অবরোধ-হরতালে জিডিপির ক্ষতি ০.৫৫ ভাগ: সিপিডি
সেন্টার
ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অবরোধের
৮১ দিনে আর হরতালের ৬৭ দিনে (৫ জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ) মোট জাতীয় আয়ে
(জিডিপি) ক্ষতি হয়েছে ০.৫৫ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৪,৮৮০ কোটি টাকা। এতে
চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক ইন
সেন্টারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাজেট প্রস্তাবনা
২০১৫-২০১৬’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে মূল প্রতিবেদন
উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অবরোধ ও হরতালে কৃষি খাতে ৪৪৩ কোটি টাকা, মৎস্য খাতে ১১৭ কোটি টাকা, উৎপাদন খাতে ৬০৬ কোটি টাকা, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় খাতে ৪৭২ কোটি টাকা, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ৩৬ কোটি টাকা, যোগাযোগ খাতে ৩৭৪ কোটি টাকা, রিয়েল এস্টেটে ২৫০ কোটি টাকা, সেবা খাতে ৪৩১ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ২১০ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন ২,২৭৮ কোটি টাকা ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে প্রায় ১৬ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে। তবে মোট পুঁজির ওপর এ ক্ষতি হলেও তা জিডিপির হিসেবে এতো বেশি নয়, যা অবাস্তব মনে করে সিপিডি।
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, টানা অবরোধে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়লেও এ সময়ে দেশের প্রধান ১১টি খাতে মোট জাতীয় উৎপাদনে ৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে ৩৯৮ কোটি টাকা, পোলট্রি খাতে ৬০৬ কোটি টাকা, হিমায়িত খাদ্যে ৭৪১ কোটি টাকা, পোশাক খাতে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি টাকা, যোগাযোগ খাতে ৭৪৪ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ৮২৫ কোটি টাকা, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স খাতে ১৫৬ কোটি টাকা, খুচরা ও পাইকারি বিক্রিতে ৪৪৮ কোটি এবং রিয়েল এস্টেট খাতে ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাধারণ শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা। তিনি জানান, এখানে প্রধান ১১টি খাতকে ধরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ক্ষতির সর্বনিম্ন হিসেবটাই দেখানো হয়েছে। তবে সব খাতকে একত্রে করে হিসাব করলে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে ক্ষতি নিরূপণযোগ্য নয়। এ খাতের ক্ষতি ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সিপিডি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা জিডিপিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর প্রভাবে দেশের মোট জিডিপির ০.৫৫% কমে যাবে। ফলে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচেই থাকবে বলে ধারণা করেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আয়কর, মূসক ও শুল্কসহ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ও এনবিআর বহির্ভূত আয়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে আছে সরকার। বছর শেষে সরকারের রাজস্ব আয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন অনেক পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে বলা হয়, বছরের প্রথম ৮ মাসে এডিবির মাত্র ৩৮.৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকায় এমনটি হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলমান অস্থিরতার মধ্যেও অর্থনীতির কয়েকটি খাত সচল রয়েছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি ১৬.৫ এর বিপরীতে ১৩ শতাংশে রয়েছে। রেমিটেন্স প্রবাহ কম থাকলেও রিজার্ভের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন; যা ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। ব্যাংকে সুদের হার আগের মতোই রয়েছে। আর মুদ্রাস্ফীতিও রয়েছে স্থিতিশীল; যদিও অনেক দেশেই এর হার বেড়েছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতিও খুব বেশি নেই বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়।
অর্থনীতির জন্য রাজনীতিতে উদারতা দরকার: সিপিডি সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উদার বাজার অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে রাজনীতিতে উদারতা দরকার। এটা না হলে ব্যক্তি বিনিয়োগ প্রসারিত হবে না। অর্থনীতিতে নীতিগত ও প্রশাসনিক সংস্কার দরকার। এ জন্য নেতৃত্বের যে সক্ষমতা দরকার ছিল তার অভাব দেখা গেছে। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দরকার ছিল সেটাও করা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকীতে যে পরিকল্পনা আছে তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রশাসনে সুশাসন, দক্ষতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতির প্রধান কয়েকটি সূচক ইতিবাচক থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে তেজিভাব নেই। এর কারণ অনুদার রাজনৈতিক পরিবেশ। ফলে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সংস্কার না হলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হবে না। বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের বাজেটের বড় দুর্বলতা হলো এর ভুল অনুমিতি। এক দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে শিখেছি অনুমিতি বা প্রাক্কলনের চাইতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। এ জন্য এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা কোনও ধরনের প্রাক্কলিত অঙ্ক দেয়নি। আমরা সরকারের যেসব জায়গাতে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই দুর্বলতাগুলো শুধরে নিতে পারলে বাজেট বাস্তবায়ন আরও গতিশীল হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও অর্থনীতির বেশ কয়েকটি সূচক সচল থাকা ইতিবাচক। তবে তেলের দাম কমা ও উন্নত দেশে বাংলাদেশীদের অভিবাসন কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স কমবে। ব্যাংকে সুদের হার না কমালে ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়বে না। এডিবির বাস্তবায়ন সঠিকভাবে না হলে ঘাটতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।
সিপিডির মতে, কেবল রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয়েছে বড় ঝুঁকি। বড় ঘাটতি থাকার শঙ্কা রয়েছে রাজস্ব আয় নিয়েও। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে, সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ সংস্থাটির। তবে বাজেটের আকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিংবা অর্থায়নের উৎস কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোন তথ্য দেয়নি সিপিডি।
মূল প্রস্তাবনায় বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরকারকে এনবিআরকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের সংস্কার কাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী বাজেটে সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ার বড় একটি খাত হতে পারে নতুন পে-স্কেল। এ ক্ষেত্রে পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। সরকার এ ঝুঁকি মোকাবিলায় ধাপে ধাপে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে পারে। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (সিপিডি) ২৬টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণায় সহায়তাকারী মো. জাফর সিদ্দিক, মেহেরুন নেসা, ফারজানা শেহরিন, মোস্তফা আমির সাব্বিহ ও কাশফি রায়ান প্রমুখ।
তিনি বলেন, জানুয়ারিতে শুরু হওয়া অবরোধ ও হরতালে কৃষি খাতে ৪৪৩ কোটি টাকা, মৎস্য খাতে ১১৭ কোটি টাকা, উৎপাদন খাতে ৬০৬ কোটি টাকা, পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় খাতে ৪৭২ কোটি টাকা, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে ৩৬ কোটি টাকা, যোগাযোগ খাতে ৩৭৪ কোটি টাকা, রিয়েল এস্টেটে ২৫০ কোটি টাকা, সেবা খাতে ৪৩১ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ২১০ কোটি টাকাসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন ২,২৭৮ কোটি টাকা ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে প্রায় ১৬ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদনে। তবে মোট পুঁজির ওপর এ ক্ষতি হলেও তা জিডিপির হিসেবে এতো বেশি নয়, যা অবাস্তব মনে করে সিপিডি।
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, টানা অবরোধে অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়লেও এ সময়ে দেশের প্রধান ১১টি খাতে মোট জাতীয় উৎপাদনে ৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি খাতে ৩৯৮ কোটি টাকা, পোলট্রি খাতে ৬০৬ কোটি টাকা, হিমায়িত খাদ্যে ৭৪১ কোটি টাকা, পোশাক খাতে ১ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি টাকা, যোগাযোগ খাতে ৭৪৪ কোটি টাকা, পর্যটন খাতে ৮২৫ কোটি টাকা, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স খাতে ১৫৬ কোটি টাকা, খুচরা ও পাইকারি বিক্রিতে ৪৪৮ কোটি এবং রিয়েল এস্টেট খাতে ২৫০ কোটি টাকা ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাধারণ শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা। তিনি জানান, এখানে প্রধান ১১টি খাতকে ধরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ক্ষতির সর্বনিম্ন হিসেবটাই দেখানো হয়েছে। তবে সব খাতকে একত্রে করে হিসাব করলে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে ক্ষতি নিরূপণযোগ্য নয়। এ খাতের ক্ষতি ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সিপিডি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
তৌফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা জিডিপিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর প্রভাবে দেশের মোট জিডিপির ০.৫৫% কমে যাবে। ফলে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচেই থাকবে বলে ধারণা করেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে আয়কর, মূসক ও শুল্কসহ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ও এনবিআর বহির্ভূত আয়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে আছে সরকার। বছর শেষে সরকারের রাজস্ব আয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন অনেক পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে বলা হয়, বছরের প্রথম ৮ মাসে এডিবির মাত্র ৩৮.৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকায় এমনটি হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলমান অস্থিরতার মধ্যেও অর্থনীতির কয়েকটি খাত সচল রয়েছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি ১৬.৫ এর বিপরীতে ১৩ শতাংশে রয়েছে। রেমিটেন্স প্রবাহ কম থাকলেও রিজার্ভের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন; যা ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে সক্ষম। ব্যাংকে সুদের হার আগের মতোই রয়েছে। আর মুদ্রাস্ফীতিও রয়েছে স্থিতিশীল; যদিও অনেক দেশেই এর হার বেড়েছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতিও খুব বেশি নেই বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়।
অর্থনীতির জন্য রাজনীতিতে উদারতা দরকার: সিপিডি সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উদার বাজার অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে রাজনীতিতে উদারতা দরকার। এটা না হলে ব্যক্তি বিনিয়োগ প্রসারিত হবে না। অর্থনীতিতে নীতিগত ও প্রশাসনিক সংস্কার দরকার। এ জন্য নেতৃত্বের যে সক্ষমতা দরকার ছিল তার অভাব দেখা গেছে। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দরকার ছিল সেটাও করা হয়নি। তিনি বলেন, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকীতে যে পরিকল্পনা আছে তা বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রশাসনে সুশাসন, দক্ষতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনীতির প্রধান কয়েকটি সূচক ইতিবাচক থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগে তেজিভাব নেই। এর কারণ অনুদার রাজনৈতিক পরিবেশ। ফলে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। রাজনৈতিক সংস্কার না হলে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হবে না। বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের বাজেটের বড় দুর্বলতা হলো এর ভুল অনুমিতি। এক দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে শিখেছি অনুমিতি বা প্রাক্কলনের চাইতে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। এ জন্য এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় আমরা কোনও ধরনের প্রাক্কলিত অঙ্ক দেয়নি। আমরা সরকারের যেসব জায়গাতে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই দুর্বলতাগুলো শুধরে নিতে পারলে বাজেট বাস্তবায়ন আরও গতিশীল হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও অর্থনীতির বেশ কয়েকটি সূচক সচল থাকা ইতিবাচক। তবে তেলের দাম কমা ও উন্নত দেশে বাংলাদেশীদের অভিবাসন কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স কমবে। ব্যাংকে সুদের হার না কমালে ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়বে না। এডিবির বাস্তবায়ন সঠিকভাবে না হলে ঘাটতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে না।
সিপিডির মতে, কেবল রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয়েছে বড় ঝুঁকি। বড় ঘাটতি থাকার শঙ্কা রয়েছে রাজস্ব আয় নিয়েও। তাই আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে, সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ সংস্থাটির। তবে বাজেটের আকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিংবা অর্থায়নের উৎস কেমন হওয়া উচিত, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোন তথ্য দেয়নি সিপিডি।
মূল প্রস্তাবনায় বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরকারকে এনবিআরকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআরের সংস্কার কাজে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী বাজেটে সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ার বড় একটি খাত হতে পারে নতুন পে-স্কেল। এ ক্ষেত্রে পে-কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হলে ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। সরকার এ ঝুঁকি মোকাবিলায় ধাপে ধাপে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে পারে। বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (সিপিডি) ২৬টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। একই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণায় সহায়তাকারী মো. জাফর সিদ্দিক, মেহেরুন নেসা, ফারজানা শেহরিন, মোস্তফা আমির সাব্বিহ ও কাশফি রায়ান প্রমুখ।
No comments