দীর্ঘ মেয়াদের প্রভাব নিয়েই দুশ্চিন্তা -সাক্ষাৎকারে : মাইকেল জিকার্ডি by ইফতেখার মাহমুদ
মাইকেল জিকার্ডি |
মাইকেল
জিকার্ডি ওয়েল ওয়াইল্ড লাইফ নেটওয়ার্কের পরিচালক ও জাতিসংঘের বন্য
প্রািণবিষয়ক পরামর্শক। সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনার প্রভাব
মূল্যায়নে আসা জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ছিলেন। গত ২৫ ডিসেম্বর
সুন্দরবনে মূল্যায়ন কার্যক্রমের সময় সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইফতেখার
মাহমুদ
প্রশ্ন: তেল ছড়ানোর পর আপনারা তো সুন্দরবনের অবস্থা দেখছেন। মূল আশঙ্কা কী নিয়ে?
জিকার্ডি: বড় দুশ্চিন্তা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে। তেল ছড়ানোর দুই সপ্তাহ পর আমরা সুন্দরবন ঘুরে দেখলাম। বিভিন্ন আলোকচিত্রে সুন্দরবনের তেল ছড়িয়ে পড়ার যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখেছিলাম, তা এখন আর দেখতে পেলাম না। সেই অর্থে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বড় ভয় খাদ্যচক্রে তেলের প্রভাব পড়ল কি না। ক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রাণী কণাদের ওপরে তেলের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে। তবে তা এখনই দৃশ্যমান হবে না। এ প্রভাব পড়বে দীর্ঘ মেয়াদে। আস্তে আস্তে তা দৃশ্যমান হতে পারে। বনের বাস্তুসংস্থান বা খাদ্যচক্রে কতটুকু প্রভাব পড়ল, তা নিশ্চিত হতে কমপক্ষে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি তো বিশ্বের ৬৫টি তেল দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা কী বলে?
জিকার্ডি: অভিজ্ঞতা বলে, ক্ষতি যতটা না স্বল্প মেয়াদি, তার চেয়ে বেশি দীর্ঘমেয়াদি। অনেক ক্ষেত্রে বনের প্রাণীদের জিনগত বা জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় যে তেল ছড়িয়ে পড়েছিল, তার প্রভাব এখনো দেখা যাচ্ছে। অনেক প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু পরবর্তী ১০-২০ বছর পর দেখা গেছে অনেক প্রাণী ওই এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে। তেল ছড়িয়ে পড়ার পর এ পর্যন্ত আলাস্কা থেকে তিন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশ্বের অন্যতম বিপন্নপ্রায় প্রাণী হারলিকুইন হাস আলাস্কাতে আগে প্রচুর দেখা যেত। এখন এরা সেখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই প্রাণীগুলোর জিনগত সম্পদের যে ক্ষতি হলো, তা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। কেননা এই জিনগত সম্পদ থেকে মানবজাতি হয়তো অনেক বড় ধরনের উপকার পেতে পারত।
প্রশ্ন: সুন্দরবনে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আপনি মনে করেন।
জিকার্ডি: আমি এ পর্যন্ত বিশ্বের যে কটি বনাঞ্চলে তেল নিঃসরণের প্রভাব নিয়ে কাজ করেছি, তার মধ্যে সুন্দরবন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কেননা এখানে আমরা পাঁচ দিন ঘুরেই ১০০টির বেশি প্রজাতির বন্য প্রাণী দেখতে পেয়েছি। এটা আমার জন্য অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। কেননা এত বিপুল তেল শ্বাসমূলীয় বনের মতো সংবেদনশীল জায়গায় ছড়ানোর পর প্রাণীদের অনেক ক্ষতি হয়। হয়তো তেল না ছড়ালে আরও বেশি প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু যা দেখা গেছে তাও কম নয়। মনে হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাণীদের প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি।
প্রশ্ন: প্রাণীদের আচরণে তেল ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রভাব পড়ে কি না?
জিকার্ডি: অবশ্যই প্রভাব পড়ে। এটা বনজীবী এবং বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরাই বেশি বুঝতে পারেন। মেক্সিকো উপসাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার ডলফিনের আচরণ বদলে যায়। অনেক প্রাণী তেল ছড়ানো এলাকা থেকে সরে যায়। ফলে তেল বিপর্যয়ের প্রভাব বহুমুখী ও দীর্ঘস্থায়ী। তাই সুন্দরবনে এর কতটুকু পড়বে, তা দীর্ঘ মেয়াদে তদারকি ও নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। সে অনুযায়ী সরকারকে বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন: সুন্দরবনের বন্য প্রাণীদের রক্ষায় এখন কী করা উচিত?
জিকার্ডি: সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য খুবই স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ। শুধু আমাজন বন ও যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার বনের সঙ্গে এর তুলনা চলে। এমন একটি চমৎকার বন রক্ষা করতে হলে এখানকার প্রাণীদেরও বসতি এলাকা রক্ষা করতে হবে। এদের নির্বিঘ্নে বিচরণের সুযোগ দিতে হবে। কেউ যাতে এদের বিরক্ত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন: তেল ছড়ানোর পর আপনারা তো সুন্দরবনের অবস্থা দেখছেন। মূল আশঙ্কা কী নিয়ে?
জিকার্ডি: বড় দুশ্চিন্তা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে। তেল ছড়ানোর দুই সপ্তাহ পর আমরা সুন্দরবন ঘুরে দেখলাম। বিভিন্ন আলোকচিত্রে সুন্দরবনের তেল ছড়িয়ে পড়ার যে ভয়াবহ চিত্র আমরা দেখেছিলাম, তা এখন আর দেখতে পেলাম না। সেই অর্থে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বড় ভয় খাদ্যচক্রে তেলের প্রভাব পড়ল কি না। ক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রাণী কণাদের ওপরে তেলের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে। তবে তা এখনই দৃশ্যমান হবে না। এ প্রভাব পড়বে দীর্ঘ মেয়াদে। আস্তে আস্তে তা দৃশ্যমান হতে পারে। বনের বাস্তুসংস্থান বা খাদ্যচক্রে কতটুকু প্রভাব পড়ল, তা নিশ্চিত হতে কমপক্ষে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি তো বিশ্বের ৬৫টি তেল দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করেছেন। অভিজ্ঞতা কী বলে?
জিকার্ডি: অভিজ্ঞতা বলে, ক্ষতি যতটা না স্বল্প মেয়াদি, তার চেয়ে বেশি দীর্ঘমেয়াদি। অনেক ক্ষেত্রে বনের প্রাণীদের জিনগত বা জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় যে তেল ছড়িয়ে পড়েছিল, তার প্রভাব এখনো দেখা যাচ্ছে। অনেক প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু পরবর্তী ১০-২০ বছর পর দেখা গেছে অনেক প্রাণী ওই এলাকা থেকে হারিয়ে গেছে। তেল ছড়িয়ে পড়ার পর এ পর্যন্ত আলাস্কা থেকে তিন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশ্বের অন্যতম বিপন্নপ্রায় প্রাণী হারলিকুইন হাস আলাস্কাতে আগে প্রচুর দেখা যেত। এখন এরা সেখান থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই প্রাণীগুলোর জিনগত সম্পদের যে ক্ষতি হলো, তা নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। কেননা এই জিনগত সম্পদ থেকে মানবজাতি হয়তো অনেক বড় ধরনের উপকার পেতে পারত।
প্রশ্ন: সুন্দরবনে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আপনি মনে করেন।
জিকার্ডি: আমি এ পর্যন্ত বিশ্বের যে কটি বনাঞ্চলে তেল নিঃসরণের প্রভাব নিয়ে কাজ করেছি, তার মধ্যে সুন্দরবন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। কেননা এখানে আমরা পাঁচ দিন ঘুরেই ১০০টির বেশি প্রজাতির বন্য প্রাণী দেখতে পেয়েছি। এটা আমার জন্য অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। কেননা এত বিপুল তেল শ্বাসমূলীয় বনের মতো সংবেদনশীল জায়গায় ছড়ানোর পর প্রাণীদের অনেক ক্ষতি হয়। হয়তো তেল না ছড়ালে আরও বেশি প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু যা দেখা গেছে তাও কম নয়। মনে হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাণীদের প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা বেশি।
প্রশ্ন: প্রাণীদের আচরণে তেল ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রভাব পড়ে কি না?
জিকার্ডি: অবশ্যই প্রভাব পড়ে। এটা বনজীবী এবং বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরাই বেশি বুঝতে পারেন। মেক্সিকো উপসাগরে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানকার ডলফিনের আচরণ বদলে যায়। অনেক প্রাণী তেল ছড়ানো এলাকা থেকে সরে যায়। ফলে তেল বিপর্যয়ের প্রভাব বহুমুখী ও দীর্ঘস্থায়ী। তাই সুন্দরবনে এর কতটুকু পড়বে, তা দীর্ঘ মেয়াদে তদারকি ও নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। সে অনুযায়ী সরকারকে বন্য প্রাণী রক্ষায় কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন: সুন্দরবনের বন্য প্রাণীদের রক্ষায় এখন কী করা উচিত?
জিকার্ডি: সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য খুবই স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ। শুধু আমাজন বন ও যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার বনের সঙ্গে এর তুলনা চলে। এমন একটি চমৎকার বন রক্ষা করতে হলে এখানকার প্রাণীদেরও বসতি এলাকা রক্ষা করতে হবে। এদের নির্বিঘ্নে বিচরণের সুযোগ দিতে হবে। কেউ যাতে এদের বিরক্ত না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
No comments