কনে বাজার
বুলগেরিয়ার
স্টারা জাগোরা শহরের ‘কনে বাজার’ বা ‘ব্রাইড মার্কেট’। স্থানীয় তরুণীরা
পরিবারসহ এখানে সমবেত হয়। আর তরুণ ও তাদের পরিবার উন্মুক্ত এ কনে বাজার
থেকে বেছে নেন ভবিষ্যৎ বধূ। বছরে ৪ বার বসে এ বাজার। স্থানীয় রোমানি
সম্প্রদায়ের মধ্যে এ সংস্কৃতি চলে আসছে কয়েক প্রজন্ম ধরে। ব্যতিক্রমী এ
সংস্কৃতির ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে বৃটেনের ডেইলি মেইলে সচিত্র প্রতিবেদনে।
উন্মুক্ত স্থানে আয়োজন করা হয় বাজারটি। সেখানে উপস্থিত হয় অসংখ্য রোমান
তরুণী। এতে যোগ দেয়া পরিবারগুলো ‘কালাইদঝি’ নামে পরিচিত এক সম্প্রদায়ের।
ঐতিহ্যগতভাবে তারা তাম্রকার। দরিদ্রপীড়িত এসব পরিবার পারস্পরিক মঙ্গলজনক এক
বিয়ের সম্বন্ধ গড়ে তুলতে কনে বাজারে হাজির হন। তরুণীরা আকর্ষণীয় সাজে
এখানে উপস্থিত হয়। সম্ভাব্য সেরা বর আকর্ষণ করতে চটকদার পোশাক আর অলঙ্কার
পরেন তারা। তাদের চারপাশে জড়ো হয় তরুণদের পরিবার। ভাল মূল্যের বিনিময়ে বধূ
নির্বাচন করাটা তাদের প্রত্যাশা। বসন্ত আর গ্রীষ্মে বিভিন্ন ধর্মীয় ছুটির
দিনগুলোতে বছরে চারবার কনে বাজারের আয়োজন করা হয়। কালাইদঝি সম্প্রদায়ের
বেশির ভাগ ধর্মপ্রাণ গোড়া খ্রিস্টান। তাদের সংস্কৃতি অত্যন্ত রক্ষণশীল।
তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা করার সুযোগ নেই। বিয়ের এ বাজার ব্যতীত
ছেলেমেয়েদের শুধু ইন্টারনেট চ্যাটে কথাবার্তা হয়ে থাকে। মেয়েদের ১৫ বছর হতে
না হতেই বা তারও আগে স্কুল থেকে সরিয়ে নেন তারা। বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েরা
যেন সীমালঙ্ঘন না করে সে জন্য সচেষ্ট প্রতিটি পরিবার। কনে বাজারে এসব
ছেলেমেয়েদের সুযোগ হয় একে অপরের সঙ্গে কথা বলার। হাসি-ঠাট্টা করার।
উৎসবমুখর পরিবেশে পাশাপাশি নাচারও সুযোগ পায় তারা। শুরুতে ছেলে আর মেয়েদের
দল পৃথক ভাবে নাচা শুরু করে। মাঝে মধ্যে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলায় তারা।
অনতিদূরেই তাদের পরিচিত পর্ব প্রত্যক্ষ করেন পিতা-মাতারা। কোন তরুণ-তরুণী
যদি একে অপরকে পছন্দ করেন তাহলে পরিবারের মধ্যে শুরু হয় আর্থিক লেনদেনের
সমঝোতা প্রক্রিয়া। এখানে তরুণের পরিবার তরুণীর পরিবারকে অর্থ দিয়ে থাকে।
দুই পরিবারের পিতা-মাতাদের মধ্যে সমঝোতা হলেই তবে বিয়ে সম্পন্ন হয়। কখনও
কখনও আর্থিক সমঝোতা প্রক্রিয়া চলে কয়েক মাস ধরে। কনেদের মূল্য হয়ে থাকে
আনুমানিক ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত। বুলগেরিয়ার
বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সঙ্কীর্ণ হয়ে
পড়েছে। ফলে কমে এসেছে বিয়ে-পণের পরিমাণ। একইভাবে বিয়ে উৎসব আয়োজন হয়ে পড়েছে
অপেক্ষাকৃত অনাড়ম্বর। তারপরও অনেক বেশি সুন্দরী তরুণীদের জন্য এখনও
তরুণদের পরিবারগুলো বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত থাকে। এ রীতির
সূত্রপাত কয়েক প্রজন্ম আগে। এক সময় এ আয়োজন করা হতো ছোট্ট একটি গ্রামের
ঘোড়া কেনাবেচা বাজারের নিকটে কর্দমাক্ত উন্মুক্ত মাঠে। তখন হবু কনে মঞ্চে
দাঁড়িয়ে থাকতো। আর তাকে বউ হিসেবে পাওয়ার জন্য পুরুষদের প্রতিযোগিতায়
অবতীর্ণ হতে হতো। গত বছর, ঘোড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঝামেলা এড়ানোর জন্য পুলিশ
এ আয়োজনকে শহরে সরিয়ে নিয়ে এসেছে।
No comments