আপাতত নমনীয় দুই পক্ষ by শরিফুজ্জামান
বিএনপির
কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলা, খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া, জামিনলাভ ও আদালত
থেকে নিজ বাসায় ফেরা-২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এই চারটি ঘটনা রাজনীতিতে ইতিবাচক
বার্তা দিয়েছে। জনমনে অনেকটা স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এমন পরিস্থিতির সুযোগ
করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক নেতা,
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা
পাওয়া গেছে, দেশে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরির জন্য
দেশি-বিদেশি কয়েকজন ব্যক্তি ও কূটনীতিক বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা করে আসছিলেন। জানতে
চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রথম
আলোকে বলেন, ‘সরকার, বিরোধী দল, নির্বাচন কমিশন ও ভোটারদের জন্য একটি
বড় সুযোগ এনে দিয়েছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি
হিসেবে আমরা মনে করেছি, এর মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
ফের শুরু হবে।’
সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, টানা তিন মাসের সহিংস পরিস্থিতি ও নাশকতায় মানুষের মৃত্যু, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার কারণে দেশ স্থায়ী সংকটের দিকে এগোচ্ছিল। এরই মধ্যে উভয় পক্ষ নিজেদের সম্মানজনক প্রস্থানের উপায় খুঁজতে শুরু করে।
গতকাল রোববারের রাজনৈতিক অগ্রগতির পর খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হবেন বা বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে পুলিশ ফের তালা লাগিয়ে দেবে, এমন জল্পনা-কল্পনার আপাতত অবসান হয়েছে। হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নমনীয়। নাশকতাও বন্ধ হয়েছে। অবরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার না করা হলেও এর কার্যকারিতা আর নেই।
খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয় থেকে জোর করে বের করা বা গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও সরকারকে তা করতে হয়নি। গতকাল তিনি স্বেচ্ছায় বের হয়ে জামিন নিয়ে নিজ বাসায় ফিরে গেছেন। এর নেপথ্যে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান গতকাল রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) ইচ্ছা করে সেখানে থাকেননি। সেখানে যাওয়ার পর তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
সেলিমা রহমান মনে করেন, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে সরকার হয়তো কিছুটা ছাড় দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির দাবি ছিল, নির্বাচনে গেলে কিছু কথা মানতে হবে। যেমন, কার্যালয় খুলে দেওয়া, কর্মীদের হয়রানি না করা। তাঁর মতে, পল্টন কার্যালয় খোলার পর মনে হচ্ছে, দু-একটি কথা সরকার শুনছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন গত ৩ জানুয়ারি থেকে তিন মাস দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান করছিলেন। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে ওই রাত থেকে তাঁকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর ১৯ জানুয়ারি তালা খুলে দেওয়া হলেও তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি।
এমনকি ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি খালেদা জিয়া। গুলশানের দলীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, গত তিন মাসে তিনি তিন দিন দোতলা থেকে নিচে নেমেছেন। একদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে, আরেকদিন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে এবং অন্যদিন ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ দেখতে নিচে নেমেছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক এই অগ্রগতি স্বস্তিদায়ক। তবে বিএনপির এই বিলম্বিত বোধোদয় সাময়িক নাকি কৌশল, তা অচিরেই তাদের কর্মকাণ্ডে পরিস্কার হবে।
কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানাতে গেলে খালেদা জিয়ার দেখা না করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ধরনের ঘটনায় পারস্পারিক তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে, মানসিক দূরত্ব বেড়েছে। তাঁর মতে, আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় নাশকতা ছেড়ে সুষ্ঠু রাজনীতিতে আসার বিকল্প আর ছিল না।
অবশ্য বিএনপি নেতাদের একটি অংশও মনে করে, দলটির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির বিপুল জনসমর্থন থাকলেও আন্দোলন করার মতো শক্তি নেই। এখন নতুন করে শুরু করতে হবে দলটিকে। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ইস্যু সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
এ প্রসঙ্গে সরকারের একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সিটি নির্বাচন সরকারের জন্য উভয়সংকটও হতে পারে। কারণ, নির্বাচনে জিতলে বিরোধীরা বলবে, জয় ছিনিয়ে নিয়েছে সরকারি দল। আর পরাজিত হলে বলবে, সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া, সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া এবং কর্মসূচি শিথিল করার পেছনে কূটনৈতিক উদ্যোগ ছাড়াও বিএনপি-সমর্থক কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, এমাজউদ্দীন আহমদ, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহবুবউল্লাহ, মাহফুজউল্লাহসহ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিটি নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফা কথা বলেন।
বিএনপি-সমর্থক এসব বিশিষ্ট নাগরিকদের সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনের বিষয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। কারণ, দলের নেতাদের একটি অংশ নির্বাচনের পরিবর্তে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সরব ছিল।
জানতে চাইলে আ ফ ম ইউসুফ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি এই নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কাজ করে, সরকারের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে রাজনীতির এই ইতিবাচক ধারা আরও অগ্রসর হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর ৪০ দিনেও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার না করে শুধু আওয়াজ তুলে সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়ে। সরকার একদিকে গ্রেপ্তারের কথা বলছিল, অন্যদিকে চাইছিল, তিনি যেন হাজিরা দিয়ে সরকারের মুখ রক্ষা করেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আদালতে হাজির না হলে ৫ মার্চ খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হবেন, পুলিশ ও প্রশাসনের এমন প্রস্তুতি এবং সরকারের ইঙ্গিত অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া হাজির হওয়ার পর আদালত তাঁকে জামিন দেন। কিন্তু সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজাল রয়েই গেল। এই পরোয়ানা ৪০ দিনেও আদালত থেকে থানায় পৌঁছাল না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত ৪ মার্চ কূটনীতিকদের প্রকাশ্য দৌড়ঝাঁপের পর দুই পক্ষের মধ্যে দৃশ্যত নমনীয় মনোভাবের সূত্রপাত হয়। ওই দিন কূটনীতিকেরা গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে ১ মার্চ কূটনীতিকেরা দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে। এরপর সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা থেকে বিরত থাকে।
রাজনীতির এই ইতিবাচক ধারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ওয়েলকাম অ্যাপ্রোচ। রাজনীতির এই ইতিবাচক ধারা যাতে ধীরে ধীরে স্থায়ী হয়, সেটাই নাগরিকদের প্রত্যাশা।’
সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, টানা তিন মাসের সহিংস পরিস্থিতি ও নাশকতায় মানুষের মৃত্যু, অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়ার কারণে দেশ স্থায়ী সংকটের দিকে এগোচ্ছিল। এরই মধ্যে উভয় পক্ষ নিজেদের সম্মানজনক প্রস্থানের উপায় খুঁজতে শুরু করে।
গতকাল রোববারের রাজনৈতিক অগ্রগতির পর খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হবেন বা বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে পুলিশ ফের তালা লাগিয়ে দেবে, এমন জল্পনা-কল্পনার আপাতত অবসান হয়েছে। হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নমনীয়। নাশকতাও বন্ধ হয়েছে। অবরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার না করা হলেও এর কার্যকারিতা আর নেই।
খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয় থেকে জোর করে বের করা বা গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও সরকারকে তা করতে হয়নি। গতকাল তিনি স্বেচ্ছায় বের হয়ে জামিন নিয়ে নিজ বাসায় ফিরে গেছেন। এর নেপথ্যে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান গতকাল রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) ইচ্ছা করে সেখানে থাকেননি। সেখানে যাওয়ার পর তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
সেলিমা রহমান মনে করেন, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে সরকার হয়তো কিছুটা ছাড় দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির দাবি ছিল, নির্বাচনে গেলে কিছু কথা মানতে হবে। যেমন, কার্যালয় খুলে দেওয়া, কর্মীদের হয়রানি না করা। তাঁর মতে, পল্টন কার্যালয় খোলার পর মনে হচ্ছে, দু-একটি কথা সরকার শুনছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন গত ৩ জানুয়ারি থেকে তিন মাস দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান করছিলেন। ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে ওই রাত থেকে তাঁকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর ১৯ জানুয়ারি তালা খুলে দেওয়া হলেও তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি।
এমনকি ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি খালেদা জিয়া। গুলশানের দলীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, গত তিন মাসে তিনি তিন দিন দোতলা থেকে নিচে নেমেছেন। একদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে, আরেকদিন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিতে এবং অন্যদিন ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ দেখতে নিচে নেমেছিলেন তিনি।
জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক এই অগ্রগতি স্বস্তিদায়ক। তবে বিএনপির এই বিলম্বিত বোধোদয় সাময়িক নাকি কৌশল, তা অচিরেই তাদের কর্মকাণ্ডে পরিস্কার হবে।
কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানাতে গেলে খালেদা জিয়ার দেখা না করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ধরনের ঘটনায় পারস্পারিক তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে, মানসিক দূরত্ব বেড়েছে। তাঁর মতে, আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় নাশকতা ছেড়ে সুষ্ঠু রাজনীতিতে আসার বিকল্প আর ছিল না।
অবশ্য বিএনপি নেতাদের একটি অংশও মনে করে, দলটির আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির বিপুল জনসমর্থন থাকলেও আন্দোলন করার মতো শক্তি নেই। এখন নতুন করে শুরু করতে হবে দলটিকে। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ইস্যু সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
এ প্রসঙ্গে সরকারের একজন মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সিটি নির্বাচন সরকারের জন্য উভয়সংকটও হতে পারে। কারণ, নির্বাচনে জিতলে বিরোধীরা বলবে, জয় ছিনিয়ে নিয়েছে সরকারি দল। আর পরাজিত হলে বলবে, সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া, সিটি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া এবং কর্মসূচি শিথিল করার পেছনে কূটনৈতিক উদ্যোগ ছাড়াও বিএনপি-সমর্থক কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, এমাজউদ্দীন আহমদ, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহবুবউল্লাহ, মাহফুজউল্লাহসহ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে সিটি নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফা কথা বলেন।
বিএনপি-সমর্থক এসব বিশিষ্ট নাগরিকদের সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনের বিষয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। কারণ, দলের নেতাদের একটি অংশ নির্বাচনের পরিবর্তে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সরব ছিল।
জানতে চাইলে আ ফ ম ইউসুফ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি এই নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে কাজ করে, সরকারের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে রাজনীতির এই ইতিবাচক ধারা আরও অগ্রসর হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর ৪০ দিনেও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার না করে শুধু আওয়াজ তুলে সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়ে। সরকার একদিকে গ্রেপ্তারের কথা বলছিল, অন্যদিকে চাইছিল, তিনি যেন হাজিরা দিয়ে সরকারের মুখ রক্ষা করেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আদালতে হাজির না হলে ৫ মার্চ খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হবেন, পুলিশ ও প্রশাসনের এমন প্রস্তুতি এবং সরকারের ইঙ্গিত অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
গতকাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া হাজির হওয়ার পর আদালত তাঁকে জামিন দেন। কিন্তু সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজাল রয়েই গেল। এই পরোয়ানা ৪০ দিনেও আদালত থেকে থানায় পৌঁছাল না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, গত ৪ মার্চ কূটনীতিকদের প্রকাশ্য দৌড়ঝাঁপের পর দুই পক্ষের মধ্যে দৃশ্যত নমনীয় মনোভাবের সূত্রপাত হয়। ওই দিন কূটনীতিকেরা গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে ১ মার্চ কূটনীতিকেরা দেখা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে। এরপর সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা থেকে বিরত থাকে।
রাজনীতির এই ইতিবাচক ধারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ওয়েলকাম অ্যাপ্রোচ। রাজনীতির এই ইতিবাচক ধারা যাতে ধীরে ধীরে স্থায়ী হয়, সেটাই নাগরিকদের প্রত্যাশা।’
No comments