২০১৪-তে কেডিএ’র ১৮ প্রকল্প
নানা
জটিলতায় কাজে গতি পাচ্ছে না খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এর চলতি
প্রকল্পগুলো। চলমান অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল উত্তীর্ণ হলেও কাজে
দৃশ্যমান তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। অপরদিকে নগরীকে ঢেলে সাজাতে এবং নওয়াপাড়া ও
মংলার উন্নয়নে ২৭টি বিভিন্ন ভবিষ্যৎ প্রকল্প গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর
মধ্যে ২০১৪ সালেই গ্রহণ করা হয়েছে অন্তত ১৮টি প্রকল্প। কেডিএ কর্মকর্তারা
বলছেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ও জমি বুঝে পেতে বিলম্ব এবং আদালতের
নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্দিষ্ট মেয়াদে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়
না। তবে বাস্তবায়নকাল উত্তীর্ণ হলেও প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়ে থাকে।
কেডিএ সূত্র জানায়, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে স্ব স্ব অর্থভুক্ত ১৬ কোটি
৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয়ে কেডিএ’র বর্ধিত ভবন নির্মাণ, ১০ কোটি ৬ লাখ
টাকা ব্যয়ে নিরালা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, ১২৫ কোটি ১১
লাখ টাকা ব্যয়ে আহসানাবাদ আবাসিক এলাকার উন্নয়ন, ৫ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার
টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল আর্কাইভ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার নির্মাণ এবং ৪
কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে রেস্ট হাউজ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে
কেডিএ। অনুমোদিত এসব প্রকল্প ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়নে সময়
নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি প্রকল্প কেডিএর বর্ধিত ভবন নির্মাণ ও
নিরালা আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ ২০১৪ সালের মধ্যে শেষ
হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়নকাল উত্তীর্ণ হলেও প্রকল্প দুটির কাজে
দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। এছাড়া সরকারি অর্থে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক
প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজের কেবলমাত্র ভূমি হুকুম দখল কার্যক্রম চলছে।
সরকারি অর্থভুক্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে আরও সাতটি প্রকল্প। প্রকল্পগুলো
হলো, ৫৩২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বারাকপুর থেকে চন্দনীমহল পর্যন্ত ২১.২০
কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, ১০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল
সিভিক সেন্টার নির্মাণ, খালিশপুর নতুন রাস্তার মোড়ে ১.৪৪ একর জায়গায় ৩তলা
বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণ (যার মধ্যে অডিটোরিয়াম, ওয়াচ টাওয়ার হল, জিমনেশিয়াম,
ক্লাব, সুভেনির শপ সংবলিত সামাজিক ও বিনোদন কেন্দ্র), ২৬৬ কোটি ১২ লাখ
টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা সড়ক হতে সিটি বাইপাস সড়ক পর্যন্ত তিনটি সংযোগ সড়ক
নির্মাণ (সড়কগুলো হলো নিরালা হতে সিটি বাইপাস পর্যন্ত ২.৫ কিলোমিটার,
গল্লামারী থেকে রায়েরমহল পর্যন্ত ৪.৬ কিলোমিটার ও বাস্তুহারা থেকে আড়ংঘাটা
পর্যন্ত ২.৭ কিলোমিটার সড়ক), ২২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শিরোমণি শিল্প
এলাকার সড়কসমূহ পুনর্নির্মাণ, ১৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর
ফুলবাড়িগেট রেল ক্রসিংয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ও সময় বাঁচাতে ৪৫০ মিটার
দৈর্ঘ্যের একটি ওভারপাস নির্মাণ, ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রূপসা নদীর
পূর্ব তীরে শিল্প নগরী স্থাপনের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও মংলায় রিংরোড
নির্মাণ প্রকল্প। অননুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৮ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা
ব্যয়ে কেডিএ ওয়াটার ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও ১৮ কোটি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে
কেডিএ কলেজ ভবন নির্মাণ। প্রকল্পগুলো আগামী ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে
বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া মহানগরীকে ঢেলে সাজাতে এবং
নওয়াপাড়া ও মংলার উন্নয়নে ২০১৪ সালে ১৮টি বিভিন্ন ভবিষ্যৎ প্রকল্প গ্রহণ
করে কেডিএ। ভবিষ্যৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে
নওয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন অবস্থান সড়ক নির্মাণ, ২০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপসা
নদীর দুই পাড়ে ব্রিজ-টানেলসহ বাঁধ তথা সড়ক ও নদী-তীরবর্তী পার্ক নির্মাণ,
১৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মংলা হতে খানজাহান আলী সেতু পর্যন্ত ব্রিজ,
কালভার্টসহ পুকুর-নদীর পাড় বরাবর সড়ক নির্মাণ, ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নাগরিক
সুবিধা উন্নয়ন প্রকল্প, ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা-সাতক্ষীরা রোড এবং রূপসা
ব্রিজ এপ্রোচ রোড সংযোগস্থলে সিটি সেন্টার উন্নয়ন, ৮৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে
নিকলাপুর হতে তিলক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নিমাণ, ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফাইভ
স্টার হোটেল নির্মাণ, ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভৈরব নদীর অপর পাড়ে নব শহরের
জন্য রাস্তার নেটওয়ার্ক নির্মাণ, ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নওয়াপাড়া, রূপসা ও
মংলায় স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণ, ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেডিএ
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, ২০০ কোটি টাকা
ব্যয়ে খুলনা শহরের অভ্যন্তরে সড়ক প্রস্তুতকরণ, ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রায়ের
মহল-কৈয়া বাজার সড়ক ও খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যে বিভিন্ন সংযোগ সড়ক
নির্মাণ, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে টেক্সটাইল মিলের পরিত্যক্ত জমিতে আইটি
ভিলেজ-পার্ক নির্মাণ, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খোলাবাড়িয়া এলাকায় রোড নেটওয়ার্ক
নির্মাণ, ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফুলতলা এলাকায় বিভিন্ন অবস্থানে সংযোগ সড়ক
নির্মাণ, ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেডিএ নিউ মার্কেট পুনর্নির্মাণ এবং ৩০২ কোটি
টাকা ব্যয়ে নওয়াপাড়া বাইপাস সড়ক নির্মাণ। এ প্রকল্পগুলো ২০১৪ সাল থেকে
আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। কেডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী
মোরতুজা আল মামুন জানান, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ও জমি বুঝে পেতে বিলম্ব
হওয়ায় নির্দিষ্ট মেয়াদে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। কেডিএ’র
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. সাবিরুল আলম জানান, ২০১৪ সালে নতুন ১৮টি
প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি প্রকল্পের মধ্যে নিরালা আবাসিক এলাকায়
বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেডিএ
বর্ধিত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের মন্ত্রাণালয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। এ
দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল বাড়ানো হবে। এছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ
চলছে। তবে নানাবিধ কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা
সম্ভব হয় না।
No comments