হঠাৎ আনন্দ মাটি, পুড়ে গেল মুখ by কমল জোহা খান
(ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রাবেয়া। ছবি: সাজিদ হোসেন) মামার
বিয়েতে আনন্দে মেতে ছিল শিশু রাবেয়া। গতকাল বুধবার রাতে ছিল গায়েহলুদ।
হইহল্লা আনন্দে ভরপুর বিয়েবাড়ি। জেনারেটরের বিদ্যুতে চারদিক ঝলমল। হঠাৎ
কী হলো, থেমে গেল জেনারেটর, নিভে গেল সব আলো। তারপর রাবেয়ার বুকফাটা
চিৎকার—মুখটা পুড়ে যাচ্ছে তার। গতকাল বুধবার রাত ১২টার দিকে শরীয়তপুরের
ভেদরগঞ্জ উপজেলার সরকারকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া
দাহ্যপদার্থে মুখমণ্ডল পুড়ে গেছে রাবেয়ার। সে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছে আর ছটফট করছে যন্ত্রণায়। হামলার
মূল লক্ষ্য রাবেয়ার মামা সেলিম সরকার। তাঁকেই মূলত দাহ্যপদার্থ ছুড়ে মারে
দুর্বৃত্তরা। এ সময় রাবেয়াসহ আরও তিনজন আক্রান্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বাকি তিনজনকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তাঁরা হলেন শাহিনা আক্তার (২২), তোহরা বেগম (১৭) ও চার বছরের শিশু সিয়াম।
আজ দুপুরে যন্ত্রণায় কাতর রাবেয়াকে বার্ন ইউনিটের পাঁচতলার শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন দেখা যায়। তবে শয্যা খালি না থাকায় শিশু বিভাগের মেঝের ওপর শুয়ে ছিল রাবেয়া। মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন মা সরলা বেগম। রাবেয়ার বাঁ চোখ বন্ধ। খানিক পর পর রাবেয়া বলছে, ‘মা, একডা ব্যাডা আমারে পুড়াইয়া দিছে!’ প্রথম আলোকে দেওয়া সরলা বেগমের ভাষ্য, মামাতো ভাইয়ের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান তখন শেষ হওয়ার পথে। তাঁদের এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। তাই জেনারেটর দিয়ে চলছিল। রাত ১২টার সময় হঠাৎ জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়। এর পর ঘটনাটি ঘটে। সরলা বেগম বলেন, ‘বরের হাতে মেন্দি (মেহেদি) দেওনের সময় আলো বন্ধ হইয়্যা যায়। তখন আমার মাইয়া চিক্কর (চিৎকার) দেয়—“মা, আমার শরীর পুইড়্যা গেছে!”
আজ দুপুরে যন্ত্রণায় কাতর রাবেয়াকে বার্ন ইউনিটের পাঁচতলার শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন দেখা যায়। তবে শয্যা খালি না থাকায় শিশু বিভাগের মেঝের ওপর শুয়ে ছিল রাবেয়া। মেয়ের মাথা কোলে নিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন মা সরলা বেগম। রাবেয়ার বাঁ চোখ বন্ধ। খানিক পর পর রাবেয়া বলছে, ‘মা, একডা ব্যাডা আমারে পুড়াইয়া দিছে!’ প্রথম আলোকে দেওয়া সরলা বেগমের ভাষ্য, মামাতো ভাইয়ের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান তখন শেষ হওয়ার পথে। তাঁদের এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। তাই জেনারেটর দিয়ে চলছিল। রাত ১২টার সময় হঠাৎ জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়। এর পর ঘটনাটি ঘটে। সরলা বেগম বলেন, ‘বরের হাতে মেন্দি (মেহেদি) দেওনের সময় আলো বন্ধ হইয়্যা যায়। তখন আমার মাইয়া চিক্কর (চিৎকার) দেয়—“মা, আমার শরীর পুইড়্যা গেছে!”
প্রত্যন্ত
এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ জটিল। শীতের রাতে আহত পাঁচজনকে স্পিডবোটে করে মেঘনা
নদী পাড়ি দিয়ে নেওয়া হয় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। আজ ভোর চারটার দিকে
তাঁদের ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। রাবেয়া ও তার মামা সেলিম সরকারের এই
পোড়া দাগ সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে বলে জানান বার্ন ইউনিটের আবাসিক
সার্জন পার্থ শংকর পাল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রাসায়নিক দাহ্যপদার্থে
(কেমিক্যাল বার্ন) তাঁরা দগ্ধ হয়েছেন। বর সেলিম সরকারের মুখের একপাশসহ
সারা শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। শিশু রাবেয়া আক্তারের মুখসহ শরীরের ৬
শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের অবস্থা গুরুতর। কেমিক্যাল বার্নকে ভয়াবহ হিসেবে
মনে করেন তিনি। অগ্নিদগ্ধদের ক্ষতচিহ্ন সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা সেলিম সরকারের ভাই ইউনুস সরকার ও ভাগনে
আবদুল হকের অভিযোগ, দাহ্যপদার্থ ছুড়েছেন সিফাত নামের এক যুবক।
পারিবারিকভাবে সেলিমের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল পাশের সখীপুর গ্রামের এক
মেয়ের সঙ্গে। এই মেয়েকে পছন্দ করেন সিফাত। গত বছরের মাঝামাঝি সময়
সেলিমের আংটিবদল অনুষ্ঠান হয়। পরে সেলিমের পরিবারকে সিফাত জানান যে ওই
কনেকে তিনি পছন্দ করেন। এ সময় সেলিমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে (সিফাত)
জানানো হয়, মেয়ে রাজি থাকলে তিনি বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু তাঁদের পক্ষে
কিছু করা সম্ভব নয়। এর জের ধরেই গতকাল রাতে বরকে লক্ষ্য করে সিফাত
দাহ্যপদার্থ ছোড়েন। ঘটনার অনেক আগে থেকেই সিফাতকে বিয়েবাড়ির আশপাশে
ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন বলে দাবি করেন সেলিমের স্বজনেরা। সখীপুর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমির সরকারের ভাষ্য, খবর পেয়ে ওই গ্রামে পুলিশ
পাঠানো হয়েছে। এখনো থানায় অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের
চেষ্টা চলছে।
No comments