মানুষ শান্তি চায় by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
বাংলাদেশের
রাজনৈতিক সংকট নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকেই চিন্তিত ও বিচলিত। বিচলিত হওয়ারই
কথা। কেননা একটি দেশ এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশে বিগত দিনে যা কিছু
অর্জিত হয়েছে, তা এদেশের সাধারণ মানুষের অতি কষ্টের ফসল। স্রেফ রাজনৈতিক
কারণে এই ফসল ধ্বংস হতে পারে না এবং হতে দেয়া যায়ও না। এসব দিক বিবেচনা
করেই হয়তো দেশী-বিদেশী মহল উদ্যোগী হয়েছে এবং পরামর্শ দিচ্ছে বিরোধ মিটিয়ে
ফেলতে। তাদের এ পরামর্শকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট।
এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্যদের
পরামর্শের প্রয়োজন নেই, আমাদের সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রীর কথারও নিশ্চয়ই যুক্তি আছে। কারণ নিজেদের সমস্যা নিজেরা
সমাধান করাই সম্মানের। তাতে আমাদের মাথা আরও উঁচু হবে, বহির্বিশ্বে আমাদের
ভাবমর্যাদাও উজ্জ্বল হবে, সর্বোপরি একটি সভ্য জাতি হিসেবে আমরা বিবেচিত
হব।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার দায়িত্ব রাজনীতিকদের, বিশেষ করে যারা চালকের আসনে আছেন তাদের। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে সেটা রাজনীতিকদের ভুল ও গোঁয়ার্তুমির কারণেই হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত হল সংলাপ-সমঝোতা ও পরমতসহিষ্ণুতা, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃশ্যমান হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। ফলে এখানে যে কোনো অপশক্তির উদ্ভব ঘটার সমূহ আশংকা রয়েছে। আশংকা রয়েছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার। এমনটি হলে এর প্রথম শিকার হবেন রাজনীতিকরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা, যেমনটি হয়েছিল এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে। অতএব রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই- সতর্ক হোন, দ্রুত সংলাপে বসুন, রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করুন, মানুষকে শান্তিতে রাখুন, সর্বোপরি দেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন।
১৯৯১ সালে দেশে নতুন করে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নতি হয়ে এসেছে। এর সুফল ভোগ করছে বর্তমান সরকারও। দেশে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে প্রায় ১ কোটি মানুষের। হাজার হাজার কোটি ডলার আসছে রেমিটেন্স ও রফতানি আয় হিসেবে, যা অধিক জনসংখ্যার, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। যারা মানুষ নিয়ে ভাবেন, রাজনীতি করেন বা নেতৃত্ব দেন, এখান থেকে তাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছিলেন, রফতানি আয়ের দিক থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় চীনের পরেই স্থান হবে বাংলাদেশের। এর জন্য তিনি শিক্ষা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন। কিন্তু দেশে বর্তমানে চলছে গভীর রাজনৈতিক সংকট। শুধু তাই নয়, এটা এক দীর্ঘমেয়াদি সংকটে রূপ নিচ্ছে। একে অপরকে ধ্বংস করার মতো বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলো। এতে অতীতের সব অর্জন ধূলিসাৎ হওয়ার পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে।
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে হরতাল ও অবরোধ। মরছে মানুষ, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, রসাতলে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প ও কৃষি উৎপাদন। ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ১৬ কোটি মানুষের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে একটা ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার সমূহ আশংকা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে দেশী-বিদেশী মহল সংকট সমাধানে তাদের হাত প্রসারিত করেছে, মূল্যবান পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু শাসক দল তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না। প্রশ্ন হল, তাহলে সরকার কী চায়? বিরোধী পক্ষকে একেবারে নির্মূল করে রাজত্ব করতে? এটি কি সম্ভব? বিরোধী শক্তিটি কি নেহায়েত জনসমর্থনহীন?
বলতে দ্বিধা নেই, গণতান্ত্রিক শাসনের একটি সংকটময় সময় এখন অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। এই সংকট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। দেশে এক অশান্ত ও বেদনাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে বড় দুই দলের মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মানুষ মনে করছে। উগ্র কোনো শক্তির উত্থান ঘটলে দেশের জন্য যেমন হুমকি, হুমকি গণতন্ত্রের জন্যও, সর্বোপরি হুমকি উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্যও। কাজেই দেশ ও মানুষের কথা ভাবলে বড় দুই রাজনৈতিক শক্তিকে এক জায়গায় আসতে হবে এবং সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
রাজনীতিতে অশুভ শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। খোদ রাজনীতিকদের জন্যই তা ক্ষতিকর হবে, আগে তারাই এর শিকার হবেন। রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। রাজনৈতিক সংকট দূর করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। নইলে দেশে রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা হবে না। এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে, আইনশৃংখলা বাহিনীর তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে যারা প্রাণ হারাচ্ছেন, তারা সাধারণ মানুষ। তাদেরই ঘামঝরা পরিশ্রমে অর্জিত হচ্ছে রফতানি আয় ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। অথচ দুর্ভাগ্যজনক, তারাই আজ রাজনীতিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে! প্রতিদিন তাদের ক্ষতবিক্ষত ও আগুনে পোড়া লাশ দেখতে হচ্ছে আমাদের! কী নির্মম হয়ে গেছি আমরা! হায়রে দেশ, হায়রে রাজনীতি। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ। এই জনগণকে হত্যা করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা আদৌ কি সম্ভব? বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। এখন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের শান্তি রক্ষার্থে উল্টো বিদেশ থেকে মানুষ আনতে হবে। তাহলে আমরা যাচ্ছি কোথায়, আমাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমরাই যদি আমাদের প্রতিপক্ষ হই, তাহলে ব্রিটিশ বা পাকিস্তানিরা আমাদের কী ক্ষতি করেছিল? পরিস্থিতিটা এমন ভয়াবহ এক জায়গায় গিয়ে উপনীত হচ্ছে যে, আমাকে না মারলে আপনি বাঁচতে পারবেন না বা আপনাকে না মারলে আমিও বাঁচতে পারব না। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতি কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনে না। অনৈক্যের রাজনীতি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক অন্তরায়। বিভাজনের রাজনীতির কারণে অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ, নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠছে না, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ সংকুচিত হচ্ছে। কাজেই দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিভক্তির রাজনীতির অবসান হওয়া জরুরি।
অন্য সব দাবি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিরোধী দলের নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তার দাবি নিরেট গণতান্ত্রিক দাবি। এ দাবির প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন রয়েছে। মানুষ চায় সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে নীরব। তাই মানুষের শংকা দূর হচ্ছে না। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী চাইলে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই হতে পারে। এটা তার একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার মাত্র। বাংলাদেশের মানুষ তাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, শান্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন এটিই মানুষ চায়। এর ব্যত্যয় ঘটানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
belayet-1@yahoo.com
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার দায়িত্ব রাজনীতিকদের, বিশেষ করে যারা চালকের আসনে আছেন তাদের। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে সেটা রাজনীতিকদের ভুল ও গোঁয়ার্তুমির কারণেই হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার অন্যতম পূর্বশর্ত হল সংলাপ-সমঝোতা ও পরমতসহিষ্ণুতা, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে দৃশ্যমান হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। ফলে এখানে যে কোনো অপশক্তির উদ্ভব ঘটার সমূহ আশংকা রয়েছে। আশংকা রয়েছে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার। এমনটি হলে এর প্রথম শিকার হবেন রাজনীতিকরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা, যেমনটি হয়েছিল এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে। অতএব রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই- সতর্ক হোন, দ্রুত সংলাপে বসুন, রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করুন, মানুষকে শান্তিতে রাখুন, সর্বোপরি দেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন।
১৯৯১ সালে দেশে নতুন করে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। সেই থেকে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নতি হয়ে এসেছে। এর সুফল ভোগ করছে বর্তমান সরকারও। দেশে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। রফতানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে প্রায় ১ কোটি মানুষের। হাজার হাজার কোটি ডলার আসছে রেমিটেন্স ও রফতানি আয় হিসেবে, যা অধিক জনসংখ্যার, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। যারা মানুষ নিয়ে ভাবেন, রাজনীতি করেন বা নেতৃত্ব দেন, এখান থেকে তাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছিলেন, রফতানি আয়ের দিক থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় চীনের পরেই স্থান হবে বাংলাদেশের। এর জন্য তিনি শিক্ষা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন। কিন্তু দেশে বর্তমানে চলছে গভীর রাজনৈতিক সংকট। শুধু তাই নয়, এটা এক দীর্ঘমেয়াদি সংকটে রূপ নিচ্ছে। একে অপরকে ধ্বংস করার মতো বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলো। এতে অতীতের সব অর্জন ধূলিসাৎ হওয়ার পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে।
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে হরতাল ও অবরোধ। মরছে মানুষ, ধ্বংস হচ্ছে সম্পদ, রসাতলে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প ও কৃষি উৎপাদন। ভেঙে পড়ার উপক্রম হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ১৬ কোটি মানুষের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এ দেশে একটা ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার সমূহ আশংকা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে দেশী-বিদেশী মহল সংকট সমাধানে তাদের হাত প্রসারিত করেছে, মূল্যবান পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু শাসক দল তাতে কোনো কর্ণপাত করছে না। প্রশ্ন হল, তাহলে সরকার কী চায়? বিরোধী পক্ষকে একেবারে নির্মূল করে রাজত্ব করতে? এটি কি সম্ভব? বিরোধী শক্তিটি কি নেহায়েত জনসমর্থনহীন?
বলতে দ্বিধা নেই, গণতান্ত্রিক শাসনের একটি সংকটময় সময় এখন অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। এই সংকট এখন প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। দেশে এক অশান্ত ও বেদনাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে বড় দুই দলের মধ্যে ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মানুষ মনে করছে। উগ্র কোনো শক্তির উত্থান ঘটলে দেশের জন্য যেমন হুমকি, হুমকি গণতন্ত্রের জন্যও, সর্বোপরি হুমকি উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্যও। কাজেই দেশ ও মানুষের কথা ভাবলে বড় দুই রাজনৈতিক শক্তিকে এক জায়গায় আসতে হবে এবং সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।
রাজনীতিতে অশুভ শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। খোদ রাজনীতিকদের জন্যই তা ক্ষতিকর হবে, আগে তারাই এর শিকার হবেন। রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। রাজনৈতিক সংকট দূর করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। নইলে দেশে রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা হবে না। এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে, আইনশৃংখলা বাহিনীর তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে যারা প্রাণ হারাচ্ছেন, তারা সাধারণ মানুষ। তাদেরই ঘামঝরা পরিশ্রমে অর্জিত হচ্ছে রফতানি আয় ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। অথচ দুর্ভাগ্যজনক, তারাই আজ রাজনীতিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে! প্রতিদিন তাদের ক্ষতবিক্ষত ও আগুনে পোড়া লাশ দেখতে হচ্ছে আমাদের! কী নির্মম হয়ে গেছি আমরা! হায়রে দেশ, হায়রে রাজনীতি। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, রাষ্ট্রের ভিত্তিও জনগণ। এই জনগণকে হত্যা করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা আদৌ কি সম্ভব? বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখছে। এখন মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের শান্তি রক্ষার্থে উল্টো বিদেশ থেকে মানুষ আনতে হবে। তাহলে আমরা যাচ্ছি কোথায়, আমাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমরাই যদি আমাদের প্রতিপক্ষ হই, তাহলে ব্রিটিশ বা পাকিস্তানিরা আমাদের কী ক্ষতি করেছিল? পরিস্থিতিটা এমন ভয়াবহ এক জায়গায় গিয়ে উপনীত হচ্ছে যে, আমাকে না মারলে আপনি বাঁচতে পারবেন না বা আপনাকে না মারলে আমিও বাঁচতে পারব না। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। নইলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতি কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনে না। অনৈক্যের রাজনীতি অর্থনীতির জন্য মারাত্মক অন্তরায়। বিভাজনের রাজনীতির কারণে অর্থনীতি মুখথুবড়ে পড়ছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ, নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠছে না, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ সংকুচিত হচ্ছে। কাজেই দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিভক্তির রাজনীতির অবসান হওয়া জরুরি।
অন্য সব দাবি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিরোধী দলের নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তার দাবি নিরেট গণতান্ত্রিক দাবি। এ দাবির প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন রয়েছে। মানুষ চায় সব দলের অংশগ্রহণে আগামীতে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে নীরব। তাই মানুষের শংকা দূর হচ্ছে না। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী চাইলে দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই হতে পারে। এটা তার একটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার মাত্র। বাংলাদেশের মানুষ তাকে অনেক কিছুই দিয়েছে। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, শান্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন এটিই মানুষ চায়। এর ব্যত্যয় ঘটানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
belayet-1@yahoo.com
No comments