পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাংলাদেশ কার্ড আসছে!
দু’টি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ের পরে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে বাংলাদেশ কার্ড আচমকা তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপির বাংলাদেশ কার্ড যে অবশ্যম্ভাবী তাতে আর সন্দেহের অবকাশ কম। আগে ছিল অনুপ্রবেশ, এবার যুক্ত হচ্ছে জঙ্গিবাদ। এ কার্ডের বিপরীতে মমতা যাতে না দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য তার সামনে বিকল্প জানালাগুলো বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সিপিএম ইতিমধ্যে বিজিপিঘেঁষা একটি লাইন নিয়ে ফেলেছে। তারা তাই বাংলাদেশের ওড়াকান্দি থেকে যাওয়া মতুয়াদের নাগরিকত্ব চাইছে। বর্ধমান বিস্ফোরণ মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ছক অনেকটাই পাল্টে দিতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তজুড়ে ধারপাকড়কে বিজেপি যে ভাবে কোলে টানছে সেটা ক্রমশ তৃণমূলের অবস্থানকেই নাজুক করছে। সাবেক সিপিএম সদস্য আবদুর রাজ্জাক মোল্লা গত শনিবার একটি নতুন দল খুলেছেন ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি। তিনি সিপিএমের সমালোচনা করে বলেন, ‘এখন তারা মতুয়া নিয়ে মাঠে নামছে। কিন্তু এটা তাদের অনেক আগেই ভাবা উচিত ছিল।’
দি ইকোনমিক টাইমস তার ১৯শে অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলেছে, মমতা ব্যানার্জি বলছেন, সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই। তিনি রাজ্যের মৌলবাদী দলগুলোকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা যেন ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করে রাজ্যকে বিভক্ত না করে। অন্যদিকে বিজেপি বলছে, মমতা রাজ্যের সামনের বিপদকে খাটো করতে চাইছেন। এ প্রেক্ষাপটে সিপিএম-ও মাঠে নেমেছে। তারা হিন্দু নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বাস্তু মর্যাদা দাবি করেছেন। এদের বেশির ভাগই ওড়াকান্দি ভিত্তিক মতুয়া সম্প্রদায়, সিপিএম বলছে, এরা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের ‘কাটঅফ’ তারিখের পরে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। সত্তুরের দশকে জ্যোতি বসুর সরকার মরিচঝাঁপিতে ওই তারিখের পরে বাংলাাদেশী অভিবাসী গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
এদিকে প্রদেশ কংগ্রেসও সক্রিয়। তারা এক বিৃবতিতে উদ্বাস্তুদের বিষয়ে সরকারের কাছে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেছে। তাদের যুক্তি আর্থ-সামজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ ইস্যুকে দেখতে হবে। প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অখিল চৌধুরী বলেন, বিজেপি ‘হিন্দু উদ্বাস্তু’ ও ‘মুসলিম অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে ভাগ করতে চাইছে। একে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। সারা বিশ্ব এভাবেই দেখে। তার প্রশ্ন বিজেপি এর আগের আমলে কতজন অনুপ্রবেশকারীকে পুশব্যাক করেছিল সেই তথ্য আমরা জানতে চাই।’
প্রদেশ বিজেপি নেতা বসিরহাটের নির্বাচিত এমএলএ শমীক ভট্টাচার্য তার ওই যুক্তি নাকচ করে বলেন, এমন যুক্তি বহু শুনেছি। ঘরের কাছে বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। মেক্সিকোতে যে ধরনের অভিবাসন ঘটে তার সঙ্গে এর মিল নেই। সীমান্তের ৮টি জেলার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে সেখানে তারা কিভাবে আসন গেড়ে বসেছে। প্রত্যেক জাতীয়তাবাদীর এটা দায়িত্ব সর্বশক্তি দিয়ে একে প্রতিহত করা।
টাইমস লিখেছে, তবে বিজেপি যাই বলুক, নরেন্দ্র মোদি সরকার ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন বিজেপি যা সংসদে সংশোধন করেছে তাতে বলা হয়েছে প্রত্যোক ভারতীয় পিতামাতার সন্তুান ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। আর সেই আইনে ৭১ পরবর্তী আইনে কাট-অফ তারিখের পরে আসা হিন্দু বাবা-মায়ের কথা স্বীকার করেনি।
সিপিএম নেতা গৌতম দেব বাংলাাদেশের ওড়াকান্দি থেকে আসা মতুয়া সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি: মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিতে কাট-অফ তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছিল এই ভিত্তিতে যে দু’দেশের মধ্যে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ সৃষ্টি হবে না। কিন্তু শেখ মুজিবের নিহত হওয়ার পরে তা থাকেনি। সেখানে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন চলেছে। আর ভারত সরকারকে তাই তাদের ঠাঁই দিতে হবে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলিম উদ্বাস্তুদের বিষয়ে নীরবতা পালন করেন। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আমরা মতুয়া সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন করবো। উত্তর ২৪ পরগনার ডিসি অফিস ঘেরাও হবে।
No comments