কাজী রকিবউদ্দীনকে ইতিহাস যে কারণে মনে রাখবে by সাজেদুল হক
একবার
তার অনুশোচনার খবর চাউর হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন করার
কারণে তিনি অনুতপ্ত। পদত্যাগও নাকি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন এটা বিশুদ্ধ
পানির মতোই পরিষ্কার যে, ওইসবই ছিল গুজব। বরং তিনি ফিরেছেন প্রবল
পরাক্রমশালী রূপে। কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। বিএনপি অথবা শত নাগরিকদেরই
শুধু নয়, এমনকি তিনি আমলে নিচ্ছেন না নির্বাচন কমিশনারদেরও। একটি
মীমাংসিত ইস্যুও সামনে নিয়ে এলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন
আহমদ। বহু আগেই সুপ্রিম কোর্টে এটা ফয়সালা হয়ে গেছে, নির্বাচন কমিশন বলতে
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের বুঝায়। সোজা মানে কোন সিদ্ধান্ত
নিতে হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনাররা সমন্বিতভাবেই নেবেন।
তাহলেই কেবল তা কমিশনের সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু কাজী
রকিবউদ্দীন আহমদ এসব কোন কিছুরই ধার ধারছেন না। খেয়াল করলে দেখবেন প্রফেসর
এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি যখন দেখা করতে যায় কাজী
রকিবউদ্দীন তাদের সঙ্গে একাই বৈঠক করেন। আর প্রতিনিধি দলের বক্তব্যও নাকচ
করেন একাই। কমিশনারদের সঙ্গে পরামর্শ করাও অপ্রয়োজনীয় মনে করেছেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও আসম হান্নান
শাহের নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতিনিধি দলের বেলাতেও তাই। প্রধান নির্বাচন
কমিশনার কথা বলেছেন একাই এবং নাকচও করেছেন একাই।
এরইমধ্যে খবর বেরিয়েছে শুধু বৈঠকই নয় নির্বাচন কমিশনের প্রায় সব সিদ্ধান্তই এককভাবে নিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক একটি সহযোগী দৈনিককে বলেছেন ‘কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়ে সিইসি একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নিবন্ধন বিভাগে হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। এসব কাজ কে করছে, কীভাবে করছে তার কিছুই আমরা জানি না। এ-সংক্রান্ত কোন নথি আজ পর্যন্ত কমিশনারদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়নি।’
এটা শতভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের এভাবে একক সিদ্ধান্ত নেয়া সংবিধান অনুমোদন করে না। এটা সুপ্রিম কোর্টেরও একাধিক রায়ের লঙ্ঘন। তিনি অবশ্য সৌভাগ্যবান। এমন এক সময়ে তিনি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন যখন প্রশ্ন তোলাটাই অন্যায়। একটি ‘ঐতিহাসিক’ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নাম অবশ্যই বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে। যদিও কলঙ্কিত নির্বাচন বাংলাদেশে একেবারে অভিনব নয়। তবে যা একেবারেই অভিনব তা হচ্ছে, ভোটের আগেই কোন পক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়া। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নেয়নি। এর ভুল-শুদ্ধের দায় ওই জোটকেই নিতে হবে। কিন্তু একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে রকিব কমিশন কতটুকু চেষ্টা করেছে সে প্রশ্ন থেকেই যাবে। বর্তমান কমিশন অবশ্য দাবি করতে পারে, অতীতে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তারা সফলতা দেখিয়েছে। কিন্তু কমিশন সেখানেই সফলতা দেখাতে পেরেছে যেখানে সরকারি দল হস্তক্ষেপ করেনি। আর যেখানে সরকারি দল হস্তক্ষেপ করেছে, সেখানে কমিশন কোন বাধাই তৈরি করতে পারেনি।
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অবশ্য কমিশন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের যারপরনাই হতাশ করছে। অনেকেই বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ীই নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। আর এ কয়দিনে কমিশন যেভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি অস্বীকার করেছে তা ভোটের ইতিহাসে একেবারেই অভিনব। এমনকি আফ্রিকার কোন দেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে কি-না তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে এটা সবাই নিশ্চিত করেই বলতে পারছেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে অবশ্যই ইতিহাস মনে রাখবে।
সাজেদুল হক
৪ঠা এপ্রিল, ২০১৫, ঢাকা।
এরইমধ্যে খবর বেরিয়েছে শুধু বৈঠকই নয় নির্বাচন কমিশনের প্রায় সব সিদ্ধান্তই এককভাবে নিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক একটি সহযোগী দৈনিককে বলেছেন ‘কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়ে সিইসি একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নিবন্ধন বিভাগে হাজার কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। এসব কাজ কে করছে, কীভাবে করছে তার কিছুই আমরা জানি না। এ-সংক্রান্ত কোন নথি আজ পর্যন্ত কমিশনারদের দৃষ্টিগোচরে আনা হয়নি।’
এটা শতভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়, কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের এভাবে একক সিদ্ধান্ত নেয়া সংবিধান অনুমোদন করে না। এটা সুপ্রিম কোর্টেরও একাধিক রায়ের লঙ্ঘন। তিনি অবশ্য সৌভাগ্যবান। এমন এক সময়ে তিনি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন যখন প্রশ্ন তোলাটাই অন্যায়। একটি ‘ঐতিহাসিক’ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নাম অবশ্যই বাংলাদেশের ইতিহাসে লেখা থাকবে। যদিও কলঙ্কিত নির্বাচন বাংলাদেশে একেবারে অভিনব নয়। তবে যা একেবারেই অভিনব তা হচ্ছে, ভোটের আগেই কোন পক্ষের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়া। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি জোট অংশ নেয়নি। এর ভুল-শুদ্ধের দায় ওই জোটকেই নিতে হবে। কিন্তু একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে রকিব কমিশন কতটুকু চেষ্টা করেছে সে প্রশ্ন থেকেই যাবে। বর্তমান কমিশন অবশ্য দাবি করতে পারে, অতীতে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তারা সফলতা দেখিয়েছে। কিন্তু কমিশন সেখানেই সফলতা দেখাতে পেরেছে যেখানে সরকারি দল হস্তক্ষেপ করেনি। আর যেখানে সরকারি দল হস্তক্ষেপ করেছে, সেখানে কমিশন কোন বাধাই তৈরি করতে পারেনি।
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে অবশ্য কমিশন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের যারপরনাই হতাশ করছে। অনেকেই বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ীই নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। আর এ কয়দিনে কমিশন যেভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি অস্বীকার করেছে তা ভোটের ইতিহাসে একেবারেই অভিনব। এমনকি আফ্রিকার কোন দেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে কি-না তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে এটা সবাই নিশ্চিত করেই বলতে পারছেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে অবশ্যই ইতিহাস মনে রাখবে।
সাজেদুল হক
৪ঠা এপ্রিল, ২০১৫, ঢাকা।
No comments