙ্গভবনের অক্সিজেন বন্ধ করে দেয়ার সেই হুমকি তো রীতিমত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অবশ্য এক-এগারোর প্রশাসন দ্বারা নিজেই নিগৃহীত হওয়ার পর থেকে দেশবাসী তার আচার-আচরণে যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন। আশা করি, হঠাত্ করে মন্ত্রিত্ব পেয়ে গেলেও বর্তমানের সৌজন্যবোধ তিনি ধরে রাখবেন।
জেনারেল মইন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ধরে ধরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যখন নিত্যনতুন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন চালাচ্ছিল, তখন এদেশের সুশীল (?) মিডিয়া গোষ্ঠী পর্দার পাশ থেকে সোত্সাহে হাততালি সহকারে তাকে যথাসম্ভব উস্কানি দিয়েছে। পরজীবী সুশীল (?) সমাজ হয় সামরিক সরকারে পদ বাগানোর ফন্দি-ফিকির করেছে, নয়তো মৌনতার মাধ্যমে যাবতীয় অপকর্মে সম্মতি জানিয়েছে। সবার চোখের সামনে বাংলাদেশ ক্রমেই রসাতলে গেছে। ফল হয়েছে আজ সমাজ থেকে সৌজন্যবোধ পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছে, কেউ কাউকে সম্মান দিতে নারাজ। ফ্যাসিবাদের পুলিশ প্রভুর ইশারা পাওয়ামাত্র সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর স্যাডিস্টের (Sadist) মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীন দুদক, সব কথিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান পরাধীনেরও অধম।
পিতার সামনে কন্যা লাঞ্ছিত হচ্ছে, পুত্রের সামনে পিতা। কবি আবদুল হাই শিকদার তার কবিতায় বর্তমান সময়কে আওয়ামী জাহিলিয়াত হিসেবে বর্ণনা করে একজন কবির সমাজ সচেতনতার স্বাক্ষর রেখেছেন। লগি-বৈঠার আন্দোলনের নৃশংসতা জন্ম দিয়েছে এক-এগারোর অসভ্যতা, এক-এগারো জন্ম দিল আওয়ামী জাহিলিয়াতের। এরপর বাংলাদেশের গন্তব্য কোথায়? বন্দি অবস্থায় যতটুকু উপলব্ধি করতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে গোটা সমাজ আজ ভীত, সন্ত্রস্ত। সবাই আপন পরিবার ও সম্পদ কোনোক্রমে রক্ষা করাকেই জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভীরুতা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষা হয় না। দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে রুখে দাঁড়ানো আবশ্যক।
দুইশ’ বছর আগে তিতুমীর এক বাঁশের কেল্লা গড়ে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন। সাম্রাজ্যবাদী দখলদার শক্তির তত্কালীন গভর্নর জেনারেল কিংবা অসম যুদ্ধে বিজয়ী ইংরেজ সেনাপতির নাম ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র ছাড়া কেউ মনে রাখেনি। অথচ এদেশের আবালবৃদ্ধবনিতা মহান দেশপ্রেমিক শহীদ তিতুমীরের নাম আজও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। মহাকাল এভাবেই বীরদের সম্মান দিয়ে থাকে। একবিংশ শতাব্দীতে এমন একজন তিতুমীরের সামান্য সৈনিক হয়ে দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে প্রাণ দিতে পারলে জীবনটাকে ধন্য মনে হতো।
মহাজোট সরকার ক্রমেই গোয়েন্দানির্ভর হয়ে বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পঞ্চান্ন বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দরপতনের পর প্রধানমন্ত্রী তার কারণ উদঘাটনের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিয়েছেন! মন্ত্রিসভার একই বৈঠকে ভরা আমন মৌসুমে চালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির রহস্যভেদের হেতু বের করার জন্য সেই গোয়েন্দা সংস্থাকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে সরকারপ্রধান ষড়যন্ত্রতত্ত্ব শুনতেই অধিক আগ্রহী। স্বাধীনতার পর থেকে এক-এগারো পর্যন্ত এই তিন যুগ ধরে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল (?) গোষ্ঠী বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে গেছেন। এদেশে সেনাবাহিনী রাখারই কোনো যৌক্তিকতা নেই এমন রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণাও এদেশে চলেছে। সেনাবাহিনী রাখার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুশীলরা (?) সেমিনারের আয়োজন করেছেন, যেখানে চিহ্নিত গোষ্ঠীকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে। বিএনপিকে ক্যান্টনমেন্টে সৃষ্ট দল অভিধায় ভূষিত করে নিন্দা-মন্দ, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়েছে।
এক-এগারোতে হঠাত্ সব পাল্টে গেল। সেনাবিদ্বেষী সুশীল (?) মুখপত্রদ্বয় হয়ে পড়লো জেনারেল মইন জান্তার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। তত্কালীন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাবশালী কর্মকর্তারা বিদেশিদের যোগসাজশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জেনারেল মইনের লেনদেন সার্থকভাবে সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিই পাল্টে গেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডিজিটাল ফললাভে মহাজোটকে সেই গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতার কাহিনী সম্পর্কে দেশের মানুষ এখন মোটামুটি অবহিত। বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় চার দশকের ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উত্খাত-পরবর্তী নোংরা, অশালীন প্রচারণায় আইএসপিআরের ভূমিকা এক-এগারো পরবর্তী আওয়ামী লীগ-সেনাবাহিনী বন্ধুত্বের বিশেষ প্রমাণ দিয়েছে। এদেশের যে কোনো স্বাধীনতাকামী নাগরিকের আওয়ামী-সেনাবাহিনী বন্ধুত্বে আন্তরিকভাবে সন্তোষবোধ করা উচিত ছিল।
দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রধান দুই দলের সঙ্গে সেনাবাহিনীর আন্তরিক বোঝাপড়া আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু সরকারের পিলখানা হত্যাকাণ্ড-পরবর্তী কার্যকলাপ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। সীমান্তে অসহায়, দরিদ্র বাংলাদেশীদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ কর্তৃক নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে আমাদের সেনাবাহিনীর দুর্বল অবস্থান জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে না। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে দু’জন বাংলাদেশীকে হত্যার পর সেখানকার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের কমান্ডিং অফিসারকে বিএসএফ নাকি আশ্বস্ত করে বলেছে, এসব হত্যাকাণ্ডে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা শুধু সীমান্ত অঞ্চলের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত খারাপ লোকগুলোকে কুকুর-বিড়ালের মতো মারছে! বিজিবি কমান্ডার নিশ্চয়ই অতীব সন্তুষ্ট চিত্তে পতাকা বৈঠক শেষ করে ওপরওয়ালাদের কাছে যথারীতি রিপোর্ট করেছেন। রৌমারী, পদুয়ার বীর সেনানীরা নিরাপত্তা বাহিনী থেকে কোথায় হারিয়ে গেলেন, জেলে বসে তা-ই ভাবছি। সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থার জন্য বর্তমান এবং অতীত শাসকশ্রেণীও তাদের দায় এড়াতে পারেন না। রৌমারী যুদ্ধের সময়কার বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমানকে তত্কালীন শেখ হাসিনা সরকার ভারতের চাপে কমান্ড থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। আমরা আশা করেছিলাম, পরবর্তী বিএনপি সরকার এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেমের মূল্যায়ন করে তাকে যথাযোগ্য দায়িত্ব অর্পণ করবে। কিন্তু বিএনপি আমলে তাকে বিস্ময়করভাবে আওয়ামীপন্থী লেবেল লাগিয়ে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে যেসব সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমানের বিষয়ে বিভ্রান্ত করেছিলেন, তারাই পরবর্তীকালে এক-এগারো আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশে সেই নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমল থেকেই বিশ্বাসঘাতকরা এভাবে শাসকদের বিভ্রান্ত করে চলেছে। ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রৌমারীর বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ থেকে আজ পর্যন্ত দেশপ্রেমের প্রতিটি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল ফজলুর রহমান উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাকে আমার সশ্রদ্ধ সালাম। সেনাবাহিনীতে দেশপ্রেম, সততা, দক্ষতা বিবেচনার পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে কে কোন পন্থী, সেটি খুঁজে পদোন্নতি দেয়ার অশুভ, আত্মবিনাশী নীতি চর্চার ফলেই দেশের স্বাধীনতা আজ হুমকিতে পড়েছে।
শেয়ারবাজার নিয়ে বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করে গোয়েন্দা সংস্থা রোমহর্ষক কাহিনী ফাঁদার আগেই মূল্যপতনের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। আগেরদিনের ৬০০ পয়েন্ট পতনকে অতিক্রম করে আজ মাত্র ৫০ মিনিটে ৬৩৫ পয়েন্ট খুইয়েছে ডিএসই। অবস্থা সঙ্গীন দেখে এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে দিনের লেনদেন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই অবশ্য বিভিন্ন জেলাশহরে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ, নিঃস্ব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে নেমে এসেছে। বাংলাদেশে এখন নাকি ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে কেনাবেচা করে থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন জানি না এই লাখ লাখ মানুষ উন্মত্তের মতো শেয়ার নামক সোনার হরিণের পেছনে দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে। সামনের অতল খাদ তাদের দৃষ্টিতেই পড়ে না। পুরনো বাংলা প্রবাদ—ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়, আর যার ক্ষেত্রেই খাটুক, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার লোভে ঝাঁপিয়ে পড়া বাংলাদেশী শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে খাটে না। এটা অনেকটা জুয়া খেলার নেশার মতো।
জানুয়ারির নয় এবং দশ—মাত্র এই দু’দিনে বাজার মূলধন থেকে প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। কোথায় গেল বাংলাদেশের এক বছরের উন্নয়ন বাজেটের সমপরিমাণ এই বিপুল অর্থ? বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন আমেরিকা, কানাডা এবং লন্ডন আপাতত এই টাকার ঠিকানা। সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে কৃত্রিম উপায়ে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট খুলে দেয়ার আয়োজন করেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ঋণ বাড়ানো হবে, আগের ঋণের টাকা কোথায় গেছে তার হিসাব নেয়া হবে না, টাকা সাদা না কালো এই প্রশ্ন কস্মিনকালেও করা হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে জনগণের আরও বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচার হবে, ব্যাংক দেউলিয়া হবে, কলমানি রেট আরও বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়ে নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁবে। তাতে সরকারের কী-ই বা এলো গেলো? একবার সামনের বিশ্বকাপ পর্যন্ত জনরোষ সামলে-সুমলে রাখতে পারলে তারপর দেখা যাবে কত ধানে কত চাল। র্যাব-পুলিশের বন্দুকের সামনে বিক্ষোভ করার মজা এসব বিক্ষুব্ধ শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী তখন বুঝবে।
শেয়ারবাজারের আসল প্লেয়াররা কে কত কামাচ্ছেন তার একটা হিসাব আশা করি, হাইকমান্ড নিজের কাছে রাখছেন। সামনের নির্বাচনের খরচ মেটাতে হবে না! বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের অর্থ নিয়ে এই সরকারের আমলে রীতিমত হরির লুট চলছে। আগে হতো চুরি, এখন হচ্ছে ডাকাতি। গত দুই বছরে প্রতি ইউনিট চৌদ্দ টাকা দরে বিদ্যুত্ কেনার অর্ধশত চুক্তি করা হয়েছে কোনোরকম টেন্ডার অথবা স্বচ্ছতা ছাড়াই। সাদা চোখে চৌদ্দ হলেও অন্যান্য খরচা যোগ করে বিদ্যুতের প্রকৃত মূল্য পড়বে ১৮ টাকা ইউনিট প্রতি! আমার ধারণা, এই সরকারের আমলে এক বিদ্যুত্ খাতেই ভর্তুকি বছরে কমপক্ষে বিশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সেই টাকা ভাগাভাগি হবে বাছাই করা কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যে। অথচ এই বিশ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রতি বছর দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা যেত।
চারদলীয় জোট সরকারের পাঁচ বছরে বিশ হাজার কোটি টাকা মালয়েশিয়ায় পাচারের বায়বীয় গল্প বলতে বলতে আজকের প্রধানমন্ত্রী মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন। আর এই আমলে প্রতি বছর বিশ হাজার কোটি টাকা শুধু বিদ্যুত্ কেনার নামে লুটে নেয়া হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, গ্যাসক্ষেত্রগুলোও নাকি এবার একইভাবে টেন্ডার ছাড়া ভাগ করে দেয়া হবে। পৈতৃক জমিদারি চালানোর মতো করে এখন বাংলাদেশ চলছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সুশাসন, দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফের খবরদারির অন্ত ছিল না। তারা সবাই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু না হতেই প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে গেলো। বিশ্বব্যাংকও নাকি এক কথায় তহবিল বাড়াতে রাজি। এই দুই বছরে বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষের মাথার ওপর রেকর্ড পরিমাণ ঋণের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। ঋণ করে কেনা ঘি নিজেরা খেতে পারলে হয়তো জনগণের তেমন একটা আফসোস থাকতো না। কিন্তু এখন তো দেখছি ঋণ করছে জনগণ, আর ঘি খাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিশেষ কয়েকটি পরিবার।
No comments