খুলনা জাতিসংঘ পার্ক- আধুনিকায়নের নামে অনাধুনিকতা
নগরীর জাতিসংঘ শিশু পার্কে প্রধান মেলার উদ্বোধন করেন |
খুলনা
নগরে প্রতিষ্ঠিত 'জাতিসংঘ শিশুপার্ক' আধুনিকায়নের নামে যেভাবে বিপুল
অর্থের নয়ছয় করা হয়েছে, তাতে করে আমাদের পুরনো বাংলা প্রবাদটিই মনে পড়ছে_
ভিক্ষা চাই না, কুকুর সামলাও। রোববার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত
প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রায় সোয়া একর আয়তনের ওই পার্কে ৪টি দোলনা ও
৪টি স্লিপার, চারপাশে ওয়াকওয়ে ও বেঞ্চ, দুটি গেট তৈরি এবং পুরনো ছাতা ও
সীমানা প্রাচীরে রঙ লাগিয়েই প্রায় ৪০ লাখ টাকার 'আধুনিকায়ন' প্রক্রিয়া
সম্পন্ন হয়েছে। অথচ খুলনার নাগরিক সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল
পার্কটিতে শিশুদের জন্য খেলাধুলার উপকরণ সংযোজন এবং বিনোদনের জন্য নির্মল
পরিবেশ তৈরি করার। কিন্তু আধুনিকায়নের নামে পার্কটির বরং শ্রীহানি হয়েছে।
আগে যেভাবে স্লিপার ও দোলনা চারটি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা ছিল, তা ছিল অনেক বেশি
নিরাপদ ও বৈজ্ঞানিক। এখন এক স্থানে চারটি দোলনা ও স্লিপার তৈরি কেবল
দৃষ্টিকটু নয়, ঝুঁকিপূর্ণও। পার্কের মধ্যে প্রাকৃতিক ছায়া তৈরির জন্য বৃক্ষ
রোপণও জরুরি; কিন্তু সমকালে প্রকাশিত আলোকচিত্রে দেখা যাচ্ছে, বৃক্ষহীন
পার্কে কেবল ওয়াকওয়েগুলো মুখব্যাদান করে পড়ে রয়েছে। তাহলে কিসের আধুনিকায়ন
হয়েছে? এর চেয়ে পুরনো পার্কই এক অর্থে ভালো ছিল। তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়
হলো কিসের জন্য? আমরা আশঙ্কা করি, পার্ক আধুনিকায়নের নামে আসলে ঠিকাদারের
সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কারও কারও যোগসাজশে বরাদ্দ অর্থের ব্যাপক নয়ছয় হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, তদারকির দায়িত্বে থাকা খোদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পার্কের কাজের
মান নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং এজন্য নির্মাণ কাজের বিল আটকে দিতে মেয়রকে
চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু তাতে করে 'আধুনিকায়ন' প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ গত
মাসের গোড়ার দিকে তুলে নিতে ঠিকাদারের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাই,
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবিলম্বে খতিয়ে দেখুক। মন্দের ভালো হিসেবে এখনও
যেহেতু খুলনা সিটি করপোরেশন পার্কটি বুঝে নেয়নি, এখনও ব্যবস্থা নেওয়ার
সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও সংশ্লিষ্টরা বিনা
জবাবদিহিতে পার পেতে পারে না। আমরা দেখতে চাই, রাষ্ট্রীয় অর্থের
সদ্ব্যবহার তথা পার্কটির যথার্থ আধুনিকায়ন হয়েছে। জনগণের টাকায় কোনো
ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পকেট ভারী হয়নি।
খুলনার জাতিসংঘ শিশু পার্ককে মেলা প্রাঙ্গণ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন
২০ আগস্ট বুধবার :
জাতিসংঘ শিশু পার্কের শ্রেণী পরিবর্তন করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের
সিন্ধান্তে কোনভাবে মেলা প্রাঙ্গণ করতে দেওয়া যাবে না। শিশুদের পার্ক
শিশুদের ফিরিয়ে দিতে হবে। নগরীর শিশু পার্কগুলোর বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে
হবে। মেলা প্রাঙ্গণ খুলনাবাসীর প্রয়োজন তবে সেটি কোনভাবেই জনবহুল এলাকায়
নয়। জাতিসংঘ শিশু পার্কটি আধুনিক করে শিশুদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার দুপুরে জনউদ্যোগ, নাগরিক ফোরাম, বেলা, অপরাজেয়
বাংলাদেশ,পরিবর্তন-খুলনা, বাপা, সিসিডি, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী,
ছায়াবৃক্ষ, সোনালী দিন প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন, পোল্ট্রি ফিস ফিড শিল্প মালিক
সমিতি, আলীজ একাডেমী, জাতীয় কবি নজরুল গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে জাতিসংঘ
শিশু পার্কের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানববন্ধন
চলাকালে সংক্ষিপ্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন জনউদ্যোগের আহবায়ক এ্যাডভোকেট
কুদরত-ই-খুদা। সভা পরিচালনা করেন জনউদ্যোগের সদস্য সচিব মহেন্দ্র নাথ সেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহানগর সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য
নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু,
মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুল কাইয়ুম, কৃষকলীগ নেতা শ্যামল সিংহ রায়, জাসদ নেতা
রফিকুল হক খোকন, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মফিদুল ইসলাম, ন্যাপ নেতা তপন
রায়, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুন্সি মাহাবুব আলম সোহাগ,
নারী নেত্রী শামীমা সুলতানা শীলু, সিলভী হারুণ, যুবলীগ নেতা সালাম ঢালী,
যুবসংহতির নেতা সাইফুল ইসলাম পলাশ, লেবার পার্টির নেতা আলহাজ্ব লোকমান
হাকিম, জেপি নেতা শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন,
আমাদের নগরীতে শিশুদের জন্য কোন বিনোদন কেন্দ্র নেই। যাও আছে তাও শিশুদের
খেলার উপযোগী নয়। গোলকমনি শিশু পার্ক, শের-এ-বাংলা রোডস্থ মিনি শিশু পার্ক ,
সোনাডাঙ্গাস্থ মিনি শিশু পার্ক, নিরালা রোডস্থ শিশু পার্ক ,খালিশপুর
রোডস্থ শিশু পার্ক ,খুলনা লেডিস পার্ক আজ শ্রেণী পরিবর্তনের দারপ্রান্তে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কেসিসি নির্বাচনে সকল মেয়র প্রার্থী তার নির্বচনী
অঙ্গিকারে আধুনিক শিশু পার্ক তৈরীর অঙ্গিকার করলেও আজ তা বেমালুম ভুলতে
বসেছে। তারা বলেন, ১৯৯৪ সালে গড়ে ওঠে মহানগরী শিশু পার্ক। ১৯৯৫ সালে
জাতিসংঘের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানকে খুলনাতে স্মরণীয় করে রাখতে এই
পার্কের নতুন নামকরণ করা হয় ‘জাতিসংঘ পার্ক’। পার্কটির মধ্যে শিশুদের
খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন ধরণের রাইডারসহ ভ্রমণকারীদের জন্য বিভিন্ন রকম
সাজ-সজ্জ্বায় বসার স্থান তৈরী করা হলেও বর্তমানে সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে
সেগুলো অপরিচ্ছন্ন ও ভঙ্গুর হয়ে গেছে। উপরন্ত পার্কটির পূর্বপার্শ্বের
জায়গা দিনে দিনে বেদখল হয়ে গড়ে উঠেছে ধর্মীয় উপাসনালয়, তৈরী হয়েছে পীরের
মাজার, বহুতল বিশিষ্ট আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার, সিটি কর্পোরেশনের পানি
উত্তোলনের পাম্প হাউজ। এই আইনবিরোধী কর্মকান্ডে পার্কটি হারাচ্ছে তার
সৌন্দর্য , প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য।
No comments