নতুন বিপদে পাটকল- জুট ব্যাচিং তেলের দাম ৪২% বৃদ্ধি by আবুল হাসনাত
জুট
ব্যাচিং তেলের (জেবিও) দাম ছিল প্রতি লিটার প্রায় ৬৮ টাকা। বাংলাদেশ
পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এই তেলের দাম বাড়িয়ে করেছে ১১০ টাকা। দাম
বেড়েছে ৪২ শতাংশ। ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে জেবিওর নতুন দাম কার্যকর করা
হয়েছে।
এই জুট ব্যাচিং তেল শুধুই ব্যবহার করে দেশের পাটকলগুলো। পাটের আঁশ নরম করা এবং জট ছাড়ানোর কাজে এই তেল ব্যবহার হয়। ফলে দাম বাড়ানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়েছে ক্রমাগত রুগ্ণ হতে থাকা দেশের পাটকলগুলো।
বিপিসি বলছে, দাম কম হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মিশিয়ে বাজারজাত করছিল। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি বন্ধ করতেই জেবিওর দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে পাটকলমালিকেরা বলছেন, জেবিওতে কেরোসিনের গন্ধ থাকে। তাই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা যদি সয়াবিন তেলের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে বিক্রিও করেন, তাহলেও মানুষ তা কিনবে না। আর নজরদারি না বাড়িয়ে জেবিওর দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।
এ বিষয়ে সরকারি পাটকলগুলোর পরিচালনকারী সংস্থা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই তেলের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। পাট খাতের ক্রেতারা পাঁচ সেন্টের জন্য অন্য কোম্পানির কাছে, এমনকি অন্য দেশেও চলে যায়। সেখানে এখন তো পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। ফলে এই তেলের দাম বাড়ানো হলে আমাদের ক্রেতারা ভারতে চলে যাবে।’
পাট-সুতা রপ্তানিকারকদের সমিতি বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের শিল্প চলছে না। সিনথেটিকের কারণে আমরা বিশ্ববাজারে মার খাচ্ছি। রপ্তানি কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা আশা করেছিলাম জুট ব্যাচিং তেলের দাম সরকার কমিয়ে দেবে। কিন্তু উল্টো এর দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো। সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মেশানো হচ্ছে, এমন সন্দেহই যদি বিপিসি করে, তাহলে এই তেল যেন পাটকলের বাইরে না যায় সে বিষয়ে তারা নজরদারি বাড়াক।’
এই অবস্থায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জেবিওর দামের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এদিকে এই তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে আগামীকাল রোববার বিজেএসএর নেতাদের সঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যানের একটি বৈঠক হওয়ার কথাও রয়েছে।
জানতে চাইলে এ এম বদরুদ্দোজা প্রথম আলোকে বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে জেবিওর দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম কম থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করত। এটা মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ ক্ষেত্রে দাম না বাড়িয়ে বিপিসি নজরদারি বাড়াতে পারত—এমন মন্তব্য করলে তিনি বলেন, নানা পর্যায়ে জেবিও বাইরে চলে যেতে পারে। বিপিসি এত পর্যায়ে তদারকি কীভাবে করবে?
বাড়বে উৎপাদন ব্যয়: দেশে এখন ২৪৮টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে বিজেএমসির অধীনে ২৬টি, বেসরকারি খাতে ১২৫টি পাটকল এবং ৯৭টি পাট-সুতাকল আছে।
পাটকল সমিতিগুলোর সূত্র বলছে, দেশের পাটকলগুলোতে প্রতিবছর ১০ লাখ টনের বেশি পাটপণ্য উৎপাদিত হয়। এক টন পাটপণ্য উৎপাদন করতে অন্তত ৩ শতাংশ বা ৩০ কেজি জেবিওর প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টন জেবিওর চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে জেবিও ১৯ হাজার ১৬৫ টন, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ২৬ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিক্রি হয় ২৩ হাজার ৫৩৮ টন তেল।
তবে গত কয়েক বছরে দেশে নতুন বেশকিছু পাটকল স্থাপিত হয়েছে। তাতেও জেবিওর চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে।
এই জেবিও দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করে উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। আর জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে এই জেবিও বিপণন করা হয়।
জেবিওর দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পাটকল খাতে কেমন প্রভাব পড়বে তার একটি হিসাব করেছে বিজেএসএ। বিষয়টি উল্লেখ করে কয়েক দিন আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি। এসব চিঠি থেকে জানা যায়, আগের দাম অনুযায়ী দেশের পাটকলগুলোতে প্রতিবছর জেবিও বাবদ ব্যয় হতো ২৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন দামে জেবিও কিনতে হলে পাটকলগুলোকে ব্যয় করতে হবে ৩৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তেলের দাম বাড়ায় পাটকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে ১৪৭ কোটি টাকা।
বিজেএমসিও ১৫ ফেব্রুয়ারি পাট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। তাতে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, তাদের পাটকলগুলোতে প্রতি মাসে ১২ লাখ লিটার জেবিও লাগে। আগের দাম অনুযায়ী এর দাম পড়ে সাড়ে আট কোটি টাকা। আর বর্তমান দামে এই তেল কিনতে খরচ পড়বে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এখন বেশি ব্যয় হবে পাঁচ কোটি টাকা।
একটি হিসাব করেছে বেসরকারি পাটকলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ পাটকল সমিতিও (বিজেএমএ)। সংগঠনটি বলছে, জেবিওর দাম বাড়ার কারণে তাদের আওতাধীন পাটকলগুলোতে বছরে এখন ২২ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে হবে।
বিজেএমএর সচিব এ বারিক খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের সমিতির ৪০ থেকে ৪৫টি পাটকল অত্যন্ত রুগ্ণ অবস্থায় আছে। এগুলো হয় বন্ধ, না হয় বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় জেবিওর দাম বাড়ানোর কারণে এসব পাটকল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
পাটকলমালিকদের সূত্র বলছে, বিজেএমসি, বিজেএসএ, বিজেএমএ এবং বিজেএর নেতারা ১৫ ফেব্রুয়ারি জেবিওর দাম নিয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তাঁরা পৃথকভাবে জেবিও এবং জেবিওর সঙ্গে সয়াবিন তেল মিশিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা ওই মেশানো তেলটা প্রতিমন্ত্রীর কাছে দেন। তিনি ওই তেলের গন্ধ শুঁকে বলেন, ‘এই তেল খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেরোসিনের গন্ধের জন্য তো এই তেল খাওয়াই যাবে না।’ সে কারণে তিনিও সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মিশিয়ে বিক্রি করার দাবি অযৌক্তিক বলে মত দেন। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি। খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী দাম কমানোর মৌখিক আশ্বাসও দিয়েছেন।
তবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত জেবিওর দাম পুনর্নির্ধারণের সম্ভাবনা নেই। দাম বাড়ানোর ফলে পাটকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে জানালে বিপিসির চেয়ারম্যানও বলেন, ব্যয় তো কিছুটা বাড়বেই।
জেবিও ছাড়া পাট নরম করা যায় না। ফলে পাটকলগুলো এই তেল ছাড়া কোনো পাটপণ্যই উৎপাদন করতে পারে না
* দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টন জুট ব্যাচিং তেলের চাহিদা রয়েছে।
* তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাটকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে ১৪৭ কোটি টাকা।
“সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত জেবিওর দাম পুনর্নির্ধারণের সম্ভাবনা নেই।
এ এম বদরুদ্দোজা
চেয়ারম্যান, বিপিসি
“এই তেলের দাম বাড়ানোর ফলে পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। পাট খাতের ক্রেতারা ৫ সেন্টের জন্য অন্য কোম্পানি এমনকি অন্য দেশেও চলে যায়।
হুমায়ুন খালেদ
চেয়ারম্যান, বিজেএমসি
এই জুট ব্যাচিং তেল শুধুই ব্যবহার করে দেশের পাটকলগুলো। পাটের আঁশ নরম করা এবং জট ছাড়ানোর কাজে এই তেল ব্যবহার হয়। ফলে দাম বাড়ানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিপাকে পড়েছে ক্রমাগত রুগ্ণ হতে থাকা দেশের পাটকলগুলো।
বিপিসি বলছে, দাম কম হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মিশিয়ে বাজারজাত করছিল। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি বন্ধ করতেই জেবিওর দাম বাড়ানো হয়েছে।
তবে পাটকলমালিকেরা বলছেন, জেবিওতে কেরোসিনের গন্ধ থাকে। তাই ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা যদি সয়াবিন তেলের সঙ্গে এই তেল মিশিয়ে বিক্রিও করেন, তাহলেও মানুষ তা কিনবে না। আর নজরদারি না বাড়িয়ে জেবিওর দাম বাড়ানো কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।
এ বিষয়ে সরকারি পাটকলগুলোর পরিচালনকারী সংস্থা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই তেলের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। পাট খাতের ক্রেতারা পাঁচ সেন্টের জন্য অন্য কোম্পানির কাছে, এমনকি অন্য দেশেও চলে যায়। সেখানে এখন তো পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। ফলে এই তেলের দাম বাড়ানো হলে আমাদের ক্রেতারা ভারতে চলে যাবে।’
পাট-সুতা রপ্তানিকারকদের সমিতি বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের শিল্প চলছে না। সিনথেটিকের কারণে আমরা বিশ্ববাজারে মার খাচ্ছি। রপ্তানি কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা আশা করেছিলাম জুট ব্যাচিং তেলের দাম সরকার কমিয়ে দেবে। কিন্তু উল্টো এর দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলো। সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মেশানো হচ্ছে, এমন সন্দেহই যদি বিপিসি করে, তাহলে এই তেল যেন পাটকলের বাইরে না যায় সে বিষয়ে তারা নজরদারি বাড়াক।’
এই অবস্থায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় জেবিওর দামের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সম্প্রতি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এদিকে এই তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে আগামীকাল রোববার বিজেএসএর নেতাদের সঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যানের একটি বৈঠক হওয়ার কথাও রয়েছে।
জানতে চাইলে এ এম বদরুদ্দোজা প্রথম আলোকে বলেন, জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে জেবিওর দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম কম থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মিশিয়ে বাজারে বিক্রি করত। এটা মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ ক্ষেত্রে দাম না বাড়িয়ে বিপিসি নজরদারি বাড়াতে পারত—এমন মন্তব্য করলে তিনি বলেন, নানা পর্যায়ে জেবিও বাইরে চলে যেতে পারে। বিপিসি এত পর্যায়ে তদারকি কীভাবে করবে?
বাড়বে উৎপাদন ব্যয়: দেশে এখন ২৪৮টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে বিজেএমসির অধীনে ২৬টি, বেসরকারি খাতে ১২৫টি পাটকল এবং ৯৭টি পাট-সুতাকল আছে।
পাটকল সমিতিগুলোর সূত্র বলছে, দেশের পাটকলগুলোতে প্রতিবছর ১০ লাখ টনের বেশি পাটপণ্য উৎপাদিত হয়। এক টন পাটপণ্য উৎপাদন করতে অন্তত ৩ শতাংশ বা ৩০ কেজি জেবিওর প্রয়োজন হয়। সে হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টন জেবিওর চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে জেবিও ১৯ হাজার ১৬৫ টন, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ২৬ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিক্রি হয় ২৩ হাজার ৫৩৮ টন তেল।
তবে গত কয়েক বছরে দেশে নতুন বেশকিছু পাটকল স্থাপিত হয়েছে। তাতেও জেবিওর চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে।
এই জেবিও দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করে উপজাত হিসেবে পাওয়া যায়। আর জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মাধ্যমে এই জেবিও বিপণন করা হয়।
জেবিওর দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পাটকল খাতে কেমন প্রভাব পড়বে তার একটি হিসাব করেছে বিজেএসএ। বিষয়টি উল্লেখ করে কয়েক দিন আগে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠিও দিয়েছে সংগঠনটি। এসব চিঠি থেকে জানা যায়, আগের দাম অনুযায়ী দেশের পাটকলগুলোতে প্রতিবছর জেবিও বাবদ ব্যয় হতো ২৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন দামে জেবিও কিনতে হলে পাটকলগুলোকে ব্যয় করতে হবে ৩৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তেলের দাম বাড়ায় পাটকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে ১৪৭ কোটি টাকা।
বিজেএমসিও ১৫ ফেব্রুয়ারি পাট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। তাতে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, তাদের পাটকলগুলোতে প্রতি মাসে ১২ লাখ লিটার জেবিও লাগে। আগের দাম অনুযায়ী এর দাম পড়ে সাড়ে আট কোটি টাকা। আর বর্তমান দামে এই তেল কিনতে খরচ পড়বে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এখন বেশি ব্যয় হবে পাঁচ কোটি টাকা।
একটি হিসাব করেছে বেসরকারি পাটকলগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ পাটকল সমিতিও (বিজেএমএ)। সংগঠনটি বলছে, জেবিওর দাম বাড়ার কারণে তাদের আওতাধীন পাটকলগুলোতে বছরে এখন ২২ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে হবে।
বিজেএমএর সচিব এ বারিক খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের সমিতির ৪০ থেকে ৪৫টি পাটকল অত্যন্ত রুগ্ণ অবস্থায় আছে। এগুলো হয় বন্ধ, না হয় বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় জেবিওর দাম বাড়ানোর কারণে এসব পাটকল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
পাটকলমালিকদের সূত্র বলছে, বিজেএমসি, বিজেএসএ, বিজেএমএ এবং বিজেএর নেতারা ১৫ ফেব্রুয়ারি জেবিওর দাম নিয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তাঁরা পৃথকভাবে জেবিও এবং জেবিওর সঙ্গে সয়াবিন তেল মিশিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা ওই মেশানো তেলটা প্রতিমন্ত্রীর কাছে দেন। তিনি ওই তেলের গন্ধ শুঁকে বলেন, ‘এই তেল খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেরোসিনের গন্ধের জন্য তো এই তেল খাওয়াই যাবে না।’ সে কারণে তিনিও সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবিও মিশিয়ে বিক্রি করার দাবি অযৌক্তিক বলে মত দেন। একই সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন তিনি। খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী দাম কমানোর মৌখিক আশ্বাসও দিয়েছেন।
তবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (স্টেকহোল্ডার) সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত জেবিওর দাম পুনর্নির্ধারণের সম্ভাবনা নেই। দাম বাড়ানোর ফলে পাটকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে জানালে বিপিসির চেয়ারম্যানও বলেন, ব্যয় তো কিছুটা বাড়বেই।
জেবিও ছাড়া পাট নরম করা যায় না। ফলে পাটকলগুলো এই তেল ছাড়া কোনো পাটপণ্যই উৎপাদন করতে পারে না
* দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টন জুট ব্যাচিং তেলের চাহিদা রয়েছে।
* তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাটকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে ১৪৭ কোটি টাকা।
“সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত জেবিওর দাম পুনর্নির্ধারণের সম্ভাবনা নেই।
এ এম বদরুদ্দোজা
চেয়ারম্যান, বিপিসি
“এই তেলের দাম বাড়ানোর ফলে পাটপণ্যের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। পাট খাতের ক্রেতারা ৫ সেন্টের জন্য অন্য কোম্পানি এমনকি অন্য দেশেও চলে যায়।
হুমায়ুন খালেদ
চেয়ারম্যান, বিজেএমসি
No comments