ধ্বংসের মুখে ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে লাইন
এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম সুনামগঞ্জের ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে লাইনটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সংস্কারের অভাব আর অব্যবস্থাপনার কারণেই ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রোপওয়ে লাইনটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ইতিমধ্যে লাইন ছিঁড়ে ও ট্র্যাসেল পড়ে রোপওয়ে ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ফলে যেমন পাথর সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তেমনি সরকারের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশের রেললাইনে পাথরের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর সরবরাহের জন্য ১৯৬৫ সালে ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ১শ’ ১৯টি ট্র্যাসেলের ওপর লাইন স্থাপিত হলেও এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে। প্রতিষ্ঠার পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একাধিকবার বন্ধ রাখা হলেও ১৯৮০ সাল থেকে পাথর পরিবহনে সচল ছিল এ রোপওয়ে লাইনটি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর সরবরাহ ছিল দুষ্কর। তাই এ রোপওয়ে লাইন নির্মাণ করা হয়। এই রোপওয়ে লাইন দিয়ে ভোলাগঞ্জ থেকে উন্নতমানের পাথর এনে প্রথমে ছাতকে রাখা হয়। পরে সড়ক, রেল ও নৌপথে সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রোপওয়ে লাইনটি সংস্কার করা হয় না। অব্যবস্থাপনার কারণে লাইনটি সচলের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ। পাথর পরিবহনে ৪শ’ ২৫টি বাকেটের মধ্যে বর্তমানে ৩শ’ ৫টি সচল রয়েছে। অকেজো অবস্থায় ১শ’ ২০টি বাকেট গুদামে রক্ষিত। সরজমিন দেখা গেছে, এ বছরের বর্ষা মওসুমের শুরুতে রোপওয়ে লাইনের ৪১-৪২নং ট্র্যাসেলের মাঝখানে তার ছিঁড়ে গেলে পাথর সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এর কিছুদিন পর ২২শে সেপ্টেম্বর ৪৩নং ট্র্যাসেল ফাউন্ডেশনসহ উপড়ে হাওরের পানিতে পড়ে গেলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় রোপওয়ে ব্যবস্থা। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ট্র্যাসেল এলাকায় সতর্ক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা টানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ভোলাগঞ্জ কোয়ারি এলাকায় পাথর অপরিকল্পিতভাবে উত্তোলন করায় একটি ট্র্যাসেল প্রায় ৪৫ ডিগ্রি বাঁকা হয়ে পড়েছে। হাওরের পানিতে যত্রতত্র নিমজ্জিত, অর্ধনিমজ্জিত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় আরও ৫০টি বাকেট। অরক্ষিত থাকার কারণে ট্র্যাসেলগুলোর সাপোর্ট এঙ্গেলও নিয়মিত চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ট্র্যাসেলগুলো ক্রমাগত দুর্বল হওয়ার কারণে গোটা রোপওয়ে ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে পড়েছে। রোপওয়ে লাইন দিয়ে পাথর সরবরাহের ওপর নির্ভর করে এখানে হাজার হাজার শ্রমিক-ব্যবসায়ী সংসার চালাতো। রোপওয়ে ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক শ্রেণীর লোকজনের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।
একাধিক শ্রমিক ব্যবসায়ী জানায়, নজরদারি করার জন্য রোপওয়ে লাইনে নিয়োজিত আনসার বাহিনী থাকলেও দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এ ব্যাপারে ছাতক রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল জলিল জানান, পুরনো যন্ত্রপাতি ও রোপওয়ে দুর্বল হওয়ায় লাইন ছিঁড়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে পড়ে। লাইন মেরামতের পরিকল্পনা নিলে অবশেষে ট্র্যাসেল পড়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
No comments