বিজ্ঞান মেলা- খুদে বিজ্ঞানীদের বড় সম্ভাবনা
বিএফএফ-সমকাল-স্কলাস্টিকা
আয়োজিত আন্তঃস্কুল বিজ্ঞান মেলায় খুদে বিজ্ঞানীদের উপস্থাপিত প্রকল্পগুলো
প্রমাণ করে যে, আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে কত বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে
রয়েছে। উপযুক্ত প্রেরণা ও পরিচর্যা পেলে তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল অবদান রাখতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক এই মেলায়
যদিও খুদে বিজ্ঞানীদের প্রকল্পগুলোকে পুরস্কার প্রদানের সুবিধার্থে
আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, অংশগ্রহণকারী সব
শিক্ষার্থীই একদিন দেশের ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে। এই প্রতিযোগিতায়
চ্যাম্পিয়ন, যৌথ রানার্সআপ, দ্বিতীয় রানার্সআপ এবং জুনিয়র সেকশনের
চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকে আমরা বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই। অংশগ্রহণকারী
শিক্ষার্থী, তাদের শিক্ষক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ। সমকালের সঙ্গে
যৌথ আয়োজনে যূথবদ্ধ হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন, স্কলাস্টিকা
স্কুলসহ সহ-আয়োজক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতিও আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা মনে করি, এই
মেলা কেবল বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা হবে না, আমাদের ব্যবহারিক
জীবনেও পথ দেখাবে। কারণ চ্যাম্পিয়ন হওয়া প্রকল্প লঞ্চ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে
'অটোমেটিক গুডস অ্যান্ড প্যাসেঞ্জার কন্ট্রোলার', যৌথভাবে প্রথম
রানার্সআপ হওয়া প্রকল্প 'ম্যাগনেটিক ট্রেন ও অটোমেটিক থিফ ক্যাচিং ডিভাইস'
এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হওয়া প্রকল্প 'সোলার পাওয়ার ডিস্যালাইনেশন থিম' নিয়ে
বৃহৎ পরিসরেও গবেষণা ও উদ্ভাবনের অবকাশ রয়েছে। এসব উদ্ভাবন নিঃসন্দেহে
আমাদের দৈনন্দিন জীবন নিরাপদ ও নিয়মবদ্ধ রাখতে সহায়ক হবে। আমরা প্রত্যাশা
করি, বিজ্ঞান মেলার এসব প্রকল্প দেশের উদ্ভাবক, বিনিয়োগকারী ও
নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার
প্রসারের দিকেও সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ দিতে বলি আমরা। বস্তুত বিজ্ঞান মেলার
সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ এ বিষয়েই জোর দিয়েছেন। আমরা
জানি, বিজ্ঞান শিক্ষার সার্বিক চিত্র উৎসাহব্যঞ্জক নয়। জাতি গঠনে
গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা খাতের মান নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা প্রশ্ন
উঠেছে। বিশেষত গত বছর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি ও এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে 'উজ্জ্বল'
ফলধারী শিক্ষার্থীদেরও নিদারুণ ব্যর্থতা শিক্ষানুরাগীদের আহত করেছে। এটা
এখন অস্বীকারের অবকাশ নেই যে, বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমছে।
দারিদ্র্য, বিজ্ঞানভীতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা না থাকা,
মাঠপর্যায়ে বিজ্ঞানাগার ও দক্ষ বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাব এবং সঠিক
দিকনির্দেশনা না থাকায় বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষা খাতে
সরকারের বাজেট বরাদ্দও খুব কম। পদার্থবিজ্ঞানে যদিও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ
রয়েছে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রতি অগ্রসর হচ্ছে কম। আমরা মনে করি,
বাংলাদেশের মতো দেশে প্রকৃতিবিজ্ঞানে সুশিক্ষিত জনশক্তির প্রয়োজন সামনের
দিনগুলোতে আরও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা দুর্যোগ মোকাবেলায় বিজ্ঞানী ও
গবেষকরাই জাতিকে নতুন নতুন পথ দেখাতে পারেন। তবে সবকিছুর আগে প্রয়োজন
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা। আমরা বিশ্বাস করি, বিজ্ঞানমনস্ক
প্রজন্মই পারে প্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ানো কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও
অন্ধত্ব দূর করতে। আমাদের মনে রাখতে হবে, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এ দেশে
সত্যেন বসু ও জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে। অথচ
আধুনিক সময়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও সেখানে তাদের উত্তরসূরি হিসেবে কাউকে না
পাওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া কঠিন। এজন্য বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রে শহর ও
গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের মধ্যে সুযোগ-সুবিধাগত যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে,
সেটাকে দূর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতও এগিয়ে
আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞান মেলার মতো আয়োজন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংযোগ
ঘটানো এবং অনুপ্রেরণা জোগাতে নিঃসন্দেহে সহায়কই হবে।
No comments