সমরশক্তি বাড়াচ্ছে চীনের প্রতিবেশীরা
এশিয়ার
ড্রাগন বলে পরিচিত চীনের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী মোকাবেলায় সমরশক্তি
বৃদ্ধি করছে তার প্রতিবেশীরা। চীনের নিকটবর্তী এসব দেশ সামরিক বাহিনীর
আধুনিকায়ন করতে নতুন নতুন যুদ্ধবিমান, ডুবোজাহাজ ও অন্যান্য অস্ত্রপাতি
ক্রয় করছে। দূর ভবিষ্যতে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি
পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিরক্ষা খাত ঢেলে সাজানোই এই সমর সম্ভারের
উদ্দেশ্য। এদিকে প্রতিবেশীদের তৎপরতায় শীতল প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে চীন।
এশিয়ায় দেশটির আধিপত্য বজায় রাখতে বেইজিং শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণে
আগ্রহী। গত বছরের নভেম্বরে বেইজিং সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
নাটকীয়ভাবে এই মৈত্রীসূচক সম্পর্কের ঘোষণা দেন। সেবারই জিনপিংয়ের সঙ্গে
মুখোমুখি বৈঠক হয় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের। ২০১২ সালে আবে ক্ষমতায়
আসার পর এই প্রথম জিনপিংয়ের মিলিত হন। শি জিনপিং সহযোগিতামূলক সম্পর্কের
আহ্বান জানিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর উন্নয়নের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের
ঘোষণা দেন। চীনের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে এসব দেশে বন্দর নির্মাণসহ
অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থ দানের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
অথচ এর মাত্র ছয় মাস আগেও বিরোধপূর্ণ দ্বীপে ভিয়েতনামের সঙ্গে নৌ সংঘাতে জড়িয়েছিল চীন। তারও কয়েক মাস পর ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যরা সপ্তাহব্যাপী কুস্তাকুস্তি চালিয়েছে।
সম্প্রতি ভিয়েতনাম তার নৌশক্তি বাড়াতে রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি ডুবোজাহাজের তিনটি ঘরে এনেছে। ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এসব ডুবোজাহাজ কিনছে দেশটিÑ যা তার ইতিহাসে নজিরবিহীন। এছাড়া মস্কোর কাছে আরও ছয়টি রণতরীর অর্ডার দিয়েছে। পরিকল্পনা সুখোই ফাইটার জেটের সংখ্যা ৩৬-এ উন্নীত করার। ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিগুয়েন থি থাই বলেন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে চীনকে ঠেকানোর উদ্দেশ্য নেই। এটা আমাদের স্বাভাবিক ক্রিয়া। তবে ফিলিপিন্সের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ২০১২ সালের চীনের শারবোরাহ দ্বীপ দখলের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘চীনের বিশাল সামরিক বহরের তুলনায় আমাদের সাধ্যানুযায়ী ন্যূনতম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’ জানুয়ারিতে ম্যানিলা সফর করে ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের ঐক্য শক্তিশালীর কথা বলেছেন। ফিলিপিন্স সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে ৪১ কোটি ডলারের ১২টি যুদ্ধবিমান কিনেছে। পার্শ্ববর্তী মালয়েশিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে ২২০ কোটি ডলারের ডুবোজাহাজ কিনেছে।
এদিকে সামরিকভাবে উন্নত ভারত ও জাপান চীনকে মোকাবেলায় নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। ভারত তার হিমালয় সন্নিহিত সীমান্ত রক্ষায় পাহাড়ি সেনাদল প্রতিষ্ঠা করছে। গেল জানুয়ারিতে চীনে আঘাত হানতে সক্ষম এমন পরমাণুবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। পাশাপাশি নয়াদিল্লি এবার তার প্রতিরক্ষা বাজেট ৭.৯ শতাংশ বাড়িয়েছে। আর জাপান পূর্বচীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে তার প্রথম উচ্চাভিলাষী অপারেশন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার পথে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরে টোকিও তার প্রতিরক্ষা বাজেট ২ শতাংশ বৃদ্ধি করছে।
অন্যদিকে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দহরম মহরম বাড়িয়ে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বেইজিংয়ের হুমকি মোকাবেলা ও মার্কিন অস্ত্র ব্যবসার ব্যাপক সুযোগ হিসেবে দেখছে পেন্টাগন। টোকিওকে সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর করে মোদির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেছেন। আবার ভিয়েতনামের কাছে গোয়েন্দা বিমান বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে হ্যানয়ের ওপর থেকে ওয়াশিংটন দীর্ঘকালের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
কিন্তু চীন এসব তৎপরতা একেবারেই পাত্তা দিচ্ছে না। দক্ষিণ চীন সাগরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দেশটি। প্রতিবেশীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিরোধপূর্ণ জলসীমানায় নতুন ঘাঁটি নির্মাণ করছে বেইজিং। তবে বিশ্লেষকদের মতে, চীনকে এ অঞ্চলে সমঝোতা করেই চলতে হবে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, এপি।
অস্ত্র কেনার সাম্প্রতিক খতিয়ান
ভারত
১২৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান (ফ্রান্স)
২২টি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার (যুক্তরাষ্ট্র)
৮টি পি-৮১ পসেইডন সামুদ্রিক নজরদারি বিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
ইন্দোনেশিয়া
৩টি চাং বোগো ডুবোজাহাজ (দ. কোরিয়া)
২৪টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
১৬টি সুখোই সু-২৭/সু-৩০ বিমান (রাশিয়া)
৮টি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার (যুক্তরাষ্ট্র)
জাপান
৪টি হেলিকপ্টারবাহী বিমান (নিজস্ব)
৪২টি এফ-৩৫ লাইটিং টু স্টিলথ যুদ্ধবিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
১৭টি ভি-২২ অসপ্রে টিল্ট রোটর বিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
মালয়েশিয়া
২টি স্কোরপেন ডুবোজাহাজ (ফ্রান্স)
৬টি গোবিন্ড রণতরী (ফ্রান্স)
ফিলিপিন্স
১২টি এফএ-৫০ প্রশিক্ষক বিমান (দ. কোরিয়া)
২টি হামিল্টন কাটার (যুক্তরাষ্ট্র)
ভিয়েতনাম
৬টি কিলো ক্লাস ডুবোজাহাজ (রাশিয়া)
৬টি জিপার্ড ক্লাস রণতরী (রাশিয়া)
৩৬টি সুখোই সু-৩০ বিমান (রাশিয়া)
অথচ এর মাত্র ছয় মাস আগেও বিরোধপূর্ণ দ্বীপে ভিয়েতনামের সঙ্গে নৌ সংঘাতে জড়িয়েছিল চীন। তারও কয়েক মাস পর ভারত-চীন সীমান্তে দুই দেশের সৈন্যরা সপ্তাহব্যাপী কুস্তাকুস্তি চালিয়েছে।
সম্প্রতি ভিয়েতনাম তার নৌশক্তি বাড়াতে রাশিয়ার কাছ থেকে ছয়টি ডুবোজাহাজের তিনটি ঘরে এনেছে। ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এসব ডুবোজাহাজ কিনছে দেশটিÑ যা তার ইতিহাসে নজিরবিহীন। এছাড়া মস্কোর কাছে আরও ছয়টি রণতরীর অর্ডার দিয়েছে। পরিকল্পনা সুখোই ফাইটার জেটের সংখ্যা ৩৬-এ উন্নীত করার। ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিগুয়েন থি থাই বলেন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে চীনকে ঠেকানোর উদ্দেশ্য নেই। এটা আমাদের স্বাভাবিক ক্রিয়া। তবে ফিলিপিন্সের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ২০১২ সালের চীনের শারবোরাহ দ্বীপ দখলের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘চীনের বিশাল সামরিক বহরের তুলনায় আমাদের সাধ্যানুযায়ী ন্যূনতম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।’ জানুয়ারিতে ম্যানিলা সফর করে ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা ইস্যুতে দুই দেশের ঐক্য শক্তিশালীর কথা বলেছেন। ফিলিপিন্স সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে ৪১ কোটি ডলারের ১২টি যুদ্ধবিমান কিনেছে। পার্শ্ববর্তী মালয়েশিয়া ফ্রান্সের কাছ থেকে ২২০ কোটি ডলারের ডুবোজাহাজ কিনেছে।
এদিকে সামরিকভাবে উন্নত ভারত ও জাপান চীনকে মোকাবেলায় নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। ভারত তার হিমালয় সন্নিহিত সীমান্ত রক্ষায় পাহাড়ি সেনাদল প্রতিষ্ঠা করছে। গেল জানুয়ারিতে চীনে আঘাত হানতে সক্ষম এমন পরমাণুবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। পাশাপাশি নয়াদিল্লি এবার তার প্রতিরক্ষা বাজেট ৭.৯ শতাংশ বাড়িয়েছে। আর জাপান পূর্বচীন সাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে তার প্রথম উচ্চাভিলাষী অপারেশন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার পথে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরে টোকিও তার প্রতিরক্ষা বাজেট ২ শতাংশ বৃদ্ধি করছে।
অন্যদিকে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দহরম মহরম বাড়িয়ে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বেইজিংয়ের হুমকি মোকাবেলা ও মার্কিন অস্ত্র ব্যবসার ব্যাপক সুযোগ হিসেবে দেখছে পেন্টাগন। টোকিওকে সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফর করে মোদির সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করেছেন। আবার ভিয়েতনামের কাছে গোয়েন্দা বিমান বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে হ্যানয়ের ওপর থেকে ওয়াশিংটন দীর্ঘকালের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
কিন্তু চীন এসব তৎপরতা একেবারেই পাত্তা দিচ্ছে না। দক্ষিণ চীন সাগরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দেশটি। প্রতিবেশীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বিরোধপূর্ণ জলসীমানায় নতুন ঘাঁটি নির্মাণ করছে বেইজিং। তবে বিশ্লেষকদের মতে, চীনকে এ অঞ্চলে সমঝোতা করেই চলতে হবে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, এপি।
অস্ত্র কেনার সাম্প্রতিক খতিয়ান
ভারত
১২৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান (ফ্রান্স)
২২টি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার (যুক্তরাষ্ট্র)
৮টি পি-৮১ পসেইডন সামুদ্রিক নজরদারি বিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
ইন্দোনেশিয়া
৩টি চাং বোগো ডুবোজাহাজ (দ. কোরিয়া)
২৪টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
১৬টি সুখোই সু-২৭/সু-৩০ বিমান (রাশিয়া)
৮টি এএইচ-৬৪ই অ্যাপাচি হেলিকপ্টার (যুক্তরাষ্ট্র)
জাপান
৪টি হেলিকপ্টারবাহী বিমান (নিজস্ব)
৪২টি এফ-৩৫ লাইটিং টু স্টিলথ যুদ্ধবিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
১৭টি ভি-২২ অসপ্রে টিল্ট রোটর বিমান (যুক্তরাষ্ট্র)
মালয়েশিয়া
২টি স্কোরপেন ডুবোজাহাজ (ফ্রান্স)
৬টি গোবিন্ড রণতরী (ফ্রান্স)
ফিলিপিন্স
১২টি এফএ-৫০ প্রশিক্ষক বিমান (দ. কোরিয়া)
২টি হামিল্টন কাটার (যুক্তরাষ্ট্র)
ভিয়েতনাম
৬টি কিলো ক্লাস ডুবোজাহাজ (রাশিয়া)
৬টি জিপার্ড ক্লাস রণতরী (রাশিয়া)
৩৬টি সুখোই সু-৩০ বিমান (রাশিয়া)
No comments