গণতন্ত্রের সংকট by ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী
জাতি হিসেবে আমাদের স্বপ্ন ছিলো উদার
গণতান্ত্রিক সমাজ তৈরির। সেটি করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য মানুষের
সুখ-সমৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব হতো। কিন্তু বর্তমানে যে
পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কাম্য ছিলো না। গণতন্ত্রের জন্য তো নয়ই, এমনকি
স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্যও এ পরিস্থিতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই
অবস্থার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে ২-৩ বছর ধরে। তবে ‘ট্রিগারিং ফ্যাক্টর’ হিসেবে
কাজ করেছে বিরোধী জোটের পল্টনের সেই জনসভা। জনসভাটি করতে দেয়া হলে হয়তো এ
পরিস্থিতি উদ্ভব হতো না। সংকট উত্তরণে একরোখা মনোভাব, হার-জিতের প্রশ্নে যে
বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতো। রাজনৈতিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর
সমাধান জরুরি।
৫ই জানুয়ারি পল্টনে ২০ দলীয় জোটকে সমাবেশ করতে দিলে সরকারের তেমন কোন ক্ষতি হতো না। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্মও হতো না। কর্মসূচি পালন করতে না পেরে বিরোধী দল ধৈর্য হারিয়েছে এবং কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য হলো সম্পর্কের যতই অবনতি ঘটুক না কেন, আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র সংকটে পড়বে। মূলত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কোনভাবেই বৈধতা পায়নি। লেজিটিমেসি হলো একটি সরকারের রক্ষাকবজ। সে সময় নিয়মরক্ষার নির্বাচনের কথা বলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। এতে বিরোধী জোট মনে করছে সরকার এক বছর ধরে ওয়াদা খেলাপ করেছে। সভা-সমাবেশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সরকারের কঠোরতা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। এই সংকট উত্তরণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে প্রথমে। কেননা জনগণের স্বার্থ, অর্থনৈতিক স্বার্থ দেখার গুরুদায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তায়।
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের উচিত ছিলো অনির্দিষ্ট বা দীর্ঘমেয়াদি কোন কর্মসূচি না দিয়ে ব্যাপকভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুই বা তিন দফায় ৭২/৯৬ ঘণ্টার কার্যকর অবরোধ-হরতাল দিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ সরকারকেই বরং সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। অপরপক্ষে যারা ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য’ আন্দোলনে নেমেছেন তারাই পড়েছেন বিপাকে। সংকট উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত অতিসত্বর বিরোধী জোটের সাথে আলাপ-আলোচনা করে উত্তরণের পথ বের করা। নতুবা অগণতান্ত্রিক শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। যা কোন পক্ষের জন্য সুখকর হবে না। সেই পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসারও কোন পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিটি নির্বাচন বড় বা জাতীয় নির্বাচনকে আড়াল করার কৌশল হিসেবে নিয়েছে সরকার। তারা হয়তো বলবে এটা গণতন্ত্র এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ। অনেকটা রূপকথার নাকের বদলে নরুন দান।
ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী : অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন: আসলাম-উদ-দৌল্লা
৫ই জানুয়ারি পল্টনে ২০ দলীয় জোটকে সমাবেশ করতে দিলে সরকারের তেমন কোন ক্ষতি হতো না। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির জন্মও হতো না। কর্মসূচি পালন করতে না পেরে বিরোধী দল ধৈর্য হারিয়েছে এবং কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য হলো সম্পর্কের যতই অবনতি ঘটুক না কেন, আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র সংকটে পড়বে। মূলত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন কোনভাবেই বৈধতা পায়নি। লেজিটিমেসি হলো একটি সরকারের রক্ষাকবজ। সে সময় নিয়মরক্ষার নির্বাচনের কথা বলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। এতে বিরোধী জোট মনে করছে সরকার এক বছর ধরে ওয়াদা খেলাপ করেছে। সভা-সমাবেশের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সরকারের কঠোরতা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। এই সংকট উত্তরণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে প্রথমে। কেননা জনগণের স্বার্থ, অর্থনৈতিক স্বার্থ দেখার গুরুদায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তায়।
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের উচিত ছিলো অনির্দিষ্ট বা দীর্ঘমেয়াদি কোন কর্মসূচি না দিয়ে ব্যাপকভাবে জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুই বা তিন দফায় ৭২/৯৬ ঘণ্টার কার্যকর অবরোধ-হরতাল দিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ সরকারকেই বরং সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। অপরপক্ষে যারা ‘গণতন্ত্র রক্ষার জন্য’ আন্দোলনে নেমেছেন তারাই পড়েছেন বিপাকে। সংকট উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত অতিসত্বর বিরোধী জোটের সাথে আলাপ-আলোচনা করে উত্তরণের পথ বের করা। নতুবা অগণতান্ত্রিক শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। যা কোন পক্ষের জন্য সুখকর হবে না। সেই পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসারও কোন পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিটি নির্বাচন বড় বা জাতীয় নির্বাচনকে আড়াল করার কৌশল হিসেবে নিয়েছে সরকার। তারা হয়তো বলবে এটা গণতন্ত্র এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ। অনেকটা রূপকথার নাকের বদলে নরুন দান।
ড. আবদুর রহমান সিদ্দিকী : অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন: আসলাম-উদ-দৌল্লা
No comments