তালিকা হচ্ছে বিএনপির নিষ্ক্রিয় নেতাদের by হাবিবুর রহমান খান
প্রতিশ্রুতি
দিয়েও আন্দোলনে রাজপথে নামছেন না বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা। চলমান আন্দোলন
শুরুর পর থেকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বারবার রাজপথে নামার তাগিদ
দিলেও তা আমলেই নিচ্ছেন না তারা। একই আহ্বান জানিয়ে লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র
ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বারবার ফোনে সতর্ক করছেন। কিন্তু এসব
নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে তারা নিজস্ব ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ
ধরনের নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সাবেক
মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে স্থায়ী, নির্বাহী কমিটির এমনকি অঙ্গসংগঠনের
শীর্ষ নেতারাও নিষ্ক্রিয়দের তালিকা থেকে বাদ যাবেন না। তবে তালিকা চূড়ান্ত
করার আগে শেষবারের মতো নিষ্ক্রিয়দের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতেও কাজ না হলে
চূড়ান্ত তালিকাভুক্ত নেতারা ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। একই
সঙ্গে হারাতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ পদও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব
তথ্য।
জানা গেছে, নেতারা রাজপথে না থাকায় কর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন না। ফলে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকে না বিএনপি- এ ধরনের অভিযোগের দায় নিতে হচ্ছে দলটিকে। অথচ বিএনপির ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটি, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৩৮ সদস্যের উপদষ্টা কমিটি আর ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে প্রায় ৩০ জনের মতো নেতা কারাগারে রয়েছেন। বাকিরা কারাগারের বাইরে আছেন। এদের কেউ কেউ আবার বিদেশেও অবস্থান করছেন। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও এলাকায় না গিয়ে তাদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তৃণমূল নেতারা বারবার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ফলে কর্মসূচি সফল করতে মিছিল-মিটিং করার জন্য কর্মীরা নেতাদের মাঠে পাচ্ছেন না।
কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে না থাকায় তৃণমূলে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। নিষ্ক্রিয়দের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবিও তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এসব নিষ্ক্রিয় নেতাদের নিয়ে নানা কটূক্তি করা হচ্ছে। অনেকে ক্ষোভ জানিয়ে তাদের বয়কট করারও দাবি তুলেছেন। এমন বাস্তবতায় নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনে সব নেতা রাজপথে আছেন এটা বলব না, তবে অনেকে রাজপথে না থেকেও বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন। যারা আন্দোলনে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় তাদের সক্রিয় হতে দলের পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এরপরও যারা কাজ করবে না তাদের বিরুদ্ধে দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
জানা গেছে, তালিকাভুক্ত নিষ্ক্রিয় নেতাদের শেষবারের মতো একটা সুযোগ দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও জেলার সিনিয়র নেতাদের এলাকায় যাওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান আন্দোলনে যেসব নেতাকর্মী খুন, গুম ও আহত হয়েছেন তাদের খোঁজখবর রাখা ও আর্থিক সহায়তা দিতে বলা হয়েছে। শেষবারের নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের অনেকেই হতে পারেন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত। হারাতে পারেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও।
ফেসবুকে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিষ্ক্রিয়দের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘আন্দোলন করতে গিয়ে যখন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছে, মারা যাচ্ছে, তখন অনেক জেলা ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি, নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকায় এসি রুমে বসে ভোগ-বিলাসে মত্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতে মনোনয়ন পেয়েছেন, ভবিষ্যতেও পাবেন বলে আশাবাদী। আন্দোলন সফল হলে এসব নিষ্ক্রিয়রাই আবার আগে থাকবেন। তাদের এখনি চিহ্নিত করতে হবে। তৃণমূল নেতারা আন্দোলন সফল করবেন আর উনারা গিয়ে শুধু নির্বাচন করবেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে গেছে।’
সূত্র জানায়, আন্দোলন শুরুর আগে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খালেদা জিয়া। ওই সব অনুষ্ঠানে নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন তিনি। আন্দোলনে রাজপথে নামবেন কিনা- জানতে চাইলে সিনিয়র নেতারা রাজপথে নামার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে চলা আন্দোলনে বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাকেই রাজপথে দেখা যায়নি। সম্প্রতি রাজপথে নামার কৌশল হিসেবে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি বিক্ষোভ ও গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এসব কর্মসূচিতেও তারা রাজপথে নামছেন না।
জানা গেছে, ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে ১২১ জন কর্মকতা ও ২৬৫ জন সদস্য রয়েছেন। নির্বাহী কমিটির অনেকে আবার জেলা বা উপজেলা বিএনপির সভাপতিও। নির্বাহী কমিটির সব মিলিয়ে ৫০ জনের মতো নেতা আন্দোলনে রাজপথে রয়েছেন। বাকিরা হাওয়া। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাগারে। এম শামসুল ইসলাম, ড. আরএ গনি ও সরোয়ারি রহমান অসুস্থ। নজরুল ইসলাম খান গুলশান কার্যালয়ে। বাকি যারা আছেন তাদের কেউ রাজপথে নেই। একই অবস্থা ভাইস চেয়ারম্যানদেরও। ১৫ সদস্যের মধ্যে সেলিমা রহমান রয়েছেন চেয়ারপারসনের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে। সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন। একজন মারা গেছেন আর একজন কারাগারে। বাকিরা আন্দোলনের ধারে কাছেও নেই। ৩৮ সদস্যের উপদেষ্টার মধ্যে দু-চারজন ছাড়া সবাই নিষ্ক্রিয়। আন্দোলনে মনোযোগ না থাকলেও নিজ নিজ ব্যবসায় তারা খুবই মনোযোগী। সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে একজন কারাগারে। সালাহ উদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের নির্দেশে কাজ করছেন। মিজানুর রহমান মিনুকে প্রথমে দেখা গেলেও এখন আর নেই। সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। বাকিরা বলতে গেলে নিষ্ক্রিয়। প্রথমে কয়েকজনকে রাজপথে দেখা গেলেও এখন তারা আত্মগোপনে। সম্পাদকদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশে অবস্থান করছেন। বাকিরা প্রায় সবাই হাওয়া। সাবেক এমপিদের মধ্যে কয়েকজন কারাগারে রয়েছেন। বাকিরা ঘরে বসে টিভিতে আন্দোলনের খবর ও টকশো দেখে সময় পার করছেন।
ঢাকায় আন্দোলনে গতি আনতে পরিবর্তন করা হয় কমিটি। মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী-খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আন্দোলন শুরুর পর থেকে কমিটির বেশিরভাগ নেতাই হাওয়া। দু-চারজন আন্দোলনের কৌশল ও তা বাস্তবায়নে আত্মগোপনে থেকে কাজ করছেন। বাকিরা নিষ্ক্রিয়। একই অবস্থা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটির ক্ষেত্রেও। বেশিরভাগ থানা ও ওয়ার্ড নেতারা এলাকায় নেই। নিরাপদে যার যার মতো আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজধানীতে যেসব পিকেটিং হচ্ছে তা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে।
১৮ ডিসেম্বর ছাত্র কনভেনশনের আয়োজন করেন নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তারা ঘোষণা দেন, যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তারা রাজপথে থাকবেন। খালেদা জিয়াও তাদের কথায় আশ্বস্ত হন। কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তো দূরে থাক নিজেদের উদ্ধারে ব্যস্ত তারা। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম খায়রুল কবির খোকন। নরসিংদী জেলা বিএনপির এ সভাপতি আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে রয়েছেন। প্রতিদিনই হরতাল-অবরোধের পক্ষে মিছিল করছেন। জানতে চাইলে খোকন যুগান্তরকে বলেন, সরকারের নানা নির্যাতন, ভয়ভীতির মধ্যেও চেষ্টা করছি। তবে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোর কার্যক্রম আশাপ্রদ নয়। তারা আরও একটু সক্রিয় হলে রাজধানী থেকে সারা দেশ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। তিনি বলেন, এখনও নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় হওয়ার সময় রয়েছে। আশা করি, দেশ ও দলের স্বার্থে তারা আন্দোলনে রাজপথে নামবেন।
মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোরও একই অবস্থা। ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল কিছুটা সক্রিয় থাকলেও বাকিরা রাজপথে নেই। যুবদল, তাঁতী দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল নামে কোন অঙ্গসংগঠন আছে তা চলমান আন্দোলনে দেখা যায়নি। মহিলা দল দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয় অবরুদ্ধকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও আর দেখা যায়নি। তবে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, নেতারা রাজপথে না থাকায় কর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন না। ফলে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকে না বিএনপি- এ ধরনের অভিযোগের দায় নিতে হচ্ছে দলটিকে। অথচ বিএনপির ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটি, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি, ৩৮ সদস্যের উপদষ্টা কমিটি আর ১১ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে প্রায় ৩০ জনের মতো নেতা কারাগারে রয়েছেন। বাকিরা কারাগারের বাইরে আছেন। এদের কেউ কেউ আবার বিদেশেও অবস্থান করছেন। বারবার নির্দেশ দেয়ার পরও এলাকায় না গিয়ে তাদের অনেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তৃণমূল নেতারা বারবার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ফলে কর্মসূচি সফল করতে মিছিল-মিটিং করার জন্য কর্মীরা নেতাদের মাঠে পাচ্ছেন না।
কেন্দ্রীয় নেতারা রাজপথে না থাকায় তৃণমূলে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। নিষ্ক্রিয়দের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবিও তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এসব নিষ্ক্রিয় নেতাদের নিয়ে নানা কটূক্তি করা হচ্ছে। অনেকে ক্ষোভ জানিয়ে তাদের বয়কট করারও দাবি তুলেছেন। এমন বাস্তবতায় নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনে সব নেতা রাজপথে আছেন এটা বলব না, তবে অনেকে রাজপথে না থেকেও বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করছেন। যারা আন্দোলনে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় তাদের সক্রিয় হতে দলের পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এরপরও যারা কাজ করবে না তাদের বিরুদ্ধে দল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
জানা গেছে, তালিকাভুক্ত নিষ্ক্রিয় নেতাদের শেষবারের মতো একটা সুযোগ দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও জেলার সিনিয়র নেতাদের এলাকায় যাওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান আন্দোলনে যেসব নেতাকর্মী খুন, গুম ও আহত হয়েছেন তাদের খোঁজখবর রাখা ও আর্থিক সহায়তা দিতে বলা হয়েছে। শেষবারের নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের নিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের অনেকেই হতে পারেন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত। হারাতে পারেন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও।
ফেসবুকে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিষ্ক্রিয়দের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে এক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘আন্দোলন করতে গিয়ে যখন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছে, মারা যাচ্ছে, তখন অনেক জেলা ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি, নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকায় এসি রুমে বসে ভোগ-বিলাসে মত্ত। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতীতে মনোনয়ন পেয়েছেন, ভবিষ্যতেও পাবেন বলে আশাবাদী। আন্দোলন সফল হলে এসব নিষ্ক্রিয়রাই আবার আগে থাকবেন। তাদের এখনি চিহ্নিত করতে হবে। তৃণমূল নেতারা আন্দোলন সফল করবেন আর উনারা গিয়ে শুধু নির্বাচন করবেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে গেছে।’
সূত্র জানায়, আন্দোলন শুরুর আগে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খালেদা জিয়া। ওই সব অনুষ্ঠানে নেতাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন তিনি। আন্দোলনে রাজপথে নামবেন কিনা- জানতে চাইলে সিনিয়র নেতারা রাজপথে নামার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে চলা আন্দোলনে বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাকেই রাজপথে দেখা যায়নি। সম্প্রতি রাজপথে নামার কৌশল হিসেবে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি বিক্ষোভ ও গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এসব কর্মসূচিতেও তারা রাজপথে নামছেন না।
জানা গেছে, ৩৮৬ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে ১২১ জন কর্মকতা ও ২৬৫ জন সদস্য রয়েছেন। নির্বাহী কমিটির অনেকে আবার জেলা বা উপজেলা বিএনপির সভাপতিও। নির্বাহী কমিটির সব মিলিয়ে ৫০ জনের মতো নেতা আন্দোলনে রাজপথে রয়েছেন। বাকিরা হাওয়া। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কারাগারে। এম শামসুল ইসলাম, ড. আরএ গনি ও সরোয়ারি রহমান অসুস্থ। নজরুল ইসলাম খান গুলশান কার্যালয়ে। বাকি যারা আছেন তাদের কেউ রাজপথে নেই। একই অবস্থা ভাইস চেয়ারম্যানদেরও। ১৫ সদস্যের মধ্যে সেলিমা রহমান রয়েছেন চেয়ারপারসনের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে। সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন। একজন মারা গেছেন আর একজন কারাগারে। বাকিরা আন্দোলনের ধারে কাছেও নেই। ৩৮ সদস্যের উপদেষ্টার মধ্যে দু-চারজন ছাড়া সবাই নিষ্ক্রিয়। আন্দোলনে মনোযোগ না থাকলেও নিজ নিজ ব্যবসায় তারা খুবই মনোযোগী। সাতজন যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে একজন কারাগারে। সালাহ উদ্দিন আহমেদ অজ্ঞাত স্থান থেকে দলের নির্দেশে কাজ করছেন। মিজানুর রহমান মিনুকে প্রথমে দেখা গেলেও এখন আর নেই। সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। বাকিরা বলতে গেলে নিষ্ক্রিয়। প্রথমে কয়েকজনকে রাজপথে দেখা গেলেও এখন তারা আত্মগোপনে। সম্পাদকদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশে অবস্থান করছেন। বাকিরা প্রায় সবাই হাওয়া। সাবেক এমপিদের মধ্যে কয়েকজন কারাগারে রয়েছেন। বাকিরা ঘরে বসে টিভিতে আন্দোলনের খবর ও টকশো দেখে সময় পার করছেন।
ঢাকায় আন্দোলনে গতি আনতে পরিবর্তন করা হয় কমিটি। মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী-খান সোহেলকে সদস্যসচিব করে ৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু আন্দোলন শুরুর পর থেকে কমিটির বেশিরভাগ নেতাই হাওয়া। দু-চারজন আন্দোলনের কৌশল ও তা বাস্তবায়নে আত্মগোপনে থেকে কাজ করছেন। বাকিরা নিষ্ক্রিয়। একই অবস্থা মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটির ক্ষেত্রেও। বেশিরভাগ থানা ও ওয়ার্ড নেতারা এলাকায় নেই। নিরাপদে যার যার মতো আত্মগোপনে রয়েছেন। রাজধানীতে যেসব পিকেটিং হচ্ছে তা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে।
১৮ ডিসেম্বর ছাত্র কনভেনশনের আয়োজন করেন নব্বইয়ের ছাত্রনেতারা। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তারা ঘোষণা দেন, যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তারা রাজপথে থাকবেন। খালেদা জিয়াও তাদের কথায় আশ্বস্ত হন। কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তো দূরে থাক নিজেদের উদ্ধারে ব্যস্ত তারা। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম খায়রুল কবির খোকন। নরসিংদী জেলা বিএনপির এ সভাপতি আন্দোলনের শুরু থেকেই রাজপথে রয়েছেন। প্রতিদিনই হরতাল-অবরোধের পক্ষে মিছিল করছেন। জানতে চাইলে খোকন যুগান্তরকে বলেন, সরকারের নানা নির্যাতন, ভয়ভীতির মধ্যেও চেষ্টা করছি। তবে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোর কার্যক্রম আশাপ্রদ নয়। তারা আরও একটু সক্রিয় হলে রাজধানী থেকে সারা দেশ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। তিনি বলেন, এখনও নিষ্ক্রিয়দের সক্রিয় হওয়ার সময় রয়েছে। আশা করি, দেশ ও দলের স্বার্থে তারা আন্দোলনে রাজপথে নামবেন।
মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলোরও একই অবস্থা। ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল কিছুটা সক্রিয় থাকলেও বাকিরা রাজপথে নেই। যুবদল, তাঁতী দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল নামে কোন অঙ্গসংগঠন আছে তা চলমান আন্দোলনে দেখা যায়নি। মহিলা দল দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয় অবরুদ্ধকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও আর দেখা যায়নি। তবে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা শুরু থেকেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।
No comments