জামায়াতে মতবিরোধ by রাজীব আহাম্মদ
চলমান সহিংসতা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের উদারপন্থিরা আন্দোলনের নামে সহিংসতা-নাশকতা চালানোর তীব্র বিরোধী। তাদের মূল্যায়ন, এতে দেশে-বিদেশে দলের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে জামায়াত। এ ছাড়া সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের জীবন সংশয়ে পড়েছে।
তবে কট্টরপন্থিরা এখনও সহিংসতার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজছেন। যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন নামে দল গঠনের প্রশ্নেও উদারপন্থি ও কট্টরপন্থি দুই শিবিরে বিভক্ত জামায়াত। উদারপন্থিদের দলে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উদারপন্থিরা বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জোটের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিমত, বিএনপির মতো জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে আত্মপরিচয় গুলিয়ে ফেলছে জামায়াত। জামায়াত তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। উদারপন্থিদের মতে, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জামায়াত বেশিদূর এগোতে পারবে না। জনসমর্থন পাবে না। গত শুক্রবার অনলাইনে প্রকাশিত 'জামায়াতের সংকট কোথায়?' শিরোনামে একটি প্রবন্ধেও এসব কথা বলা হয়েছে। এই লেখাটি এখন নেতাকর্মীদের হাতে হাতে। দলের অভ্যন্তরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, লেখাটি দলের উদারপন্থি অংশের এক নেতা লিখেছেন। তবে সেখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি। ছাত্রশিবিরের সাবেক কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও বর্তমানে জামায়াত নেতা শিকদার মাহমুদুল হাসান সমকালকে জানান, 'দলটি নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের কেউ একজন লিখেছেন। লেখাটিতে নেতাকর্মীদের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।' লেখাটিতে জামায়াতের মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের দুর্দশা তুলে ধরা হয়। 'বন্দুকযুদ্ধ' এবং ধরপাকড়ে বিপর্যস্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চিত্র এতে উঠে এসেছে।
দলের উদারপন্থিদের অভিমত, এত 'জুলুম-নির্যাতনের' পরও জামায়াতের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি নেই। এর একমাত্র কারণ সাধারণ মানুষ নাশকতা-সহিংসতা পছন্দ করে না। বিদেশেও ব্যাপক সমালোচিত জামায়াত। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।
প্রবন্ধে জামায়াতের দুর্দশার জন্য কট্টরপন্থি নেতৃত্বকে দায়ী করে বলা হয়, '...দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে, কট্টরপন্থি শীর্ষ নেতাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। অবশ্য কট্টরপন্থি নেতারা মনে করেন, ভুল সিদ্ধান্ত তারা কোনো দিন নেন না। কারণ স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত হয়ে তারা দল পরিচালনা করেন।'
জামায়াত নেতা মাহমুদুল হাসান সমকালকে বলেন, ত্যাগের মানসিকতা থেকেই কর্মীরা জামায়াতভুক্ত হন। কিন্তু ইসলামের সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক নেই এমন বিষয়ে ত্যাগ স্বীকারের যৌক্তিকতা নেই। জানমালের অপচয় মাত্র। জামায়াতের চিন্তাশীল অংশের সদস্য ও শিবিরের সাবেক এক সভাপতি সমকালকে বলেন, 'যারা জামায়াত করেন তারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকে জানমাল কোরবানি করেন। কিন্তু যখন রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া এবং কয়েকজন ব্যক্তির মুক্তির আন্দোলনে জুলুম সহ্য করতে হয় তখন তা নিয়ে প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক।'
জামায়াত সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জামায়াতের ভরাডুবি হয়। এরপর ২০১০ সালের ৯ জুন নির্বাচনে ভরাডুবির পর্যালোচনা করে একটি সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশে উদারপন্থিরা বলেছিলেন, জামায়াত ইমেজ সংকটে ভুগছে। নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে সামনে রেখে উত্থান হওয়া এই নেতারা দল রক্ষায় নয়টি সুপারিশ তুলে ধরেন। যার একটিও গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়িত হয়নি।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে এমন নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে এতে বলা হয়েছিল, '...মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় জামায়াতের প্রথম সারির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা থাকায় সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয়ভিত্তিক ইমেজ তৈরি তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপারে একটি বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় জামায়াতের রাজনৈতিক ইমেজ পুনরুদ্ধার বা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত কঠিন।'
দলের উদারপন্থি নেতারাই স্বীকার করেন, জামায়াতের পরিবেশ রেজিমেন্টেড। তাই ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন উদারপন্থি ব্যক্তিরা দলে প্রবেশ করতে পারেন না। জামায়াতের বাইরে যেসব সৎ ও দক্ষ লোক রয়েছেন, তারা যে কোনো পর্যায়ে জামায়াতে যোগ দিতে উৎসাহবোধ করেন না। জামায়াত নতুন প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনার আলোকে নিজেদের উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল জামায়াতের অভ্যন্তরে। তারা নতুন নামে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রশ্নমুক্ত দল গঠনের পক্ষপাতী।
তবে কট্টরপন্থিরা এখনও সহিংসতার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজছেন। যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন নামে দল গঠনের প্রশ্নেও উদারপন্থি ও কট্টরপন্থি দুই শিবিরে বিভক্ত জামায়াত। উদারপন্থিদের দলে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উদারপন্থিরা বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জোটের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিমত, বিএনপির মতো জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে আত্মপরিচয় গুলিয়ে ফেলছে জামায়াত। জামায়াত তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। উদারপন্থিদের মতে, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জামায়াত বেশিদূর এগোতে পারবে না। জনসমর্থন পাবে না। গত শুক্রবার অনলাইনে প্রকাশিত 'জামায়াতের সংকট কোথায়?' শিরোনামে একটি প্রবন্ধেও এসব কথা বলা হয়েছে। এই লেখাটি এখন নেতাকর্মীদের হাতে হাতে। দলের অভ্যন্তরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, লেখাটি দলের উদারপন্থি অংশের এক নেতা লিখেছেন। তবে সেখানে নাম উল্লেখ করা হয়নি। ছাত্রশিবিরের সাবেক কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও বর্তমানে জামায়াত নেতা শিকদার মাহমুদুল হাসান সমকালকে জানান, 'দলটি নিয়ে যারা ভাবেন, তাদের কেউ একজন লিখেছেন। লেখাটিতে নেতাকর্মীদের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।' লেখাটিতে জামায়াতের মাঠপর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের দুর্দশা তুলে ধরা হয়। 'বন্দুকযুদ্ধ' এবং ধরপাকড়ে বিপর্যস্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চিত্র এতে উঠে এসেছে।
দলের উদারপন্থিদের অভিমত, এত 'জুলুম-নির্যাতনের' পরও জামায়াতের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি নেই। এর একমাত্র কারণ সাধারণ মানুষ নাশকতা-সহিংসতা পছন্দ করে না। বিদেশেও ব্যাপক সমালোচিত জামায়াত। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে। জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে।
প্রবন্ধে জামায়াতের দুর্দশার জন্য কট্টরপন্থি নেতৃত্বকে দায়ী করে বলা হয়, '...দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে, কট্টরপন্থি শীর্ষ নেতাদের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তৃণমূল থেকে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। অবশ্য কট্টরপন্থি নেতারা মনে করেন, ভুল সিদ্ধান্ত তারা কোনো দিন নেন না। কারণ স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত হয়ে তারা দল পরিচালনা করেন।'
জামায়াত নেতা মাহমুদুল হাসান সমকালকে বলেন, ত্যাগের মানসিকতা থেকেই কর্মীরা জামায়াতভুক্ত হন। কিন্তু ইসলামের সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক নেই এমন বিষয়ে ত্যাগ স্বীকারের যৌক্তিকতা নেই। জানমালের অপচয় মাত্র। জামায়াতের চিন্তাশীল অংশের সদস্য ও শিবিরের সাবেক এক সভাপতি সমকালকে বলেন, 'যারা জামায়াত করেন তারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকে জানমাল কোরবানি করেন। কিন্তু যখন রাজনৈতিক দাবি-দাওয়া এবং কয়েকজন ব্যক্তির মুক্তির আন্দোলনে জুলুম সহ্য করতে হয় তখন তা নিয়ে প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক।'
জামায়াত সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জামায়াতের ভরাডুবি হয়। এরপর ২০১০ সালের ৯ জুন নির্বাচনে ভরাডুবির পর্যালোচনা করে একটি সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশে উদারপন্থিরা বলেছিলেন, জামায়াত ইমেজ সংকটে ভুগছে। নির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে সামনে রেখে উত্থান হওয়া এই নেতারা দল রক্ষায় নয়টি সুপারিশ তুলে ধরেন। যার একটিও গত পাঁচ বছরে বাস্তবায়িত হয়নি।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে এমন নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করে এতে বলা হয়েছিল, '...মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় জামায়াতের প্রথম সারির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা থাকায় সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয়ভিত্তিক ইমেজ তৈরি তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপারে একটি বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় জামায়াতের রাজনৈতিক ইমেজ পুনরুদ্ধার বা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত কঠিন।'
দলের উদারপন্থি নেতারাই স্বীকার করেন, জামায়াতের পরিবেশ রেজিমেন্টেড। তাই ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন উদারপন্থি ব্যক্তিরা দলে প্রবেশ করতে পারেন না। জামায়াতের বাইরে যেসব সৎ ও দক্ষ লোক রয়েছেন, তারা যে কোনো পর্যায়ে জামায়াতে যোগ দিতে উৎসাহবোধ করেন না। জামায়াত নতুন প্রজন্মের চিন্তা-ভাবনার আলোকে নিজেদের উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল জামায়াতের অভ্যন্তরে। তারা নতুন নামে গণতান্ত্রিক ধারায় প্রশ্নমুক্ত দল গঠনের পক্ষপাতী।
No comments