সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ বন্ধ করার সুপারিশ- জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ দলের সংবাদ সম্মেলন
(সুন্দরবনের গোলপাতায় তেলের প্রলেপ পরীক্ষা করে দেখছেন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য গ্যারি সিগিনাকা l ছবি: প্রথম আলো) সুন্দরবনের
ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের
যৌথ বিশেষজ্ঞ দল। সুন্দরবনের পরিবেশকে মহামূল্যবান ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হিসেবে
উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর কিছু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুকূলে
থাকায় এবারের তেল দুর্ঘটনার প্রভাব সীমিত থেকেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবেশগতভাবে এই সংবেদনশীল জায়গার ভেতর দিয়ে তেল ট্যাংকার পরিবহন সুন্দরবনের পরিবেশ ও বনজীবীদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ দলটি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরে। দলটি টানা ছয় দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে জরিপ চালায়। সরেজমিনে তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা পরিদর্শন, এরিয়াল ফটোগ্রাফ, সাক্ষাৎকার, আলোকচিত্র ও নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে তারা।
বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার নৌপথ বন্ধ করবে কি—সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা এ প্রশ্ন করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনকে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য ও সার পরিবহন হয়। আর বন্দরে যাওয়ার আপাতত একটিই পথ, তা হচ্ছে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদী। এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকল্প নৌপথ ঘসিয়াখালী খাল খননের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কেন বাস্তবায়িত হয়নি উল্টো সেই প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন এড়িয়ে আরও অন্য কোনো পথ দিয়ে নৌচলাচল হতে পারে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রর্ম তাঁদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, দুর্ঘটনার স্থান থেকে পেছনে ও সামনে মোট ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নানা মাত্রায় তেলের অস্তিত্ব চোখে পড়েছে। দুর্ঘটনার সময় নদীতে পানি কম থাকায় তা বনের ভেতরে ঢুকে পড়েনি। বন্য প্রাণীর ওপর তেলের প্রভাব সীমিত থেকেছে। তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের জলজ প্রাণীর ওপর দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, এই প্রভাব কতটুকু পড়েছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
তেল ছড়িয়ে পড়ার পরপর বন বিভাগ থেকে শ্যালা নদী দিয়ে নৌচলাচল বন্ধের উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণ তেল উত্তোলনে নেমে পড়ায় সুন্দরবনের ক্ষতি কমে আসে বলে মন্তব্য করেন এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রর্ম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের যথেষ্ট ভালো প্রস্তুতি থাকলেও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং পরিবেশগত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও প্রস্তুতি দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবনের প্রাণী ও উদ্ভিদকণার সংখ্যা অস্বাভাবিক পরিমাণে কমেছে বলে দেখা গেছে। সাংবাদিকেরা এ তথ্য তুলে ধরে এ ব্যাপারে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ জানতে চান। উত্তরে এমিলিয়া বলেন, সুন্দরবনের প্রাণিকণার ধরন নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। ফলে বর্তমানে যা আছে, তার সঙ্গে আগের অবস্থার তুলনা করা যাচ্ছে না।
এ সময় বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক ওই গবেষণাটি করেছেন, তিনি অনেক দিন ধরে সুন্দরবন নিয়ে কাজ করছেন। ফলে তাঁর কাছে আগের অবস্থা ও বর্তমান অবস্থার মধ্যে পার্থক্য করার মতো যথেষ্ট তথ্য থাকতে পারে। ওই গবেষণার ফলাফলকেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আমলে নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজিবুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ জরিপের পাশাপাশি বন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তিন কমিটির প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে সরকার সুন্দরবন রক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদে উদ্যোগ নেবে।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পরিবহন হবে কি না? একজন সাংবাদিক এ প্রশ্ন তুললে মন্ত্রী বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি সরকার হতে দেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ বাংলাদেশ কার্যালয়ের সমন্বয়ক বিউট্রিস ক্যালড্রন বলেন, ‘সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আরও বড় ক্ষতি হতে পারত। তাই যতটুকু প্রভাব পড়েছে সেটাকে আমাদের ওয়েকআপ কল বা “সচেতন হবার ডাক” হিসেবে দেখতে হবে।’ জাতিসংঘ এবং সরকার একসঙ্গে মিলে যে জরিপটি করল, তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আশা করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সুন্দরবন রক্ষায় সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে। কেননা সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয়, এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবেশগতভাবে এই সংবেদনশীল জায়গার ভেতর দিয়ে তেল ট্যাংকার পরিবহন সুন্দরবনের পরিবেশ ও বনজীবীদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ দলটি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরে। দলটি টানা ছয় দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে জরিপ চালায়। সরেজমিনে তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকা পরিদর্শন, এরিয়াল ফটোগ্রাফ, সাক্ষাৎকার, আলোকচিত্র ও নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে তারা।
বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার নৌপথ বন্ধ করবে কি—সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা এ প্রশ্ন করেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনকে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য ও সার পরিবহন হয়। আর বন্দরে যাওয়ার আপাতত একটিই পথ, তা হচ্ছে সুন্দরবনের ভেতরের শ্যালা নদী। এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকল্প নৌপথ ঘসিয়াখালী খাল খননের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কেন বাস্তবায়িত হয়নি উল্টো সেই প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন এড়িয়ে আরও অন্য কোনো পথ দিয়ে নৌচলাচল হতে পারে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রর্ম তাঁদের পর্যবেক্ষণের ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, দুর্ঘটনার স্থান থেকে পেছনে ও সামনে মোট ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নানা মাত্রায় তেলের অস্তিত্ব চোখে পড়েছে। দুর্ঘটনার সময় নদীতে পানি কম থাকায় তা বনের ভেতরে ঢুকে পড়েনি। বন্য প্রাণীর ওপর তেলের প্রভাব সীমিত থেকেছে। তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের জলজ প্রাণীর ওপর দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা করে তিনি বলেন, এই প্রভাব কতটুকু পড়েছে, তা দীর্ঘ মেয়াদে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
তেল ছড়িয়ে পড়ার পরপর বন বিভাগ থেকে শ্যালা নদী দিয়ে নৌচলাচল বন্ধের উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণ তেল উত্তোলনে নেমে পড়ায় সুন্দরবনের ক্ষতি কমে আসে বলে মন্তব্য করেন এমিলিয়া ওয়ালস্ট্রর্ম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের যথেষ্ট ভালো প্রস্তুতি থাকলেও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ এবং পরিবেশগত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আরও প্রস্তুতি দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সুন্দরবনের প্রাণী ও উদ্ভিদকণার সংখ্যা অস্বাভাবিক পরিমাণে কমেছে বলে দেখা গেছে। সাংবাদিকেরা এ তথ্য তুলে ধরে এ ব্যাপারে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ জানতে চান। উত্তরে এমিলিয়া বলেন, সুন্দরবনের প্রাণিকণার ধরন নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। ফলে বর্তমানে যা আছে, তার সঙ্গে আগের অবস্থার তুলনা করা যাচ্ছে না।
এ সময় বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক ওই গবেষণাটি করেছেন, তিনি অনেক দিন ধরে সুন্দরবন নিয়ে কাজ করছেন। ফলে তাঁর কাছে আগের অবস্থা ও বর্তমান অবস্থার মধ্যে পার্থক্য করার মতো যথেষ্ট তথ্য থাকতে পারে। ওই গবেষণার ফলাফলকেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আমলে নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজিবুর রহমান বলেন, সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় জাতিসংঘ ও সরকারের যৌথ জরিপের পাশাপাশি বন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তিন কমিটির প্রতিবেদন মূল্যায়ন করে সরকার সুন্দরবন রক্ষায় দীর্ঘ মেয়াদে উদ্যোগ নেবে।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে পরিবহন হবে কি না? একজন সাংবাদিক এ প্রশ্ন তুললে মন্ত্রী বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি সরকার হতে দেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ বাংলাদেশ কার্যালয়ের সমন্বয়ক বিউট্রিস ক্যালড্রন বলেন, ‘সুন্দরবনে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় আরও বড় ক্ষতি হতে পারত। তাই যতটুকু প্রভাব পড়েছে সেটাকে আমাদের ওয়েকআপ কল বা “সচেতন হবার ডাক” হিসেবে দেখতে হবে।’ জাতিসংঘ এবং সরকার একসঙ্গে মিলে যে জরিপটি করল, তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আশা করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সুন্দরবন রক্ষায় সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে। কেননা সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নয়, এটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।
No comments