সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্থবহ হয়ে উঠুক নতুন বছর by সৈয়দ আবুল মকসুদ
অনন্ত অসীম মহাকালের এক অণু পরিমাণ অংশ
একটি সৌর বছর। মানবজীবনও সীমিত। সে জন্য ৩৬৫ দিনের একটি বছর তার কাছে
গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বছর তার কাছে উপস্থিত হয় নতুন প্রত্যাশা নিয়ে। সে
চায় বিগত বছরের যদি কোনো গ্লানি থাকে তা মুছে ফেলতে।
বিগত দুটি বছরই ছিল জাতির জীবনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। খ্রিস্টীয় ২০১৩ সালটি ছিল সংঘাতময়। রাজনৈতিক হানাহানিতে বহু প্রাণ ঝরেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর হাতে অনেক জীবন গেছে। অন্যদিকে বহু পুলিশ-আনসারও জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। বিরোধীদলীয় রাজনীতির মূল দাবি ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। ২০১৪ অব্দের প্রথম হপ্তায় এমন একটি নির্বাচন হয় যার সঙ্গে জনগণ ও গণতন্ত্রের কোনো ধরনের সংজ্ঞার কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে গণতন্ত্র থাক বা না থাক, ২০১৪ অব্দটি মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবেই গেছে। সন্ত্রাস ও হানাহানি যা হয়েছে তা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা তারাই করেছেন দখলবাজি, টেন্ডার প্রভৃতি নিয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রধানত তারাই করেছেন। প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে থানা-পুলিশ, কোট-কাছারিতে দৌড়াদৌড়ি করেই বছর কাবার করেছেন। সবচেয়ে বেশি ফৌজদারি মামলা-মোকদ্দমার জন্য ২০১৪ সাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সরকারের লোকদের জন্য বছরটি ছিল খুবই আরামদায়ক ও স্বস্তির।
সাধারণ মানুষের অব্যক্ত আশংকা হল একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। যাদের মধ্যে আকাক্সক্ষা, উদ্দীপনা ও স্বপ্ন নেই, তাদের কাছে কী পুরনো বছর, কী নতুন বছর- সবই সমান। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনে যারা সর্বনিু থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী ও সক্ষম, এমন মানুষের কাছে নববর্ষের তাৎপর্য খুব বেশি। তারা চাইবেন পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে নতুন বছরটি যেন ভালো যায়, পূর্ববর্তী বছরের ভুলভ্রান্তির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
স্বাধীন বাংলাদেশ তার জীবনের ৪৩ বছর অতিক্রম করেছে। এই সময়ে তার অর্জন যেমন সামান্য নয়, তেমনি সুশাসনের অভাবে জাতীয় জীবনের অনেকটা সময়ের অপচয়ও ঘটেছে। সামাজিক অস্থিরতা আজ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সন্ত্রাস, ভাংচুর, দুর্নীতি, অস্থিরতা ও অনৈতিকতার সঙ্গে অধিকাংশ মানুষই যুক্ত নয়; কিন্তু তারা ভুক্তভোগী। তাই নতুন বছরে তাদের প্রত্যাশা- বছরটি হোক শান্তিপূর্ণ।
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ছাড়া কোনো জাতি এগোতে পারে না। হয় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, নয়তো পিছিয়ে যায়। আমাদের শিশু-কিশোরদের মেধার ঘাটতি নেই। তাদের মানসম্মত ও যুগের উপযোগী প্রাথমিক শিক্ষা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যদিও সংখ্যার দিক থেকে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে।
বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে শিক্ষার নামে নির্মম বাণিজ্য ও শোষণ। যার প্রচুর টাকা নেই তার সন্তানের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ভ্রাতৃঘাতী হানাহানিতে রক্তপাত পর্যন্ত ঘটছে। ব্যাহত হচ্ছে জ্ঞানচর্চার স্বাভাবিক পরিবেশ। ফলে মেধাবী জাতি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না।
অল্প শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত যে যুবসমাজকে নিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব, তার একটি বড় অংশ হয় বিভ্রান্ত, নয়তো বিপথগামী অথবা হতাশ। তারা সৃষ্টিশীল কাজে অবদান রাখতে পারছে না। তাদের মনোবল জাগ্রত করতে উৎসাহ দিতে হবে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীনতা। কন্যাশিশু থেকে বয়স্কা নারী কেউই নিরাপদ নয়। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার অগণিত নারী। নারী জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এমনকি গৃহেও আজ তারা নিরাপদ নয়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি কতটা বাড়ল বা কমল তা নিয়েই সরকার খুব চিন্তিত অথবা গর্বিত। সরকার চায় পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে নতুন বছরে জিডিপি আরেকটু বেশি হোক; যদিও জাতীয় জীবনে উন্নয়নের সেটিই একমাত্র মাপকাঠি নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক উন্নয়ন না ঘটলে সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমাজকে স্থিতিশীল করতে পারে না। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়ে অপরাধমুক্ত একটি সুন্দর সমাজ হতে পারে না।
প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত যারা, যাদের শারীরিক শ্রম জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখছে, সেই শিক্ষাবঞ্চিত যুবশক্তিকে একটি দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। তাদের একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠতে পারছে না। অন্যদিকে তাদের মধ্যেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। মাদক থেকে তারা জড়াচ্ছে অপরাধে। অকালে প্রাণশক্তি ক্ষয় করে পৃথিবীকে কিছু না দিয়ে এবং পৃথিবী থেকে কিছু না পেয়ে তারা বিদায় নিচ্ছে। যা শুধু যে ওই ব্যক্তি বা তার পরিবারের জন্য ক্ষতি তাই নয়- জাতির জন্যও ক্ষতি। মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়।
আমাদের সমাজ রাজনীতিপ্রবণ। গণতান্ত্রিক রাজনীতি একটি প্রতিযোগিতার বিষয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মনে করা হয় যেন শত্র“। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার অভাব। সামাজিক অস্থিরতার সেটিও একটি কারণ। বিগত বছরগুলোতে আমরা রাজনৈতিক শত্র“তার নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত দেখেছি। নতুন বছরে চাই সুস্থধারার রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা।
সমাজ ও জাতি রাতারাতি বদলায় না। সমাজ পরিবর্তন সাধনা সাপেক্ষ একটি অতি ধীর প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত শুরু হয়, তত দ্রুত সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এবারের নববর্ষেও আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও সমাজের সমস্যাগুলো শনাক্ত করে তার সমাধান করতে দেশের নেতারা উদ্যোগী হবেন। শিক্ষা গ্রহণ করবেন অতীতের ভুল থেকে।
সমাজ পরিবর্তন শুধু সরকারের কাজ নয়। দেশের উন্নতি বা অধঃপতনের দায় শুধু সরকারের ঘাড়ে চাপানো সমীচীন নয়। সে দায় সব মানুষের। নতুন বছরটি অর্থবহ হয়ে উঠুক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়- এই প্রত্যাশা করি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ : লেখক ও গবেষক
বিগত দুটি বছরই ছিল জাতির জীবনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। খ্রিস্টীয় ২০১৩ সালটি ছিল সংঘাতময়। রাজনৈতিক হানাহানিতে বহু প্রাণ ঝরেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর হাতে অনেক জীবন গেছে। অন্যদিকে বহু পুলিশ-আনসারও জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। বিরোধীদলীয় রাজনীতির মূল দাবি ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সে দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। ২০১৪ অব্দের প্রথম হপ্তায় এমন একটি নির্বাচন হয় যার সঙ্গে জনগণ ও গণতন্ত্রের কোনো ধরনের সংজ্ঞার কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে গণতন্ত্র থাক বা না থাক, ২০১৪ অব্দটি মোটের ওপর শান্তিপূর্ণভাবেই গেছে। সন্ত্রাস ও হানাহানি যা হয়েছে তা সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা তারাই করেছেন দখলবাজি, টেন্ডার প্রভৃতি নিয়ে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রধানত তারাই করেছেন। প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে থানা-পুলিশ, কোট-কাছারিতে দৌড়াদৌড়ি করেই বছর কাবার করেছেন। সবচেয়ে বেশি ফৌজদারি মামলা-মোকদ্দমার জন্য ২০১৪ সাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সরকারের লোকদের জন্য বছরটি ছিল খুবই আরামদায়ক ও স্বস্তির।
সাধারণ মানুষের অব্যক্ত আশংকা হল একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। যাদের মধ্যে আকাক্সক্ষা, উদ্দীপনা ও স্বপ্ন নেই, তাদের কাছে কী পুরনো বছর, কী নতুন বছর- সবই সমান। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনে যারা সর্বনিু থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী ও সক্ষম, এমন মানুষের কাছে নববর্ষের তাৎপর্য খুব বেশি। তারা চাইবেন পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে নতুন বছরটি যেন ভালো যায়, পূর্ববর্তী বছরের ভুলভ্রান্তির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
স্বাধীন বাংলাদেশ তার জীবনের ৪৩ বছর অতিক্রম করেছে। এই সময়ে তার অর্জন যেমন সামান্য নয়, তেমনি সুশাসনের অভাবে জাতীয় জীবনের অনেকটা সময়ের অপচয়ও ঘটেছে। সামাজিক অস্থিরতা আজ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সন্ত্রাস, ভাংচুর, দুর্নীতি, অস্থিরতা ও অনৈতিকতার সঙ্গে অধিকাংশ মানুষই যুক্ত নয়; কিন্তু তারা ভুক্তভোগী। তাই নতুন বছরে তাদের প্রত্যাশা- বছরটি হোক শান্তিপূর্ণ।
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ছাড়া কোনো জাতি এগোতে পারে না। হয় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, নয়তো পিছিয়ে যায়। আমাদের শিশু-কিশোরদের মেধার ঘাটতি নেই। তাদের মানসম্মত ও যুগের উপযোগী প্রাথমিক শিক্ষা দিতে রাষ্ট্র ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যদিও সংখ্যার দিক থেকে প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে।
বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে শিক্ষার নামে নির্মম বাণিজ্য ও শোষণ। যার প্রচুর টাকা নেই তার সন্তানের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ভ্রাতৃঘাতী হানাহানিতে রক্তপাত পর্যন্ত ঘটছে। ব্যাহত হচ্ছে জ্ঞানচর্চার স্বাভাবিক পরিবেশ। ফলে মেধাবী জাতি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হচ্ছে না।
অল্প শিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষিত যে যুবসমাজকে নিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব, তার একটি বড় অংশ হয় বিভ্রান্ত, নয়তো বিপথগামী অথবা হতাশ। তারা সৃষ্টিশীল কাজে অবদান রাখতে পারছে না। তাদের মনোবল জাগ্রত করতে উৎসাহ দিতে হবে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় সমাজে নারীর নিরাপত্তাহীনতা। কন্যাশিশু থেকে বয়স্কা নারী কেউই নিরাপদ নয়। যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার অগণিত নারী। নারী জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এমনকি গৃহেও আজ তারা নিরাপদ নয়।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি কতটা বাড়ল বা কমল তা নিয়েই সরকার খুব চিন্তিত অথবা গর্বিত। সরকার চায় পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে নতুন বছরে জিডিপি আরেকটু বেশি হোক; যদিও জাতীয় জীবনে উন্নয়নের সেটিই একমাত্র মাপকাঠি নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক উন্নয়ন না ঘটলে সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সমাজকে স্থিতিশীল করতে পারে না। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়ে অপরাধমুক্ত একটি সুন্দর সমাজ হতে পারে না।
প্রাথমিক শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত যারা, যাদের শারীরিক শ্রম জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদান রাখছে, সেই শিক্ষাবঞ্চিত যুবশক্তিকে একটি দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা সম্ভব হয়নি। তাদের একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠতে পারছে না। অন্যদিকে তাদের মধ্যেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। মাদক থেকে তারা জড়াচ্ছে অপরাধে। অকালে প্রাণশক্তি ক্ষয় করে পৃথিবীকে কিছু না দিয়ে এবং পৃথিবী থেকে কিছু না পেয়ে তারা বিদায় নিচ্ছে। যা শুধু যে ওই ব্যক্তি বা তার পরিবারের জন্য ক্ষতি তাই নয়- জাতির জন্যও ক্ষতি। মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধ করা সম্ভব নয়।
আমাদের সমাজ রাজনীতিপ্রবণ। গণতান্ত্রিক রাজনীতি একটি প্রতিযোগিতার বিষয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মনে করা হয় যেন শত্র“। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার অভাব। সামাজিক অস্থিরতার সেটিও একটি কারণ। বিগত বছরগুলোতে আমরা রাজনৈতিক শত্র“তার নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত দেখেছি। নতুন বছরে চাই সুস্থধারার রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা।
সমাজ ও জাতি রাতারাতি বদলায় না। সমাজ পরিবর্তন সাধনা সাপেক্ষ একটি অতি ধীর প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত শুরু হয়, তত দ্রুত সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এবারের নববর্ষেও আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও সমাজের সমস্যাগুলো শনাক্ত করে তার সমাধান করতে দেশের নেতারা উদ্যোগী হবেন। শিক্ষা গ্রহণ করবেন অতীতের ভুল থেকে।
সমাজ পরিবর্তন শুধু সরকারের কাজ নয়। দেশের উন্নতি বা অধঃপতনের দায় শুধু সরকারের ঘাড়ে চাপানো সমীচীন নয়। সে দায় সব মানুষের। নতুন বছরটি অর্থবহ হয়ে উঠুক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়- এই প্রত্যাশা করি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ : লেখক ও গবেষক
No comments