পাগলার বাঁধ অপসারণ- মুক্তপ্রবাহের বিকল্প নেই
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রবাহিত বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন নদী পাগলায় চারটি স্থানে ইজারাদারদের দেওয়া মাটির আড়াআড়ি বাঁধ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অপসারণের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশ উপজেলার বহলাবাড়ী ঘাট, ফকিরপাড়া ঘাট, মহদীপুর ঘাট ও তর্তিপুর ঘাটে আড়াআড়ি নির্মিত মাটির বাঁধ চারটি রোববার দুপুরে ভেঙে ফেলে। সারাদেশে যখন নদ-নদীগুলো নির্বিচার দখল-দূষণের শিকার হয়ে চলছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নদীমুক্ত করার উদ্যোগ নিষ্ফল প্রমাণ হচ্ছে, তখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। এতে করে তাৎক্ষণিকভাবে ওই নদী-তীরবর্তী তিন হাজার বিঘা বোরো ক্ষেতে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাঁধ চারটির কারণে নদীটি বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছিল। এখন স্বল্পমাত্রায় হলেও প্রবাহ ফিরে এসেছে। আমরা পাগলায় প্রবাহের প্রত্যাবর্তনকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করি। এটা ঠিক নদীটি প্রবহমান থাকার সঙ্গে এর মৎস্যসম্পদের পরিচালন ও প্রজনন প্রক্রিয়া জড়িত। পাগলা নদী মহানন্দা হয়ে পদ্মায় পতিত হওয়ায় ওই অঞ্চলের প্রতিবেশ ব্যবস্থাতেও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পাগলা দেশের আর দশটি নদীর মতো নয়। মনে রাখা জরুরি, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের প্রশ্ন জড়িত। দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা পেতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রচারণা ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা বলছি, অভিন্ন নদীগুলোর উজানে ভারতের পক্ষ থেকে নির্মিত বাঁধসহ নানা ধরনের স্থাপনা বাংলাদেশের সম্মতিসাপেক্ষে আন্তর্জাতিক আইন ও রেওয়াজ মেনে হতে হবে। বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখাও চলবে না। কিন্তু একই ধরনের স্থাপনা_ ছোট-বড়, মাটির-কংক্রিটের_ যদি আমরা ভাটিতেও তৈরি করি, তাহলে আমাদের ন্যায্য দাবির নৈতিক ভিত্তি নড়বড়ে হয় বৈকি। পাগলা নদীর বাঁধ চারটি অপসারণ কেবল শিবগঞ্জের কৃষি, মৎস্যসম্পদ, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হয়নি; আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
No comments