বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা ও পিয়াস করিমের লাশ by এরশাদ মজুমদার
আমরা যে গণতন্ত্র চর্চা করি তা এসেছে ব্রিটেন থাকে। শোষক ও অত্যাচারী ব্রিটিশ আমাদের অনেক ভালো মন্দ জিনিস, নিয়ম-কানুন, বিদ্যা, আদব কায়দা দিয়ে গেছে। এর মধ্যে তথাকথিত গণতন্ত্র একটি। এটি নাকি জনগণের সরকার ব্যবস্থাপনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। এর চেয়ে ভালো কিছু এখনো নাকি আবিষ্কার হয়নি। অনেকেই বলবেন সুপ্রাচীন কালে গ্রিক দেশে একধরনের গণতন্ত্র ছিল। আমি মনে করি জগতে জনগণের প্রথম রাষ্ট্র ও সরকার গঠন করেছিলেন জগতের আলো হজরত মুহাম্মাদ সা:। সেখানে মজলিসে শূরা ছিল। মানে আলোচনা সভা/মজলিস বা কাউন্সিল। পশ্চিমা বিশ্বে এখন ঘুণেধরা তথাকথিত গণতন্ত্রের জয়জয়কার চলছে। হুবহু পশ্চিমা গণতন্ত্র অনুসরণ করে না এমন দেশও আছে। গণচীন তার মধ্যে একটি। এখানে একদলীয় গণতন্ত্র জারি রয়েছে। জনগণের কথা বলার অধিকার কম। দলের কথাই প্রধান। চীন সে দেশের মুসলমানসহ ভিন্ন মতের মানুষের ওপর অত্যাচার চালায়। আমেরিকা সারা বিশ্বকে সন্ত্রাসক্ষেত্রে পরিণত করেছে। ৬০-এর দশকের দিকে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে আমেরিকা কমিউনিস্ট দমনের নামে সামরিক অভ্যূত্থান ঘটিয়েছে। দেশপ্রেমিক হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। কমিউনিজম দমনের জন্য মুসলমানদের ব্যবহার করেছে। রাশিয়া কমিউনিজম রফতানির নামে বিভিন্ন দেশে রক্তয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। অবস্থাটা ছিল আমেরিকা কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র চায় না, আর রাশিয়া পশ্চিমা গণতন্ত্র চায় না। এ লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। বাংলাদেশে সফরে এসে মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন, পশ্চিমা গণতন্ত্র এশিয়ার দেশগুলোতে অচল। হুবহু পশ্চিমা গণতন্ত্রকে অনুসরণ করা যাবে না। মালয়েশিয়া একটি বহুজাতিক বহু ধর্মের দেশ। সেখানে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে। সিঙ্গাপুরের উন্নতি হয়েছে প্রচলিত আইনকে কঠোরভাবে প্রয়োগের কারণে। বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই আইন তৈরি হচ্ছে আর ভাঙা হচ্ছে। সরকারি দলের জন্য এক রকম আইন আর বিরোধী দলের জন্য আরেক রকম। গরিব ও মতাহীনদের জন্য কোনো আইন নেই। সামান্য ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ দেখলেই বোঝা যায়। পুলিশ নিজেই ট্রাফিক আইন মানে না। প্রয়োজনে উল্টো দিকে চলতে থাকে। মন্ত্রীরা তো নিয়মিত ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ বা সুপারিশে আসামিদের মা করে দেন। বিরোধী দলকে শাস্তি দেয়ার জন্য হাজার হাজার মামলা। ভোটার না থাকলেও নির্বাচন করে মতায় থাকা যায়। যিনি মতায় থাকবেন তার জন্য রাষ্ট্রের সব শক্তি আছে। থিওরি হলো সরকারি দল বা সরকারের অনুগত ছাড়া আর কেউ দেশপ্রেমিক নেই।
আমরা ঐতিহ্য সূত্রে ব্রিটিশ দেয়া গণতন্ত্র পেয়েছি। এক সময়ে ছিল শিতি লোকেরা ভোটার ছিলেন। তারপর হলো যারা চৌকিদারি ট্যাক্স দেন শুধু তারাই ভোটার হবেন। অনেক পরে এলো সার্বজনীন ভোটাধিকার। এর মানে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে। আমি ৫৪ সাল থেকে নির্বাচন দেখে আসছি। ভোটার না হয়েও ’৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পে কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। যুক্তফ্রন্ট ছিল মুসলিম লীগ বিরোধী সর্বদলীয় নির্বাচনী জোট। মাত্র সাত বছরের মধ্যেই মুসলিম লীগ একেবারেই অপ্রিয় ও ধিকৃত হয়ে গেল। এমনকি চিফ মিনিস্টার নুরুল আমিনও নির্বাচনে হেরে গেলেন। মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই ৯২ক ধারা জারি করে নির্বাচিত সরকারকে নির্বাসনে পাঠানো হলো। ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিদায় নিলো। জেনারেলেরা দেশ শাসন করতে লাগল। আমেরিকা সামরিক নেতাদের সমর্থন দিয়ে যেতে লাগল। কারণ, আমেরিকা পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারে না। সেই শাসনের মাধ্যমেই ’৭০ সালে একটি নির্বাচন হলো; কিন্তু পাকিস্তান টিকল না। ভারত ও রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থনে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলো। ৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গঠিত হলো। জনমতের চাপে ’৭৩-এ একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ৫৪, ৭০ ও ৭৩-এর নির্বাচনের ফলাফলের প্রকৃতি ও গতি একই রকম ছিল। ’৫৪ সালে ছিল মুসলিম লীগকে কবর দাও। ৭০ এ ছিল বাঙালিদের জয়যুক্ত করো। ৭৩-এ কী স্লোগান ছিল? মুক্ত নির্বাচন হলে বিরোধীদল বেশ কিছু সিট পেতে পারে; কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর সরকারই মতায় থাকবে; কিন্তু আমলারা ও ভারত বুদ্ধি দিলো মুক্ত নির্বাচনে বামপন্থীরা বেশি এগিয়ে যেতে পারে। ফলে মুক্ত নির্বাচন হলো না। সংসদে বিরোধী দলের ছয়-সাতটি সিট ছিল মাত্র। নির্বাচন নিয়ে বিশদ আলোচনা করা এই কলামের উদ্দেশ্য নয়।
আধুনিক গণতন্ত্রের একটি নমুনা হাজির করছি। আমার এক মামা পৌর নির্বাচনে প্রায়ই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেন। শুনেছি, তিনি প্রতিপকে নমিনেশন প্রত্যাহারের জন্য বাধ্য করতেন। ফলে তিনিই জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হতেন। আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কিনেই সংসদ সদস্য হওয়া যেত। শুনেছি, ৩৭ সালে অখণ্ড বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের প্রার্থীরা পাঁচ শ’ থেকে এক হাজার টাকার বেশি খরচ করেননি। তখনো কোটি কোটি ভোটার গরিব ছিলেন। তখন তাদের দৈনিক আয় ৫০ পয়সার বেশি ছিল না। কিন্তু গরিবেরা ভোট বিক্রি করেননি। ৫৪-এর নির্বাচনে একজন প্রার্থী তিন-চার হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন। ৭০-এর নির্বাচনে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এখন কত টাকা লাগে তা আপনারা খুবই ভালো জানেন। প্রসঙ্গত, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কথা উল্লেখ করতে চাই। শুনেছি, তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করেন। তার স্ত্রী নাকি এখনো বাসের জন্য রাস্তায় কিউ/লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মানিক বাবু একেবারে পিছিয়ে পড়ে থাকা রাজ্য ত্রিপুরার গরিবি চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। গ্রামগুলোকে শহর বানিয়ে দিয়েছেন। ক’দিন আগে অমিতাভ বচ্চনের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি অনুষ্ঠানে ভারতের গরিব মুখ্যমন্ত্রী কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সঠিক উত্তর এসেছিল মানিক সরকার। তিনি এখনো চপ্পল পায়ে চলাফেরা করেন। চায়ের দোকানে বসে লোকজনের সাথে চা পান করেন। বাংলাদেশে এমন একটি চিত্র কল্পনা করুন তো দেখি। এখানে ছাত্রনেতারাই গাড়ি বাড়ি করেন পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, লেখাপড়া না করে যদি মন্ত্রী-এমপি হওয়া যায় তা হলে ছাত্ররা পড়বে কেন। লোকে বলে একবার কেউ যদি এমপি হন তারপর সারা জীবন সে বা তিনি বসে বসে খেতে পারবেন। যে মন্ত্রী বা নেতা উপনেতা যতবেশি খিস্তিখিউর করতে পারবেন, তিনি বা তারা নাকি বারবার নমিনেশন পান বা নেতাগিরি করতে পারেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আমি তেমন মুক্ত কোনো নির্বাচন দেখিনি। বঙ্গবন্ধু নিজেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন। কেন করেছিলেন তা হয়তো আপনারা ভালো জানেন। তিনি হয়তো মনে করতেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা হলে তিনি জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবেন। বেশ কিছু বামপন্থী নেতাকর্মীরা সেই একদলীয় ব্যবস্থাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এমনকি মহা গণতন্ত্রের দেশ ভারতও সমর্থন করেছিল। এর পরে বাংলাদেশ কেমন আছে, কেমন চলছে তা আপনারা খুব ভালো জানেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের নির্বাচনের সুনাম এখন জগৎব্যাপী। ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন এবং বহাল তবিয়তে সংসদে বসে আইন বানাচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রথম আলোতে কবি সোহরাব হাসানের একটি উপসম্পাদকীয়তে গণতন্ত্র, ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে তিনি নিজের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। শুরুতেই সোহরাব উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক জাহিদুল আহসানের সাহসী লেখার কথা। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নাকি আওয়ামী লীগসহ সব দল মিলে লতিফ সিদ্দিকীর নিন্দা করেছে। কারণ লতিফ সিদ্দিকী ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললে নাকি এমন ঐক্য হয় না। এতে জাহিদুল আহসান সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়েছেন। বাংলাদেশে সনাতনধর্মীসহ সংখ্যালঘুর সংখ্যা দশ ভাগের বেশি নয়। যদি ধরে নিই বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি। তা হলে সংখ্যালঘুর সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখের মতো। জাহিদ আহসান বলতে পারেন সংখ্যালঘুর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। ভারতে সংখ্যালঘুর সংখ্যা ২০-২৫ কোটির মতো হবে। অনেকে বলেন, ভারতে ৩০ কোটি মুসলমান আছেন সেখানে বছরে কয়েক শ’ দাঙ্গা হয়। (শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাঙ্গার ইতিহাস পড়ুন)। ভারত বা অখণ্ড বাংলাদেশ খণ্ড হয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে। প্রশ্ন হলো এ রাজনীতির লালন পালন করছে কারা? কেন করছে? বাংলাদেশে মাইনরিটির ওপর যে অত্যাচার হয় তা-ও রাজনৈতিক। নিশ্চয়ই এতে ফায়দা হয়। এখানে যারা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হন, তারা সবাই গরিব ও শক্তিহীন। শক্তিমানেরাই তাদের ওপর অত্যাচার করেন। সনাতন ধর্মের মন্দিরে আক্রমণ করা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের মুখে চুনকালি মাখাবার জন্য। তবে সরকারি দলিলে দেখা যায় মাইনরিটি বা সনাতনধর্মীরা সরকারি চাকরিতে রয়েছে বিশ শতাংশের মতো। ভারতে এই সংখ্যা হলো এক শতাংশের মতো। রাজনীতি ও সরকারগুলো যতদিন অসাম্প্রদায়িক না হবে, ততদিন এ অবস্থার অবসান হবে না। অধ্যাপক পিয়াস করিমের কথাই ধরুন, তিনি সেমিনার ও টকশোতে সরকারের সমালোচনা করতেন। হয়তো তিনি সরকারি চিন্তার বিপরীত চিন্তার লোক ছিলেন। অধ্যাপক হিসেবে তিনি ছাত্রপ্রিয় ছিলেন। তিনি একটি উন্নত পরিবারের সন্তান। তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক। তার লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার ব্যাপারে সরকারি দলের সমর্থক কিছু সুবিধাভোগী বিতর্ক তুলেছেন। এতে নেপথ্যে ভূমিকা পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর সাথে রয়েছেন সনাতনপন্থী এ দেশের মেজরিটি মানুষের ধর্মবিরোধী কিছু লোক। তাই তারা নানা অজুহাতে একজন সম্মানিত মানুষের লাশের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা দেখাতে সাহস করেছে। এরা সাম্প্রদায়িক, যেকোনো অজুহাতে মেজরিটি মানুষের মনে আঘাত দিতে সাহস করে। পিয়াস করিমের মরহুম পিতা নাকি ‘রাজাকার’ ছিলেন। সে জন্য সন্তানকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সরকারি দলের বা জোটের বহু নেতা ও উপনেতার বাপদাদারা রাজাকার, ডানপন্থী, পাকিস্তানপন্থী, ধর্মপন্থী ছিলেন। তাদের সন্তানেরা লাশ দাফন করতে চান না, জানাজা করতে চান না, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে চান। এমনও শুনতে পাচ্ছি লাশ শ্মশানে নেয়ার জন্য নাকি অছিয়ত করেন। এসব প্রাণীর জন্য সরকার ধর্মহীন বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। ধর্মমুক্ত কাজী বা ম্যারেজ রেজিস্টারের ব্যবস্থা করেছেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার পপাতী নই। এটি অতি সম্প্রতি চালু করা বুদ্ধিজীবীদের শবযাত্রার ব্যবস্থা চালু করেছেন। ধর্মমুক্ত বুদ্ধিজীবীদের জানাজাও বলতে পারেন। সরকার বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা করার দরকার এখন থেকে শহীদ মিনারে (ধর্মহীন/ধর্মমুক্ত মন্দির) শুধুমাত্র সরকারি দল, তাদের অনুগত ও ধর্মহীনদের বেশির ভাগই বুদ্ধিজীবী) জন্য খোলা থাকবে।
বাংলাদেশের চলমান সরকার সনাতন ধর্ম বান্ধব বলে দেশবাসী জানে। তবুও ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে কেন? কিছু হলেই তো সরকার দাবি করে বিরোধী দল এসব করছে। পাকিস্তান আমলেও এসব কথা বলা হতো। ব্রিটিশ আমলে নাকি শাসক গোষ্ঠীর ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি নাকি এজন্য দায়ী ছিল। তা হলে এখনো কেন ভারতে দাঙ্গা হচ্ছে। পাকিস্তানে শিয়া সুন্নি ও কাদিয়ানি দাঙ্গা এখনো হয়। ভারতে সনাতনধর্মীরা শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করে। এখন তো ভারতে ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দল মতায় আছে। আমরা তো জানি ভারত সেক্যুলার (non religious, earthly/worldly,do not believe in after world) রাষ্ট্র। তা হলে এত দাঙ্গা হয় কেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজী তো দাঙ্গার আসামি। রাজনীতিতে সমঝোতা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং, আলোচনা, দেশের স্বার্থে সব দলের একমত হওয়া ভদ্র সমাজের কাজ। আমাদের রাজনীতিতে সে সমাজ চিন্তা এখনো গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের অবস্থা দেখে আমি এখন রাষ্ট্রের রূপ নিয়ে গবেষণা করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আহ্বান জানাব। এ দেশে রাষ্ট্র নাগরিক বা মানুষের চেয়ে বড়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নাকি জার সম্রাটদের চেয়েও মতাবান। কারণ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে সে মতা দিয়েছে। তাই তিনি সে মতা ভোগ করছেন। সে মতা বলেই প্রধানমন্ত্রী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছেন। সে মতা বলেই তিনি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার গঠন করে দেশ চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রের সব শক্তিই এখন তার হাতের মুঠোয়। গণতন্ত্রও এখন তার হাতে। তাই সমঝোতার কী প্রয়োজন? তিনি কি সংবিধানের বাইরে কিছু করছেন? এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় সমঝোতার কোনো প্রয়োজন হয় না। ভারত নিজের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ ও চলমান ধর্মমুক্ত সরকারকে সমর্থন করে। এটি ভারতের নীতি। তাদের এ নীতির কারণেই ভারত ও অখণ্ড বঙ্গ ভাগ হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ভারতের অবলম্বিত নীতির বিরোধী; কিন্তু দল দাসত্বের কারণে তারা অনেক সময় নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। বাংলাদেশে যদি সামরিক সরকারও থাকে তা হলে ভারতের কী আসে যায়। তারা চায় অনুগত স্বার্থ রায় অযোগ্য সরকার। তা না হলে এখানে ক্যু ঘটাবে। জেনারেল মইন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি ছিলেন ভারতের অন্ধ সেবাদাস। তিনি এবং ভারত মিলে ২০০৮ সালের নির্বাচন করেছেন। ল্য, যেকোনোভাবেই হোক বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে মতায় রাখতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পেছনে ছিল ভারতের গোয়েন্দা ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ভারতপ্রেমী বা পন্থীদের আমি অনুরোধ জানাব, দয়া করে বুকে হাত দিয়ে বলুন, বিগত ৪৪ বছরে ভারত বাংলাদেশকে কি দিয়েছে আর কী নিয়েছে। দেখুন পাল্লা কোন দিকে ভারী।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com
আমরা ঐতিহ্য সূত্রে ব্রিটিশ দেয়া গণতন্ত্র পেয়েছি। এক সময়ে ছিল শিতি লোকেরা ভোটার ছিলেন। তারপর হলো যারা চৌকিদারি ট্যাক্স দেন শুধু তারাই ভোটার হবেন। অনেক পরে এলো সার্বজনীন ভোটাধিকার। এর মানে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকার থাকবে। আমি ৫৪ সাল থেকে নির্বাচন দেখে আসছি। ভোটার না হয়েও ’৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পে কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। যুক্তফ্রন্ট ছিল মুসলিম লীগ বিরোধী সর্বদলীয় নির্বাচনী জোট। মাত্র সাত বছরের মধ্যেই মুসলিম লীগ একেবারেই অপ্রিয় ও ধিকৃত হয়ে গেল। এমনকি চিফ মিনিস্টার নুরুল আমিনও নির্বাচনে হেরে গেলেন। মাত্র কিছু দিনের মধ্যেই ৯২ক ধারা জারি করে নির্বাচিত সরকারকে নির্বাসনে পাঠানো হলো। ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিদায় নিলো। জেনারেলেরা দেশ শাসন করতে লাগল। আমেরিকা সামরিক নেতাদের সমর্থন দিয়ে যেতে লাগল। কারণ, আমেরিকা পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারে না। সেই শাসনের মাধ্যমেই ’৭০ সালে একটি নির্বাচন হলো; কিন্তু পাকিস্তান টিকল না। ভারত ও রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থনে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলো। ৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গঠিত হলো। জনমতের চাপে ’৭৩-এ একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ৫৪, ৭০ ও ৭৩-এর নির্বাচনের ফলাফলের প্রকৃতি ও গতি একই রকম ছিল। ’৫৪ সালে ছিল মুসলিম লীগকে কবর দাও। ৭০ এ ছিল বাঙালিদের জয়যুক্ত করো। ৭৩-এ কী স্লোগান ছিল? মুক্ত নির্বাচন হলে বিরোধীদল বেশ কিছু সিট পেতে পারে; কিন্তু আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর সরকারই মতায় থাকবে; কিন্তু আমলারা ও ভারত বুদ্ধি দিলো মুক্ত নির্বাচনে বামপন্থীরা বেশি এগিয়ে যেতে পারে। ফলে মুক্ত নির্বাচন হলো না। সংসদে বিরোধী দলের ছয়-সাতটি সিট ছিল মাত্র। নির্বাচন নিয়ে বিশদ আলোচনা করা এই কলামের উদ্দেশ্য নয়।
আধুনিক গণতন্ত্রের একটি নমুনা হাজির করছি। আমার এক মামা পৌর নির্বাচনে প্রায়ই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেন। শুনেছি, তিনি প্রতিপকে নমিনেশন প্রত্যাহারের জন্য বাধ্য করতেন। ফলে তিনিই জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হতেন। আইউব খানের মৌলিক গণতন্ত্রে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের কিনেই সংসদ সদস্য হওয়া যেত। শুনেছি, ৩৭ সালে অখণ্ড বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনের প্রার্থীরা পাঁচ শ’ থেকে এক হাজার টাকার বেশি খরচ করেননি। তখনো কোটি কোটি ভোটার গরিব ছিলেন। তখন তাদের দৈনিক আয় ৫০ পয়সার বেশি ছিল না। কিন্তু গরিবেরা ভোট বিক্রি করেননি। ৫৪-এর নির্বাচনে একজন প্রার্থী তিন-চার হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন। ৭০-এর নির্বাচনে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ করে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এখন কত টাকা লাগে তা আপনারা খুবই ভালো জানেন। প্রসঙ্গত, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার কথা উল্লেখ করতে চাই। শুনেছি, তিনি অতি সাধারণ জীবনযাপন করেন। তার স্ত্রী নাকি এখনো বাসের জন্য রাস্তায় কিউ/লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মানিক বাবু একেবারে পিছিয়ে পড়ে থাকা রাজ্য ত্রিপুরার গরিবি চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। গ্রামগুলোকে শহর বানিয়ে দিয়েছেন। ক’দিন আগে অমিতাভ বচ্চনের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি অনুষ্ঠানে ভারতের গরিব মুখ্যমন্ত্রী কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সঠিক উত্তর এসেছিল মানিক সরকার। তিনি এখনো চপ্পল পায়ে চলাফেরা করেন। চায়ের দোকানে বসে লোকজনের সাথে চা পান করেন। বাংলাদেশে এমন একটি চিত্র কল্পনা করুন তো দেখি। এখানে ছাত্রনেতারাই গাড়ি বাড়ি করেন পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, লেখাপড়া না করে যদি মন্ত্রী-এমপি হওয়া যায় তা হলে ছাত্ররা পড়বে কেন। লোকে বলে একবার কেউ যদি এমপি হন তারপর সারা জীবন সে বা তিনি বসে বসে খেতে পারবেন। যে মন্ত্রী বা নেতা উপনেতা যতবেশি খিস্তিখিউর করতে পারবেন, তিনি বা তারা নাকি বারবার নমিনেশন পান বা নেতাগিরি করতে পারেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আমি তেমন মুক্ত কোনো নির্বাচন দেখিনি। বঙ্গবন্ধু নিজেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করে গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিলেন। কেন করেছিলেন তা হয়তো আপনারা ভালো জানেন। তিনি হয়তো মনে করতেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা হলে তিনি জনগণের উন্নতি সাধন করতে পারবেন। বেশ কিছু বামপন্থী নেতাকর্মীরা সেই একদলীয় ব্যবস্থাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এমনকি মহা গণতন্ত্রের দেশ ভারতও সমর্থন করেছিল। এর পরে বাংলাদেশ কেমন আছে, কেমন চলছে তা আপনারা খুব ভালো জানেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বাংলাদেশের নির্বাচনের সুনাম এখন জগৎব্যাপী। ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন এবং বহাল তবিয়তে সংসদে বসে আইন বানাচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রথম আলোতে কবি সোহরাব হাসানের একটি উপসম্পাদকীয়তে গণতন্ত্র, ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে তিনি নিজের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থে আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। শুরুতেই সোহরাব উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক জাহিদুল আহসানের সাহসী লেখার কথা। সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নাকি আওয়ামী লীগসহ সব দল মিলে লতিফ সিদ্দিকীর নিন্দা করেছে। কারণ লতিফ সিদ্দিকী ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললে নাকি এমন ঐক্য হয় না। এতে জাহিদুল আহসান সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়েছেন। বাংলাদেশে সনাতনধর্মীসহ সংখ্যালঘুর সংখ্যা দশ ভাগের বেশি নয়। যদি ধরে নিই বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি। তা হলে সংখ্যালঘুর সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখের মতো। জাহিদ আহসান বলতে পারেন সংখ্যালঘুর সংখ্যা আরো অনেক বেশি। ভারতে সংখ্যালঘুর সংখ্যা ২০-২৫ কোটির মতো হবে। অনেকে বলেন, ভারতে ৩০ কোটি মুসলমান আছেন সেখানে বছরে কয়েক শ’ দাঙ্গা হয়। (শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাঙ্গার ইতিহাস পড়ুন)। ভারত বা অখণ্ড বাংলাদেশ খণ্ড হয়েছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে। প্রশ্ন হলো এ রাজনীতির লালন পালন করছে কারা? কেন করছে? বাংলাদেশে মাইনরিটির ওপর যে অত্যাচার হয় তা-ও রাজনৈতিক। নিশ্চয়ই এতে ফায়দা হয়। এখানে যারা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হন, তারা সবাই গরিব ও শক্তিহীন। শক্তিমানেরাই তাদের ওপর অত্যাচার করেন। সনাতন ধর্মের মন্দিরে আক্রমণ করা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের মুখে চুনকালি মাখাবার জন্য। তবে সরকারি দলিলে দেখা যায় মাইনরিটি বা সনাতনধর্মীরা সরকারি চাকরিতে রয়েছে বিশ শতাংশের মতো। ভারতে এই সংখ্যা হলো এক শতাংশের মতো। রাজনীতি ও সরকারগুলো যতদিন অসাম্প্রদায়িক না হবে, ততদিন এ অবস্থার অবসান হবে না। অধ্যাপক পিয়াস করিমের কথাই ধরুন, তিনি সেমিনার ও টকশোতে সরকারের সমালোচনা করতেন। হয়তো তিনি সরকারি চিন্তার বিপরীত চিন্তার লোক ছিলেন। অধ্যাপক হিসেবে তিনি ছাত্রপ্রিয় ছিলেন। তিনি একটি উন্নত পরিবারের সন্তান। তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক। তার লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার ব্যাপারে সরকারি দলের সমর্থক কিছু সুবিধাভোগী বিতর্ক তুলেছেন। এতে নেপথ্যে ভূমিকা পালন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর সাথে রয়েছেন সনাতনপন্থী এ দেশের মেজরিটি মানুষের ধর্মবিরোধী কিছু লোক। তাই তারা নানা অজুহাতে একজন সম্মানিত মানুষের লাশের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা দেখাতে সাহস করেছে। এরা সাম্প্রদায়িক, যেকোনো অজুহাতে মেজরিটি মানুষের মনে আঘাত দিতে সাহস করে। পিয়াস করিমের মরহুম পিতা নাকি ‘রাজাকার’ ছিলেন। সে জন্য সন্তানকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। সরকারি দলের বা জোটের বহু নেতা ও উপনেতার বাপদাদারা রাজাকার, ডানপন্থী, পাকিস্তানপন্থী, ধর্মপন্থী ছিলেন। তাদের সন্তানেরা লাশ দাফন করতে চান না, জানাজা করতে চান না, রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে চান। এমনও শুনতে পাচ্ছি লাশ শ্মশানে নেয়ার জন্য নাকি অছিয়ত করেন। এসব প্রাণীর জন্য সরকার ধর্মহীন বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। ধর্মমুক্ত কাজী বা ম্যারেজ রেজিস্টারের ব্যবস্থা করেছেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে লাশ শহীদ মিনারে নেয়ার পপাতী নই। এটি অতি সম্প্রতি চালু করা বুদ্ধিজীবীদের শবযাত্রার ব্যবস্থা চালু করেছেন। ধর্মমুক্ত বুদ্ধিজীবীদের জানাজাও বলতে পারেন। সরকার বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা করার দরকার এখন থেকে শহীদ মিনারে (ধর্মহীন/ধর্মমুক্ত মন্দির) শুধুমাত্র সরকারি দল, তাদের অনুগত ও ধর্মহীনদের বেশির ভাগই বুদ্ধিজীবী) জন্য খোলা থাকবে।
বাংলাদেশের চলমান সরকার সনাতন ধর্ম বান্ধব বলে দেশবাসী জানে। তবুও ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে কেন? কিছু হলেই তো সরকার দাবি করে বিরোধী দল এসব করছে। পাকিস্তান আমলেও এসব কথা বলা হতো। ব্রিটিশ আমলে নাকি শাসক গোষ্ঠীর ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি নাকি এজন্য দায়ী ছিল। তা হলে এখনো কেন ভারতে দাঙ্গা হচ্ছে। পাকিস্তানে শিয়া সুন্নি ও কাদিয়ানি দাঙ্গা এখনো হয়। ভারতে সনাতনধর্মীরা শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা করে। এখন তো ভারতে ধর্মপন্থী রাজনৈতিক দল মতায় আছে। আমরা তো জানি ভারত সেক্যুলার (non religious, earthly/worldly,do not believe in after world) রাষ্ট্র। তা হলে এত দাঙ্গা হয় কেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজী তো দাঙ্গার আসামি। রাজনীতিতে সমঝোতা, আন্ডারস্ট্যান্ডিং, আলোচনা, দেশের স্বার্থে সব দলের একমত হওয়া ভদ্র সমাজের কাজ। আমাদের রাজনীতিতে সে সমাজ চিন্তা এখনো গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের অবস্থা দেখে আমি এখন রাষ্ট্রের রূপ নিয়ে গবেষণা করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের আহ্বান জানাব। এ দেশে রাষ্ট্র নাগরিক বা মানুষের চেয়ে বড়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নাকি জার সম্রাটদের চেয়েও মতাবান। কারণ সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে সে মতা দিয়েছে। তাই তিনি সে মতা ভোগ করছেন। সে মতা বলেই প্রধানমন্ত্রী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছেন। সে মতা বলেই তিনি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে সরকার গঠন করে দেশ চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রের সব শক্তিই এখন তার হাতের মুঠোয়। গণতন্ত্রও এখন তার হাতে। তাই সমঝোতার কী প্রয়োজন? তিনি কি সংবিধানের বাইরে কিছু করছেন? এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় সমঝোতার কোনো প্রয়োজন হয় না। ভারত নিজের স্বার্থেই আওয়ামী লীগ ও চলমান ধর্মমুক্ত সরকারকে সমর্থন করে। এটি ভারতের নীতি। তাদের এ নীতির কারণেই ভারত ও অখণ্ড বঙ্গ ভাগ হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ ভারতের অবলম্বিত নীতির বিরোধী; কিন্তু দল দাসত্বের কারণে তারা অনেক সময় নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। বাংলাদেশে যদি সামরিক সরকারও থাকে তা হলে ভারতের কী আসে যায়। তারা চায় অনুগত স্বার্থ রায় অযোগ্য সরকার। তা না হলে এখানে ক্যু ঘটাবে। জেনারেল মইন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি ছিলেন ভারতের অন্ধ সেবাদাস। তিনি এবং ভারত মিলে ২০০৮ সালের নির্বাচন করেছেন। ল্য, যেকোনোভাবেই হোক বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে মতায় রাখতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পেছনে ছিল ভারতের গোয়েন্দা ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। ভারতপ্রেমী বা পন্থীদের আমি অনুরোধ জানাব, দয়া করে বুকে হাত দিয়ে বলুন, বিগত ৪৪ বছরে ভারত বাংলাদেশকে কি দিয়েছে আর কী নিয়েছে। দেখুন পাল্লা কোন দিকে ভারী।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com
No comments