কূটনীতি পূর্বমুখী পশ্চিমে টানাপড়েন by মিজানুর রহমান
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh0kUJ0VsTK8RPoi93z8uU1rwcRJSIJj-H5ffUYvwjBzCa7HU7jcSff94V7KBkunVH3tUc4eaXHisCCzNi3Xk0ie25plgKYVQkLihwHtYNLl7RO6yTm98BWNA6nFypMdMkxLJyDXR_ZqrOc/s1600/kut.jpg)
বিদায়ী
বছরে নানা ঘটনায় সরগরম ছিল কূটনৈতিক অঙ্গন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে
আগের বছর থেকেই বৈশ্বিক চাপে ছিল বাংলাদেশ। ওই নির্র্বাচনে সব দলের
অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দূতিয়ালি
করেছেন জাতিসংঘ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। কিন্তু কোন চেষ্টাই
কাজে আসেনি। বিরোধী জোটকে বাইরে রেখেই দশম সংসদ নির্বাচন হয়েছে। ১৫৩ আসনে
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বাকি আসনগুলোতে নামমাত্র প্রতিযোগিতায়
নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা হারায়। নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপান এবং পরবর্তী
নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়ে সরকারের
রোষানলে পড়েছিলেন বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই
বিসওয়াল। তাকে ‘দুই আনার মন্ত্রী’ বলে তাচ্ছিল্য করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতকেও কটাক্ষ করেন তিনি। মন্ত্রীর
তির্যক মন্তব্য নিয়ে চলা সমালোচনার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র
সম্পর্কে তার মনোভাব জানান। বলেন, ‘৫ই জানুয়ারির নির্বাচন তারা বন্ধ করতে
চেয়েছিল। পদ্মা সেতুতে তারা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। ৭১ সালে
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু
বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র পাশে না থাকলে আমরা মরে যাবো না।’
সরকারপ্রধানের এ বক্তব্যে বাংলাদেশের পরিবর্তিত কূটনীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
তিন সপ্তাহ অপেক্ষার পরও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান
মজিনার বিদায়ী সাক্ষাৎ না হওয়ায় এটি আরও খোলাসা হয়। তবে বছরের শেষ সময়ের ওই
ঘটনাগুলো ছাড়া বরাবরই ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশী উদ্বেগ
নিরসনের প্রয়াস ছিল সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে। পেশাদার কূটনীতিক,
দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব- সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়েছেন, কিন্তু
কাঙিক্ষত ফল আসেনি। বছরজুড়েই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয়
ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগীদের তরফে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ
সৃষ্টিতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সংলাপের তাগিদ অব্যাহত ছিল।
অঘোষিত ‘পূর্বমুখী কূটনীতি’: একতরফাভাবে দশম সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন এক কূটনীতির পথে পা বাড়ায়। ওই নির্বাচনে ভারতসহ পূর্বের কয়েকটি দেশের সমর্থনের বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। নতুন সরকার সেটি ধরেই পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। বছরের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফর এবং ১০ দিনের মাথায় তার বেইজিং সফর এতে নতুন মাত্রা যোগ করে। দু’টি দেশ থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহযোগিতার অঙ্গীকার আদায় করেন তিনি। তার সফরের চার মাসের মাথায় ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। আর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করেন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কেবল চীন, জাপান নয়- রাশিয়ার সঙ্গেও হৃদ্যতা বাড়ায় সরকার। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে তাদের সহযোগিতায়। দেশটি থেকে অস্ত্র কেনাসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রম চলছে গত সরকারের আমল থেকে। বিদায়ী বছরের মাঝামাঝিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালীর মিলানে আসেম শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে ওই বৈঠক হয়। সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে পুতিন। পূর্বের দেশ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঢাকায় আনে সরকার। ৫ই জানুয়ারির পর এটি ছিল কোন সরকার প্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। অবশ্য ডিসেম্বরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেও ঢাকা সফর করেন।
শীর্ষ বৈঠক-ফটোসেশন বিতর্ক: কূটনৈতিক অঙ্গনে বিগত বছরে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি বৈঠক আলোচনায় ছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃথক বৈঠক এবং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক ছিল সবচেয়ে আলোচিত। বৈঠকগুলোর সূত্রে প্রকাশিত বক্তব্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। বৈঠকের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন জানান, বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সংলাপের ব্যাপারে সরকারের কোন কার্পণ্য নেই; তবে তা হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে। কেউ যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে সংলাপ হবে কিভাবে? জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশের দূত। এটি গণমাধ্যমে আসার পর জাতিসংঘ মহাসচিব খুব দ্রুত নিজ অবস্থান পরিষ্কার করেন। বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে খোলাসা করা হয়। বলা হয়, মহাসচিব বাংলাদেশের সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওই বৈঠকের ঠিক এক মাসের মাথায় গত জুলাইয়ে গার্ল সামিটে অংশ নিতে লন্ডন সফরে যান শেখ হাসিনা। সেখানে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানান ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইলেকশন ইজ ওভার। ইট ইজ পাস্ট। নাউ উই লুক টু দ্য ফিউচার। কিন্তু একই দিনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বিপরীত বক্তব্য দেন। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মুখপাত্র অলস্টার ক্যাম্পবেল জানান, ৫ই জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ডেভিড ক্যামেরন হতাশা প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ক্যামেরন এ হতাশা প্রকাশ করেন। ওই বৈঠকে বাল্যবিয়ে রোধ, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন, উন্নয়ন লক্ষ্য ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিষয়ে কথা বলেন ক্যামেরন। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার বৈঠকের খবর মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার পায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল নাকি ফটোসেশন? এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সরকারের প্রতিনিধিরা এটিকে ‘বৈঠক’ বললেও জাতিসংঘ মুখপাত্র ভিন্নমত পোষণ করেন। সংস্থার এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলবিষয়ক মুখপাত্র ম্যাথিয়াস লিন্ডারম্যান ও মহাসচিবের ডেপুটি স্পোকসপার্সন ফারহান হক লিখিত পৃথক বার্তায় এটাকে ‘সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ’ ও ‘ফটো অপরচুনিটি’ বলে আখ্যায়িত করেন। এটি যে বৈঠক ছিল না তা জাতিসংঘ মুখপাত্র স্পষ্ট করেন। অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দ্বিতীয় দফা বিতর্কের সৃষ্টি করে নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। ওই সফরে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠকের বিষয়টিও আলোচনায় ছিল। বছরের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফর হলেও ভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বছরের শেষার্ধে দ্বিতীয় দফায় দেশ দু’টি সফরের আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র চার দিন আগে অসুস্থতার কারণে এটি বাতিল করা হয়। শেষ মুহূর্তে সফর বাতিলের কারণে বিরাট অঙ্কের রাষ্ট্রীয় অর্থ গচ্চা যায়। হাই প্রফোইল ওই সফর দু’টিও আলোচনায় ছিল। অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে বিরাজমান সমস্যা নিয়ে আলোচনায় দেশটি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে আমিরাতের জাতির মাতা ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে আগাম ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বৈঠক দু’টি না হওয়া এবং শ্রমবাজারের সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ না থাকায় সফরটি নিয়ে সমালোচনা হয়। তবে এই সফরে নিরাপত্তা সহযোগিতা, দণ্ডিত বন্দিবিনিময় এবং ঢাকায় ইউএই দূতাবাস নির্মাণে জমি হস্তান্তর বিষয়ক পৃথক তিন চুক্তি সই হয়েছে। নভেম্বরে সার্কের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী নেপাল যান। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হয়। এ কারণে নেপাল সফরটিও আলোচনায় ছিল। সেখান থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরে যান। এই সফরে দেশটির একটি প্রদেশে জনশক্তি রপ্তানি, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, পর্যটন খাতে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে চারটি চুক্তি সই হয়।
ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার প্রসঙ্গ: বছরের শুরুর চার মাস ভারতে নির্বাচনী ডামাডোল ছিল। সে সময় দিল্লির মসনদে কে আসছেন? সেই পর্যবেক্ষণে ছিল বাংলাদেশ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেত্বাধীন সরকারের সঙ্গে মোদি সরকারের সম্পর্ক কি হয়- তা নিয়েই ছিল বিস্তর আলোচনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তার প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকায় আসেন। আর ক্ষমতার ৬ মাসের মধ্যে মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার দু’দফা বৈঠক হয়। কিন্তু এখনও সম্পর্কের বিষয়টি পুরোপুরি খোলসা করেনি দিল্লি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুরুর কয়েক মাস ঢাকার প্রতিনিধিরা দিল্লি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলেও এখন দিল্লি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অবশ্য এই সময়ে ’৭৪ সাল থেকে ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিস্তার বিষয়টি এখনও আগের তিমিরেই রয়ে গেছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া ছাড়াও ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের আসামি নূর হোসেন ভারতের পালিয়ে যাওয়া, পরে আটক, এবং বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে চিঠি চালচালি ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল বিগত বছরে। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল বছরজুড়ে। দেশটির ঢাকাস্থ দূতকে তলব করে এর কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। কেবল তাই নয়, দেশটির ঢাকাস্থ দূতবাস ঘেরাও এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের দাবিও তুলে গণজাগরণ মঞ্চ। টানাপড়েনের ওই সময়ে পাকিস্তানের একটি সস্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। অবশ্য ঊভয় সরকার নিজ নিজ দেশে নিরাপত্তা জোরদার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে হতাহত বা গুলিবিনিময়ের ঘটনা খুব একটি ঘটে না। কিন্তু গত বছরে দু’টোই ঘটেছে। বিজিবির নায়েক মিজানকে নির্মমভাবে হত্যা এবং লাশ ফেরত না নেয়ায় পরিস্থিতির অবণতি ঘটে। ওই ঘটনাকে ঘিরে ঢাকা-নেপিড’র সম্পর্কে টানাপড়েনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
আলোচিত-সমালোচিত সব ঘটনা: গেল বছরে বিদেশ থেকে কূটনীতিক ফেরত আনার ঘটনা ছিল আলোচিত। বিভিন্ন অভিযোগে লেবানন থেকে রাষ্ট্রদূত গাউসল আযম ও গ্রিস থেকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইসরাইলের কূটনৈতিককে আমন্ত্রণ করায় ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজকে তলব করা হয়। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলকে কর্মচারীকে ন্যায্য পাওনা না দেয়ার অভিযোগে ফেডারেল কোর্টে মামলার মুখোমুখি হতে হয়। কুয়ালালামপুর মিশনে পাসপোর্ট চুরির ঘটনায় খোদ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগে সরকারে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেখানে পাসপোর্ট সঙ্কটের কারণে বছরজুড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে প্রবাসীদের। গত বছর কূটনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদায়ী বছরে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার নির্বাচন ও সমর্থন পেয়ে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়শনের (সিপিএ)-এর চেয়ারপার্সন নির্বাচনে বাংলাদেশের জয় সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। গত বছরে বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন ও ভারতীয় ভিসা সহজের ঘোষণা মিলেছে, পাশাপাশি দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাজ্যের ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত চলে গেছে দিল্লিস্থ বৃটিশ মিশনে।
অঘোষিত ‘পূর্বমুখী কূটনীতি’: একতরফাভাবে দশম সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন এক কূটনীতির পথে পা বাড়ায়। ওই নির্বাচনে ভারতসহ পূর্বের কয়েকটি দেশের সমর্থনের বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। নতুন সরকার সেটি ধরেই পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। বছরের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রীর টোকিও সফর এবং ১০ দিনের মাথায় তার বেইজিং সফর এতে নতুন মাত্রা যোগ করে। দু’টি দেশ থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহযোগিতার অঙ্গীকার আদায় করেন তিনি। তার সফরের চার মাসের মাথায় ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। আর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর করেন ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। কেবল চীন, জাপান নয়- রাশিয়ার সঙ্গেও হৃদ্যতা বাড়ায় সরকার। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে তাদের সহযোগিতায়। দেশটি থেকে অস্ত্র কেনাসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রম চলছে গত সরকারের আমল থেকে। বিদায়ী বছরের মাঝামাঝিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালীর মিলানে আসেম শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে ওই বৈঠক হয়। সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে পুতিন। পূর্বের দেশ কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঢাকায় আনে সরকার। ৫ই জানুয়ারির পর এটি ছিল কোন সরকার প্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। অবশ্য ডিসেম্বরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেও ঢাকা সফর করেন।
শীর্ষ বৈঠক-ফটোসেশন বিতর্ক: কূটনৈতিক অঙ্গনে বিগত বছরে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি বৈঠক আলোচনায় ছিল। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃথক বৈঠক এবং বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক ছিল সবচেয়ে আলোচিত। বৈঠকগুলোর সূত্রে প্রকাশিত বক্তব্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। বৈঠকের পর জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আবদুল মোমেন জানান, বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সংলাপের ব্যাপারে সরকারের কোন কার্পণ্য নেই; তবে তা হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে। কেউ যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে সংলাপ হবে কিভাবে? জাতিসংঘ মহাসচিবও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশের দূত। এটি গণমাধ্যমে আসার পর জাতিসংঘ মহাসচিব খুব দ্রুত নিজ অবস্থান পরিষ্কার করেন। বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে তা জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে খোলাসা করা হয়। বলা হয়, মহাসচিব বাংলাদেশের সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ওই বৈঠকের ঠিক এক মাসের মাথায় গত জুলাইয়ে গার্ল সামিটে অংশ নিতে লন্ডন সফরে যান শেখ হাসিনা। সেখানে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানান ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ইলেকশন ইজ ওভার। ইট ইজ পাস্ট। নাউ উই লুক টু দ্য ফিউচার। কিন্তু একই দিনে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বিপরীত বক্তব্য দেন। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মুখপাত্র অলস্টার ক্যাম্পবেল জানান, ৫ই জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ডেভিড ক্যামেরন হতাশা প্রকাশ করেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ক্যামেরন এ হতাশা প্রকাশ করেন। ওই বৈঠকে বাল্যবিয়ে রোধ, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন, উন্নয়ন লক্ষ্য ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিষয়ে কথা বলেন ক্যামেরন। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার বৈঠকের খবর মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার পায়। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, এটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল নাকি ফটোসেশন? এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সরকারের প্রতিনিধিরা এটিকে ‘বৈঠক’ বললেও জাতিসংঘ মুখপাত্র ভিন্নমত পোষণ করেন। সংস্থার এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলবিষয়ক মুখপাত্র ম্যাথিয়াস লিন্ডারম্যান ও মহাসচিবের ডেপুটি স্পোকসপার্সন ফারহান হক লিখিত পৃথক বার্তায় এটাকে ‘সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ’ ও ‘ফটো অপরচুনিটি’ বলে আখ্যায়িত করেন। এটি যে বৈঠক ছিল না তা জাতিসংঘ মুখপাত্র স্পষ্ট করেন। অবশ্য এ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দ্বিতীয় দফা বিতর্কের সৃষ্টি করে নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন। ওই সফরে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রথম বৈঠকের বিষয়টিও আলোচনায় ছিল। বছরের মাঝামাঝিতে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য ও ইতালি সফর হলেও ভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বছরের শেষার্ধে দ্বিতীয় দফায় দেশ দু’টি সফরের আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র চার দিন আগে অসুস্থতার কারণে এটি বাতিল করা হয়। শেষ মুহূর্তে সফর বাতিলের কারণে বিরাট অঙ্কের রাষ্ট্রীয় অর্থ গচ্চা যায়। হাই প্রফোইল ওই সফর দু’টিও আলোচনায় ছিল। অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে বিরাজমান সমস্যা নিয়ে আলোচনায় দেশটি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে আমিরাতের জাতির মাতা ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে আগাম ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু বৈঠক দু’টি না হওয়া এবং শ্রমবাজারের সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ না থাকায় সফরটি নিয়ে সমালোচনা হয়। তবে এই সফরে নিরাপত্তা সহযোগিতা, দণ্ডিত বন্দিবিনিময় এবং ঢাকায় ইউএই দূতাবাস নির্মাণে জমি হস্তান্তর বিষয়ক পৃথক তিন চুক্তি সই হয়েছে। নভেম্বরে সার্কের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী নেপাল যান। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হয়। এ কারণে নেপাল সফরটিও আলোচনায় ছিল। সেখান থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফরে যান। এই সফরে দেশটির একটি প্রদেশে জনশক্তি রপ্তানি, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, পর্যটন খাতে সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে চারটি চুক্তি সই হয়।
ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার প্রসঙ্গ: বছরের শুরুর চার মাস ভারতে নির্বাচনী ডামাডোল ছিল। সে সময় দিল্লির মসনদে কে আসছেন? সেই পর্যবেক্ষণে ছিল বাংলাদেশ। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেত্বাধীন সরকারের সঙ্গে মোদি সরকারের সম্পর্ক কি হয়- তা নিয়েই ছিল বিস্তর আলোচনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তার প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকায় আসেন। আর ক্ষমতার ৬ মাসের মধ্যে মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার দু’দফা বৈঠক হয়। কিন্তু এখনও সম্পর্কের বিষয়টি পুরোপুরি খোলসা করেনি দিল্লি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুরুর কয়েক মাস ঢাকার প্রতিনিধিরা দিল্লি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলেও এখন দিল্লি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অবশ্য এই সময়ে ’৭৪ সাল থেকে ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিস্তার বিষয়টি এখনও আগের তিমিরেই রয়ে গেছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়া ছাড়াও ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের আসামি নূর হোসেন ভারতের পালিয়ে যাওয়া, পরে আটক, এবং বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণ নিয়ে চিঠি চালচালি ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল বিগত বছরে। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল বছরজুড়ে। দেশটির ঢাকাস্থ দূতকে তলব করে এর কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। কেবল তাই নয়, দেশটির ঢাকাস্থ দূতবাস ঘেরাও এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদের দাবিও তুলে গণজাগরণ মঞ্চ। টানাপড়েনের ওই সময়ে পাকিস্তানের একটি সস্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। অবশ্য ঊভয় সরকার নিজ নিজ দেশে নিরাপত্তা জোরদার করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে হতাহত বা গুলিবিনিময়ের ঘটনা খুব একটি ঘটে না। কিন্তু গত বছরে দু’টোই ঘটেছে। বিজিবির নায়েক মিজানকে নির্মমভাবে হত্যা এবং লাশ ফেরত না নেয়ায় পরিস্থিতির অবণতি ঘটে। ওই ঘটনাকে ঘিরে ঢাকা-নেপিড’র সম্পর্কে টানাপড়েনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
আলোচিত-সমালোচিত সব ঘটনা: গেল বছরে বিদেশ থেকে কূটনীতিক ফেরত আনার ঘটনা ছিল আলোচিত। বিভিন্ন অভিযোগে লেবানন থেকে রাষ্ট্রদূত গাউসল আযম ও গ্রিস থেকে রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইসরাইলের কূটনৈতিককে আমন্ত্রণ করায় ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজকে তলব করা হয়। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলকে কর্মচারীকে ন্যায্য পাওনা না দেয়ার অভিযোগে ফেডারেল কোর্টে মামলার মুখোমুখি হতে হয়। কুয়ালালামপুর মিশনে পাসপোর্ট চুরির ঘটনায় খোদ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগে সরকারে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সেখানে পাসপোর্ট সঙ্কটের কারণে বছরজুড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে প্রবাসীদের। গত বছর কূটনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য পদে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদায়ী বছরে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার নির্বাচন ও সমর্থন পেয়ে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়শনের (সিপিএ)-এর চেয়ারপার্সন নির্বাচনে বাংলাদেশের জয় সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। গত বছরে বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন ও ভারতীয় ভিসা সহজের ঘোষণা মিলেছে, পাশাপাশি দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাজ্যের ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত চলে গেছে দিল্লিস্থ বৃটিশ মিশনে।
No comments